alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

প্রমাণ তো করতে হবে আমরা হাসিনার চেয়ে ভালো

আনোয়ারুল হক

: সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

গত ২৭ নভেম্বর শুরু হয়েছে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ বিষয়াবলি’ বিষয়ের পরীক্ষা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) করা ঐ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন’।

জুলাই আন্দোলনের পরিণতিতে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস দেশে আসেন। ঐদিন বিমান বন্দরে আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের পাশে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা যাবে না। আমরা কেউ কারও শত্রু নই, একসঙ্গে থাকব। তিনি আরো বলেছিলেন, আমার কথা শুনতে হবে। যদি না শোনেন, তাহলে বলেন, আমি নিজের কাজে ফিরে যাব। ইউনূস যেহেতু চলে যাননি, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে তার কথা তার নিয়োগকর্তারাসহ সবাই শুনেছেন

বিজয়ের মাসে পিএসসি বাঙালি নিধন যজ্ঞে মেতে ওঠা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর নাম নিতে সাহস পাচ্ছে না। নয় মাস জুড়ে গণহত্যার বর্বরতার দায় থেকে পেয়ারে পাকিস্তানকে আড়াল করতে শুধু ‘দখলদার বাহিনী’ উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পিএসসির কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ মনে হয় ভাশুরের নাম না নেওয়ার মতো বিষয়। তাই প্রশ্নপত্রে মুক্তিযুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ’ নামে। এ বিষয়ে পিএসসি বা সরকার মুখ খুলতে নারাজ। জুলাই আন্দোলনে তো সাধারণ ছাত্র-তরুণরা, শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত মানুষ ‘পাকিস্তান প্রেম’ প্রদর্শনের জন্য শামিল হয়নি।

জুলাই আন্দোলনের পরিণতিতে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস দেশে আসেন। ঐদিন বিমান বন্দরে আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের পাশে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা যাবে না। আমরা কেউ কারও শত্রু নই, একসঙ্গে থাকব। তিনি আরো বলেছিলেন, আমার কথা শুনতে হবে। যদি না শোনেন, তাহলে বলেন, আমি নিজের কাজে ফিরে যাব। ইউনূস যেহেতু চলে যাননি, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে তার কথা তার নিয়োগকর্তারাসহ সবাই শুনেছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের যত স্মৃতি, এই ডিসেম্বরের বিজয়ের যত স্মৃতি ভাংচুর হয়েছে, মন্দির মাজার ভাংচুর হয়েছে, মব উল্লম্ফনের মাধ্যমে আইন হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে, নির্বিচারে যারতার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেয়া হয়েছে - এসবে তিনি তুষ্ট। তাই তিনি আছেন। নিজ কাজে ফিরে যাননি।

আছেন শুধু নয়, ‘আল জাজিরা’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছিলেন লোকে তার সরকারকে ৫ বছর, ১০ বছর এমনকি কেউ কেউ নাকি ৫০ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় দেখতে চায়। শেখ হাসিনা নেই, গণভবনও নেই। কিন্তু আওয়ামী মার্কা বয়ান তবু থেমে নেই। শেখ হাসিনা দিনের ভোট রাতে করতেন, আমি-ডামি করতেন। মুখ তারপরও চলতে থাকতো ‘জনগণ আমাদেরকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়’। দিন পাল্টেছে। জনগণ এখন ইউনূসকে দেখতে চায়। ৫ বা ১০ বা ৫০ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। দেখতে থাকি, এই দেশে সব সম্ভব! তবে যেহেতু ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ হিসেবে শপথ নিয়ে ফেলেছেন, এখান থেকে এক্সিটের জন্য নির্বাচন লাগবে; তাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক নির্বাচনী আয়োজন করতে হচ্ছে।

যারা দেশটার স্বাধীনতার বিরোধিতা করলো, ’৭১-এ পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে অভিন্ন অবস্থান নিলো, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের বুকে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত করলো তারা নাকি আজ রাজত্ব ও মসনদ চায়। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নাকি সেই ফরমান জারি করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এমন ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন যে দেশের বুকে এক উগ্রবাদী ধর্মান্ধ শক্তির উত্থান হয়েছে যা সমাজে, রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর আমাদের সমাজ ও রাজনীতির ভিতরে ভারসাম্যের সংকট এতা তীব্র হয়ে দেখা দেবে তা ছিল কল্পনাতীত। ইউনূস সরকারের কথা যেহেতু সবাই শুনছেন এবং তাকে নিজ কাজে চলে যেতে হয়নি তাই এর দায় তো তার উপরেই বর্তায়। চাঁদাবাজি, লুটপাট,ভাঙচুর ও মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, দখলদারির বিরুদ্ধে শুরুতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে সীমা লঙ্ঘনকারীরা এতা বাড় বাড়তে পারত না।

সমাজে যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তা খোলাখুলি বলেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, ‘ আমার নিজের ধারণা, আমরা হয়তো অনেক বেশি, কিছুটা উচ্চাভিলাষী সংস্কার করে ফেলেছি, যা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে হজম করা বা সহ্য করা কঠিন হতে পারে’। শুধু সংস্কারের প্রশ্নে নয়, রাজনীতি-অর্থনীতিতে যা কিছু অতিরিক্ত, যা কিছু সময়ের সাথে সামঞ্জস?্যপূর্ন নয় তাই তো ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। রাজনীতি ও সমাজে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোনো দল কি নিজ দলের মধ্যেই ধর্মভিত্তিক বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে? যে বিভাজনের নেতিবাচক প্রভাব সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র শাখা, যুব শাখা, শ্রমিক শাখা, কৃষক শাখা, পেশাভিত্তিক নানা শাখা এবং রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে রাখার কারণে নারীদের জন্য নারী শাখা থাকতে পারে বা আছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের ধর্মভিত্তিক শাখা, যেমন হিন্দু শাখা, মুসলমান শাখা, খ্রিস্টান শাখা বা বৌদ্ধ শাখা করা কি একটি গণতান্ত্রিক ও সভ্যদেশে বিধিসম্মত? নির্বাচন কমিশন এটা মেনে নিলে তো এর মাধ্যমে সমাজে আইনসংগতভাবে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে এ নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে জামাতী মিছিলে শামিল করানো হচ্ছে। এই জোরজবরদস্তি ও ভীতি প্রদর্শন সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মনস্তত্ত্বাতিক জগতে যে প্রভাব ফেলছে তাতে করে উগ্র হিন্দুত্ববাদও দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আর মোদি-যোগীরা তো সে অপেক্ষায়ই আছেন।

জামায়াত ইসলাম বা ইসলামি ধর্মীয় সংগঠনসমূহের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কায়েম করা। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কি ঠ্যাকা পড়েছে দেশে শরিয়াহ শাসন কায়েমের সংগ্রামে জামাতে ইসলামে শামিল হওয়ার। জামায়াত সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছেন। খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন। এখন সেই পরিস্থিতি ছড়িয়ে দিতে চাইছেন দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়ও। সংসদ সদস্য করার প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ শাসনামলের মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণ নন্দীকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘হিন্দু জামায়াত’ নামক আজব সংগঠন গড়ে তোলার কাজে। এসবের ফলে দেশের বুকে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে যা নিজ (সংখ্যালঘু) সম্প্রদায়ের মধ্যেও সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। জামায়াত ও তার মিত্র দলসমূহ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাতে করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অচিরেই ‘জান্নাতুল বাকি বা জান্নাতুল মুয়াল্লায়’ জায়গা খুঁজে নিতে বাধ্য হবে। এর দায়ভার কি অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারবে?

জামায়াত ইসলাম অবশ্য আরেকটি শাখা করতে পারে। জুলাই আন্দোলনের সময়ে কিছু সংখ্যক অবিশ্বাসী বা অজ্ঞাতবাদী ‘গরমেও উলের টুপি পরা’ এক বুদ্ধিজীবীর নেতৃত্বে জামায়াত ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সমর্থন দিয়েছিল। তারা যদি শরিয়াহ আইন পালনে সম্মত হন তাহলে তাদের নিয়ে ‘জামাতের অবিশ্বাসী শাখা’ গঠন করলে মন্দ হয় না।

তাহলে সব মিলিয়ে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হলেও হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এবং তার বিদেশী বিশেষ সহকারীও হয়তোবা এতে তুষ্ট হবেন। দুনিয়ার বুকে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সংশয় আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমিত করার জন্য মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপে দেখা যায় সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেছেন। মজার বিষয় হলো এই একই সংস্থা ২০২৩ সনের আগস্ট মাসে প্রকাশিত জরিপে উল্লেখ করেছিলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাবান ছিলেন দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। আইআরআইয়ের ২০২৩ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, দেশের অর্ধেক মানুষ দেশের তৎকালীন গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ বলেছিলেন। এই জরিপের ফলাফলেও কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পতিত সরকার অপেক্ষা খুব একটা বেশী মার্ক পান নাই! অবশ্য আইআরআই জরিপের ফলাফল নিকট অতীতের এবং বর্তমানের ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই যাচ্ছে এমনকি ক্ষমতাসীন কোনো সরকার প্রধান স্বৈরাচারী হলেও। এ ধরনের জরিপে এবং জরিপের অন্যান্য তথ্যের উপর কেমন করে আস্থা রাখা যায়?

মুহাম্মদ ইউনূস ও তার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ঘনিষ্ঠ দৈনিক প্রথম আলোর জরিপেও যে চিত্র উঠে এসেছে তা বর্তমান সরকারের পক্ষে আহামরি কিছু নয়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী ইউনূস যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন তাতে ৫% মানুষ অত্যন্ত সন্তুষ্ট। ঐ ৫% মানুষই তাকে ৫ কি ১০ কি ৫০ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষই তার কাজে সন্তুষ্ট নন বা নির্লিপ্ত। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃস্টি হচ্ছে বলে মনে করেন না অথবা সন্দিহান। জরিপের ফলাফল নিশ্চয়ই ইউনূস ও তার সরকারের জন্য সুখকর নয়। জরিপটরিপ যাই বলুক না কেনো দেশের বুকে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। রাজনীতি দিন দিন অসুস্থ থেকে অসুস্থতর হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোটের প্রচার শুরু করলেও এমনকি শীঘ্রই তফশিল ঘোষণা হলেও ভোট হবে কিনা, হলে কেমন ধরনের ভোট হবে তা নিয়ে সন্দেহ অবিশ্বাস দানা বাঁধছে।

মনে রাখা প্রয়োজন শেখ হাসিনা শাসনের অবসান শুধুমাত্র কোটা আন্দোলন এবং জুলাই হত্যাযজ্ঞের কারণে হয় নাই। কোটা আন্দোলনকে যদি তিনি সঠিকভাবে সামাল দিতেও পারতেন তাহলেও হয়তো বা ক’দিন পর অন্য কোনো ইস্যুতে জনবিচ্ছিন্ন সরকারের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ হতো। পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না করে একতরফা নির্বাচন করে জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, বিরোধীদের উপর ব্যাপক দমনপীড়ন, আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাট, পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ও পারিবারিককরন করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপকভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই পটভূমিতে কোটা আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে শুধুমাত্র আন্দোলনের কাছে নয়, পর্দার আড়ালের নানা কূটকৌশলের কাছেও হাসিনাকে হার মানতে হয়।

বর্তমান সরকারের আমলেও কি একতরফা নির্বাচনের বদলে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা হচ্ছে, এখনো কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, না নির্বিচার খুনের মামলা দিয়ে দমন-পীড়ন চলছে, আদালতকে কি প্রভাবিত করা হচ্ছে না জামিন না মঞ্জুর করতে, মব সন্ত্রাস কি বন্ধ করা যাচ্ছে, নারীর স্বাধীনভাবে ও নিশ্চিন্ত চলাফেরা কি নিশ্চিত করা যাচ্ছে, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন-চাঁদাবাজি ও নীরব মানসিক নির্যাতন কি বন্ধ করা যাচ্ছে, দ্রব্য মূল্য কি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে, কর্মসংস্থান কি সৃষ্টি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে কি রক্ষা করা যাচ্ছে, বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ধারে কাছেও কি আমরা আছি? এসবের উত্তর হ্যা হলে খুশী হয়ে বলা যেত আমরা হাসিনা অপেক্ষা ভালো। কিন্তু তা বলার সুযোগ শাসকেরা এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট রাজনীতিকরা সৃষ্টি হতে দিচ্ছেন না। তবে শেষ পর্যন্ত অন্তত একটি অবাধ নিরপেক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সকল দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারলে বলা যেতো বর্তমান শাসকরা শেখ হাসিনা অপেক্ষা ভালো।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

[লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা]

জোটের ভোট নাকি ভোটের জোট, কৌশলটা কী?

ছবি

কৃষি ডেটা ব্যবস্থাপনা

যুক্তরাজ্যে ভর্তি স্থগিতের কুয়াশা: তালা লাগলেও চাবি আমাদের হাতে

শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ

জাতীয় রক্তগ্রুপ নির্ণয় দিবস

জাল সনদপত্রে শিক্ষকতা

সাধারণ চুক্তিগুলোও গোপনীয় কেন

ছবি

শিশুখাদ্যের নিরাপত্তা: জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রথম শর্ত

ছবি

ফিনল্যান্ড কেন সুখী দেশ

ছবি

কৃষকের সংকট ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

ই-বর্জ্য: নীরব বিষে দগ্ধ আমাদের ভবিষ্যৎ

ঢাকার জনপরিসর: আর্ভিং গফম্যানের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আলু চাষের আধুনিক প্রযুক্তি

কলি ফুটিতে চাহে ফোটে না!

কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে লোকালাইজেশন অপরিহার্য

আইসিইউ থেকে বাড়ি ফেরা ও খাদের কিনারায় থাকা দেশ

বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় কার?

ছবি

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা কৌশল

অযৌক্তিক দাবি: পেশাগত নৈতিকতার সংকট ও জনপ্রশাসন

সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় সংকট

কেন বাড়ছে দারিদ্র্য?

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্জন্ম

লবণাক্ততায় ডুবছে উপকূল

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও বাস্তবতা

সড়ক দুর্ঘটনার সমাজতত্ত্ব: আইন প্রয়োগের ব্যর্থতা ও কাঠামোর চক্রাকার পুনরুৎপাদন

ছবি

অস্থির সময় ও অস্থির সমাজের পাঁচালি

ভারতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ: ব্যাধি ও প্রতিকার

চিপনির্ভরতা কাটিয়ে চীনের উত্থান

একতার বাতাসে উড়ুক দক্ষিণ এশিয়ার পতাকা

ছবি

স্মরণ: শহীদ ডা. মিলন ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থার সংগ্রাম

মনে পুরানো দিনের কথা আসে, মনে আসে, ফিরে আসে...

রাসায়নিক দূষণ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি

আছদগঞ্জের শুটকি : অতীতের গৌরব, বর্তমানের দুঃসময়

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

প্রমাণ তো করতে হবে আমরা হাসিনার চেয়ে ভালো

আনোয়ারুল হক

সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

গত ২৭ নভেম্বর শুরু হয়েছে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ বিষয়াবলি’ বিষয়ের পরীক্ষা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) করা ঐ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন’।

জুলাই আন্দোলনের পরিণতিতে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস দেশে আসেন। ঐদিন বিমান বন্দরে আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের পাশে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা যাবে না। আমরা কেউ কারও শত্রু নই, একসঙ্গে থাকব। তিনি আরো বলেছিলেন, আমার কথা শুনতে হবে। যদি না শোনেন, তাহলে বলেন, আমি নিজের কাজে ফিরে যাব। ইউনূস যেহেতু চলে যাননি, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে তার কথা তার নিয়োগকর্তারাসহ সবাই শুনেছেন

বিজয়ের মাসে পিএসসি বাঙালি নিধন যজ্ঞে মেতে ওঠা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর নাম নিতে সাহস পাচ্ছে না। নয় মাস জুড়ে গণহত্যার বর্বরতার দায় থেকে পেয়ারে পাকিস্তানকে আড়াল করতে শুধু ‘দখলদার বাহিনী’ উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পিএসসির কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ মনে হয় ভাশুরের নাম না নেওয়ার মতো বিষয়। তাই প্রশ্নপত্রে মুক্তিযুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ’ নামে। এ বিষয়ে পিএসসি বা সরকার মুখ খুলতে নারাজ। জুলাই আন্দোলনে তো সাধারণ ছাত্র-তরুণরা, শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত মানুষ ‘পাকিস্তান প্রেম’ প্রদর্শনের জন্য শামিল হয়নি।

জুলাই আন্দোলনের পরিণতিতে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস দেশে আসেন। ঐদিন বিমান বন্দরে আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের পাশে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা যাবে না। আমরা কেউ কারও শত্রু নই, একসঙ্গে থাকব। তিনি আরো বলেছিলেন, আমার কথা শুনতে হবে। যদি না শোনেন, তাহলে বলেন, আমি নিজের কাজে ফিরে যাব। ইউনূস যেহেতু চলে যাননি, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে তার কথা তার নিয়োগকর্তারাসহ সবাই শুনেছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের যত স্মৃতি, এই ডিসেম্বরের বিজয়ের যত স্মৃতি ভাংচুর হয়েছে, মন্দির মাজার ভাংচুর হয়েছে, মব উল্লম্ফনের মাধ্যমে আইন হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে, নির্বিচারে যারতার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেয়া হয়েছে - এসবে তিনি তুষ্ট। তাই তিনি আছেন। নিজ কাজে ফিরে যাননি।

আছেন শুধু নয়, ‘আল জাজিরা’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছিলেন লোকে তার সরকারকে ৫ বছর, ১০ বছর এমনকি কেউ কেউ নাকি ৫০ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় দেখতে চায়। শেখ হাসিনা নেই, গণভবনও নেই। কিন্তু আওয়ামী মার্কা বয়ান তবু থেমে নেই। শেখ হাসিনা দিনের ভোট রাতে করতেন, আমি-ডামি করতেন। মুখ তারপরও চলতে থাকতো ‘জনগণ আমাদেরকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়’। দিন পাল্টেছে। জনগণ এখন ইউনূসকে দেখতে চায়। ৫ বা ১০ বা ৫০ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। দেখতে থাকি, এই দেশে সব সম্ভব! তবে যেহেতু ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ হিসেবে শপথ নিয়ে ফেলেছেন, এখান থেকে এক্সিটের জন্য নির্বাচন লাগবে; তাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক নির্বাচনী আয়োজন করতে হচ্ছে।

যারা দেশটার স্বাধীনতার বিরোধিতা করলো, ’৭১-এ পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে অভিন্ন অবস্থান নিলো, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের বুকে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত করলো তারা নাকি আজ রাজত্ব ও মসনদ চায়। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নাকি সেই ফরমান জারি করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এমন ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন যে দেশের বুকে এক উগ্রবাদী ধর্মান্ধ শক্তির উত্থান হয়েছে যা সমাজে, রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর আমাদের সমাজ ও রাজনীতির ভিতরে ভারসাম্যের সংকট এতা তীব্র হয়ে দেখা দেবে তা ছিল কল্পনাতীত। ইউনূস সরকারের কথা যেহেতু সবাই শুনছেন এবং তাকে নিজ কাজে চলে যেতে হয়নি তাই এর দায় তো তার উপরেই বর্তায়। চাঁদাবাজি, লুটপাট,ভাঙচুর ও মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, দখলদারির বিরুদ্ধে শুরুতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে সীমা লঙ্ঘনকারীরা এতা বাড় বাড়তে পারত না।

সমাজে যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তা খোলাখুলি বলেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, ‘ আমার নিজের ধারণা, আমরা হয়তো অনেক বেশি, কিছুটা উচ্চাভিলাষী সংস্কার করে ফেলেছি, যা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে হজম করা বা সহ্য করা কঠিন হতে পারে’। শুধু সংস্কারের প্রশ্নে নয়, রাজনীতি-অর্থনীতিতে যা কিছু অতিরিক্ত, যা কিছু সময়ের সাথে সামঞ্জস?্যপূর্ন নয় তাই তো ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। রাজনীতি ও সমাজে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোনো দল কি নিজ দলের মধ্যেই ধর্মভিত্তিক বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে? যে বিভাজনের নেতিবাচক প্রভাব সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র শাখা, যুব শাখা, শ্রমিক শাখা, কৃষক শাখা, পেশাভিত্তিক নানা শাখা এবং রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে রাখার কারণে নারীদের জন্য নারী শাখা থাকতে পারে বা আছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের ধর্মভিত্তিক শাখা, যেমন হিন্দু শাখা, মুসলমান শাখা, খ্রিস্টান শাখা বা বৌদ্ধ শাখা করা কি একটি গণতান্ত্রিক ও সভ্যদেশে বিধিসম্মত? নির্বাচন কমিশন এটা মেনে নিলে তো এর মাধ্যমে সমাজে আইনসংগতভাবে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে এ নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে জামাতী মিছিলে শামিল করানো হচ্ছে। এই জোরজবরদস্তি ও ভীতি প্রদর্শন সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মনস্তত্ত্বাতিক জগতে যে প্রভাব ফেলছে তাতে করে উগ্র হিন্দুত্ববাদও দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আর মোদি-যোগীরা তো সে অপেক্ষায়ই আছেন।

জামায়াত ইসলাম বা ইসলামি ধর্মীয় সংগঠনসমূহের প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কায়েম করা। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কি ঠ্যাকা পড়েছে দেশে শরিয়াহ শাসন কায়েমের সংগ্রামে জামাতে ইসলামে শামিল হওয়ার। জামায়াত সেক্রেটারি গোলাম পরওয়ার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছেন। খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন। এখন সেই পরিস্থিতি ছড়িয়ে দিতে চাইছেন দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়ও। সংসদ সদস্য করার প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ শাসনামলের মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ কৃষ্ণ নন্দীকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘হিন্দু জামায়াত’ নামক আজব সংগঠন গড়ে তোলার কাজে। এসবের ফলে দেশের বুকে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে যা নিজ (সংখ্যালঘু) সম্প্রদায়ের মধ্যেও সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। জামায়াত ও তার মিত্র দলসমূহ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাতে করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অচিরেই ‘জান্নাতুল বাকি বা জান্নাতুল মুয়াল্লায়’ জায়গা খুঁজে নিতে বাধ্য হবে। এর দায়ভার কি অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারবে?

জামায়াত ইসলাম অবশ্য আরেকটি শাখা করতে পারে। জুলাই আন্দোলনের সময়ে কিছু সংখ্যক অবিশ্বাসী বা অজ্ঞাতবাদী ‘গরমেও উলের টুপি পরা’ এক বুদ্ধিজীবীর নেতৃত্বে জামায়াত ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সমর্থন দিয়েছিল। তারা যদি শরিয়াহ আইন পালনে সম্মত হন তাহলে তাদের নিয়ে ‘জামাতের অবিশ্বাসী শাখা’ গঠন করলে মন্দ হয় না।

তাহলে সব মিলিয়ে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি হলেও হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান এবং তার বিদেশী বিশেষ সহকারীও হয়তোবা এতে তুষ্ট হবেন। দুনিয়ার বুকে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সংশয় আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমিত করার জন্য মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপে দেখা যায় সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেছেন। মজার বিষয় হলো এই একই সংস্থা ২০২৩ সনের আগস্ট মাসে প্রকাশিত জরিপে উল্লেখ করেছিলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাবান ছিলেন দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। আইআরআইয়ের ২০২৩ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল, দেশের অর্ধেক মানুষ দেশের তৎকালীন গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ বলেছিলেন। এই জরিপের ফলাফলেও কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পতিত সরকার অপেক্ষা খুব একটা বেশী মার্ক পান নাই! অবশ্য আইআরআই জরিপের ফলাফল নিকট অতীতের এবং বর্তমানের ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই যাচ্ছে এমনকি ক্ষমতাসীন কোনো সরকার প্রধান স্বৈরাচারী হলেও। এ ধরনের জরিপে এবং জরিপের অন্যান্য তথ্যের উপর কেমন করে আস্থা রাখা যায়?

মুহাম্মদ ইউনূস ও তার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ঘনিষ্ঠ দৈনিক প্রথম আলোর জরিপেও যে চিত্র উঠে এসেছে তা বর্তমান সরকারের পক্ষে আহামরি কিছু নয়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী ইউনূস যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন তাতে ৫% মানুষ অত্যন্ত সন্তুষ্ট। ঐ ৫% মানুষই তাকে ৫ কি ১০ কি ৫০ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষই তার কাজে সন্তুষ্ট নন বা নির্লিপ্ত। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃস্টি হচ্ছে বলে মনে করেন না অথবা সন্দিহান। জরিপের ফলাফল নিশ্চয়ই ইউনূস ও তার সরকারের জন্য সুখকর নয়। জরিপটরিপ যাই বলুক না কেনো দেশের বুকে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। রাজনীতি দিন দিন অসুস্থ থেকে অসুস্থতর হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোটের প্রচার শুরু করলেও এমনকি শীঘ্রই তফশিল ঘোষণা হলেও ভোট হবে কিনা, হলে কেমন ধরনের ভোট হবে তা নিয়ে সন্দেহ অবিশ্বাস দানা বাঁধছে।

মনে রাখা প্রয়োজন শেখ হাসিনা শাসনের অবসান শুধুমাত্র কোটা আন্দোলন এবং জুলাই হত্যাযজ্ঞের কারণে হয় নাই। কোটা আন্দোলনকে যদি তিনি সঠিকভাবে সামাল দিতেও পারতেন তাহলেও হয়তো বা ক’দিন পর অন্য কোনো ইস্যুতে জনবিচ্ছিন্ন সরকারের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ হতো। পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না করে একতরফা নির্বাচন করে জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, বিরোধীদের উপর ব্যাপক দমনপীড়ন, আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাট, পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ও পারিবারিককরন করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার ব্যাপকভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সেই পটভূমিতে কোটা আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে শুধুমাত্র আন্দোলনের কাছে নয়, পর্দার আড়ালের নানা কূটকৌশলের কাছেও হাসিনাকে হার মানতে হয়।

বর্তমান সরকারের আমলেও কি একতরফা নির্বাচনের বদলে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা হচ্ছে, এখনো কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, না নির্বিচার খুনের মামলা দিয়ে দমন-পীড়ন চলছে, আদালতকে কি প্রভাবিত করা হচ্ছে না জামিন না মঞ্জুর করতে, মব সন্ত্রাস কি বন্ধ করা যাচ্ছে, নারীর স্বাধীনভাবে ও নিশ্চিন্ত চলাফেরা কি নিশ্চিত করা যাচ্ছে, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন-চাঁদাবাজি ও নীরব মানসিক নির্যাতন কি বন্ধ করা যাচ্ছে, দ্রব্য মূল্য কি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে, কর্মসংস্থান কি সৃষ্টি হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে কি রক্ষা করা যাচ্ছে, বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ধারে কাছেও কি আমরা আছি? এসবের উত্তর হ্যা হলে খুশী হয়ে বলা যেত আমরা হাসিনা অপেক্ষা ভালো। কিন্তু তা বলার সুযোগ শাসকেরা এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট রাজনীতিকরা সৃষ্টি হতে দিচ্ছেন না। তবে শেষ পর্যন্ত অন্তত একটি অবাধ নিরপেক্ষ অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সকল দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারলে বলা যেতো বর্তমান শাসকরা শেখ হাসিনা অপেক্ষা ভালো।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

[লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা]

back to top