alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

কৃষি ডেটা ব্যবস্থাপনা

রিশাদ আহমেদ

: রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
image

কিশোরগঞ্জ : শ্যালো মেশিনে পুকুরের পানি শুকিয়ে পুকুরের মাছ লুট -সংবাদ

মাঠে আজ শুধুই লাঙল নেই, আছে হিসাবের খাতা। যে জমিতে একদিন ফসলের গন্ধেই সিদ্ধান্ত হতো, সেখানে এখন সংখ্যাও কথা বলে। বৃষ্টির সময়, বীজের ধরন, সেচের পরিমাণ, রোগের লক্ষণ-সব কিছু ধরা থাকে এক নতুন খাতায়। এই খাতার পাতায় লেখা থাকে আগামী দিনের আশঙ্কা আর সম্ভাবনা। কৃষক এখন শুধু হালচাষি নন, তিনি নিজের জমির রক্ষক, হিসাবরক্ষক ও সিদ্ধান্তদাতা।

মাঠে আজ শুধুই লাঙল নেই, আছে হিসাবের খাতা। যে জমিতে একদিন ফসলের গন্ধেই সিদ্ধান্ত হতো, সেখানে এখন সংখ্যাও কথা বলে। বৃষ্টির সময়, বীজের ধরন, সেচের পরিমাণ, রোগের লক্ষণ-সব কিছু ধরা থাকে এক নতুন খাতায়। এই খাতার পাতায় লেখা থাকে আগামী দিনের আশঙ্কা আর সম্ভাবনা। কৃষক এখন শুধু হালচাষি নন, তিনি নিজের জমির রক্ষক, হিসাবরক্ষক ও সিদ্ধান্তদাতা

দেশের কৃষি আজ বড় চাপে। আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি আর বাজারের অস্থিরতা কৃষককে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করাচ্ছে। আগের মতো কেবল অভিজ্ঞতা দিয়ে চলা এখন কঠিন। কোন জমিতে কোন ফসল লাভজনক হবে, কতটুকু সার দিলে ফলন বাড়বে, কখন বৃষ্টি নামতে পারে-এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তথ্য ছাড়া পাওয়া যায় না। সেই প্রয়োজন থেকেই কৃষিতে তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনার দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকছে দেশ।

সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে কৃষকের জমির পরিমাণ, মাটির ধরন, চাষের ধরন নথিভুক্ত করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন কীভাবে নিজেদের ফসলের তথ্য সংরক্ষণ করতে হয়। শিক্ষিত তরুণেরা পারিবারিক জমির হিসাব নিজে রাখছে। একসময় যে কৃষি পুরোপুরি অভিজ্ঞতানির্ভর ছিল, সেখানে এখন যুক্ত হচ্ছে নিয়মিত তথ্য সংরক্ষণের চর্চা।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আট হাজার কৃষকের ওপর চালানো এক জরিপে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। যেসব কৃষক নিয়মিত জমি, সেচ, সার ও ফসলের তথ্য লিখে রাখছেন, তাদের উৎপাদন গড়ে কুড়ি শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যারা হিসাব রাখছেন, তাদের ব্যয় কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। অপ্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ কমায় খরচ বেঁচেছে, রোগ আগেভাগে ধরায় ক্ষতিও কম হয়েছে।

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, নারী কৃষকদের মধ্যে তথ্য সংরক্ষণের আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। অনেক নারী নিজের হাতে হিসাব রেখে সংসারের কৃষি সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তরুণ কৃষকেরা বাজারদরের আগাম ধারণা নিয়ে ফসল নির্বাচন করছেন। তবে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি কৃষক এখনও এই ব্যবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হতে পারেননি। অনেকেই জানেন না কীভাবে শুরু করবেন, আবার কেউ প্রযুক্তিকে ভয় পান।

এই ব্যবস্থায় যুক্ত না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু বাস্তব কারণ আছে। প্রথমত, শিক্ষার ঘাটতি। অনেক কৃষক নিয়মিত হিসাব লেখার অভ্যাসে অভ্যস্ত নন। দ্বিতীয়ত, প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা। অনেক জায়গায় একদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়, ফলে কৃষক প্রয়োগের সময় আটকে যান। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ ও সংযোগ সমস্যাও বড় বাধা। অনেক এলাকায় এখনও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই, ফলে তথ্য সংরক্ষণও অনিয়মিত হয়।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো আস্থার সংকট। অনেক কৃষক মনে করেন, নিজের জমির তথ্য অন্যের কাছে গেলে ক্ষতি হতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ নিয়ে তাদের উদ্বেগ বাস্তব। পাশাপাশি সরকারি সেবা পেতে দেরি হওয়ায় আগ্রহ হারান অনেকেই। যখন সমস্যা জানিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, তখন প্রযুক্তির ওপর ভরসা কমে যায়।

এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে মাঠপর্যায়ে ধারাবাহিক সহায়তা বাড়াতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি। প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি তথ্য সহায়তা কেন্দ্র শক্তিশালী করতে হবে। সেখানে গিয়ে কৃষক যেন সরাসরি সমস্যা জানাতে পারেন। ভাষা হতে হবে সহজ, নির্দেশনা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক। কাগজে লেখা কঠিন হলে ছবি ও চিহ্নের মাধ্যমে তথ্য রাখার পদ্ধতি শেখাতে হবে।

যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে সহজ কিস্তির ব্যবস্থা জরুরি। অনেক কৃষক চান, কিন্তু এককালীন খরচ দিতে পারেন না। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ভর্তুকির সুযোগ বাড়ালে অংশগ্রহণ বাড়বে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে স্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে। কৃষককে জানাতে হবে, তার তথ্য কার হাতে যাচ্ছে এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বাস তৈরি করা। মাঠে মাঠে উদাহরণ দেখাতে হবে, কীভাবে তথ্য ব্যবস্থাপনা একজন কৃষকের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে। যখন একজন কৃষক আরেকজনের উন্নতি নিজের চোখে দেখবেন, তখন আগ্রহ আপনাআপনি বাড়বে।

কৃষিতে তথ্য ব্যবস্থাপনা কোনো বিলাসিতা নয়, সময়ের দাবি। আজ যে কৃষক নিজের জমির হিসাব রাখছেন, তিনিই আগামী দিনের সফল কৃষক। উন্নত কৃষি মানে শুধু ভাল বীজ নয়, সঠিক সিদ্ধান্ত। আর সঠিক সিদ্ধান্তের ভিত্তি হলো তথ্য।

যদি রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও মাঠের মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তাহলে এই দেশে কৃষি আর কেবল সংগ্রামের নাম থাকবে না; হয়ে উঠবে পরিকল্পনার নাম। কৃষকের হাতে যখন তথ্য থাকবে, তখন তিনি আর অসহায় নন-তিনি ভবিষ্যতের স্থপতি।

[লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

যুক্তরাজ্যে ভর্তি স্থগিতের কুয়াশা: তালা লাগলেও চাবি আমাদের হাতে

শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ

জাতীয় রক্তগ্রুপ নির্ণয় দিবস

জাল সনদপত্রে শিক্ষকতা

সাধারণ চুক্তিগুলোও গোপনীয় কেন

ছবি

শিশুখাদ্যের নিরাপত্তা: জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রথম শর্ত

ছবি

ফিনল্যান্ড কেন সুখী দেশ

ছবি

কৃষকের সংকট ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

ই-বর্জ্য: নীরব বিষে দগ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ

ঢাকার জনপরিসর: আর্ভিং গফম্যানের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না!

কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে লোকালাইজেশন অপরিহার্য

আইসিইউ থেকে বাড়ি ফেরা ও খাদের কিনারায় থাকা দেশ

বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় কার?

ছবি

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা কৌশল

অযৌক্তিক দাবি: পেশাগত নৈতিকতার সংকট ও জনপ্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকট

কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্জন্ম

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

ভূমিকম্প, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা: মানসিকতার নতুন অর্থনীতি

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

কৃষি ডেটা ব্যবস্থাপনা

রিশাদ আহমেদ

image

কিশোরগঞ্জ : শ্যালো মেশিনে পুকুরের পানি শুকিয়ে পুকুরের মাছ লুট -সংবাদ

রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

মাঠে আজ শুধুই লাঙল নেই, আছে হিসাবের খাতা। যে জমিতে একদিন ফসলের গন্ধেই সিদ্ধান্ত হতো, সেখানে এখন সংখ্যাও কথা বলে। বৃষ্টির সময়, বীজের ধরন, সেচের পরিমাণ, রোগের লক্ষণ-সব কিছু ধরা থাকে এক নতুন খাতায়। এই খাতার পাতায় লেখা থাকে আগামী দিনের আশঙ্কা আর সম্ভাবনা। কৃষক এখন শুধু হালচাষি নন, তিনি নিজের জমির রক্ষক, হিসাবরক্ষক ও সিদ্ধান্তদাতা।

মাঠে আজ শুধুই লাঙল নেই, আছে হিসাবের খাতা। যে জমিতে একদিন ফসলের গন্ধেই সিদ্ধান্ত হতো, সেখানে এখন সংখ্যাও কথা বলে। বৃষ্টির সময়, বীজের ধরন, সেচের পরিমাণ, রোগের লক্ষণ-সব কিছু ধরা থাকে এক নতুন খাতায়। এই খাতার পাতায় লেখা থাকে আগামী দিনের আশঙ্কা আর সম্ভাবনা। কৃষক এখন শুধু হালচাষি নন, তিনি নিজের জমির রক্ষক, হিসাবরক্ষক ও সিদ্ধান্তদাতা

দেশের কৃষি আজ বড় চাপে। আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি আর বাজারের অস্থিরতা কৃষককে প্রতিদিন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করাচ্ছে। আগের মতো কেবল অভিজ্ঞতা দিয়ে চলা এখন কঠিন। কোন জমিতে কোন ফসল লাভজনক হবে, কতটুকু সার দিলে ফলন বাড়বে, কখন বৃষ্টি নামতে পারে-এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তথ্য ছাড়া পাওয়া যায় না। সেই প্রয়োজন থেকেই কৃষিতে তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনার দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকছে দেশ।

সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে কৃষকের জমির পরিমাণ, মাটির ধরন, চাষের ধরন নথিভুক্ত করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন কীভাবে নিজেদের ফসলের তথ্য সংরক্ষণ করতে হয়। শিক্ষিত তরুণেরা পারিবারিক জমির হিসাব নিজে রাখছে। একসময় যে কৃষি পুরোপুরি অভিজ্ঞতানির্ভর ছিল, সেখানে এখন যুক্ত হচ্ছে নিয়মিত তথ্য সংরক্ষণের চর্চা।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আট হাজার কৃষকের ওপর চালানো এক জরিপে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। যেসব কৃষক নিয়মিত জমি, সেচ, সার ও ফসলের তথ্য লিখে রাখছেন, তাদের উৎপাদন গড়ে কুড়ি শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যারা হিসাব রাখছেন, তাদের ব্যয় কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। অপ্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ কমায় খরচ বেঁচেছে, রোগ আগেভাগে ধরায় ক্ষতিও কম হয়েছে।

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, নারী কৃষকদের মধ্যে তথ্য সংরক্ষণের আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। অনেক নারী নিজের হাতে হিসাব রেখে সংসারের কৃষি সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তরুণ কৃষকেরা বাজারদরের আগাম ধারণা নিয়ে ফসল নির্বাচন করছেন। তবে বাস্তব চিত্র পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি কৃষক এখনও এই ব্যবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হতে পারেননি। অনেকেই জানেন না কীভাবে শুরু করবেন, আবার কেউ প্রযুক্তিকে ভয় পান।

এই ব্যবস্থায় যুক্ত না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু বাস্তব কারণ আছে। প্রথমত, শিক্ষার ঘাটতি। অনেক কৃষক নিয়মিত হিসাব লেখার অভ্যাসে অভ্যস্ত নন। দ্বিতীয়ত, প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতা। অনেক জায়গায় একদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়, ফলে কৃষক প্রয়োগের সময় আটকে যান। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ ও সংযোগ সমস্যাও বড় বাধা। অনেক এলাকায় এখনও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই, ফলে তথ্য সংরক্ষণও অনিয়মিত হয়।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো আস্থার সংকট। অনেক কৃষক মনে করেন, নিজের জমির তথ্য অন্যের কাছে গেলে ক্ষতি হতে পারে। ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ নিয়ে তাদের উদ্বেগ বাস্তব। পাশাপাশি সরকারি সেবা পেতে দেরি হওয়ায় আগ্রহ হারান অনেকেই। যখন সমস্যা জানিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, তখন প্রযুক্তির ওপর ভরসা কমে যায়।

এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে মাঠপর্যায়ে ধারাবাহিক সহায়তা বাড়াতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি। প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি তথ্য সহায়তা কেন্দ্র শক্তিশালী করতে হবে। সেখানে গিয়ে কৃষক যেন সরাসরি সমস্যা জানাতে পারেন। ভাষা হতে হবে সহজ, নির্দেশনা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক। কাগজে লেখা কঠিন হলে ছবি ও চিহ্নের মাধ্যমে তথ্য রাখার পদ্ধতি শেখাতে হবে।

যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে সহজ কিস্তির ব্যবস্থা জরুরি। অনেক কৃষক চান, কিন্তু এককালীন খরচ দিতে পারেন না। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ভর্তুকির সুযোগ বাড়ালে অংশগ্রহণ বাড়বে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে স্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে। কৃষককে জানাতে হবে, তার তথ্য কার হাতে যাচ্ছে এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বাস তৈরি করা। মাঠে মাঠে উদাহরণ দেখাতে হবে, কীভাবে তথ্য ব্যবস্থাপনা একজন কৃষকের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে। যখন একজন কৃষক আরেকজনের উন্নতি নিজের চোখে দেখবেন, তখন আগ্রহ আপনাআপনি বাড়বে।

কৃষিতে তথ্য ব্যবস্থাপনা কোনো বিলাসিতা নয়, সময়ের দাবি। আজ যে কৃষক নিজের জমির হিসাব রাখছেন, তিনিই আগামী দিনের সফল কৃষক। উন্নত কৃষি মানে শুধু ভাল বীজ নয়, সঠিক সিদ্ধান্ত। আর সঠিক সিদ্ধান্তের ভিত্তি হলো তথ্য।

যদি রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও মাঠের মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তাহলে এই দেশে কৃষি আর কেবল সংগ্রামের নাম থাকবে না; হয়ে উঠবে পরিকল্পনার নাম। কৃষকের হাতে যখন তথ্য থাকবে, তখন তিনি আর অসহায় নন-তিনি ভবিষ্যতের স্থপতি।

[লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top