মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম
ধর্ম কখনোই অন্যায়, অবিচার ও নৃশংসতার আশ্রয় হতে পারে না। ধর্মের মূল শিক্ষা মানবতা, ন্যায় ও ইনসাফ। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগকে হাতিয়ার বানিয়ে যেভাবে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, তা মানবতা তো বটেই, ধর্মীয় শিক্ষারও চরম অবমাননা। ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড সেই ভয়াবহ বাস্তবতার এক নির্মম ও কলঙ্কজনক উদাহরণ।
আইনের শাসন দুর্বল হওয়ার সুযাগে উন্মত্ত জনতার হাতে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মব সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে
সংবাদ অনুযায়ী, দিপু চন্দ্র দাস (২৭) ছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিউওয়ার্ড (বিডি) লিমিটেড কারখানার একজন শ্রমিক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। উৎপাদন বৃদ্ধি, ওভারটাইম, কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলায় তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হন। একপর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে চাকরি থেকে পদচ্যুত করা হয়। এরপর শুরু হয় আরও ভয়ংকর অধ্যায়। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করা হয়, ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।
এটি কোনো আকস্মিক বা উসকানিমূলক জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ছিল না; বরং ছিল একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। “নারায়ে তাকবির” স্লোগান দিয়ে আধমরা করে গাছে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে তাকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। শত শত মানুষ সেই নির্মম দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে; যেন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড ও আজ বিনোদনের কনটেন্টে পরিণত হয়েছে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটি এক চরম লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়।
ঘটনার পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ১৫০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। র্যাব ও জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় -এই ধরনের মব সন্ত্রাস কি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
বাংলাদেশে মব সন্ত্রাসের উত্থান: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যে বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইনের শাসন দুর্বল হওয়ার সুযাগে উন্মত্ত জনতার হাতে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মব সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। অন্তর্বতীকালীন সরকার বার বার হুঁিশয়ারি দিলেও চিহ্নিত মব সন্ত্রাসীদের ত্রাসের রাজত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে আমরা দেখেছি যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, কবর থেকে লাশ তুলে এনে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষককে প্রকাশ্যে হেনস্তা ও অপমান, সুন্নীপন্থী ইমামদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া ও ঘোষণা দিয়ে মসজিদ দখল, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে নিরপরাধ ইমাম রইস উদ্দিনকে হত্যা, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে হামলা-ভাংচুর, লুটপাটসহ সম্প্রতি ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড পরবর্তী প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে তাণ্ডব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে জনতাকে সহিংসতায় উসকে দেওয়া ইত্যাদি সব ঘটনার একটি ভয়াবহ মিল রয়েছে। ধর্মীয় স্লোগান ও আবেগকে ঢাল বানিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। দিপু দাস হত্যাকাণ্ড সেই ধারাবাহিকতারই একটি ভয়ংকর উদাহরণ।
ইসলামে অন্যায় হত্যার শরয়ী বিধান: ইসলাম মানবজীবনকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহতে অন্যায় হত্যাকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,“যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল-কোনো হত্যার বা পৃথিবীতে ফিতনা ছড়ানোর অপরাধ ছাড়া- সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।”(সূরা আল-মায়েদা: ৩২)। আরেক স্থানে আল্লাহ বলেন- “আর যে কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সূরা আন-নিসা: ৯৩)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “আল্লাহর নিকট দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যার চেয়েও হালকা।” (তিরমিজি)। মোদ্দাকথা- ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠলেও ইসলাম কাউকে নিজ হাতে শাস্তি দেওয়ার অনুমতি দেয় না। বিচার ও শাস্তির একমাত্র বৈধ কর্তৃত্ব রাষ্ট্র ও আইন-আদালতের। প্রমাণ, সাক্ষ্য, তদন্ত ও আদালতের রায় ছাড়া কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ধর্মের অপব্যবহার ও আমাদের দায়: দিপু দাস হত্যাকাণ্ডে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে অন্যায় ও প্রতিশোধ আড়াল করার জন্য। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়; এটি ধর্মের নামে ধর্মকেই কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা। ইসলাম কখনোই মিথ্যা অপবাদ, গণপিটুনি, কবর খুঁড়ে লাশ পোড়ানো কিংবা উন্মত্ত জনতার সহিংসতাকে সমর্থন করে না। যারা নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবর বলে মানুষের উপর হামলা করে, তারা সত্যিকারের মুসলমান নয়। মুসলমান কারো উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করে না।
এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সমাজকে ধর্মের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং ধর্মীয় স্লোগানের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
দিপু দাস হত্যাকাণ্ড আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। এটি প্রমাণ করে- যখন আইন দুর্বল হয় এবং ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা অনুপস্থিত থাকে, তখন একটি সভ্য সমাজও মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নেমে যেতে পারে। ইসলামের শিক্ষা হলো ন্যায়, ইনসাফ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। অন্যায় হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই একজন মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
ধর্মের নামে সংঘটিত এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে নীরবতা নিজেই এক ধরনের অপরাধ। এখনই সময়- প্রকৃত ধর্মের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা জাগ্রত করা এবং মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড় করানো। নইলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ধর্ম কখনোই অন্যায়, অবিচার ও নৃশংসতার আশ্রয় হতে পারে না। ধর্মের মূল শিক্ষা মানবতা, ন্যায় ও ইনসাফ। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগকে হাতিয়ার বানিয়ে যেভাবে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, তা মানবতা তো বটেই, ধর্মীয় শিক্ষারও চরম অবমাননা। ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড সেই ভয়াবহ বাস্তবতার এক নির্মম ও কলঙ্কজনক উদাহরণ।
আইনের শাসন দুর্বল হওয়ার সুযাগে উন্মত্ত জনতার হাতে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মব সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে
সংবাদ অনুযায়ী, দিপু চন্দ্র দাস (২৭) ছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় অবস্থিত পাইওনিয়ার নিউওয়ার্ড (বিডি) লিমিটেড কারখানার একজন শ্রমিক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। উৎপাদন বৃদ্ধি, ওভারটাইম, কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলায় তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হন। একপর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে চাকরি থেকে পদচ্যুত করা হয়। এরপর শুরু হয় আরও ভয়ংকর অধ্যায়। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করা হয়, ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়।
এটি কোনো আকস্মিক বা উসকানিমূলক জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ছিল না; বরং ছিল একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। “নারায়ে তাকবির” স্লোগান দিয়ে আধমরা করে গাছে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে তাকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। শত শত মানুষ সেই নির্মম দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে; যেন একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড ও আজ বিনোদনের কনটেন্টে পরিণত হয়েছে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটি এক চরম লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়।
ঘটনার পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ১৫০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। র্যাব ও জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় -এই ধরনের মব সন্ত্রাস কি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
বাংলাদেশে মব সন্ত্রাসের উত্থান: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যে বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইনের শাসন দুর্বল হওয়ার সুযাগে উন্মত্ত জনতার হাতে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মব সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। অন্তর্বতীকালীন সরকার বার বার হুঁিশয়ারি দিলেও চিহ্নিত মব সন্ত্রাসীদের ত্রাসের রাজত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে আমরা দেখেছি যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, কবর থেকে লাশ তুলে এনে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষককে প্রকাশ্যে হেনস্তা ও অপমান, সুন্নীপন্থী ইমামদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া ও ঘোষণা দিয়ে মসজিদ দখল, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে নিরপরাধ ইমাম রইস উদ্দিনকে হত্যা, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে হামলা-ভাংচুর, লুটপাটসহ সম্প্রতি ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড পরবর্তী প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে তাণ্ডব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে জনতাকে সহিংসতায় উসকে দেওয়া ইত্যাদি সব ঘটনার একটি ভয়াবহ মিল রয়েছে। ধর্মীয় স্লোগান ও আবেগকে ঢাল বানিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। দিপু দাস হত্যাকাণ্ড সেই ধারাবাহিকতারই একটি ভয়ংকর উদাহরণ।
ইসলামে অন্যায় হত্যার শরয়ী বিধান: ইসলাম মানবজীবনকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহতে অন্যায় হত্যাকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,“যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল-কোনো হত্যার বা পৃথিবীতে ফিতনা ছড়ানোর অপরাধ ছাড়া- সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।”(সূরা আল-মায়েদা: ৩২)। আরেক স্থানে আল্লাহ বলেন- “আর যে কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সূরা আন-নিসা: ৯৩)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “আল্লাহর নিকট দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যার চেয়েও হালকা।” (তিরমিজি)। মোদ্দাকথা- ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠলেও ইসলাম কাউকে নিজ হাতে শাস্তি দেওয়ার অনুমতি দেয় না। বিচার ও শাস্তির একমাত্র বৈধ কর্তৃত্ব রাষ্ট্র ও আইন-আদালতের। প্রমাণ, সাক্ষ্য, তদন্ত ও আদালতের রায় ছাড়া কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ধর্মের অপব্যবহার ও আমাদের দায়: দিপু দাস হত্যাকাণ্ডে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে অন্যায় ও প্রতিশোধ আড়াল করার জন্য। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়; এটি ধর্মের নামে ধর্মকেই কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা। ইসলাম কখনোই মিথ্যা অপবাদ, গণপিটুনি, কবর খুঁড়ে লাশ পোড়ানো কিংবা উন্মত্ত জনতার সহিংসতাকে সমর্থন করে না। যারা নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবর বলে মানুষের উপর হামলা করে, তারা সত্যিকারের মুসলমান নয়। মুসলমান কারো উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করে না।
এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সমাজকে ধর্মের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং ধর্মীয় স্লোগানের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
দিপু দাস হত্যাকাণ্ড আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। এটি প্রমাণ করে- যখন আইন দুর্বল হয় এবং ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা অনুপস্থিত থাকে, তখন একটি সভ্য সমাজও মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নেমে যেতে পারে। ইসলামের শিক্ষা হলো ন্যায়, ইনসাফ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো। অন্যায় হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই একজন মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
ধর্মের নামে সংঘটিত এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে নীরবতা নিজেই এক ধরনের অপরাধ। এখনই সময়- প্রকৃত ধর্মের নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা জাগ্রত করা এবং মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড় করানো। নইলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম]