alt

opinion » post-editorial

ভোগ্যপণ্যের ওপর ডলারের দামের প্রভাব

রেজাউল করিম খোকন

: শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
image

করোনা-পরবর্তী চাহিদার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। দেশের ভেতরেও পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে আমদানি। একদিকে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও অন্যদিকে পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে আমদানি ব্যয়েও। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আমদানি ব্যয়ের বড় অংশই মেটানো হয়। ফলে রিজার্ভের ওপর হঠাৎ করে চাপ বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম এবং বিদেশে লোকজনের যাতায়াতের কারণে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গিয়ে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে হু-হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। গত জুলাই থেকে এর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪,৫০০ কোটি ডলারে নেমেছে।

করোনার প্রকোপ কমে আসায় আমদানি খরচ হঠাৎ ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। রপ্তানি অবশ্য বেড়েছে ৬০ শতাংশের মতো। আবার প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। সার্বিকভাবে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডলারের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল। আমদানি ব্যয় যেভাবে বাড়ছে তাতে আলোচ্য রিজার্ভ দিয়ে আগামী ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হবে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসার বড় মাধ্যম রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় এবং বিদেশি অনুদান ও ঋণ। আর ডলার ব্যয় হয় আমদানি এবং বিদেশি সেবা, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও বেতন-ভাতার খরচ মেটাতে। এছাড়া আমদানি খরচও (জাহাজ ভাড়া) বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ডলার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাটির দাম বাড়ছে। যে কারণে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পুরো অর্থনীতিতে, যা অস্বস্তিতে ফেলেছে জনগণকে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশই রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে। ২ শতাংশ আসে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। করোনার কারণে ঋণপ্রবাহ বাড়ায় এটি এখন ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রপ্তানি আয় বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্স। ঋণপ্রবাহও এখন কমেছে। এদিকে আমদানি ব্যয়সহ বিদেশে যাওয়ার খরচ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। এ হার আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল সাড়ে ১১ শতাংশ।

গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২৮ শতাংশ। গত জুলাই অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমেছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৪৩ শতাংশ। পরিমাণগত দিক থেকে রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি। এছাড়া বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতেও ডলারের খরচ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত জানুয়ারি থেকে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি।

শিল্পের যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। খাদ্য উপকরণের দামও বেড়েছে। সব মিলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এদিকে প্রায় দেড় বছর পর পর্যটনের জন্য ধীরে ধীরে খুলছে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত। করোনার কারণে থেমে যাওয়া বহুজাতিক বিমান সংস্থাগুলো এখন অনেক গন্তব্যে বিমান চলাচল কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে মানুষের পেশাগত কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কেনাকাটা এবং ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন দেশে যাতায়াত শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে ডলারের দামে।

পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি এত আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ, হঠাৎ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ডলারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হলো বাণিজ্য। দেশে হঠাৎ করে কেন ডলারের এত চাহিদা তৈরি হলো, তা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) খতিয়ে দেখতে পারে। ব্যাংকগুলো সীমার বেশি ডলার ধারণ করে দাম বাড়াচ্ছে কি না, তাও দেখতে হবে। ডলারের দাম মূলত আমদানি-সরবরাহের ওপর নির্ভর করবে। দাম ধরে না রেখে আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করতে হবে। আয় বাড়াতে দক্ষ জনবল পাঠানো ও প্রবাসী আয় আনা আরও সহজ করতে হবে।

প্রবাসে থাকা অনেকের আয় কমে গেছে। অনেকে অনিশ্চয়তার মধ্যেও পড়ে গেছেন। সে জন্য তারা কম পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন। আবার অনেকে হাতে হাতে ডলার পাঠাচ্ছেন। কারণ, এভাবে পাঠালে বেশি টাকা পাওয়া যায়। এসব তো সহজেই মোকাবিলা করা যাবে না। তবে প্রবাসীদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি দেশের যেসব জায়গায় খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়, সেখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি বাড়াতে পারে। তাহলে কিছুটা চাপ তৈরি হবে। এতে বৈধ চ্যানেলে আয় বাড়তে পারে। ব্যাংকগুলো সীমার বেশি ডলার ধারণ করে দাম বাড়াচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। দাম ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ডলার বিক্রি করে যাবে, এটা সমীচীন নয়। আশেপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করতে হবে। প্রবাসী আয় বাড়াতে বিদেশে দক্ষ জনবল পাঠানো এবং প্রবাসী আয় আনা আরও সহজ করতে হবে। তাহলেই ডলারের ওপর চাপ কমে আসবে। মনে রাখতে হবে, ডলারের দাম বাড়তে থাকলে ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়বে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

চা-জনগোষ্ঠীর দণ্ডপূজা ও উপেক্ষিত অধিকার

মেরিটোক্রেসি: সমাজ ও রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

রম্যগদ্য: হাতের মুঠোয় বিশ্ব

শারদীয় পূজার দিনলিপি

ঋণের জন্য আত্মহত্যা, ঋণ নিয়েই চল্লিশা

জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

tab

opinion » post-editorial

ভোগ্যপণ্যের ওপর ডলারের দামের প্রভাব

রেজাউল করিম খোকন

image

শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

করোনা-পরবর্তী চাহিদার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। দেশের ভেতরেও পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে আমদানি। একদিকে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও অন্যদিকে পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে আমদানি ব্যয়েও। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আমদানি ব্যয়ের বড় অংশই মেটানো হয়। ফলে রিজার্ভের ওপর হঠাৎ করে চাপ বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম এবং বিদেশে লোকজনের যাতায়াতের কারণে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গিয়ে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে হু-হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। গত জুলাই থেকে এর দাম বৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪,৫০০ কোটি ডলারে নেমেছে।

করোনার প্রকোপ কমে আসায় আমদানি খরচ হঠাৎ ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। রপ্তানি অবশ্য বেড়েছে ৬০ শতাংশের মতো। আবার প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। সার্বিকভাবে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডলারের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল। আমদানি ব্যয় যেভাবে বাড়ছে তাতে আলোচ্য রিজার্ভ দিয়ে আগামী ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হবে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসার বড় মাধ্যম রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় এবং বিদেশি অনুদান ও ঋণ। আর ডলার ব্যয় হয় আমদানি এবং বিদেশি সেবা, শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও বেতন-ভাতার খরচ মেটাতে। এছাড়া আমদানি খরচও (জাহাজ ভাড়া) বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে ডলার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাটির দাম বাড়ছে। যে কারণে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পুরো অর্থনীতিতে, যা অস্বস্তিতে ফেলেছে জনগণকে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশই রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে। ২ শতাংশ আসে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। করোনার কারণে ঋণপ্রবাহ বাড়ায় এটি এখন ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রপ্তানি আয় বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্স। ঋণপ্রবাহও এখন কমেছে। এদিকে আমদানি ব্যয়সহ বিদেশে যাওয়ার খরচ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। এ হার আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল সাড়ে ১১ শতাংশ।

গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২৮ শতাংশ। গত জুলাই অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমেছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৪৩ শতাংশ। পরিমাণগত দিক থেকে রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি। এছাড়া বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতেও ডলারের খরচ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত জানুয়ারি থেকে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি।

শিল্পের যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। খাদ্য উপকরণের দামও বেড়েছে। সব মিলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এদিকে প্রায় দেড় বছর পর পর্যটনের জন্য ধীরে ধীরে খুলছে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত। করোনার কারণে থেমে যাওয়া বহুজাতিক বিমান সংস্থাগুলো এখন অনেক গন্তব্যে বিমান চলাচল কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে মানুষের পেশাগত কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কেনাকাটা এবং ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন দেশে যাতায়াত শুরু হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে ডলারের দামে।

পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি এত আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ, হঠাৎ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ডলারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, অর্থ পাচারের অন্যতম মাধ্যম হলো বাণিজ্য। দেশে হঠাৎ করে কেন ডলারের এত চাহিদা তৈরি হলো, তা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) খতিয়ে দেখতে পারে। ব্যাংকগুলো সীমার বেশি ডলার ধারণ করে দাম বাড়াচ্ছে কি না, তাও দেখতে হবে। ডলারের দাম মূলত আমদানি-সরবরাহের ওপর নির্ভর করবে। দাম ধরে না রেখে আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করতে হবে। আয় বাড়াতে দক্ষ জনবল পাঠানো ও প্রবাসী আয় আনা আরও সহজ করতে হবে।

প্রবাসে থাকা অনেকের আয় কমে গেছে। অনেকে অনিশ্চয়তার মধ্যেও পড়ে গেছেন। সে জন্য তারা কম পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন। আবার অনেকে হাতে হাতে ডলার পাঠাচ্ছেন। কারণ, এভাবে পাঠালে বেশি টাকা পাওয়া যায়। এসব তো সহজেই মোকাবিলা করা যাবে না। তবে প্রবাসীদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি দেশের যেসব জায়গায় খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়, সেখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি বাড়াতে পারে। তাহলে কিছুটা চাপ তৈরি হবে। এতে বৈধ চ্যানেলে আয় বাড়তে পারে। ব্যাংকগুলো সীমার বেশি ডলার ধারণ করে দাম বাড়াচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে। দাম ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ডলার বিক্রি করে যাবে, এটা সমীচীন নয়। আশেপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করতে হবে। প্রবাসী আয় বাড়াতে বিদেশে দক্ষ জনবল পাঠানো এবং প্রবাসী আয় আনা আরও সহজ করতে হবে। তাহলেই ডলারের ওপর চাপ কমে আসবে। মনে রাখতে হবে, ডলারের দাম বাড়তে থাকলে ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়বে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top