ফকর উদ্দিন মানিক
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চোখে স্বপ্নের আলো-হাতে অফার লেটার, কাঁধে ব্যাকপ্যাক, মনে দেশের আশা। ব্রিটেনে পড়ার স্বপ্ন তাদের কাছে এক পবিত্র তীর্থযাত্রার মতো। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্বপ্নের দরজায় ঝুলে গেল সতর্কতার তালা-“ভর্তি স্থগিত”। প্রথমে মনে হয়, হয়তো বৈষম্য। তবে ধীরে ধীরে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে-এটি একপাক্ষিক সমস্যা নয়, বরং বহু বছরের জমে থাকা ভুল, আন্তর্জাতিক শিক্ষাবাজারের চাপ, এবং রাজনৈতিক উত্তাপের মিলিত ফলাফল।
যে সমাজ জানে সে কোথায় যাচ্ছে, তার পথ চিরদিন বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। ব্রিটেনের নীতির শীত একদিন কেটে যাবে; বসন্ত আসবে। প্রস্তুতদের কাছে বসন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সেই প্রস্তুতির যোগ্য-এটাই আমাদের শক্তি, আশার আলো
দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনকে উচ্চশিক্ষার স্বর্গভূমি হিসেবে দেখেছে। টেমস নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন জ্ঞানের অনন্ত আহ্বান জানায়। কিন্তু আজ সেই পথে দাঁড়িয়ে আছে এক অদৃশ্য দরজা-যার ওপর লেখা “হাই রিস্ক”। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নাম তালিকায়। বিশ্ববিদ্যালয় বলছে-নিরাপত্তার কারণে, শিক্ষার্থীরা বলছে-বৈষম্য। বাস্তবতা মাঝখানে, গল্পের চেয়ে কঠিন।
যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি ভিসা রিফিউজাল রেটের সীমা ১০% থেকে কমিয়ে ৫% করেছে। এর বেশি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পনসর লাইসেন্স ঝুঁকিতে পড়ে। বাংলাদেশের রিফিউজাল রেট প্রায় ২২%। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখছে, এই সংখ্যার কারণে ভিসা রিফিউজালের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রথম পদক্ষেপ-“সাময়িক ভর্তি স্থগিত”-যেন বজ্রপাত থেকে আশ্রয় নেওয়া।
প্রশ্ন আসে-দোষ আমাদের কি পুরোপুরি? সত্যি কথা হলো-উভয় পক্ষের কিছু দোষ আছে। আমাদের দেশে বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেক সময় কাঠামোহীন। শিক্ষার্থীরা ব্যাংক স্টেটমেন্ট ধার করে এনে, কখনো একদিনে হিসাব ফুলিয়ে আবেদন করে। কেউ এসওপি লিখে না; এজেন্সির তৈরি একই কপি শত শত ফাইলে পড়ে। কোর্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার বদলে আবেগ প্রাধান্য পায়। ভিসা অফিসারের হাতে এসব ফাইল গেলে সন্দেহ জন্মায়। এই সন্দেহই সামষ্টিকভাবে দেশের রিস্ক রেট বাড়ায়।
ব্রিটিশদের দোষও কম নয়। ব্রিটেনে অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ। সাধারণ মানুষ মনে করে-অভিবাসী বাড়লে চাকরি কমে, বাড়িভাড়া বেড়ে যায়, স্বাস্থ্যসেবায় চাপ বৃদ্ধি পায়। এই ভাবনা রাজনৈতিক মঞ্চে দৃঢ় হয়ে ওঠে। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো হয়ে দাঁড়ায় “নিরাপদ প্রতিশ্রুতি”। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থনৈতিক কারণে শিক্ষার্থী চায়, সরকার চায় সংখ্যা কমানো। এই দ্বন্দ্বের প্রথম আঘাত পড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ওপর।
যখন শিক্ষার্থী ভিসা রিফিউজাল পায়, তা ব্যক্তিগত ক্ষতি। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ রিফিউজ হলে দেশ হয়ে ওঠে পরিসংখ্যান-একটি রিস্ক রেট। একেকজনের ভুল সামষ্টিক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর যারা ভুয়া কাগজে আবেদন করেছে, দায়িত্বহীন মানুষদের কাছে নিজেদের ভবিষ্যৎ দিয়েছে-তারা অনিচ্ছায় পুরো দেশকে এই অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
ব্রিটেনের নীতিতেও বৈপরীত্য আছে। একদিকে তারা বলে-আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচবে না। অন্যদিকে, নিয়ম এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়ই ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি নিতে ভয় পায়। এতে ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থী ও ব্রিটেনের অর্থনীতির। প্রায় ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড এর অর্থনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ওপর নির্ভরশীল। এর একটি বড় অংশ আসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও। রাজনৈতিক বাস্তবতা মাঝে মাঝে অর্থনীতিকেও পিছনে ফেলে-এটি সংকটের মূল বৈপরীত্য।
তবু আলো আছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বন্ধ করেনি। যারা সঠিক কাগজপত্র জমা দিচ্ছে, সঠিক কোর্স বেছে নিচ্ছে, আর্থিক প্রস্তুতি দেখাচ্ছে-তাদের আবেদন মসৃণভাবে এগোচ্ছে। এক কথায়, যোগ্যতার দরজা এখনও খোলা। ব্রিটেন এখন স্বচ্ছতা ও প্রস্তুতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন ভুল কাগজ মানেই রিফিউজাল; একটি সন্দেহজনক স্টেটমেন্ট মানেই দেশ ঝুঁকিতে।
এই সংকট আমাদের জন্য আঘাত হলেও, এটি শিক্ষণীয়। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনকে একপাক্ষিকভাবে বেছে এসেছে। এখন সময় এসেছে ভাবার-কেন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, জাপানকে নতুনভাবে বিবেচনা করা হবে না? বিশ্ব তো এক দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। সুযোগের মানচিত্র পরিবর্তনশীল। ব্রিটেন যদি কঠিন পথ তৈরি করে, অন্য দেশগুলো উন্মুক্ত পথ দেখাচ্ছে।
ব্রিটেন পুরোপুরি দূরে যাবে এমন ভাবা ভুল। তারা এখনও জানে-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মেধাবী, পরিশ্রমী, গবেষণায় দক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের বাদ দিলে ক্যাম্পাস অর্ধেক নিস্তব্ধ হয়ে যাবে। তাই এই সংকটকে দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা মনে করলে ভুল হবে। এটি সাময়িক কড়াকড়ি, যা ভবিষ্যতে যুক্তিসঙ্গত পথে ফিরে আসবে, যদি আমরা প্রস্তুতি জোরদার করি।
এই দৃশ্যপট আমাদের শেখায়-দরজা কখনো পুরোপুরি বন্ধ থাকে না। কখনো শুধু কড়া নেড়ে খুলতে হয়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরিচয় দৃঢ়ভাবে জানাতে হয়। আজ বিশ্ববিদ্যালয় সংকোচে, একদিন তা কেটে যাবে। এই সময় শিক্ষার্থীদের সতর্ক হওয়া, সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া, দায়িত্বহীন মানুষদের হাত থেকে দূরে থাকা জরুরি।
যে সমাজ জানে সে কোথায় যাচ্ছে, তার পথ চিরদিন বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। ব্রিটেনের নীতির শীত একদিন কেটে যাবে; বসন্ত আসবে। প্রস্তুতদের কাছে বসন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সেই প্রস্তুতির যোগ্য-এটাই আমাদের শক্তি, আশার আলো।
বাংলাদেশি ছাত্ররা মেধাবী, পরিশ্রমী, বিশ্বদরবারে সফল। তাই আজ দরজায় তালা লাগলেও, কাল তা খুলবেই। এবার দরজা খুলবে নিয়মতান্ত্রিক, স্বচ্ছতার মাধ্যমে। সেই পথে আমাদের চলতে হবে-দোষারোপ নয়, প্রস্তুতির; অভিযোগ নয়, প্রমাণের; হতাশা নয়, আশার। আমরা যে শিক্ষার্থী, আমরা যে ভবিষ্যৎ-এটিই বিশ্বের দরজার চাবি।
[লেখক: পরিচালক, গ্রেডলিংক এডুকেশনাল কনসাল্টেন্সি]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ফকর উদ্দিন মানিক
রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চোখে স্বপ্নের আলো-হাতে অফার লেটার, কাঁধে ব্যাকপ্যাক, মনে দেশের আশা। ব্রিটেনে পড়ার স্বপ্ন তাদের কাছে এক পবিত্র তীর্থযাত্রার মতো। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্বপ্নের দরজায় ঝুলে গেল সতর্কতার তালা-“ভর্তি স্থগিত”। প্রথমে মনে হয়, হয়তো বৈষম্য। তবে ধীরে ধীরে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে-এটি একপাক্ষিক সমস্যা নয়, বরং বহু বছরের জমে থাকা ভুল, আন্তর্জাতিক শিক্ষাবাজারের চাপ, এবং রাজনৈতিক উত্তাপের মিলিত ফলাফল।
যে সমাজ জানে সে কোথায় যাচ্ছে, তার পথ চিরদিন বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। ব্রিটেনের নীতির শীত একদিন কেটে যাবে; বসন্ত আসবে। প্রস্তুতদের কাছে বসন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সেই প্রস্তুতির যোগ্য-এটাই আমাদের শক্তি, আশার আলো
দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনকে উচ্চশিক্ষার স্বর্গভূমি হিসেবে দেখেছে। টেমস নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন জ্ঞানের অনন্ত আহ্বান জানায়। কিন্তু আজ সেই পথে দাঁড়িয়ে আছে এক অদৃশ্য দরজা-যার ওপর লেখা “হাই রিস্ক”। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নাম তালিকায়। বিশ্ববিদ্যালয় বলছে-নিরাপত্তার কারণে, শিক্ষার্থীরা বলছে-বৈষম্য। বাস্তবতা মাঝখানে, গল্পের চেয়ে কঠিন।
যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি ভিসা রিফিউজাল রেটের সীমা ১০% থেকে কমিয়ে ৫% করেছে। এর বেশি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পনসর লাইসেন্স ঝুঁকিতে পড়ে। বাংলাদেশের রিফিউজাল রেট প্রায় ২২%। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখছে, এই সংখ্যার কারণে ভিসা রিফিউজালের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রথম পদক্ষেপ-“সাময়িক ভর্তি স্থগিত”-যেন বজ্রপাত থেকে আশ্রয় নেওয়া।
প্রশ্ন আসে-দোষ আমাদের কি পুরোপুরি? সত্যি কথা হলো-উভয় পক্ষের কিছু দোষ আছে। আমাদের দেশে বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেক সময় কাঠামোহীন। শিক্ষার্থীরা ব্যাংক স্টেটমেন্ট ধার করে এনে, কখনো একদিনে হিসাব ফুলিয়ে আবেদন করে। কেউ এসওপি লিখে না; এজেন্সির তৈরি একই কপি শত শত ফাইলে পড়ে। কোর্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার বদলে আবেগ প্রাধান্য পায়। ভিসা অফিসারের হাতে এসব ফাইল গেলে সন্দেহ জন্মায়। এই সন্দেহই সামষ্টিকভাবে দেশের রিস্ক রেট বাড়ায়।
ব্রিটিশদের দোষও কম নয়। ব্রিটেনে অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ। সাধারণ মানুষ মনে করে-অভিবাসী বাড়লে চাকরি কমে, বাড়িভাড়া বেড়ে যায়, স্বাস্থ্যসেবায় চাপ বৃদ্ধি পায়। এই ভাবনা রাজনৈতিক মঞ্চে দৃঢ় হয়ে ওঠে। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো হয়ে দাঁড়ায় “নিরাপদ প্রতিশ্রুতি”। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থনৈতিক কারণে শিক্ষার্থী চায়, সরকার চায় সংখ্যা কমানো। এই দ্বন্দ্বের প্রথম আঘাত পড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ওপর।
যখন শিক্ষার্থী ভিসা রিফিউজাল পায়, তা ব্যক্তিগত ক্ষতি। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ রিফিউজ হলে দেশ হয়ে ওঠে পরিসংখ্যান-একটি রিস্ক রেট। একেকজনের ভুল সামষ্টিক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর যারা ভুয়া কাগজে আবেদন করেছে, দায়িত্বহীন মানুষদের কাছে নিজেদের ভবিষ্যৎ দিয়েছে-তারা অনিচ্ছায় পুরো দেশকে এই অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
ব্রিটেনের নীতিতেও বৈপরীত্য আছে। একদিকে তারা বলে-আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচবে না। অন্যদিকে, নিয়ম এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়ই ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি নিতে ভয় পায়। এতে ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থী ও ব্রিটেনের অর্থনীতির। প্রায় ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড এর অর্থনীতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ওপর নির্ভরশীল। এর একটি বড় অংশ আসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও। রাজনৈতিক বাস্তবতা মাঝে মাঝে অর্থনীতিকেও পিছনে ফেলে-এটি সংকটের মূল বৈপরীত্য।
তবু আলো আছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বন্ধ করেনি। যারা সঠিক কাগজপত্র জমা দিচ্ছে, সঠিক কোর্স বেছে নিচ্ছে, আর্থিক প্রস্তুতি দেখাচ্ছে-তাদের আবেদন মসৃণভাবে এগোচ্ছে। এক কথায়, যোগ্যতার দরজা এখনও খোলা। ব্রিটেন এখন স্বচ্ছতা ও প্রস্তুতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন ভুল কাগজ মানেই রিফিউজাল; একটি সন্দেহজনক স্টেটমেন্ট মানেই দেশ ঝুঁকিতে।
এই সংকট আমাদের জন্য আঘাত হলেও, এটি শিক্ষণীয়। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ব্রিটেনকে একপাক্ষিকভাবে বেছে এসেছে। এখন সময় এসেছে ভাবার-কেন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, জাপানকে নতুনভাবে বিবেচনা করা হবে না? বিশ্ব তো এক দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। সুযোগের মানচিত্র পরিবর্তনশীল। ব্রিটেন যদি কঠিন পথ তৈরি করে, অন্য দেশগুলো উন্মুক্ত পথ দেখাচ্ছে।
ব্রিটেন পুরোপুরি দূরে যাবে এমন ভাবা ভুল। তারা এখনও জানে-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মেধাবী, পরিশ্রমী, গবেষণায় দক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের বাদ দিলে ক্যাম্পাস অর্ধেক নিস্তব্ধ হয়ে যাবে। তাই এই সংকটকে দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা মনে করলে ভুল হবে। এটি সাময়িক কড়াকড়ি, যা ভবিষ্যতে যুক্তিসঙ্গত পথে ফিরে আসবে, যদি আমরা প্রস্তুতি জোরদার করি।
এই দৃশ্যপট আমাদের শেখায়-দরজা কখনো পুরোপুরি বন্ধ থাকে না। কখনো শুধু কড়া নেড়ে খুলতে হয়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরিচয় দৃঢ়ভাবে জানাতে হয়। আজ বিশ্ববিদ্যালয় সংকোচে, একদিন তা কেটে যাবে। এই সময় শিক্ষার্থীদের সতর্ক হওয়া, সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া, দায়িত্বহীন মানুষদের হাত থেকে দূরে থাকা জরুরি।
যে সমাজ জানে সে কোথায় যাচ্ছে, তার পথ চিরদিন বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। ব্রিটেনের নীতির শীত একদিন কেটে যাবে; বসন্ত আসবে। প্রস্তুতদের কাছে বসন্ত সবচেয়ে উজ্জ্বল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সেই প্রস্তুতির যোগ্য-এটাই আমাদের শক্তি, আশার আলো।
বাংলাদেশি ছাত্ররা মেধাবী, পরিশ্রমী, বিশ্বদরবারে সফল। তাই আজ দরজায় তালা লাগলেও, কাল তা খুলবেই। এবার দরজা খুলবে নিয়মতান্ত্রিক, স্বচ্ছতার মাধ্যমে। সেই পথে আমাদের চলতে হবে-দোষারোপ নয়, প্রস্তুতির; অভিযোগ নয়, প্রমাণের; হতাশা নয়, আশার। আমরা যে শিক্ষার্থী, আমরা যে ভবিষ্যৎ-এটিই বিশ্বের দরজার চাবি।
[লেখক: পরিচালক, গ্রেডলিংক এডুকেশনাল কনসাল্টেন্সি]