সমীর কুমার সাহা
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ-ইউএইচসি) কোনো বিলাসিতা নয়-এটি মৌলিক মানবাধিকার। তবু বাংলাদেশের বাস্তবতায় অসুস্থতা আজও লাখো মানুষের জন্য আর্থিক বিপর্যয়ের নাম। এই প্রেক্ষাপটে আজকের ইউএইচসি ডে ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য- “আনফরডেবল হেলথ কস্ট? উই আর সিক অফ ইট”-বাংলাদেশের জন্য যেন এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিধ্বনি। কারণ এ দেশে অসুস্থতা মানেই অনেক ক্ষেত্রে সর্বস্বান্ত হওয়া।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে নিঃসন্দেহে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু কমেছে, টিকাদানে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। কিন্তু এসব অর্জনের আড়ালে একটি গভীর সংকট দৃশ্যমান-দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষকে এখনো নিজ পকেট থেকে বহন করতে হয়
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে নিঃসন্দেহে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু কমেছে, টিকাদানে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। কিন্তু এসব অর্জনের আড়ালে একটি গভীর সংকট দৃশ্যমান-দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষকে এখনো নিজ পকেট থেকে বহন করতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই হার অন্যতম সর্বোচ্চ। এর মানে দাঁড়ায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা এখনো কার্যত সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা একটি ব্যয়বহুল পণ্যে রূপ নিয়েছে।
ক্যানসার, হৃদরোগ, কিডনি বিকল কিংবা ডায়াবেটিসের জটিলতা-এসব রোগ একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বহু সময় আজীবনের দারিদ্র?্যরে দরজা খুলে দেয়। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ সুদের ঋণের ফাঁদে পড়ে, কেউ আবার চিকিৎসার খরচ চালাতে না পেরে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে দেশে দারিদ্র?্যরে বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসাজনিত আর্থিক বিপর্যয়-যা উন্নয়নের অর্জনকেও ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
দুই ভিন্ন বাস্তবতার স্বাস্থ্যব্যবস্থা:
শহর ও গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য আজ স্পষ্টভাবে দুই ধরনের বাংলাদেশ তৈরি করেছে। শহরে আধুনিক হাসপাতাল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ থাকলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো চিকিৎসকসংকট, মানসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব ও জরুরি সেবার ঘাটতি প্রকট। অনেক অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ওষুধও নিয়মিত পাওয়া যায় না।
সরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর বেসরকারি হাসপাতাল আধুনিক হলেও সেগুলোর খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। স্বাস্থ্যসেবা ক্রমেই জনকল্যাণের সেবা না হয়ে ব্যবসায়িক পণ্যে রূপ নিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, অতিরিক্ত বিল ও নিয়ন্ত্রণহীন বাণিজ্যিকীকরণ মানুষের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
নীরব মহামারি ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়ের ফাঁদ:
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যানসার ও কিডনি রোগের মতো অসংক্রামক রোগ দেশে নীরব মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হলে আজীবন ওষুধ, নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এক ধরনের স্থায়ী অর্থনৈতিক শাস্তিতে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা যখন জীবনভর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তখন ইউএইচসি কেবল কাগুজে অঙ্গীকারেই সীমাবদ্ধ থাকে।
স্বাস্থ্যবিমা: সবচেয়ে বড় অনুপস্থিত সুরক্ষা
বাংলাদেশে এখনো একটি কার্যকর জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কিছু পাইলট প্রকল্প থাকলেও তা জনগণকে দুর্যোগী স্বাস্থ্য ব্যয় থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো শক্ত ভিত তৈরি করতে পারেনি। বাস্তবতা হলো-জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া ইউএইচসি কখনোই টেকসই হতে পারে না।
আয়ুর্বেদ ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা: উপেক্ষিত সম্ভাবনা
বাংলাদেশে আয়ুর্বেদ ইউনানী ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাব্যবস্থার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। হজমের সমস্যা, ব্যথা, মানসিক চাপ, অনিদ্রা কিংবা জীবনধারাজনিত নানা রোগে মানুষ আজও ভেষজ চিকিৎসার ওপর আস্থা রাখে।
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে আয়ুর্বেদ গুরুত্ব দেয়- রোগের আগেই প্রতিরোধে; স্বল্পমূল্যের প্রাকৃতিক উপাদানে; সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ভারসাম্যে:
আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আয়ুর্বেদকে জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার অংশ করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। কিন্তু গবেষণা, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে এ সম্ভাবনাকে আমরা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি।
যে সিদ্ধান্তগুলো এখনই জরুরি:
বাংলাদেশকে বাস্তব অর্থে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পথে নিতে হলে এখনই কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত জরুরি-
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভর্তুকিসহ জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা চালু;
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশে উন্নীত;
কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ডায়াগনস্টিক সেবা শক্তিশালী করা;
বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত;
প্রতিরোধমূলক সেবায় আয়ুর্বেদ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি;
গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমাতে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ও টেলিমেডিসিন সম্প্রসারণ।
স্লোগান থেকে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারে:
ইউএইচসি ডে ২০২৫-এর স্লোগান শুধু একটি বাক্য নয়-এটি সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের ভাষা। মানুষ আর চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার মধ্যে কোনোটিকে বেছে নিতে চায় না। স্বাস্থ্যজনিত দারিদ্র্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়-এটি নীতিগত ব্যর্থতা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণের ফল।
সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্পও শেষ পর্যন্ত অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই ইউএইচসি ডে-তে বাংলাদেশের দরকার প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব সুরক্ষা। কারণ মানুষ ইতিমধ্যেই অসহনীয় চিকিৎসা ব্যয়ে ক্লান্ত-এবং তারা এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চায়, যা সুস্থ করবে, সর্বনাশ নয়।
[লেখক: সাবেক নির্বাহী পরিচালক, পাবললিক হেলথ ফাউউন্ডডেশন বাংলাদেশ]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সমীর কুমার সাহা
শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ-ইউএইচসি) কোনো বিলাসিতা নয়-এটি মৌলিক মানবাধিকার। তবু বাংলাদেশের বাস্তবতায় অসুস্থতা আজও লাখো মানুষের জন্য আর্থিক বিপর্যয়ের নাম। এই প্রেক্ষাপটে আজকের ইউএইচসি ডে ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য- “আনফরডেবল হেলথ কস্ট? উই আর সিক অফ ইট”-বাংলাদেশের জন্য যেন এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিধ্বনি। কারণ এ দেশে অসুস্থতা মানেই অনেক ক্ষেত্রে সর্বস্বান্ত হওয়া।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে নিঃসন্দেহে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু কমেছে, টিকাদানে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। কিন্তু এসব অর্জনের আড়ালে একটি গভীর সংকট দৃশ্যমান-দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষকে এখনো নিজ পকেট থেকে বহন করতে হয়
বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে নিঃসন্দেহে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু কমেছে, টিকাদানে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। কিন্তু এসব অর্জনের আড়ালে একটি গভীর সংকট দৃশ্যমান-দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষকে এখনো নিজ পকেট থেকে বহন করতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই হার অন্যতম সর্বোচ্চ। এর মানে দাঁড়ায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা এখনো কার্যত সামাজিক সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা একটি ব্যয়বহুল পণ্যে রূপ নিয়েছে।
ক্যানসার, হৃদরোগ, কিডনি বিকল কিংবা ডায়াবেটিসের জটিলতা-এসব রোগ একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বহু সময় আজীবনের দারিদ্র?্যরে দরজা খুলে দেয়। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ সুদের ঋণের ফাঁদে পড়ে, কেউ আবার চিকিৎসার খরচ চালাতে না পেরে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে দেশে দারিদ্র?্যরে বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসাজনিত আর্থিক বিপর্যয়-যা উন্নয়নের অর্জনকেও ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
দুই ভিন্ন বাস্তবতার স্বাস্থ্যব্যবস্থা:
শহর ও গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য আজ স্পষ্টভাবে দুই ধরনের বাংলাদেশ তৈরি করেছে। শহরে আধুনিক হাসপাতাল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ থাকলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো চিকিৎসকসংকট, মানসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব ও জরুরি সেবার ঘাটতি প্রকট। অনেক অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ওষুধও নিয়মিত পাওয়া যায় না।
সরকারি হাসপাতালগুলো অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর বেসরকারি হাসপাতাল আধুনিক হলেও সেগুলোর খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। স্বাস্থ্যসেবা ক্রমেই জনকল্যাণের সেবা না হয়ে ব্যবসায়িক পণ্যে রূপ নিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, অতিরিক্ত বিল ও নিয়ন্ত্রণহীন বাণিজ্যিকীকরণ মানুষের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
নীরব মহামারি ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়ের ফাঁদ:
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যানসার ও কিডনি রোগের মতো অসংক্রামক রোগ দেশে নীরব মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হলে আজীবন ওষুধ, নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এক ধরনের স্থায়ী অর্থনৈতিক শাস্তিতে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা যখন জীবনভর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তখন ইউএইচসি কেবল কাগুজে অঙ্গীকারেই সীমাবদ্ধ থাকে।
স্বাস্থ্যবিমা: সবচেয়ে বড় অনুপস্থিত সুরক্ষা
বাংলাদেশে এখনো একটি কার্যকর জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কিছু পাইলট প্রকল্প থাকলেও তা জনগণকে দুর্যোগী স্বাস্থ্য ব্যয় থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো শক্ত ভিত তৈরি করতে পারেনি। বাস্তবতা হলো-জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া ইউএইচসি কখনোই টেকসই হতে পারে না।
আয়ুর্বেদ ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা: উপেক্ষিত সম্ভাবনা
বাংলাদেশে আয়ুর্বেদ ইউনানী ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাব্যবস্থার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। হজমের সমস্যা, ব্যথা, মানসিক চাপ, অনিদ্রা কিংবা জীবনধারাজনিত নানা রোগে মানুষ আজও ভেষজ চিকিৎসার ওপর আস্থা রাখে।
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে আয়ুর্বেদ গুরুত্ব দেয়- রোগের আগেই প্রতিরোধে; স্বল্পমূল্যের প্রাকৃতিক উপাদানে; সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ভারসাম্যে:
আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আয়ুর্বেদকে জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার অংশ করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। কিন্তু গবেষণা, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অভাবে এ সম্ভাবনাকে আমরা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি।
যে সিদ্ধান্তগুলো এখনই জরুরি:
বাংলাদেশকে বাস্তব অর্থে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পথে নিতে হলে এখনই কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত জরুরি-
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভর্তুকিসহ জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা চালু;
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশে উন্নীত;
কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ডায়াগনস্টিক সেবা শক্তিশালী করা;
বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত;
প্রতিরোধমূলক সেবায় আয়ুর্বেদ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি;
গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমাতে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ও টেলিমেডিসিন সম্প্রসারণ।
স্লোগান থেকে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারে:
ইউএইচসি ডে ২০২৫-এর স্লোগান শুধু একটি বাক্য নয়-এটি সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের ভাষা। মানুষ আর চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার মধ্যে কোনোটিকে বেছে নিতে চায় না। স্বাস্থ্যজনিত দারিদ্র্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়-এটি নীতিগত ব্যর্থতা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণের ফল।
সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্পও শেষ পর্যন্ত অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই ইউএইচসি ডে-তে বাংলাদেশের দরকার প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব সুরক্ষা। কারণ মানুষ ইতিমধ্যেই অসহনীয় চিকিৎসা ব্যয়ে ক্লান্ত-এবং তারা এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চায়, যা সুস্থ করবে, সর্বনাশ নয়।
[লেখক: সাবেক নির্বাহী পরিচালক, পাবললিক হেলথ ফাউউন্ডডেশন বাংলাদেশ]