সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
বোধের মননে অপার নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে পারার নামই তো জীবন। কিন্তু নীল দেদীপ্যমান এ ভূগোলে আমরা কতোজনই বা সে জীবনের সন্ধান পাইঘন সংবদ্ধ সবুজ প্রেমে অনেকেই আবিষ্ট হই বটে, কিন্তু এ প্রেম অন্যকে বিলিয়ে দিতে কতোজন সক্ষম হই? নন্দন নৌকায় বসে আটলান্টিকের ঢেউয়ের সাথে দোল খেতে খেতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে কার না ইচ্ছে করে, কিন্তু আমরা কি পারছি সেভাবে এগিয়ে যেতে? বর্ণাক্ষরের ভাষায় রচিত গ্লানির দীক্ষা আজকাল শূন্যে ভাসছে! শব্দ তার স্বীয় জিভের ক্ষুধা মেটানোর জন্যে মারাত্মক ভাবে ঈর্ষাপরায়ন হয়ে উঠছে। কবিতার পিঠের ভাঁজে ভাঁজে অমসৃণতার রূঢ় ছাপ। জীবনের চারুপাঠে ভেঙে যাচ্ছে সব কলাকৈবল্য। মগজে লালিত হচ্ছে নীচুতা। বিরাজ করছে সর্বত্র হিংসার হাসি। চলছে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া, বিষ ঢেলে দেয়া তথা “প্রপাগান্ডার শিরোমণি” নামক গোত্রটির রামরাজত্ব!
কিন্তু কেনো? অন্ধকার চিরে আলোর কুসুম ছড়িয়ে দেয়াইতো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হওয়ার কথা। সে প্রবৃত্তি থেকে কেনো মানুষ দিন দিন সড়ে যাচ্ছে? কেনো জাগতিক প্রীতি ও মায়ার বন্ধন আর্টিফিশিয়াল হয়ে ওঠছে? ঐতিহ্য ও সভ্যতা কেনো আজ বীর্যহীন কেনো নষ্ট ও নষ্টামির শিখায় জ্বলছে মানুষের সম্মান? কে এ জন্য দায়ী? একসময় মনে করতাম মানুষই তার কর্ম এবং তার জীবনের জন্য দায়ী। কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হয় তার চেয়েও বেশি দায়ী সময়। “সময়ের লজ্জা” বলতে যা বোঝায় তা একেবারেই নেই। এ নির্লজ্জ সময়ে যে যা না সে ঠিক তাই হয়ে উঠছে। বেড়ালকে সিংহ হতে দেখা যাচ্ছে, ঘাট আঘাট হচ্ছে, কখনও সন্তান পিতা হয়ে ওঠছে, আবার কখনও বা মানুষ চারপায়ার রূপ ধারণ করছে!
বিবর্তনের এ দুঃসময়ে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এককালে রাখাল বাঁশি বাজাতে বজাতে মাঠে গরুর পাল চড়াতো। সন্ধ্যায় গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরতো। এখন আর সে দৃশ্য নেই। দুপুরের তপ্ত রোদে মেঠোপথ ধরে স্বজনের বাড়ি অভিমুখে হেঁটে চলা পথিকের সাক্ষাৎ এখন আর মেলেনা। কিংবা ক্লান্ত পথিককে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থেকে বিশ্রাম নিতে অথবা শিমুল গাছ থেকে অনবরত ঝরতে থাকা শিমুল ফুল কুড়ানোর দৃশ্য মোটেও চোখে পড়ে না। বৈশাখী রাতে চাঁদের আলোয় যে কল্পকাহিনী বা কিসসার আসর জমে ওঠতো তাও হারিয়ে গিয়েছে কালের আবর্তে। ঢাকা থেকে কেউ গ্রামে ফিরলে দল বেঁধে লোকজন তার বাড়িতে ভিড় জমাতো। ঢাকার খবর জানতে চাইতো, ঢাকার গল্প শুনতে চাইতো। এখন ঢাকা তো দূরের কথা লন্ডন থেকে গেলেও কেউ কারও দিকে ফিরে তাকায়না। মানুষ যেনো এখন আর মানুষ নেই। অনেকটা রোবটিক হয়ে গিয়েছে। এই রোবটিক মানুষ গুলোকে রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত বা জীবনানন্দ কেউ কাছে টানতে পারেনা। এরা নিজের মতো করে চলে। সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ ভক্ত তারা। এ আই-এর একনিষ্ঠ সাগরেদ।
এই এআই-এর যুগে সবাই রাজা। কেউ কারো বাধ্যগত নয়। সবার হাতেই রয়েছে রাজদন্ড। কে ছোট, কে বড়ো, কে সম্মানী, কে গুরুজন, কে হলুদ, কে সাদা কিছুই কেউ ফরোয়া করেনা। বহুল প্রচলিত কথা, “ কাক কাকের মাংস খায় না।” এ কথার সত্যতাতেও এখন চিড় ধরেছে। আজকাল কাক কাকের মাংস খায়। বরং অনেক তৃপ্তি করে খায়। সত্যি কথা বলতে, মানুষের তুচ্ছ ও ক্রুরতা, শিষ্টাচারহীনতা, নীতিহীনতা, কূটবৃত্তি, জিঘাংসা, কুৎসা ও মিথ্যাযে কারসাজি, আপনাকে বড়ো ভাবা ও সস্তা খ্যাতির প্রবণতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা, বিভক্তির বিষতীর বিপন্ন ঝংকার তুলে পৃথিবীকে কুৎসিত তমিস্রার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে নিজেকে জানা জরুরি। নিজকে চেনা জরুরি। নিজেকে বদলানো জরুরি। বিলোল প্রজ্ঞার অভিজ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধ করা জরুরি। নিজের ভেতরে স্বীয় উপলব্ধির সারাৎসার খোঁজা জরুরি। তার চেয়েও বড়ো কথা, নিজের চেতনায় শুদ্ধির ফলা দিয়ে নিজেরই ঘা দেয়া জরুরি।
[লেখক: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
বোধের মননে অপার নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে পারার নামই তো জীবন। কিন্তু নীল দেদীপ্যমান এ ভূগোলে আমরা কতোজনই বা সে জীবনের সন্ধান পাইঘন সংবদ্ধ সবুজ প্রেমে অনেকেই আবিষ্ট হই বটে, কিন্তু এ প্রেম অন্যকে বিলিয়ে দিতে কতোজন সক্ষম হই? নন্দন নৌকায় বসে আটলান্টিকের ঢেউয়ের সাথে দোল খেতে খেতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে কার না ইচ্ছে করে, কিন্তু আমরা কি পারছি সেভাবে এগিয়ে যেতে? বর্ণাক্ষরের ভাষায় রচিত গ্লানির দীক্ষা আজকাল শূন্যে ভাসছে! শব্দ তার স্বীয় জিভের ক্ষুধা মেটানোর জন্যে মারাত্মক ভাবে ঈর্ষাপরায়ন হয়ে উঠছে। কবিতার পিঠের ভাঁজে ভাঁজে অমসৃণতার রূঢ় ছাপ। জীবনের চারুপাঠে ভেঙে যাচ্ছে সব কলাকৈবল্য। মগজে লালিত হচ্ছে নীচুতা। বিরাজ করছে সর্বত্র হিংসার হাসি। চলছে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া, বিষ ঢেলে দেয়া তথা “প্রপাগান্ডার শিরোমণি” নামক গোত্রটির রামরাজত্ব!
কিন্তু কেনো? অন্ধকার চিরে আলোর কুসুম ছড়িয়ে দেয়াইতো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হওয়ার কথা। সে প্রবৃত্তি থেকে কেনো মানুষ দিন দিন সড়ে যাচ্ছে? কেনো জাগতিক প্রীতি ও মায়ার বন্ধন আর্টিফিশিয়াল হয়ে ওঠছে? ঐতিহ্য ও সভ্যতা কেনো আজ বীর্যহীন কেনো নষ্ট ও নষ্টামির শিখায় জ্বলছে মানুষের সম্মান? কে এ জন্য দায়ী? একসময় মনে করতাম মানুষই তার কর্ম এবং তার জীবনের জন্য দায়ী। কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হয় তার চেয়েও বেশি দায়ী সময়। “সময়ের লজ্জা” বলতে যা বোঝায় তা একেবারেই নেই। এ নির্লজ্জ সময়ে যে যা না সে ঠিক তাই হয়ে উঠছে। বেড়ালকে সিংহ হতে দেখা যাচ্ছে, ঘাট আঘাট হচ্ছে, কখনও সন্তান পিতা হয়ে ওঠছে, আবার কখনও বা মানুষ চারপায়ার রূপ ধারণ করছে!
বিবর্তনের এ দুঃসময়ে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এককালে রাখাল বাঁশি বাজাতে বজাতে মাঠে গরুর পাল চড়াতো। সন্ধ্যায় গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরতো। এখন আর সে দৃশ্য নেই। দুপুরের তপ্ত রোদে মেঠোপথ ধরে স্বজনের বাড়ি অভিমুখে হেঁটে চলা পথিকের সাক্ষাৎ এখন আর মেলেনা। কিংবা ক্লান্ত পথিককে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থেকে বিশ্রাম নিতে অথবা শিমুল গাছ থেকে অনবরত ঝরতে থাকা শিমুল ফুল কুড়ানোর দৃশ্য মোটেও চোখে পড়ে না। বৈশাখী রাতে চাঁদের আলোয় যে কল্পকাহিনী বা কিসসার আসর জমে ওঠতো তাও হারিয়ে গিয়েছে কালের আবর্তে। ঢাকা থেকে কেউ গ্রামে ফিরলে দল বেঁধে লোকজন তার বাড়িতে ভিড় জমাতো। ঢাকার খবর জানতে চাইতো, ঢাকার গল্প শুনতে চাইতো। এখন ঢাকা তো দূরের কথা লন্ডন থেকে গেলেও কেউ কারও দিকে ফিরে তাকায়না। মানুষ যেনো এখন আর মানুষ নেই। অনেকটা রোবটিক হয়ে গিয়েছে। এই রোবটিক মানুষ গুলোকে রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত বা জীবনানন্দ কেউ কাছে টানতে পারেনা। এরা নিজের মতো করে চলে। সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ ভক্ত তারা। এ আই-এর একনিষ্ঠ সাগরেদ।
এই এআই-এর যুগে সবাই রাজা। কেউ কারো বাধ্যগত নয়। সবার হাতেই রয়েছে রাজদন্ড। কে ছোট, কে বড়ো, কে সম্মানী, কে গুরুজন, কে হলুদ, কে সাদা কিছুই কেউ ফরোয়া করেনা। বহুল প্রচলিত কথা, “ কাক কাকের মাংস খায় না।” এ কথার সত্যতাতেও এখন চিড় ধরেছে। আজকাল কাক কাকের মাংস খায়। বরং অনেক তৃপ্তি করে খায়। সত্যি কথা বলতে, মানুষের তুচ্ছ ও ক্রুরতা, শিষ্টাচারহীনতা, নীতিহীনতা, কূটবৃত্তি, জিঘাংসা, কুৎসা ও মিথ্যাযে কারসাজি, আপনাকে বড়ো ভাবা ও সস্তা খ্যাতির প্রবণতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা, বিভক্তির বিষতীর বিপন্ন ঝংকার তুলে পৃথিবীকে কুৎসিত তমিস্রার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে নিজেকে জানা জরুরি। নিজকে চেনা জরুরি। নিজেকে বদলানো জরুরি। বিলোল প্রজ্ঞার অভিজ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধ করা জরুরি। নিজের ভেতরে স্বীয় উপলব্ধির সারাৎসার খোঁজা জরুরি। তার চেয়েও বড়ো কথা, নিজের চেতনায় শুদ্ধির ফলা দিয়ে নিজেরই ঘা দেয়া জরুরি।
[লেখক: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী]