alt

উপ-সম্পাদকীয়

অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা কোথায়

রেজাউল করিম খোকন

: রোববার, ২৬ জুন ২০২২

দুই দশকের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক বা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয়েছে গত বছর। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। গত ২০২০ সালে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিশে^র বিভিন্ন দেশে। এই টাকা পাচার হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। যার একটা বড় মাধ্যম হচ্ছে হুন্ডি। এর বাইরে টাকা পাচার হচ্ছে ব্যবসার নামে। দেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর কোনো পদ্ধতি না থাকার কারণে অবৈধ পথেই পাচার হচ্ছে টাকা। আর পাচার হওয়া এই টাকা রাখা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি বাণিজ্যের আড়ালে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, তার প্রাক্কলন করে। তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। বলা যায়, এক অর্থবছরের বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যদি এত অর্থ বিদেশে পাচার হয় এবং বছরের পর বছর তা চলতে থাকে, তবে এ দেশের দ্রুত উন্নয়ন আশার করা বৃথা। একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। এছাড়াও টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছেন, জমা রাখছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে আরও অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশের পাচারকারীদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে মালয়েশিয়ার সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী। দেশ থেকে বিদেশে টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে ব্যাংক থেকে এ ধরনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তারপরেও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হলো। কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চল বেগমপাড়া। এছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিংঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতি বছরই এখন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোন দেশের নাগরিকের কী পরিমাণ অর্থ জমা আছে, তার একটি হিসাব দেয়। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের কী পরিমাণ অর্থ আছে, তা প্রথম জানা যায় ২০০৪ সাল থেকে। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে লেখালেখি শুরু হয়েছিল ২০১৪ থেকে। সাধারণত জুন মাসে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। শুরুতে রিপোর্ট প্রকাশের পরে এ নিয়ে লেখালেখি হলে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতেন। কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন। কয়েক বছর ধরে অবশ্য কথা বলার সুর পাল্টে গেছে। এখন একটাই কথা, এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে যায়নি। আসলে কোথা থেকে গেছে, কার অর্থ গেছে, তা জানার কোনো সুযোগই বাংলাদেশের নেই, যা অন্য অনেক দেশের আছে। কোভিডকালে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছে রেকর্ড পরিমাণ, প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ শতাংশের বেশি। আবার একই সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণে কালোটাকা সাদা হয়েছে ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর এখন দেখা যাচ্ছে সুইস ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের বিপুল অর্থ ঢুকেছে। সুতরাং সারা বিশ্বে চলাচল বন্ধ থাকা, কম চাহিদা এবং অর্থ ব্যবহারের তেমন সুযোগ থাকার সঙ্গে এর সম্পর্ক কতটা, এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে অর্থ পাচার হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সময়ে অর্থ পাচারের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুশাসন ইত্যাদি। এখনো দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। অনেকে নানা রকম দুর্নীতির মাধমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে। এসব টাকা দেশের ব্যাংকে রাখলে জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হতে পারে। এমন আশঙ্কায় দেশের বাইরে অর্থ পাঠিয়ে নিরপদ থাকতে চাইছেন তারা। সুইস ব্যাংকে গ্রাহকের তথ্য গোপন রাখার কারণে সেখানকার ব্যাংকগুলো বিভিন্ন অসৎ দুর্নীতিবাজ মানুষের উপার্জিত অবৈধ অর্থের জমা রাখার নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত। দেশে এখন প্রায় ১ লাখ কোটিপতি রয়েছে। এদের বেশির ভাগই কোন না কোনভাবে ক্ষমতা বলয়ের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে কালোটাকার মালিক থাকা অস্বাভাবিক নয়। সরকারের উচিত হবে যথাযথ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এদের অর্থের উৎস সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে সুশাসন, সুসংগঠিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সর্বোপরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা থাকলে অর্থ পাচার অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

এদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ গত দুই দশক ধরে বেড়ে চললেও এসব অর্থ দেশে ফেরত আনা বা এসব অর্থের মালিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। এবারই বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, করছাড় বা করের ডিসকাউন্ট সুবিধা দিয়ে। অতীত অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্ত থেকে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যায়। আগে বাণিজ্যের আড়ালে বাণিজ্য পুঁজি পাচার হতো। এখন আর্থিক পুঁজি পাচার হচ্ছে। আর এ কাজের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতি চক্রের আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটেছে। পাশাপাশি সরকারি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তারা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। এ কারণে পাচারের অর্থ নামমাত্র করে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাজেটীয় প্রস্তাব দেয়া হয়।

দুর্নীতির আন্তর্জাতিকীকরণ চক্রের হাতে এখন নীতিও ছিনতাই হয়ে গেছে। সুইস ব্যাংক আমানতের যে তথ্য প্রকাশ করছে, এটি পাচারের একটি অংশ। আর পাচারের অধিকাংশই কালোটাকা। ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক থেকে অর্থ লুট, জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা পাচার হচ্ছে। তবে অর্থ পাচারের অধিকাংশই বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে। আর বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশ থেকে এ অর্থ পাচার হচ্ছে। কানাডায় বেগমপাড়া এবং মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আসছে, সবই পাচারের টাকা। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার দুর্বল নজরদারি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সহায়তা পাচ্ছে পাচারকারীরা। পরে কিছু টাকা রেমিট্যান্স আকারে ফিরে আসছে। দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে। বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, আর এ কারণেই টাকা পাচার হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই এ দেশে টাকা রাখতে নিরাপদ মনে করেন না। এছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা দেশে রাখা কঠিন। ফলে টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। টাকা কারা পাচার করছে, সবার আগে তা চিহ্নিত করতে হবে।

ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক থেকে অর্থ লুট, জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা পাচার হচ্ছে। তবে অর্থ পাচারের অধিকাংশই বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। দেশের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। সাধারণভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেই। অপরদিকে তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এটি হচ্ছে, তা বোঝা দরকার। এ টাকা পাচারের কয়েক কারণ হতে পারে। যেমন, তারা বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে না। অথবা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থা নেই।

সামগ্রিকভাবে কেন উচ্চবিত্তরা দেশে টাকা রাখে না, সেটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার যদি এ ধরনের কাজ আইনের আওতায় না এনে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এটি বাড়তে থাকবে। এ অবস্থার উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচার শুধু দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি করে না, দেশটির উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে। বাংলাদেশে সেই অর্থ পাচার আজ উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশেও মুদ্রা পাচার রোধে কিছু সংস্থা কাজ করছে বটে কিন্তু তাদের কর্মকান্ডের ফলাফল সন্তোষজনক নয়। এভাবে চললে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচারকারী দেশের তকমাটি পেয়ে যাবে। ভারত, নেপাল এমনকি পাকিস্তানেও অর্থ পাচার অনেক কমেছে। বাংলাদেশে তা না কমে বাড়ছে কেন? সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভারতসহ অনেক দেশের চুক্তি রয়েছে, যার ফলে সুইস ব্যাংকে রাখা সে সব দেশের আমানতকারীদের তথ্য দেশগুলো পেয়ে যায়। তাই সেসব দেশের আমানতকারীরা সুইস ব্যাংকে অবৈধ টাকা জমা রাখতে ভয় পায়, বাংলাদেশ এখনও তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না কেন?

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা কোথায়

রেজাউল করিম খোকন

রোববার, ২৬ জুন ২০২২

দুই দশকের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক বা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয়েছে গত বছর। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। গত ২০২০ সালে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বা ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিশে^র বিভিন্ন দেশে। এই টাকা পাচার হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। যার একটা বড় মাধ্যম হচ্ছে হুন্ডি। এর বাইরে টাকা পাচার হচ্ছে ব্যবসার নামে। দেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর কোনো পদ্ধতি না থাকার কারণে অবৈধ পথেই পাচার হচ্ছে টাকা। আর পাচার হওয়া এই টাকা রাখা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি বাণিজ্যের আড়ালে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, তার প্রাক্কলন করে। তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। বলা যায়, এক অর্থবছরের বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যদি এত অর্থ বিদেশে পাচার হয় এবং বছরের পর বছর তা চলতে থাকে, তবে এ দেশের দ্রুত উন্নয়ন আশার করা বৃথা। একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। এছাড়াও টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছেন, জমা রাখছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে আরও অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশের পাচারকারীদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে মালয়েশিয়ার সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী। দেশ থেকে বিদেশে টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে ব্যাংক থেকে এ ধরনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তারপরেও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হলো। কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চল বেগমপাড়া। এছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিংঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতি বছরই এখন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোন দেশের নাগরিকের কী পরিমাণ অর্থ জমা আছে, তার একটি হিসাব দেয়। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের কী পরিমাণ অর্থ আছে, তা প্রথম জানা যায় ২০০৪ সাল থেকে। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে লেখালেখি শুরু হয়েছিল ২০১৪ থেকে। সাধারণত জুন মাসে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। শুরুতে রিপোর্ট প্রকাশের পরে এ নিয়ে লেখালেখি হলে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতেন। কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন। কয়েক বছর ধরে অবশ্য কথা বলার সুর পাল্টে গেছে। এখন একটাই কথা, এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে যায়নি। আসলে কোথা থেকে গেছে, কার অর্থ গেছে, তা জানার কোনো সুযোগই বাংলাদেশের নেই, যা অন্য অনেক দেশের আছে। কোভিডকালে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছে রেকর্ড পরিমাণ, প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ শতাংশের বেশি। আবার একই সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণে কালোটাকা সাদা হয়েছে ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর এখন দেখা যাচ্ছে সুইস ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের বিপুল অর্থ ঢুকেছে। সুতরাং সারা বিশ্বে চলাচল বন্ধ থাকা, কম চাহিদা এবং অর্থ ব্যবহারের তেমন সুযোগ থাকার সঙ্গে এর সম্পর্ক কতটা, এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে অর্থ পাচার হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সময়ে অর্থ পাচারের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুশাসন ইত্যাদি। এখনো দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। অনেকে নানা রকম দুর্নীতির মাধমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে। এসব টাকা দেশের ব্যাংকে রাখলে জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হতে পারে। এমন আশঙ্কায় দেশের বাইরে অর্থ পাঠিয়ে নিরপদ থাকতে চাইছেন তারা। সুইস ব্যাংকে গ্রাহকের তথ্য গোপন রাখার কারণে সেখানকার ব্যাংকগুলো বিভিন্ন অসৎ দুর্নীতিবাজ মানুষের উপার্জিত অবৈধ অর্থের জমা রাখার নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত। দেশে এখন প্রায় ১ লাখ কোটিপতি রয়েছে। এদের বেশির ভাগই কোন না কোনভাবে ক্ষমতা বলয়ের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে কালোটাকার মালিক থাকা অস্বাভাবিক নয়। সরকারের উচিত হবে যথাযথ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এদের অর্থের উৎস সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে সুশাসন, সুসংগঠিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সর্বোপরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা থাকলে অর্থ পাচার অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

এদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ গত দুই দশক ধরে বেড়ে চললেও এসব অর্থ দেশে ফেরত আনা বা এসব অর্থের মালিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। এবারই বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, করছাড় বা করের ডিসকাউন্ট সুবিধা দিয়ে। অতীত অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্ত থেকে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যায়। আগে বাণিজ্যের আড়ালে বাণিজ্য পুঁজি পাচার হতো। এখন আর্থিক পুঁজি পাচার হচ্ছে। আর এ কাজের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতি চক্রের আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটেছে। পাশাপাশি সরকারি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তারা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। এ কারণে পাচারের অর্থ নামমাত্র করে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাজেটীয় প্রস্তাব দেয়া হয়।

দুর্নীতির আন্তর্জাতিকীকরণ চক্রের হাতে এখন নীতিও ছিনতাই হয়ে গেছে। সুইস ব্যাংক আমানতের যে তথ্য প্রকাশ করছে, এটি পাচারের একটি অংশ। আর পাচারের অধিকাংশই কালোটাকা। ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক থেকে অর্থ লুট, জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা পাচার হচ্ছে। তবে অর্থ পাচারের অধিকাংশই বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে। আর বিনিয়োগ না হওয়ায় দেশ থেকে এ অর্থ পাচার হচ্ছে। কানাডায় বেগমপাড়া এবং মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আসছে, সবই পাচারের টাকা। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার দুর্বল নজরদারি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সহায়তা পাচ্ছে পাচারকারীরা। পরে কিছু টাকা রেমিট্যান্স আকারে ফিরে আসছে। দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে। বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, আর এ কারণেই টাকা পাচার হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই এ দেশে টাকা রাখতে নিরাপদ মনে করেন না। এছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা দেশে রাখা কঠিন। ফলে টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। টাকা কারা পাচার করছে, সবার আগে তা চিহ্নিত করতে হবে।

ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক থেকে অর্থ লুট, জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা পাচার হচ্ছে। তবে অর্থ পাচারের অধিকাংশই বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। দেশের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। সাধারণভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেই। অপরদিকে তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এটি হচ্ছে, তা বোঝা দরকার। এ টাকা পাচারের কয়েক কারণ হতে পারে। যেমন, তারা বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে না। অথবা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থা নেই।

সামগ্রিকভাবে কেন উচ্চবিত্তরা দেশে টাকা রাখে না, সেটি অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। আবার যদি এ ধরনের কাজ আইনের আওতায় না এনে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এটি বাড়তে থাকবে। এ অবস্থার উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচার শুধু দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি করে না, দেশটির উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে। বাংলাদেশে সেই অর্থ পাচার আজ উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশেও মুদ্রা পাচার রোধে কিছু সংস্থা কাজ করছে বটে কিন্তু তাদের কর্মকান্ডের ফলাফল সন্তোষজনক নয়। এভাবে চললে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচারকারী দেশের তকমাটি পেয়ে যাবে। ভারত, নেপাল এমনকি পাকিস্তানেও অর্থ পাচার অনেক কমেছে। বাংলাদেশে তা না কমে বাড়ছে কেন? সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভারতসহ অনেক দেশের চুক্তি রয়েছে, যার ফলে সুইস ব্যাংকে রাখা সে সব দেশের আমানতকারীদের তথ্য দেশগুলো পেয়ে যায়। তাই সেসব দেশের আমানতকারীরা সুইস ব্যাংকে অবৈধ টাকা জমা রাখতে ভয় পায়, বাংলাদেশ এখনও তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না কেন?

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক]

back to top