alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

কাগজ সংকট সভ্যতারও সংকট

জাহাঙ্গীর সেলিম

: রোববার, ৩১ জুলাই ২০২২

কাগজ সংকটের সঙ্গে বস্তুত সভ্যতার সংকট জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে কাগজ ছাড়া কিছু ভাবা যায় না বা সভ্যতা অচল। একথা বেশি করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুরবস্থা থেকে। প্রথমে সে দেশে কাগজের সংকটে সংবাদপত্র প্রকাশনা (প্রিন্ট) বন্ধ হয়ে যায়। তারপর খুব দুঃখজনক ঘটনা কাগজের অভাবে সব ধরনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, এর মধ্যে কমলমতি শিশু, বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরীরাও অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য সে দেশের চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে অফিস সীমিত এবং সংসদ অধিবেশনগুলো সংক্ষিপ্ত সময়ে চলার পথ মুলতবি করা হয়েছে। অন্যান্য দুরবস্থার কথা প্রতিনিয়ত জানা যাচ্ছে। কেন এই অবস্থা? উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবল উচ্চাকাক্সক্ষা, যা কর্তৃত্ববাদী সরকারের মূলনীতি হিসেবে কাজ করেছে। পুঁজিবাদীদের প্রলোভন ও তাদের প্রদর্শিত উচ্চাভিলাসী প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিশাল ঋণের বোঝা চেপে বসায় এখন কূলহারা।

এখন আমজনতা অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পরেও অশান্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতির উন্নতি এখনও হয়নি। অথচ দুদশক আগেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময়ী দেশ। শিক্ষার হারে অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে এবং মাথাপিছু আয়েও ছিল অগ্রণী।

ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে, যা আমাদের মতো দেশগুলো মোকাবিলা করতে গলদঘর্ম হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশ সংগঠন ও পরিবেশবাদীরা নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদার্ত্ত আহ্বান জানাচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলছে। কিন্তু পরিবর্তন কোথায়! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উদ্বেগ ও সতর্কতা প্রদান করছেন। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে কয়েকবারই শীর্ষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছর বন্যায় চরম দুরবস্থার শিকার হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ ও মধ্যভাগে মৌসুমি বৃষ্টির পরিমাণ যথেষ্ট হলেও উত্তরাঞ্চলে প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাব প্রায় বছর দেখা দেয়। অথচ উত্তরাঞ্চল হলো দেশের খাদ্য ভান্ডার। দেশের ক্রমাগত খাদ্যের প্রয়োজনীয় জোগান দিতে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির দ্বিতীয় স্তর কোন কোন স্থানে নিঃশ্বাসের পথে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় চরম অশনি সংকেত সামনে অপেক্ষা করছে। উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলায় শিল্পায়নের নামে চাল কল স্থাপন করে বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার আশপাশের পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে পরিবেশ উন্নয়নের প্রশ্ন উঠলে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপণের কথা বলা হয়। তবে নিঃসন্দেহে এটি একটি পদক্ষেপ। কিন্তু সমস্যার মূলে হাত দেয়া হয় না। দেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার দু-দশক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিথিন ও হালে প্লাস্টিকসামগ্রী দেশের কৃষিজমি, খাল বিল, নদী, নালা এবং সাগর দূষিত করে চলেছে। বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ রকম উদাহরণের সংখ্যা অনেক। তবে উন্নয়নের নামে পরিবেশ বিপর্যয় মারাত্মক ঘটে চলেছে। অন্যদিকে ভোগবাদী সমাজে কাগজের ব্যবহার প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কথা হলো কাগজ তৈরির উপাদান তো বন থেকেই আসছে।

শিরোনাম অর্থাৎ কাগজ প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। বিগত ৯০ দশকের প্রথম ভাগে মোবাইলে এসএমএস অথবা চিঠিপত্র আদান-প্রদানের সময় একটি সতর্কবার্তা প্রায় লক্ষ করা যেত। বার্তাটি হলো- কাগজ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হউন, এক পৃষ্ঠা কাগজ তৈরি করতে অনেক গাছ বলি দিতে হয়।

ষাটের দশকে আমরা মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলাম। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের বই ও খাতা পত্রের অপ্রতুলতা ছিল। বছরের নতুন শ্রেণীতে নতুন বই দু-চার জনের কাছে দেখা যেত এবং আমরা সে সব নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকেছি। বাকি সব ছাত্র পুরোনো বই কম দামে ক্রয় করে লেখাপড়া করতে হয়েছে। এভাবে একই বই বা পাঠ্যপুস্তক কম করে ৪-৫ বছর হস্তান্তর হয়েছে। অথচ ষষ্ঠ শ্রেণীর নতুন পাঠ্যপুস্তকের মোট দাম ছিল প্রায় পাঁচ টাকা। এত গেল পাঠ্যপুস্তকের কথা। কিন্তু বছরজুড়ে দুর্ভোগ লেগেই ছিল। শ্লেট ছাড়ার পর লেখার খাতাও ছিল দুর্লভ। আমাদের অনেকে বাবা-মাকে খাতা লাগবে এ কথা তিন-চার দিন বলার পর এক দিন আধা দিস্তা বা এক দিস্তা কাগজ কেনার টাকা পেতাম (৫-১০ আনা)। তখন আমাদের আনন্দের শেষ থাকত না, মাঝে দু-চার দিন স্কুল গেছি খাতা ছাড়াই। শুধু আমি কেন, আমার মতো অনেকেই।

সেই অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থার আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রতি বছর সরকার প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বই বিনা মূল্যে বিতরণ করছে। মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ প্রদানের জন্য লক্ষ্যে আর্থিক সুবিধা দিয়ে সহায়তা করছে। বর্তমানে যে কোন শ্রেণীতে পাঠ্য বইয়ের পরিমাণও অনেক বেশি। সে কারণে প্রতি বছর সরকারকে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি বই মুদ্রণ করতে হচ্ছে। তাহলে কি পরিমাণে কাগজ ব্যবহার হচ্ছে? এ ছাড়া অফিস আদালতে কাগজের ব্যবহার কম বলা যাবে না। বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি করে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। ফলে পৃথিবীব্যাপী কাগজ ব্যবহারের পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। কাগজের ব্যবহার যতই বাড়বে বন ধ্বংসের পরিমাণও বহু গুণ বাড়বে। বন বা গাছপালা পৃথিবীর ফুসফুস, সেটি ধ্বংস হয়ে গেলে প্রাণের অস্তিত্ব কীভাবে থাকবে! এসব কারণে সব ক্ষেত্রেই কাগজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া প্রয়োজন আছে কি না, আমজনতা বিবেচনা করুক।

[লেখক : গবেষক]

স্বর্ণের মোহ ও মানবিক দ্বন্দ্ব

ভালোবাসার দেহধারণ: বড়দিনের তাৎপর্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

বিনা-ভাড়ার ট্রেনযাত্রা

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এশিয়া

ছবি

নামে ইসলামী, কাজে আবু জাহেল!

জলবায়ু পরিবর্তন: স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: আমদানি কি সত্যিই সমাধান?

মূল্যবৃদ্ধির ঘেরাটোপ: সংকটাক্রান্ত পরিবার ও সামাজিক রূপান্তর

বায়দূষণে অকালমৃত্যু

লাশের বদলে লাশই যদি চুড়ান্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের দরকার কী?

ভিক্ষাবৃত্তি যেখানে অন্যতম পেশা

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

পশ্চিমবঙ্গ: বামপন্থীদের ‘বাংলা বাঁচাও’-এর ডাক

সবার বাংলাদেশ কবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

বিদেশি বিনিয়োগ : প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক স্থিতি

চিকিৎসা যখন অসহনীয় ব্যয়, তখন প্রতিবাদই ন্যায়

মস্কোর কৌশলগত পুনর্গঠন

“সব শিয়ালের এক রা’ মারা গেল কুমিরের ছা”

ছবি

বিচূর্ণ দর্পণের মুখ

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

কাগজ সংকট সভ্যতারও সংকট

জাহাঙ্গীর সেলিম

রোববার, ৩১ জুলাই ২০২২

কাগজ সংকটের সঙ্গে বস্তুত সভ্যতার সংকট জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে কাগজ ছাড়া কিছু ভাবা যায় না বা সভ্যতা অচল। একথা বেশি করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুরবস্থা থেকে। প্রথমে সে দেশে কাগজের সংকটে সংবাদপত্র প্রকাশনা (প্রিন্ট) বন্ধ হয়ে যায়। তারপর খুব দুঃখজনক ঘটনা কাগজের অভাবে সব ধরনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, এর মধ্যে কমলমতি শিশু, বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরীরাও অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য সে দেশের চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে অফিস সীমিত এবং সংসদ অধিবেশনগুলো সংক্ষিপ্ত সময়ে চলার পথ মুলতবি করা হয়েছে। অন্যান্য দুরবস্থার কথা প্রতিনিয়ত জানা যাচ্ছে। কেন এই অবস্থা? উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবল উচ্চাকাক্সক্ষা, যা কর্তৃত্ববাদী সরকারের মূলনীতি হিসেবে কাজ করেছে। পুঁজিবাদীদের প্রলোভন ও তাদের প্রদর্শিত উচ্চাভিলাসী প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিশাল ঋণের বোঝা চেপে বসায় এখন কূলহারা।

এখন আমজনতা অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পরেও অশান্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতির উন্নতি এখনও হয়নি। অথচ দুদশক আগেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময়ী দেশ। শিক্ষার হারে অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে এবং মাথাপিছু আয়েও ছিল অগ্রণী।

ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে, যা আমাদের মতো দেশগুলো মোকাবিলা করতে গলদঘর্ম হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশ সংগঠন ও পরিবেশবাদীরা নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদার্ত্ত আহ্বান জানাচ্ছে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলছে। কিন্তু পরিবর্তন কোথায়! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উদ্বেগ ও সতর্কতা প্রদান করছেন। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে কয়েকবারই শীর্ষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছর বন্যায় চরম দুরবস্থার শিকার হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ ও মধ্যভাগে মৌসুমি বৃষ্টির পরিমাণ যথেষ্ট হলেও উত্তরাঞ্চলে প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাব প্রায় বছর দেখা দেয়। অথচ উত্তরাঞ্চল হলো দেশের খাদ্য ভান্ডার। দেশের ক্রমাগত খাদ্যের প্রয়োজনীয় জোগান দিতে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির দ্বিতীয় স্তর কোন কোন স্থানে নিঃশ্বাসের পথে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় চরম অশনি সংকেত সামনে অপেক্ষা করছে। উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলায় শিল্পায়নের নামে চাল কল স্থাপন করে বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার আশপাশের পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে পরিবেশ উন্নয়নের প্রশ্ন উঠলে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষ রোপণের কথা বলা হয়। তবে নিঃসন্দেহে এটি একটি পদক্ষেপ। কিন্তু সমস্যার মূলে হাত দেয়া হয় না। দেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার দু-দশক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিথিন ও হালে প্লাস্টিকসামগ্রী দেশের কৃষিজমি, খাল বিল, নদী, নালা এবং সাগর দূষিত করে চলেছে। বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ রকম উদাহরণের সংখ্যা অনেক। তবে উন্নয়নের নামে পরিবেশ বিপর্যয় মারাত্মক ঘটে চলেছে। অন্যদিকে ভোগবাদী সমাজে কাগজের ব্যবহার প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কথা হলো কাগজ তৈরির উপাদান তো বন থেকেই আসছে।

শিরোনাম অর্থাৎ কাগজ প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। বিগত ৯০ দশকের প্রথম ভাগে মোবাইলে এসএমএস অথবা চিঠিপত্র আদান-প্রদানের সময় একটি সতর্কবার্তা প্রায় লক্ষ করা যেত। বার্তাটি হলো- কাগজ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হউন, এক পৃষ্ঠা কাগজ তৈরি করতে অনেক গাছ বলি দিতে হয়।

ষাটের দশকে আমরা মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলাম। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের বই ও খাতা পত্রের অপ্রতুলতা ছিল। বছরের নতুন শ্রেণীতে নতুন বই দু-চার জনের কাছে দেখা যেত এবং আমরা সে সব নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকেছি। বাকি সব ছাত্র পুরোনো বই কম দামে ক্রয় করে লেখাপড়া করতে হয়েছে। এভাবে একই বই বা পাঠ্যপুস্তক কম করে ৪-৫ বছর হস্তান্তর হয়েছে। অথচ ষষ্ঠ শ্রেণীর নতুন পাঠ্যপুস্তকের মোট দাম ছিল প্রায় পাঁচ টাকা। এত গেল পাঠ্যপুস্তকের কথা। কিন্তু বছরজুড়ে দুর্ভোগ লেগেই ছিল। শ্লেট ছাড়ার পর লেখার খাতাও ছিল দুর্লভ। আমাদের অনেকে বাবা-মাকে খাতা লাগবে এ কথা তিন-চার দিন বলার পর এক দিন আধা দিস্তা বা এক দিস্তা কাগজ কেনার টাকা পেতাম (৫-১০ আনা)। তখন আমাদের আনন্দের শেষ থাকত না, মাঝে দু-চার দিন স্কুল গেছি খাতা ছাড়াই। শুধু আমি কেন, আমার মতো অনেকেই।

সেই অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থার আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রতি বছর সরকার প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বই বিনা মূল্যে বিতরণ করছে। মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ প্রদানের জন্য লক্ষ্যে আর্থিক সুবিধা দিয়ে সহায়তা করছে। বর্তমানে যে কোন শ্রেণীতে পাঠ্য বইয়ের পরিমাণও অনেক বেশি। সে কারণে প্রতি বছর সরকারকে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি বই মুদ্রণ করতে হচ্ছে। তাহলে কি পরিমাণে কাগজ ব্যবহার হচ্ছে? এ ছাড়া অফিস আদালতে কাগজের ব্যবহার কম বলা যাবে না। বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি করে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। ফলে পৃথিবীব্যাপী কাগজ ব্যবহারের পরিমাণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। কাগজের ব্যবহার যতই বাড়বে বন ধ্বংসের পরিমাণও বহু গুণ বাড়বে। বন বা গাছপালা পৃথিবীর ফুসফুস, সেটি ধ্বংস হয়ে গেলে প্রাণের অস্তিত্ব কীভাবে থাকবে! এসব কারণে সব ক্ষেত্রেই কাগজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া প্রয়োজন আছে কি না, আমজনতা বিবেচনা করুক।

[লেখক : গবেষক]

back to top