রম্যগদ্য
জাঁ-নেসার ওসমান
“ভাই হেই ১৯৭১ সালের ১৪ই, ডিসেম্বর, পিরায় ৫৪ বছর আগে বুদ্ধিজীবী মারনের সময় অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীরে আল বদর নাজানি আল শামস মাইরলাচ্চে তো হ্যেয় কথা লয়া এ্যত্তোদিন পর আবার ময়দা ডলা ডলেন ক্যা?”
“আরে বুরবক আমি বলছি কী, আর তুই বুঝছিস কী?”
“অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর কইবর, হেইডা আবার না বুঝনের কী আছে। হ্যেরা বাংলাদেশের বুদ্ধি হ্যেগোরে মারলে বেকুব বাংলাদেশ ঠিক মতো দেশ চালাইতে পারবো না। হ্যেতারলাই ব্যেবাগ বুদ্ধিজীবী মাইরা শ্যেষ। অহনতো দেখতাছেন পদে পদে ক্যেমনে বাংলাদেশ উষ্ঠাখার!”
“আরে অকালকুষ্মান্ড আমি বলছিলাম অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর লেখা তার কালজয়ী নাটক “কবর”-এর কথা।”
“ওম্মারে, আন্নে এইডা কী কন! এই বুদ্ধিজীবীরা কব্বরে যাইনি নাটক করের!”
“ধ্যাৎ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর একটা নাটকের বই আছে, যার নাম “কবর”।”
“আরে মিয়া ভাই কী যে কন। মুসলমান জন্মাইলেই কবরে যাইবো, হ্যেইডা আবার নাটক কইরা কয়া লাগেনি!”
“আরে ভাই উনি উনার নাটকে বলতে চেয়েছেন যে, মৃত লোককে কবরে রাখলেও তারা জ্যান্ত মানুষের চেয়েও দ্বিগুণ স্বরে চীৎকার করে।”
“হে হে হে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী কোইছে, মরা মাইনষ্যে চিল্লায়, ফাল পাড়ে, হে হে গাঞ্জা খাইলেও তো পাবলিক হ্যেই কতা কোইবো না!”
“আরে শুধু অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী নয় “ক্রীতদাসের হাসি”র লেখক কথাশিল্পী শওকত ওসমান পর্যন্ত লিখেছেন, “লাশ কবরে শুয়ে থাকে না। লাশ কথা বলে। তার ধাক্কা আরো শক্ত আরো কঠিন। জেন্দা মানুষের কণ্ঠ সেখানে ক্ষীণ ফিসইফসানি, ভাঁড়ার ঘরে নেংটি ইঁদুরের পায়ের আওয়াজ মাত্র।”
“ও হোহো হো! মিয়া ভাই হাসায়েন না, মিয়া ভাই হাসায়েন না, লাশ কব্বরে হুয়া থাকে না কথা কয়! হ্যেও আবার চিল্লায়! হা হা হা।”
“আচ্ছা ভাই তুই এই সহজ বিষয়টা বুজছিস না ক্যেনো। এই লাশের চীৎকার রূপক অর্থে। দেখিস নাই যখন আবু সাঈদ গুলি খেয়ে মরলো, তখন তোরা কী করলি?”
“ক্যা, পুরা দেশ চ্যেইত্তা উঠলো। মুগ্ধ, ফাইয়াজ, গোপা, রায়হান ব্যেবাগতের মরণের প্রতিশোধ লয়া আমরা স্বৈরাচারে মাইরা খ্যেদাইলাম।”
“তাহলে, বুঝতে পারছিস বিগত পনের বছর তোরা জ্যান্ত লোকগুলো ভয়ে ভয়ে হিজড়ার মতো বেঁচে ছিলি কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাসনি।”
“ক্যেমনে প্রতিবাদ করুম! কথা কোইলেই গুম, খুন, অপহরণ, কার্টুন আঁকলে কান চাপাতিতে মাইরা মরণ। আমাগো কি বৌ-বাচ্চা নাই!”
“জ্বী, কথাশিল্পী শওকত ওসমান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ইনারা বলতে চেয়েছেন যে, তোমরা জ্যান্ত লোকেরা প্রাণ ভয়ে ভীত আর আবু সাঈদরা যখন জান দিলো, ব্যাস লগে লগে স্বৈরাচারের পতন। মানে বুজছস, “লাশ কবরে শুয়ে থাকে না। লাশ কথা বলে। তার ধাক্কা আরো শক্ত আরো কঠিন।”
“ভাই, ভাই, কী কোইলেন আর একবার কন?”
“লাশ কবরে শুয়ে থাকে না। লাশ কথা বলে। তার ধাক্কা আরো শক্ত আরো কঠিন। জেন্দা মানুষের কন্ঠ সেখানে ক্ষীণ ফিসইফসানি, ভাঁড়ার ঘরে নেংটি ইঁদুরের পায়ের আওয়াজ মাত্র।্”
“ভাইডি আন্নেতো আঁরে বেকুব বানাইলেন। কথাটাতো ঠিক। বিগত ফনেরো বছর ধরি আঁরা জ্যান্ত মাইনষ্যে যা পারি নাই আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ফাইয়াজ, রায়হান হ্যেগো লগের হাজার জেন-জি, মইরা আমাগোরে বাঁচায়া গেলো!”
“তাহলে ভেবে দ্যেখ এই যে তোরা ওসমান হাদীকে গুলি করলি, চাইলি ওর কণ্ঠস্বর রোধ করতে। ভেবে দেখেছিস যদি হাদির কিছু হয় তাহলে সারাদেশে কেমন প্রতিবাদ জ্বালাও পোড়াও শুরু হবে!”
“ঠিক ভাই ঠিক, আপনে ঠিকই কোইছেন, মরা লাশ জ্যান্ত ব্যাডার থাইক্কা অনেক বেশি জুরে চীক্কুর পাড়ে। আফ্রিকার লুমুম্বা, আমাগো ক্ষুদিরাম, চে’গুভারা, রফিক,সালাম-বরকত, বিনয়, বাদল-দিনেশ, আসাদ ডা. মিলন, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের, বীর সিপাহী, আমাগো একাত্তরের লক্ষ্য মুক্তিযোদ্ধার লাশ কেমনে চীক্কুর পাইড়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।”
“এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে তোরা যে এ্যতো এ্যাতো লাশ, বছরের পর বছর কবর দিচ্ছিস, আসলে অন্যায় কি শেষ হচ্ছে? অন্যায়ের কি কবর হচ্ছে? ঘুষ দূর্নীতি কি কমছে? এই লাশের চীৎকার কি তোরা শুনতে পাচ্ছিস? নাকি লাশের চীৎকারের তীব্র ধ্বনিতে বধির হয়েছিস?”
“ভাই, ভাই, আমারে মাপ কোইরা দ্যেন। আমি মুখ্যু সুখ্যু মানুষ, জন্তুও কোইতে পারেন, আমি না বুাইঝা কথাশিল্পী শওকত ওসমান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী হ্যেগো লেখারে ছুটো কোরছি...”
“থাক থাক তুই উনাদের কথা ছেড়ে বাস্তবে নেমে আয়, এখন বল, এই লাশের রাজনীতি তোরা থামাবি কবে?”
“আমারেনি কন? কবে লাশের রাজনীতি বন্ধ হোইবো?”
“হ্যা তোর কাছেই তো আমার প্রশ্ন, তোরা কবে বাঙালি হয়ে বাঙালি হত্যা বন্ধ করবি?”
“হে হে হে এইডা আমারে না জিগায়া আম জনতা মানে পাবলিকরে জিগান দ্যেহেন হ্যেরা কী কয়...”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রম্যগদ্য
জাঁ-নেসার ওসমান
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
“ভাই হেই ১৯৭১ সালের ১৪ই, ডিসেম্বর, পিরায় ৫৪ বছর আগে বুদ্ধিজীবী মারনের সময় অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীরে আল বদর নাজানি আল শামস মাইরলাচ্চে তো হ্যেয় কথা লয়া এ্যত্তোদিন পর আবার ময়দা ডলা ডলেন ক্যা?”
“আরে বুরবক আমি বলছি কী, আর তুই বুঝছিস কী?”
“অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর কইবর, হেইডা আবার না বুঝনের কী আছে। হ্যেরা বাংলাদেশের বুদ্ধি হ্যেগোরে মারলে বেকুব বাংলাদেশ ঠিক মতো দেশ চালাইতে পারবো না। হ্যেতারলাই ব্যেবাগ বুদ্ধিজীবী মাইরা শ্যেষ। অহনতো দেখতাছেন পদে পদে ক্যেমনে বাংলাদেশ উষ্ঠাখার!”
“আরে অকালকুষ্মান্ড আমি বলছিলাম অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর লেখা তার কালজয়ী নাটক “কবর”-এর কথা।”
“ওম্মারে, আন্নে এইডা কী কন! এই বুদ্ধিজীবীরা কব্বরে যাইনি নাটক করের!”
“ধ্যাৎ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর একটা নাটকের বই আছে, যার নাম “কবর”।”
“আরে মিয়া ভাই কী যে কন। মুসলমান জন্মাইলেই কবরে যাইবো, হ্যেইডা আবার নাটক কইরা কয়া লাগেনি!”
“আরে ভাই উনি উনার নাটকে বলতে চেয়েছেন যে, মৃত লোককে কবরে রাখলেও তারা জ্যান্ত মানুষের চেয়েও দ্বিগুণ স্বরে চীৎকার করে।”
“হে হে হে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী কোইছে, মরা মাইনষ্যে চিল্লায়, ফাল পাড়ে, হে হে গাঞ্জা খাইলেও তো পাবলিক হ্যেই কতা কোইবো না!”
“আরে শুধু অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী নয় “ক্রীতদাসের হাসি”র লেখক কথাশিল্পী শওকত ওসমান পর্যন্ত লিখেছেন, “লাশ কবরে শুয়ে থাকে না। লাশ কথা বলে। তার ধাক্কা আরো শক্ত আরো কঠিন। জেন্দা মানুষের কণ্ঠ সেখানে ক্ষীণ ফিসইফসানি, ভাঁড়ার ঘরে নেংটি ইঁদুরের পায়ের আওয়াজ মাত্র।”
“ও হোহো হো! মিয়া ভাই হাসায়েন না, মিয়া ভাই হাসায়েন না, লাশ কব্বরে হুয়া থাকে না কথা কয়! হ্যেও আবার চিল্লায়! হা হা হা।”
“আচ্ছা ভাই তুই এই সহজ বিষয়টা বুজছিস না ক্যেনো। এই লাশের চীৎকার রূপক অর্থে। দেখিস নাই যখন আবু সাঈদ গুলি খেয়ে মরলো, তখন তোরা কী করলি?”
“ক্যা, পুরা দেশ চ্যেইত্তা উঠলো। মুগ্ধ, ফাইয়াজ, গোপা, রায়হান ব্যেবাগতের মরণের প্রতিশোধ লয়া আমরা স্বৈরাচারে মাইরা খ্যেদাইলাম।”
“তাহলে, বুঝতে পারছিস বিগত পনের বছর তোরা জ্যান্ত লোকগুলো ভয়ে ভয়ে হিজড়ার মতো বেঁচে ছিলি কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাসনি।”
“ক্যেমনে প্রতিবাদ করুম! কথা কোইলেই গুম, খুন, অপহরণ, কার্টুন আঁকলে কান চাপাতিতে মাইরা মরণ। আমাগো কি বৌ-বাচ্চা নাই!”
“জ্বী, কথাশিল্পী শওকত ওসমান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ইনারা বলতে চেয়েছেন যে, তোমরা জ্যান্ত লোকেরা প্রাণ ভয়ে ভীত আর আবু সাঈদরা যখন জান দিলো, ব্যাস লগে লগে স্বৈরাচারের পতন। মানে বুজছস, “লাশ কবরে শুয়ে থাকে না। লাশ কথা বলে। তার ধাক্কা আরো শক্ত আরো কঠিন।”
“ভাই, ভাই, কী কোইলেন আর একবার কন?”
“লাশ কবরে শুয়ে থাকে না। লাশ কথা বলে। তার ধাক্কা আরো শক্ত আরো কঠিন। জেন্দা মানুষের কন্ঠ সেখানে ক্ষীণ ফিসইফসানি, ভাঁড়ার ঘরে নেংটি ইঁদুরের পায়ের আওয়াজ মাত্র।্”
“ভাইডি আন্নেতো আঁরে বেকুব বানাইলেন। কথাটাতো ঠিক। বিগত ফনেরো বছর ধরি আঁরা জ্যান্ত মাইনষ্যে যা পারি নাই আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ফাইয়াজ, রায়হান হ্যেগো লগের হাজার জেন-জি, মইরা আমাগোরে বাঁচায়া গেলো!”
“তাহলে ভেবে দ্যেখ এই যে তোরা ওসমান হাদীকে গুলি করলি, চাইলি ওর কণ্ঠস্বর রোধ করতে। ভেবে দেখেছিস যদি হাদির কিছু হয় তাহলে সারাদেশে কেমন প্রতিবাদ জ্বালাও পোড়াও শুরু হবে!”
“ঠিক ভাই ঠিক, আপনে ঠিকই কোইছেন, মরা লাশ জ্যান্ত ব্যাডার থাইক্কা অনেক বেশি জুরে চীক্কুর পাড়ে। আফ্রিকার লুমুম্বা, আমাগো ক্ষুদিরাম, চে’গুভারা, রফিক,সালাম-বরকত, বিনয়, বাদল-দিনেশ, আসাদ ডা. মিলন, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের, বীর সিপাহী, আমাগো একাত্তরের লক্ষ্য মুক্তিযোদ্ধার লাশ কেমনে চীক্কুর পাইড়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।”
“এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে তোরা যে এ্যতো এ্যাতো লাশ, বছরের পর বছর কবর দিচ্ছিস, আসলে অন্যায় কি শেষ হচ্ছে? অন্যায়ের কি কবর হচ্ছে? ঘুষ দূর্নীতি কি কমছে? এই লাশের চীৎকার কি তোরা শুনতে পাচ্ছিস? নাকি লাশের চীৎকারের তীব্র ধ্বনিতে বধির হয়েছিস?”
“ভাই, ভাই, আমারে মাপ কোইরা দ্যেন। আমি মুখ্যু সুখ্যু মানুষ, জন্তুও কোইতে পারেন, আমি না বুাইঝা কথাশিল্পী শওকত ওসমান, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী হ্যেগো লেখারে ছুটো কোরছি...”
“থাক থাক তুই উনাদের কথা ছেড়ে বাস্তবে নেমে আয়, এখন বল, এই লাশের রাজনীতি তোরা থামাবি কবে?”
“আমারেনি কন? কবে লাশের রাজনীতি বন্ধ হোইবো?”
“হ্যা তোর কাছেই তো আমার প্রশ্ন, তোরা কবে বাঙালি হয়ে বাঙালি হত্যা বন্ধ করবি?”
“হে হে হে এইডা আমারে না জিগায়া আম জনতা মানে পাবলিকরে জিগান দ্যেহেন হ্যেরা কী কয়...”
[লেখক: চলচ্চিত্রকার]