ফকর উদ্দিন মানিক
বাংলাদেশ কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও সংগ্রামের এক সমৃদ্ধ মিশ্রণ। এই মাটিতে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টানরা সহাবস্থানের শিক্ষা দিয়েছে; আউল-বাউল, পীর-দরবেশ, চৈতন্য ও লালনের ভক্তি এই ভূখণ্ডকে আলোকিত করেছে; পাল, সেন, মুঘল, নবাবের শাসন এই দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বুননকে গভীর করেছে। এই হাজার বছরের ইতিহাসই আমাদের শেখায়, বৈচিত্র্য দমন করা যায় না; বৈচিত্র্যই শক্তি। কিন্তু প্রশ্ন হল-আমরা কি সেই শক্তিকে গ্রহণ করেছি? আজও বাংলাদেশ কি সত্যিই সবার দেশ? নাকি এখনো পরিচয়, ধর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক অবস্থান মানুষকে ভিন্ন মানের নাগরিক বানায়?
আজও বাংলাদেশ কি সত্যিই সবার দেশ? নাকি এখনো পরিচয়, ধর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক অবস্থান মানুষকে ভিন্ন মানের নাগরিক বানায়?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দিয়েছিল স্বাধীনতার আশ্বাস-শুধু ভূখণ্ড নয়, মানুষের মর্যাদার স্বাধীনতা। কিন্তু আজ অর্ধশতক পেরিয়ে আমরা দেখছি, সেই স্বাধীনতা এখনও পূর্ণভাবে সবার কাছে পৌঁছায়নি। ভিন্নমত প্রকাশ করার জন্য কেউ রাস্তায় কুপিয়ে মারা হয়, ধর্মীয় বিভাজনের নামে কোনো সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পুড়ে যায়, রাজনৈতিক বিরোধীকে গ্রেফতার করা হয়, সংখ্যালঘুরা তাদের জমি বা পূজা নিয়ে উদ্বেগে থাকে, নারীরা নিরাপদভাবে রাস্তায় চলতে পারে না। এই ভয়, এই অশান্তি আমাদের শেখায়-বাংলাদেশ এখনো সবার নয়।
আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করা মানেই কারো কবর থেকে লাশ তুলে দগ্ধ করার ভয় থাকবে না। যেখানে মিথ্যা অবমাননার দোহাই দিয়ে কাউকে নদীতে চুবিয়ে হত্যা করা হবে না। যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতকে অপরাধ হিসেবে দেখা হবে না। যেখানে চাঁদা না দেওয়ায় কারো মাথা পাথর দিয়ে থেঁতলিয়ে দেওয়া হবে না। যেখানে রাতে আধারে শুধু মত প্রকাশের জন্য কাউকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে না। যেখানে সংখ্যালঘু নাগরিকেরা নিজের জমি, বাড়ি, ঈশ্বরের প্রতীক নিয়ে নিরাপদ বোধ করবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে মানুষের পরিচয়ের সামনে দলমত, পথধারা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ধর্ম-বর্ণ সবই নত হবে। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষের পরিচয় একটাই-মানুষ।
হাজার বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসও আমাদের শেখায়-যেখানে বৈষম্য ও অত্যাচার হয়েছে, সেখানে সমাজ টেকেনি। সেনদের কঠোর হিন্দুত্ববাদ, ব্রিটিশদের বিভাজন নীতি, নবাব-সুলতানদের রাজনীতিক আগ্রাসন-সব মিলিয়ে এই ভূখণ্ডের মানুষের কাছে বারবার শিখিয়েছে, শক্তি দিয়ে মানুষকে দমন করা যায়, কিন্তু মানুষের আত্মাকে নয়। লালন, সুফি দরবেশ, বৈষ্ণব কবি-তাদের গান, আধ্যাত্মিকতা এবং মানবিক দর্শন আমাদের বলছে, মানুষের মর্যাদা ন্যায়ের ওপর দাঁড়াতে হবে, ভিন্নমতের সঙ্গে সহাবস্থা করতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহজ সত্য হলো-যে দেশ তার সবচেয়ে দুর্বল নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে দেশ তার সংখ্যাগরিষ্ঠকেও নিরাপদ রাখতে পারে না। সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী, রাজনৈতিক বিরোধী, ভিন্নমতাবলম্বী-যে কেউ নিরাপত্তাহীন বোধ করলে রাষ্ট্রের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশে আজও এই ভীতি সমাজে ঘূর্ণায়মান। রাজনৈতিক বিদ্বেষ, ধর্মীয় উগ্রবাদ, সামাজিক দমন-সবই নাগরিকদের জীবনকে শৃঙ্খলিত করে। তাই আমরা চাই, রাষ্ট্র এই ভয়কে দূর করে মানুষের মর্যাদাকে অটুট রাখুক।
অর্থনীতি ও উন্নয়নও এই সত্যকে সমর্থন করে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রেমিট্যান্স, প্রযুক্তি খাত-এই সমস্ত অর্জনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শহর-গ্রাম-সবাই অবদান রেখেছে। বৈচিত্র্যকে উপেক্ষা করলে এই অর্থনৈতিক অগ্রগতি টেকসই হতে পারে না। বৈষম্য শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, জাতীয় অগ্রগতির প্রতিও হুমকি।
শিক্ষা ও প্রশাসন এই ভবিষ্যৎ গঠনে মূল হাতিয়ার। শিক্ষা হবে সহনশীল, যুক্তিবাদী, মানবিক। প্রশাসন হবে নিরপেক্ষ, সতর্ক ও দায়বদ্ধ। মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হবে দায়িত্বশীল-গুজব ও ঘৃণার সংস্কৃতি নয়, তথ্য ও সহাবস্থানের শিক্ষা ছড়াবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালী হবে, রাতের আধারে গ্রেফতার, গুম বা দমন প্রথা থাকবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি হবে সহনশীল, বিরোধী মানেই শত্রু নয়-কেবল ভিন্নমত।
তরুণ প্রজন্মের হাতেই এই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা ধর্ম-বর্ণ দিয়ে মানুষকে মাপবে না, তাদের কাছে পরিচয় হবে শুধু মানুষের। তারা চায় সমান সুযোগ, নিরাপদ জীবন, শিক্ষার অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। তারা চায় এমন বাংলাদেশ যেখানে মানুষের মর্যাদা সংরক্ষিত। রাষ্ট্র যদি তাদের এই স্বপ্নকে সম্মান করে, তবে তারা দেশকে নিজের ঘর মনে করবে।
সুতরাং, সবার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে-যখন রাষ্ট্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাবে না, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, মানুষ ভিন্নমত প্রকাশ করতে নিরাপদ বোধ করবে, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয়ই নিজের ঘরে নিরাপদ থাকবে। তখন বাংলাদেশ হবে এমন-যেখানে মসজিদের আজান, মন্দিরের ঘণ্টা, গির্জার প্রার্থনা, বিহারের ধ্যান সব মিলেমিশে দেশের আবহ গড়ে তুলবে। যেখানে পরিচয়ের আগে মানুষ, সংখ্যা-বিশেষে নয়, ন্যায়ের আলোতে সমান হবে। যেখানে বৈষম্য থাকবে না, থাকবে বৈচিত্রে?্যর মর্যাদা।
বাংলাদেশ তখনই সবার হবে-যেদিন আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখব, পরিচয়ের আগে মানবতাকে রাখব, রাষ্ট্রকে সমতার ঘরে নিয়ে যাব। সেদিন ভোরের প্রথম আলো যেমন মাটি ছুঁয়ে আলোকিত হবে, তেমনি বাংলাদেশও আলোকিত হবে-সমান মর্যাদায়, সমান অধিকার নিয়ে, সমান মানবতায়। তখন বাংলাদেশ হবে কেবল ভূখণ্ড নয়, মানবিক নৈতিকতার এক চিরস্থায়ী সিংহাসন।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সভাপতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ফকর উদ্দিন মানিক
শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশ কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও সংগ্রামের এক সমৃদ্ধ মিশ্রণ। এই মাটিতে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টানরা সহাবস্থানের শিক্ষা দিয়েছে; আউল-বাউল, পীর-দরবেশ, চৈতন্য ও লালনের ভক্তি এই ভূখণ্ডকে আলোকিত করেছে; পাল, সেন, মুঘল, নবাবের শাসন এই দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বুননকে গভীর করেছে। এই হাজার বছরের ইতিহাসই আমাদের শেখায়, বৈচিত্র্য দমন করা যায় না; বৈচিত্র্যই শক্তি। কিন্তু প্রশ্ন হল-আমরা কি সেই শক্তিকে গ্রহণ করেছি? আজও বাংলাদেশ কি সত্যিই সবার দেশ? নাকি এখনো পরিচয়, ধর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক অবস্থান মানুষকে ভিন্ন মানের নাগরিক বানায়?
আজও বাংলাদেশ কি সত্যিই সবার দেশ? নাকি এখনো পরিচয়, ধর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক অবস্থান মানুষকে ভিন্ন মানের নাগরিক বানায়?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দিয়েছিল স্বাধীনতার আশ্বাস-শুধু ভূখণ্ড নয়, মানুষের মর্যাদার স্বাধীনতা। কিন্তু আজ অর্ধশতক পেরিয়ে আমরা দেখছি, সেই স্বাধীনতা এখনও পূর্ণভাবে সবার কাছে পৌঁছায়নি। ভিন্নমত প্রকাশ করার জন্য কেউ রাস্তায় কুপিয়ে মারা হয়, ধর্মীয় বিভাজনের নামে কোনো সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পুড়ে যায়, রাজনৈতিক বিরোধীকে গ্রেফতার করা হয়, সংখ্যালঘুরা তাদের জমি বা পূজা নিয়ে উদ্বেগে থাকে, নারীরা নিরাপদভাবে রাস্তায় চলতে পারে না। এই ভয়, এই অশান্তি আমাদের শেখায়-বাংলাদেশ এখনো সবার নয়।
আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করা মানেই কারো কবর থেকে লাশ তুলে দগ্ধ করার ভয় থাকবে না। যেখানে মিথ্যা অবমাননার দোহাই দিয়ে কাউকে নদীতে চুবিয়ে হত্যা করা হবে না। যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতকে অপরাধ হিসেবে দেখা হবে না। যেখানে চাঁদা না দেওয়ায় কারো মাথা পাথর দিয়ে থেঁতলিয়ে দেওয়া হবে না। যেখানে রাতে আধারে শুধু মত প্রকাশের জন্য কাউকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে না। যেখানে সংখ্যালঘু নাগরিকেরা নিজের জমি, বাড়ি, ঈশ্বরের প্রতীক নিয়ে নিরাপদ বোধ করবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে মানুষের পরিচয়ের সামনে দলমত, পথধারা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ধর্ম-বর্ণ সবই নত হবে। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষের পরিচয় একটাই-মানুষ।
হাজার বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসও আমাদের শেখায়-যেখানে বৈষম্য ও অত্যাচার হয়েছে, সেখানে সমাজ টেকেনি। সেনদের কঠোর হিন্দুত্ববাদ, ব্রিটিশদের বিভাজন নীতি, নবাব-সুলতানদের রাজনীতিক আগ্রাসন-সব মিলিয়ে এই ভূখণ্ডের মানুষের কাছে বারবার শিখিয়েছে, শক্তি দিয়ে মানুষকে দমন করা যায়, কিন্তু মানুষের আত্মাকে নয়। লালন, সুফি দরবেশ, বৈষ্ণব কবি-তাদের গান, আধ্যাত্মিকতা এবং মানবিক দর্শন আমাদের বলছে, মানুষের মর্যাদা ন্যায়ের ওপর দাঁড়াতে হবে, ভিন্নমতের সঙ্গে সহাবস্থা করতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহজ সত্য হলো-যে দেশ তার সবচেয়ে দুর্বল নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে দেশ তার সংখ্যাগরিষ্ঠকেও নিরাপদ রাখতে পারে না। সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী, রাজনৈতিক বিরোধী, ভিন্নমতাবলম্বী-যে কেউ নিরাপত্তাহীন বোধ করলে রাষ্ট্রের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশে আজও এই ভীতি সমাজে ঘূর্ণায়মান। রাজনৈতিক বিদ্বেষ, ধর্মীয় উগ্রবাদ, সামাজিক দমন-সবই নাগরিকদের জীবনকে শৃঙ্খলিত করে। তাই আমরা চাই, রাষ্ট্র এই ভয়কে দূর করে মানুষের মর্যাদাকে অটুট রাখুক।
অর্থনীতি ও উন্নয়নও এই সত্যকে সমর্থন করে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রেমিট্যান্স, প্রযুক্তি খাত-এই সমস্ত অর্জনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শহর-গ্রাম-সবাই অবদান রেখেছে। বৈচিত্র্যকে উপেক্ষা করলে এই অর্থনৈতিক অগ্রগতি টেকসই হতে পারে না। বৈষম্য শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, জাতীয় অগ্রগতির প্রতিও হুমকি।
শিক্ষা ও প্রশাসন এই ভবিষ্যৎ গঠনে মূল হাতিয়ার। শিক্ষা হবে সহনশীল, যুক্তিবাদী, মানবিক। প্রশাসন হবে নিরপেক্ষ, সতর্ক ও দায়বদ্ধ। মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হবে দায়িত্বশীল-গুজব ও ঘৃণার সংস্কৃতি নয়, তথ্য ও সহাবস্থানের শিক্ষা ছড়াবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালী হবে, রাতের আধারে গ্রেফতার, গুম বা দমন প্রথা থাকবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি হবে সহনশীল, বিরোধী মানেই শত্রু নয়-কেবল ভিন্নমত।
তরুণ প্রজন্মের হাতেই এই দেশের ভবিষ্যৎ। তারা ধর্ম-বর্ণ দিয়ে মানুষকে মাপবে না, তাদের কাছে পরিচয় হবে শুধু মানুষের। তারা চায় সমান সুযোগ, নিরাপদ জীবন, শিক্ষার অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। তারা চায় এমন বাংলাদেশ যেখানে মানুষের মর্যাদা সংরক্ষিত। রাষ্ট্র যদি তাদের এই স্বপ্নকে সম্মান করে, তবে তারা দেশকে নিজের ঘর মনে করবে।
সুতরাং, সবার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে-যখন রাষ্ট্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাবে না, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, মানুষ ভিন্নমত প্রকাশ করতে নিরাপদ বোধ করবে, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয়ই নিজের ঘরে নিরাপদ থাকবে। তখন বাংলাদেশ হবে এমন-যেখানে মসজিদের আজান, মন্দিরের ঘণ্টা, গির্জার প্রার্থনা, বিহারের ধ্যান সব মিলেমিশে দেশের আবহ গড়ে তুলবে। যেখানে পরিচয়ের আগে মানুষ, সংখ্যা-বিশেষে নয়, ন্যায়ের আলোতে সমান হবে। যেখানে বৈষম্য থাকবে না, থাকবে বৈচিত্রে?্যর মর্যাদা।
বাংলাদেশ তখনই সবার হবে-যেদিন আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখব, পরিচয়ের আগে মানবতাকে রাখব, রাষ্ট্রকে সমতার ঘরে নিয়ে যাব। সেদিন ভোরের প্রথম আলো যেমন মাটি ছুঁয়ে আলোকিত হবে, তেমনি বাংলাদেশও আলোকিত হবে-সমান মর্যাদায়, সমান অধিকার নিয়ে, সমান মানবতায়। তখন বাংলাদেশ হবে কেবল ভূখণ্ড নয়, মানবিক নৈতিকতার এক চিরস্থায়ী সিংহাসন।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সভাপতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]