alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

পদ্মা সেতুর টোল

আর কে চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

পদ্মা সেতুর জন্য অপেক্ষা প্রায় দুই যুগের। পদ্মা সেতুটি সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সেতু যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। বিশেষত এটি ভুটান, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য আরও দ্রুত সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে বার্ষিক জিডিপিতে এটি প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখবে, দারিদ্র্য হ্রাস করবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াবে। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের দরজা খুলে দেবে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানতম স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সমীক্ষায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সময় ১০ শতাংশ হ্রাস পেলে অর্থনৈতিক আয় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প মূল্যায়ন দলিল অনুসারে, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ হবে এবং এতে জাতীয় জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

আগামী জুন মাসের শেষের দিকে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলে উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য চলছে ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ। এর মধ্যেই সম্প্রতি পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

গত ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠায় সেতু মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারে ফেরির চেয়ে দেড়গুণ টোল গুনতে হবে। এর ফলে যাতায়াতের সময় বাঁচলেও বেড়ে যাবে খরচ। টোল সাধ্যের মধ্যে আনার দাবি করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করে সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ফেরির চেয়ে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ টোল বেশি ধরা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোটরসাইকেলের টোল ১০০, কার ও জিপের ৭৫০, পিকআপের ১ হাজার ২০০, মাইক্রোবাসের ১ হাজার ৩০০, ছোট বাস ৩১ আসন বা এর কম হলে ১ হাজার ৪০০, মাঝারি বাস ৩২ আসন বা এর বেশি হলে ২ হাজার এবং বড় বাস থ্রি এক্সেল ২ হাজার ৪০০ টাকা। ছোট ট্রাক ৫ টন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০, মাঝারি ট্রাক ৫ টনের অধিক থেকে ৮ টন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০, বড় ট্রাক ৮ টনের অধিক থেকে ১১ টন পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০, ট্রাক থ্রি এক্সেল পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০, ট্রেলার ফোর এক্সেল পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু পারাপারে ফেরির চেয়ে টোল বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছেন পরিবহন মালিকরা। ইতোমধ্যে বাস ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু করেছে বাস কোম্পানিগুলো। বলা হচ্ছে, শুধু পদ্মা সেতু নয়, মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্যও টোল দিতে হবে। ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড়ে ইতোমধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে। তবে সরকারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ফেরির চেয়ে বেশি টোল আদায় করা হলেও যে জ্বালানি সাশ্রয় হবে তাতে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতাই নেই।

আগামী মাসেই পদ্মা সেতু সড়কপথের যানবাহন চালুর জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তারপর শুরু হবে সেতুতে রেললাইন স্থাপন। দুই বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত সরাসরি রেল চলাচল সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুতে টোলের যে হার ধার্য করা হয়েছে তাতে ৩৫ বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। এ সেতু ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তি আনতে টোলের হার পুনর্বিবেচনা করা হবে, এমনটিই প্রত্যাশিত।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

মব সংস্কৃতি, ন্যায়বিচারের সংকট ও সমাজের আত্মক্ষয়

শীতকালীন জীবন: সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও সহমর্মিতা

অ্যালগরিদমের রাজনীতি

চারদিকে আতঙ্ক আর শঙ্কা

অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই

দিপু দাস হত্যাকাণ্ড ও মব সন্ত্রাস

ভোগের দৃশ্যপট: ঢাকায় আধুনিকতা কেন কেবল অল্প কিছু মানুষের জন্য?

স্বর্ণের মোহ ও মানবিক দ্বন্দ্ব

ভালোবাসার দেহধারণ: বড়দিনের তাৎপর্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

বিনা-ভাড়ার ট্রেনযাত্রা

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এশিয়া

ছবি

নামে ইসলামী, কাজে আবু জাহেল!

জলবায়ু পরিবর্তন: স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: আমদানি কি সত্যিই সমাধান?

মূল্যবৃদ্ধির ঘেরাটোপ: সংকটাক্রান্ত পরিবার ও সামাজিক রূপান্তর

বায়দূষণে অকালমৃত্যু

লাশের বদলে লাশই যদি চুড়ান্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের দরকার কী?

ভিক্ষাবৃত্তি যেখানে অন্যতম পেশা

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

পদ্মা সেতুর টোল

আর কে চৌধুরী

মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

পদ্মা সেতুর জন্য অপেক্ষা প্রায় দুই যুগের। পদ্মা সেতুটি সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সেতু যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। বিশেষত এটি ভুটান, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য আরও দ্রুত সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে বার্ষিক জিডিপিতে এটি প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখবে, দারিদ্র্য হ্রাস করবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াবে। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের দরজা খুলে দেবে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানতম স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সমীক্ষায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সময় ১০ শতাংশ হ্রাস পেলে অর্থনৈতিক আয় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প মূল্যায়ন দলিল অনুসারে, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ হবে এবং এতে জাতীয় জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

আগামী জুন মাসের শেষের দিকে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলে উন্মুক্ত করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য চলছে ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ। এর মধ্যেই সম্প্রতি পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

গত ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠায় সেতু মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারে ফেরির চেয়ে দেড়গুণ টোল গুনতে হবে। এর ফলে যাতায়াতের সময় বাঁচলেও বেড়ে যাবে খরচ। টোল সাধ্যের মধ্যে আনার দাবি করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করে সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ফেরির চেয়ে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ টোল বেশি ধরা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোটরসাইকেলের টোল ১০০, কার ও জিপের ৭৫০, পিকআপের ১ হাজার ২০০, মাইক্রোবাসের ১ হাজার ৩০০, ছোট বাস ৩১ আসন বা এর কম হলে ১ হাজার ৪০০, মাঝারি বাস ৩২ আসন বা এর বেশি হলে ২ হাজার এবং বড় বাস থ্রি এক্সেল ২ হাজার ৪০০ টাকা। ছোট ট্রাক ৫ টন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০, মাঝারি ট্রাক ৫ টনের অধিক থেকে ৮ টন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০, বড় ট্রাক ৮ টনের অধিক থেকে ১১ টন পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০, ট্রাক থ্রি এক্সেল পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০, ট্রেলার ফোর এক্সেল পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু পারাপারে ফেরির চেয়ে টোল বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছেন পরিবহন মালিকরা। ইতোমধ্যে বাস ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু করেছে বাস কোম্পানিগুলো। বলা হচ্ছে, শুধু পদ্মা সেতু নয়, মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্যও টোল দিতে হবে। ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড়ে ইতোমধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে। তবে সরকারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ফেরির চেয়ে বেশি টোল আদায় করা হলেও যে জ্বালানি সাশ্রয় হবে তাতে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতাই নেই।

আগামী মাসেই পদ্মা সেতু সড়কপথের যানবাহন চালুর জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তারপর শুরু হবে সেতুতে রেললাইন স্থাপন। দুই বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত সরাসরি রেল চলাচল সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুতে টোলের যে হার ধার্য করা হয়েছে তাতে ৩৫ বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। এ সেতু ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তি আনতে টোলের হার পুনর্বিবেচনা করা হবে, এমনটিই প্রত্যাশিত।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

back to top