ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের সর্বোত্তম উপায় হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দমতো লোকদেরকে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনে কোনোপ্রকার কারচুপি হয় না বলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ায় গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো খুবই দুর্বল। ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল না হয় তবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কেননা নির্বাচন পরিচালনার সকল দায়িত্বই নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন সংঘাতমুখী বা আদৌ নির্বাচন হবে কিনা ইত্যাদি নানা গুঞ্জন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। জনগণ শঙ্কামুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। সাধারণ মানুষের এর চেয়ে বড় কিছু চাওয়ার থাকে না। এ চাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের প্রাপ্তি থেকে জনগণ হোঁচট খেতে চায় না। সাধারণ মানুষকে সেবা ও কল্যাণ করাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিকদের দায়িত্ব। আর সেখানেই রাজনীতিবিদদেরও রাজনৈতিক সম্মান ও মর্যাদা। মর্যাদার এই লড়াইকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আমাদের সকল সুশীল শ্রেণী, দেশপ্রেমিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পরিচালিত হতে হবে-সেটাই এ ক্রান্তিকালে আমাদের সবারই কাম্য। অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী, সহনশীলতায় বলীয়ান হয়ে, আন্তরিকতা নিয়ে, হিংসা-বিদ্বেষ মুছে দিয়ে, মনের গ্লানি দূর করে, অমলিন ও উদার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নিলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে।
নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাতাসে নানা গুঞ্জনও ভেসে বেড়াচ্ছে। আগামী বছর এর ১২ ফেব্রুয়ারি গণভোটে ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য তফসিল ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু শুধুই সংবিধানের দোহাই এবং নির্বাচনের জন্য নির্বাচন হলে ভালো হবে কি? সার্থক নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের ও সব মতের লোকের অংশগ্রহণ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য, তবে সরকারকে অবশ্যই সহায়ক হতে হবে। ২০২৪ পরবর্তী নতুন মেয়াদে নতুন সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু সেই নির্বাচন কিভাবে হবে? কারা করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে কি? আগামী নির্বাচনও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের মতো একতরফা হবে? এসব প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর দেয়ার সময় এখনো আসেনি। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব নাগরিক যেন তাদের ভোট তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে দিতে পারে, নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই জনগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে পারবে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনের জন্য আবশ্যিক শর্ত, সবার জন্য মাঠ সমতল করা। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকেই বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা করে সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আস্থার সঙ্কট দূর করতে হবে। অন্যান্য দলকেও সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে জনগণ পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে, সেই ক্ষেত্রটি তৈরি করার প্রধান দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরই।
আমাদের দেশে নির্বাচন এলে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের নির্বাচনমুখী দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। বড় বড় দলের নমিনেশন পেতে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করতেও পিছু হটে না। নির্বাচনে একবার জয়ী হতে পারলেই লাভ। একসঙ্গে দুই হাতে আয় করা সম্ভব। গণতন্ত্রের নামে যাদের ন্যূনতম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় নেই, এমন ধরনের প্রার্থীকেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেখা যায়। যাদের হাতে অবৈধ টাকার পাহাড়, তারা অর্থ দিয়ে বড় বড় দলের নীতিনির্ধারকদের বশ করে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। অতএব, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচন অধিক গুরুত্ব বহন করে। তাই দেশ ও জনগণ সরকারের স্বার্থেই দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক অসৎ শ্রেণির লোক ও দলকে বয়কট করার শপথ এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির শক্তি দুর্বল হবে এবং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এ দায়িত্ব সম্মিলিতভাবে দেশপ্রেমিক সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে এ বিবেচনায় নির্বাচকমন্ডলীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে অপরিসীম । তবেই নির্বাচন ও উন্নয়ন একই সঙ্গে জাতির জন্য সফলতা বয়ে আনবে।
যতই দিন যাচ্ছে ততই নির্বাচনী হাওয়া মাঠে বইতে শুরু করেছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নির্বাচন-পূর্ব কোন সহিংসতা, অস্থিরতা বা রাজনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয় কি না? ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ জোট ও ভোটের রাজনীতির কথা বলছেন, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন, সব আসনে জয়লাভে আকাক্সক্ষার কথা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা বলছেন, কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে কথা বলছেন এবং কেউ বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইত্যাকার বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক প্রশ্নে জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য ও মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অধিকাংশ জনগণের ভাবনা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যেখানে জনগণের স্বাধীন মতামত প্রতিফলিত হবে। জনগণ একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করে।
ভোট নাগরিকের মৌলিক অধিকার। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরির্বতন হয়। এ পরির্বতন যেন দূর্নীতিকে এগিয়ে না আনতে পারে। দূর্নীতির মাধ্যমে অব্যাহত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না হয়, বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে অন্যের পকেটে ঢুকতে না পারে, সে দায়িত্ব কঠিনভাবে পালন করতে হবে জনগণকে। যুগ যুগ ধরে যারা দূর্নীতির মাধ্যমে পকেট ভর্তি করছে, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, এ জাতীয় প্রার্থীদের বয়কট করতে হবে। তাদের সর্ম্পকে সজাগ থাকতে হবে রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেসব দল অংশগ্রহণ করবে, তারা যেন সৎ, যোগ্য, আর্দশবান দেশপ্রেমিক লোককে মনোনয়ন দেয়। অর্থ আর কালো টাকার দাপটে যেন চোরাকারবারি, মাদক পাচারকারী, দুর্নীতিগ্রস্ত কেউ যেন প্রার্থী হতে না পারে। সে বিষয়ে রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে হলে অবশ্যই গতিশীল, দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক সরকার দরকার। যাদের পক্ষে উন্নয়ন এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব তাদেরই ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করা জনগণের দায়িত্ব কোনো ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত যেন দেশের উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিতে না পারে, সে দায়িত্ব জনগণকে সঠিকভাবে পালন করতে হবে। উন্নয়ন ও দেশবিরোধী সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালঞ্জে হিসেবে নিয়ে জাতিকে সফল হতে হবে। এ সফলতার মাধ্যমে আগামী দিনের জাতীয় সমস্যা কোটি কোটি শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠী যাতে কর্মসংস্থান পায়, সে চিন্তা এখন থেকে করতে হবে। প্রতি বছর সবগুলো বাজেটে অধিকহারে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। হু হু করে পৃথিবীব্যাপী বেকার কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। এসব চিন্তা পরকিল্পনায় এনে আগামী নির্বাচিত সরকারকে কর্মসংস্থানে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশে রফতানিসহ নিজ দেশেই আত্মমর্যাদার সঙ্গে শিক্ষিত যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলেই দেশ আর কারো মুখাপক্ষেী হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার স্থান করে নিবে।
[লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের সর্বোত্তম উপায় হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দমতো লোকদেরকে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনে কোনোপ্রকার কারচুপি হয় না বলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ায় গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো খুবই দুর্বল। ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল না হয় তবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কেননা নির্বাচন পরিচালনার সকল দায়িত্বই নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন সংঘাতমুখী বা আদৌ নির্বাচন হবে কিনা ইত্যাদি নানা গুঞ্জন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। জনগণ শঙ্কামুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। সাধারণ মানুষের এর চেয়ে বড় কিছু চাওয়ার থাকে না। এ চাওয়া জনগণের মৌলিক অধিকার। এ অধিকারের প্রাপ্তি থেকে জনগণ হোঁচট খেতে চায় না। সাধারণ মানুষকে সেবা ও কল্যাণ করাটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিকদের দায়িত্ব। আর সেখানেই রাজনীতিবিদদেরও রাজনৈতিক সম্মান ও মর্যাদা। মর্যাদার এই লড়াইকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আমাদের সকল সুশীল শ্রেণী, দেশপ্রেমিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পরিচালিত হতে হবে-সেটাই এ ক্রান্তিকালে আমাদের সবারই কাম্য। অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী, সহনশীলতায় বলীয়ান হয়ে, আন্তরিকতা নিয়ে, হিংসা-বিদ্বেষ মুছে দিয়ে, মনের গ্লানি দূর করে, অমলিন ও উদার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নিলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে।
নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাতাসে নানা গুঞ্জনও ভেসে বেড়াচ্ছে। আগামী বছর এর ১২ ফেব্রুয়ারি গণভোটে ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য তফসিল ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু শুধুই সংবিধানের দোহাই এবং নির্বাচনের জন্য নির্বাচন হলে ভালো হবে কি? সার্থক নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের ও সব মতের লোকের অংশগ্রহণ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য, তবে সরকারকে অবশ্যই সহায়ক হতে হবে। ২০২৪ পরবর্তী নতুন মেয়াদে নতুন সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু সেই নির্বাচন কিভাবে হবে? কারা করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে কি? আগামী নির্বাচনও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের মতো একতরফা হবে? এসব প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর দেয়ার সময় এখনো আসেনি। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব নাগরিক যেন তাদের ভোট তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে দিতে পারে, নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই জনগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে পারবে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনের জন্য আবশ্যিক শর্ত, সবার জন্য মাঠ সমতল করা। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকেই বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা করে সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আস্থার সঙ্কট দূর করতে হবে। অন্যান্য দলকেও সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে জনগণ পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে, সেই ক্ষেত্রটি তৈরি করার প্রধান দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরই।
আমাদের দেশে নির্বাচন এলে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের নির্বাচনমুখী দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। বড় বড় দলের নমিনেশন পেতে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করতেও পিছু হটে না। নির্বাচনে একবার জয়ী হতে পারলেই লাভ। একসঙ্গে দুই হাতে আয় করা সম্ভব। গণতন্ত্রের নামে যাদের ন্যূনতম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় নেই, এমন ধরনের প্রার্থীকেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেখা যায়। যাদের হাতে অবৈধ টাকার পাহাড়, তারা অর্থ দিয়ে বড় বড় দলের নীতিনির্ধারকদের বশ করে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। অতএব, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচন অধিক গুরুত্ব বহন করে। তাই দেশ ও জনগণ সরকারের স্বার্থেই দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক অসৎ শ্রেণির লোক ও দলকে বয়কট করার শপথ এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির শক্তি দুর্বল হবে এবং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এ দায়িত্ব সম্মিলিতভাবে দেশপ্রেমিক সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে এ বিবেচনায় নির্বাচকমন্ডলীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে অপরিসীম । তবেই নির্বাচন ও উন্নয়ন একই সঙ্গে জাতির জন্য সফলতা বয়ে আনবে।
যতই দিন যাচ্ছে ততই নির্বাচনী হাওয়া মাঠে বইতে শুরু করেছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকেই শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নির্বাচন-পূর্ব কোন সহিংসতা, অস্থিরতা বা রাজনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয় কি না? ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ জোট ও ভোটের রাজনীতির কথা বলছেন, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন, সব আসনে জয়লাভে আকাক্সক্ষার কথা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা বলছেন, কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে কথা বলছেন এবং কেউ বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইত্যাকার বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক প্রশ্নে জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য ও মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অধিকাংশ জনগণের ভাবনা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যেখানে জনগণের স্বাধীন মতামত প্রতিফলিত হবে। জনগণ একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করে।
ভোট নাগরিকের মৌলিক অধিকার। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরির্বতন হয়। এ পরির্বতন যেন দূর্নীতিকে এগিয়ে না আনতে পারে। দূর্নীতির মাধ্যমে অব্যাহত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না হয়, বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে অন্যের পকেটে ঢুকতে না পারে, সে দায়িত্ব কঠিনভাবে পালন করতে হবে জনগণকে। যুগ যুগ ধরে যারা দূর্নীতির মাধ্যমে পকেট ভর্তি করছে, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, এ জাতীয় প্রার্থীদের বয়কট করতে হবে। তাদের সর্ম্পকে সজাগ থাকতে হবে রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেসব দল অংশগ্রহণ করবে, তারা যেন সৎ, যোগ্য, আর্দশবান দেশপ্রেমিক লোককে মনোনয়ন দেয়। অর্থ আর কালো টাকার দাপটে যেন চোরাকারবারি, মাদক পাচারকারী, দুর্নীতিগ্রস্ত কেউ যেন প্রার্থী হতে না পারে। সে বিষয়ে রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে হলে অবশ্যই গতিশীল, দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক সরকার দরকার। যাদের পক্ষে উন্নয়ন এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব তাদেরই ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করা জনগণের দায়িত্ব কোনো ধরনের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত যেন দেশের উন্নয়নের গতিকে থামিয়ে দিতে না পারে, সে দায়িত্ব জনগণকে সঠিকভাবে পালন করতে হবে। উন্নয়ন ও দেশবিরোধী সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে চ্যালঞ্জে হিসেবে নিয়ে জাতিকে সফল হতে হবে। এ সফলতার মাধ্যমে আগামী দিনের জাতীয় সমস্যা কোটি কোটি শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠী যাতে কর্মসংস্থান পায়, সে চিন্তা এখন থেকে করতে হবে। প্রতি বছর সবগুলো বাজেটে অধিকহারে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। হু হু করে পৃথিবীব্যাপী বেকার কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। এসব চিন্তা পরকিল্পনায় এনে আগামী নির্বাচিত সরকারকে কর্মসংস্থানে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশে রফতানিসহ নিজ দেশেই আত্মমর্যাদার সঙ্গে শিক্ষিত যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলেই দেশ আর কারো মুখাপক্ষেী হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার স্থান করে নিবে।
[লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]