alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মাঙ্কিপক্সে আতঙ্ক নয়

শারফুদ্দিন আহমেদ

: মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২

সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মাঙ্কিপক্স রোগী পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস ২৩ জুলাই মাঙ্কিপক্সের সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা জারি করেছেন। মাঙ্কিপক্স সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, যার মধ্যে শ্লেষ্মা ঝিলি এবং ত্বকের ক্ষতের মাধ্যমে বা দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে আসা অন্যতম। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা বা ড্রপলেট দ্বারাও সংক্রামিত হতে পারে, স্বল্প দূরত্বে এবং দীর্ঘক্ষণ সান্নিধ্যে থাকার সময়ে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে কেউ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রধান ফ্যাক্টর হলো একাধিক সঙ্গী থাকা: দেখা গেছে ৭৪ শতাংশ রোগীর বহুগামিতার অভ্যস্ত। আর ২৬ শতাংশ রোগীর মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে এইচআইভি-পজিটিভ ধরা পড়ে।

মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাক্সিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্ম্যালপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস যার প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সম্ভবত তাদের অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। উদাহরণ-জংলী কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বানর, সজারু ইত্যাদি।

১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম দেখা দিয়েছিল বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স।

এই ভাইরাসের ২টা স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ংকর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০ শতাংশ রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে।

গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে। ২ সপ্তাহের মধ্যে, সম্ভব হলে ৪ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠান্ডা লাগা, ঘাম, প্রচন্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।

লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২-৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি তৈরি হয়। ফুসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে।

এগুলো মুখমন্ডল, শরীর, হাত-পা এবং মাথার ত্বক জড়িত। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ক্ষত দেখা যেতে পারে। এগুলি ব্যথাহীন হয়। যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানি থাকতে পারে।

হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়, মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত সেল্ফ লিমিটেড।

আক্রান্ত বা সন্দেহযুক্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রাণীর কামড়, আঁচড় এবং লালা বা প্রস্রাবের স্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। আর আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সব ক্ষত শুকানো পর্যন্ত আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন করে চিকিৎসা করা আবশ্যক।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, এফডিএ গুটিবসন্ত বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকা দেয়ার জন্য একটি লাইভ, নন-রিপ্লিকেটিং স্মলপক্স এবং মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। সিডোফোভির- মাঙ্কিপক্সের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ স্মলপক্স ভ্যাকসিন, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন উভয়ই লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাক্সিনিয়া স্ট্রেন থেকে উদ্ভূত।

বাংলাদেশে এখনো এই রোগের কোন রোগী ধরা পড়ে নাই। দেশের মানুষকে যে কোন ধরনের গুজব বা আতঙ্ক এড়িয়ে চলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো এই রোগ থেকেও আমরা জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারব।

[লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এশিয়া

ছবি

নামে ইসলামী, কাজে আবু জাহেল!

জলবায়ু পরিবর্তন: স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি

অস্থির পেঁয়াজের বাজার: আমদানি কি সত্যিই সমাধান?

মূল্যবৃদ্ধির ঘেরাটোপ: সংকটাক্রান্ত পরিবার ও সামাজিক রূপান্তর

বায়দূষণে অকালমৃত্যু

লাশের বদলে লাশই যদি চুড়ান্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের দরকার কী?

ভিক্ষাবৃত্তি যেখানে অন্যতম পেশা

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা সংকট

“মুনীর চৌধুরীর কবর...”

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

জলবায়ু সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা

স্বাধীন তদন্ত কমিশন দাবির নেপথ্যে কি দায়মুক্তি?

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

প্রহর গুনি কোন আশাতে!

বিজয়ের রক্তাক্ত সূর্য ও আমাদের ঋণের হিসাব

বিজয় দিবস: নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্রচিন্তার দিকদর্শন

ছবি

আমাদের বিজয়ের অন্তর্নিহিত বার্তা

প্রাণিসম্পদ: দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি

জমির জরিপ: ন্যায়বিচার প্রসঙ্গ

বুদ্ধিজীবী হত্যা ও এর স্বরূপ সন্ধানে

উন্নয়নের আড়ালে রোগীর ভোগান্তি: আস্থা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা

ছবি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: অমিত শক্তির উৎস

ছবি

বেগম রোকেয়া এখনো জাগ্রত

পশ্চিমবঙ্গ: বামপন্থীদের ‘বাংলা বাঁচাও’-এর ডাক

সবার বাংলাদেশ কবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

বিদেশি বিনিয়োগ : প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক স্থিতি

চিকিৎসা যখন অসহনীয় ব্যয়, তখন প্রতিবাদই ন্যায়

মস্কোর কৌশলগত পুনর্গঠন

“সব শিয়ালের এক রা’ মারা গেল কুমিরের ছা”

ছবি

বিচূর্ণ দর্পণের মুখ

নিজের চেতনায় নিজেরই ঘা দেয়া জরুরি

ঋণ অবলোপনের প্রভাব

ভেজাল গুড়ের মরণফাঁদ: বাঙালির ঐতিহ্য, জনস্বাস্থ্য ও আস্থার নীরব বিপর্যয়

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মাঙ্কিপক্সে আতঙ্ক নয়

শারফুদ্দিন আহমেদ

মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২

সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মাঙ্কিপক্স রোগী পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস ২৩ জুলাই মাঙ্কিপক্সের সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা জারি করেছেন। মাঙ্কিপক্স সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, যার মধ্যে শ্লেষ্মা ঝিলি এবং ত্বকের ক্ষতের মাধ্যমে বা দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে আসা অন্যতম। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা বা ড্রপলেট দ্বারাও সংক্রামিত হতে পারে, স্বল্প দূরত্বে এবং দীর্ঘক্ষণ সান্নিধ্যে থাকার সময়ে। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত অন্য ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে কেউ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রধান ফ্যাক্টর হলো একাধিক সঙ্গী থাকা: দেখা গেছে ৭৪ শতাংশ রোগীর বহুগামিতার অভ্যস্ত। আর ২৬ শতাংশ রোগীর মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে এইচআইভি-পজিটিভ ধরা পড়ে।

মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাক্সিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্ম্যালপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস যার প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সম্ভবত তাদের অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। উদাহরণ-জংলী কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, বানর, সজারু ইত্যাদি।

১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম দেখা দিয়েছিল বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স।

এই ভাইরাসের ২টা স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ংকর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০ শতাংশ রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে।

গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে। ২ সপ্তাহের মধ্যে, সম্ভব হলে ৪ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠান্ডা লাগা, ঘাম, প্রচন্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।

লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২-৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি তৈরি হয়। ফুসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে।

এগুলো মুখমন্ডল, শরীর, হাত-পা এবং মাথার ত্বক জড়িত। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ক্ষত দেখা যেতে পারে। এগুলি ব্যথাহীন হয়। যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানি থাকতে পারে।

হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়, মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত সেল্ফ লিমিটেড।

আক্রান্ত বা সন্দেহযুক্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রাণীর কামড়, আঁচড় এবং লালা বা প্রস্রাবের স্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। আর আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সব ক্ষত শুকানো পর্যন্ত আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন করে চিকিৎসা করা আবশ্যক।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, এফডিএ গুটিবসন্ত বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকা দেয়ার জন্য একটি লাইভ, নন-রিপ্লিকেটিং স্মলপক্স এবং মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। সিডোফোভির- মাঙ্কিপক্সের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ স্মলপক্স ভ্যাকসিন, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন উভয়ই লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাক্সিনিয়া স্ট্রেন থেকে উদ্ভূত।

বাংলাদেশে এখনো এই রোগের কোন রোগী ধরা পড়ে নাই। দেশের মানুষকে যে কোন ধরনের গুজব বা আতঙ্ক এড়িয়ে চলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো এই রোগ থেকেও আমরা জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারব।

[লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top