alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জাদুকর পিসি সরকার

জোবায়ের আলী জুয়েল

: মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১
image

আধুনিক বাঙালিদের মধ্যে যে কয়জন ক্ষণজন্মা মানুষ আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন পিসি সরকার তাদের মধ্যে অন্যতম। জাদুশিল্পী পিসি সরকারের পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পিতার নাম ভগবান চন্দ্র সরকার ও মায়ের নাম কুসুম কামিনী দেবী।

সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পিসি সরকার জাদু দেখানো শুরু করেন। সেকালের বিখ্যাত জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী ছিলেন তার জাদুবিদ্যার গুরু। টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সহপাঠীদের জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিতেন। ১৯২৯ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৩ সালে গণিত শাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাস করে তিনি জাদুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

কোলকাতা ইম্পেরিয়াল রেস্টুরেন্টে শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে যে জাদু দেখিয়ে তিনি মুগ্ধ করেন, তার শিরোনাম ছিল ‘বাংলার মন্ত্রিম-লীর পদত্যাগ’। একটি সাদা কাগজে প্রথমে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা ফজলুল হককে কিছু লিখতে বলেন এবং তার নিচে মন্ত্রীরা স্বাক্ষর করেন। কিছুক্ষণ পর শেরে বাংলা ফজলুল হক তার নিজের লেখার পরিবর্তে দেখেন ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সবাই এই মুহূর্তে পদত্যাগ করলাম এবং আজ হতে জাদুকর পিসি সরকারই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী’। এটা ছিল Force writing-এর জাদু।

‘এক্সরে-আই’ করাত দিয়ে মানুষ দ্বিখন্ডিত করা তার একটি বিখ্যাত খেলা। এই খেলাটি দেখে দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন। দ্বিখন্ডিত তরুণটির কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা নিয়ে বিবিসি অফিসে এত টেলিফোন আসতে থাকে যে, দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অফিসের সব টেলিফোন লাইন জ্যাম হয়ে যায়। নিউইয়র্কের টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এই খেলাটি দেখাবার জন্য তাকে বিশেষ বিমানে আমেরিকায় নিয়ে যায়।

মহানায়ক উত্তম কুমারকে দিয়ে তিনি তার বিশ্ববিখ্যাত জাদু ‘কায়া যায়, ছায়া থাকে’ খেলাটি দেখিয়ে ছিলেন। পিসি সরকার উত্তর কুমারকে স্টেজে আমন্ত্রণ জানান এবং পেছনে একটি সাদা স্ক্রিনে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। পর্দায় সার্চলাইটের আলো ফেলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তম কুমারের ছায়া পর্দায় ভেসে ওঠে। স্টেজে তিনি উত্তম কুমারকে আসন গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু কী আশ্চয! উত্তর কুমার পর্দা থেকে সরে গেলেও তার ছায়া পর্দায় রয়ে যায়।

জাদু দেখিয়ে পিসি সরকার দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। জাদু বিদ্যার নোবেল প্রাইজ বলে খ্যাত ‘দি ফিনিক্স অ্যাওয়ার্ড’ তিনি দু’বার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘গোল্ডবার’ পুরস্কার, ‘সূবর্ণ লরেন মালা’ নামে জাদুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জার্মান পুরস্কার, হল্যান্ডের ‘ট্রিকস পুরস্কার’ এবং ১৯৬৪ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মশ্রী’ উপাধী লাভ করেন। জাদু খেলার কৃতিত্বের জন্য তৎকালীন মায়ানমারের (বার্মার) প্রধানমন্ত্রী তার নাম দিয়েছিলেন ‘এশিয়ার গর্ব’।

পিসি সরকার ১৯৭০ সালের ১৩ জানুয়ারি জাপানের আশাহিকাওয়ায় জাদু প্রদর্শন করতে গিয়ে অকস্মাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৭ বছর।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা]

নবান্নের আনন্দ ও আমনের ফলন

‘প্রশ্ন কোরো না, প্রশ্ন সর্বনাশী’

ভূমিকম্প, অর্থনৈতিক চাপ এবং অনিশ্চয়তা: মানসিকতার নতুন অর্থনীতি

নবম পে স্কেল ও এর আর্থসামাজিক প্রভাব

মৃত্যুদণ্ড, তারপর...

জমির ভুয়া দলিল কীভাবে বাতিল করবেন?

জুলাই সনদ আদিবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি

ব্যাংকের দুরবস্থা থামানো যাচ্ছে না কেন

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

জাদুকর পিসি সরকার

জোবায়ের আলী জুয়েল

image

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

আধুনিক বাঙালিদের মধ্যে যে কয়জন ক্ষণজন্মা মানুষ আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন পিসি সরকার তাদের মধ্যে অন্যতম। জাদুশিল্পী পিসি সরকারের পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পিতার নাম ভগবান চন্দ্র সরকার ও মায়ের নাম কুসুম কামিনী দেবী।

সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পিসি সরকার জাদু দেখানো শুরু করেন। সেকালের বিখ্যাত জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী ছিলেন তার জাদুবিদ্যার গুরু। টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সহপাঠীদের জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিতেন। ১৯২৯ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৩ সালে গণিত শাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাস করে তিনি জাদুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

কোলকাতা ইম্পেরিয়াল রেস্টুরেন্টে শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে যে জাদু দেখিয়ে তিনি মুগ্ধ করেন, তার শিরোনাম ছিল ‘বাংলার মন্ত্রিম-লীর পদত্যাগ’। একটি সাদা কাগজে প্রথমে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা ফজলুল হককে কিছু লিখতে বলেন এবং তার নিচে মন্ত্রীরা স্বাক্ষর করেন। কিছুক্ষণ পর শেরে বাংলা ফজলুল হক তার নিজের লেখার পরিবর্তে দেখেন ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সবাই এই মুহূর্তে পদত্যাগ করলাম এবং আজ হতে জাদুকর পিসি সরকারই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী’। এটা ছিল Force writing-এর জাদু।

‘এক্সরে-আই’ করাত দিয়ে মানুষ দ্বিখন্ডিত করা তার একটি বিখ্যাত খেলা। এই খেলাটি দেখে দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন। দ্বিখন্ডিত তরুণটির কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা নিয়ে বিবিসি অফিসে এত টেলিফোন আসতে থাকে যে, দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অফিসের সব টেলিফোন লাইন জ্যাম হয়ে যায়। নিউইয়র্কের টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এই খেলাটি দেখাবার জন্য তাকে বিশেষ বিমানে আমেরিকায় নিয়ে যায়।

মহানায়ক উত্তম কুমারকে দিয়ে তিনি তার বিশ্ববিখ্যাত জাদু ‘কায়া যায়, ছায়া থাকে’ খেলাটি দেখিয়ে ছিলেন। পিসি সরকার উত্তর কুমারকে স্টেজে আমন্ত্রণ জানান এবং পেছনে একটি সাদা স্ক্রিনে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। পর্দায় সার্চলাইটের আলো ফেলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তম কুমারের ছায়া পর্দায় ভেসে ওঠে। স্টেজে তিনি উত্তম কুমারকে আসন গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু কী আশ্চয! উত্তর কুমার পর্দা থেকে সরে গেলেও তার ছায়া পর্দায় রয়ে যায়।

জাদু দেখিয়ে পিসি সরকার দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। জাদু বিদ্যার নোবেল প্রাইজ বলে খ্যাত ‘দি ফিনিক্স অ্যাওয়ার্ড’ তিনি দু’বার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘গোল্ডবার’ পুরস্কার, ‘সূবর্ণ লরেন মালা’ নামে জাদুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জার্মান পুরস্কার, হল্যান্ডের ‘ট্রিকস পুরস্কার’ এবং ১৯৬৪ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মশ্রী’ উপাধী লাভ করেন। জাদু খেলার কৃতিত্বের জন্য তৎকালীন মায়ানমারের (বার্মার) প্রধানমন্ত্রী তার নাম দিয়েছিলেন ‘এশিয়ার গর্ব’।

পিসি সরকার ১৯৭০ সালের ১৩ জানুয়ারি জাপানের আশাহিকাওয়ায় জাদু প্রদর্শন করতে গিয়ে অকস্মাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৭ বছর।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা]

back to top