alt

উপ-সম্পাদকীয়

সর্প দংশনের কার্যকর চিকিৎসা পেতে চ্যালেঞ্জ এবং বাধা

এম এ ফয়েজ

: বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে বহুদিন ধরে সর্প দংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। সর্প দংশন জরিপ তথ্য ১৫ বছরের পুরানো, নতুন জরিপ চলছে; সাপের তথ্য অপর্যাপ্ত। একটি জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা যাতে একাধিক সেক্টরের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সর্প দংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পৃথক কোন কর্মসূচি নেই। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ কার্যত অস্তিত্বহীন। অন্যান্য জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির মতো সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান নয়। বিভিন্ন মেডিকেল কোর্সে সর্পদংশন বিষয়ে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ ন্যূনতম। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অংশগ্রহণ সীমিত।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক সর্প দংশন সচেতনতা দিবস। ৫ম বারের মতো পালিত দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সর্প দংশনের কার্যকর চিকিৎসা পেতে চ্যালেঞ্জ এবং বাধা’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালে প্রণীত কৌশলপত্রের আলোকে বাংলাদেশে সর্প দংশনের কৌশলপত্র ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) সম্প্রতি প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে ২০৩০ সাল নাগাদ সর্পদংশনে শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু ও অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এতে ৪টি কর্মকৌশল আছে- ১. কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন ও নিয়োগ করা; ২. এন্টিভেনমসহ কার্যকর নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; ৩. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অধিকতর সফল করা ও ৪. অংশীদারিত্ব, সমন্বয় ও সংস্থান বৃদ্ধি।

বাংলাদেশে সর্প দংশনের কার্যকরী চিকিৎসা পাওয়ার চ্যালেঞ্জ ও বাধার মধ্যে রয়েছে উপজেলা হাসপাতালে এন্টিভেনম ও লজিস্টিকের অপ্রতিহত প্রাপ্যতা, নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত রোগী পরিবহন ও দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের উপস্থিতি। কিন্তু মনে হয় প্রথাগত নিরাময়কারীদের (ওঝা) কার্যহীন-ক্ষতিকর চিকিৎসার ওপর জনগোষ্ঠীর বড় ধরনের আস্থার মনোভাব আছে; যা পরিবর্তন করা সব চেয়ে বড় বাধা।

উদাহরণস্বরূপ- ১ সেপ্টেম্বর একজন তরুণ পুরুষ রোগী প্রথাগত নিরাময়কারীর চিকিৎসা নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে স্নায়ুতন্ত্রের ওপর বিষের মারাত্মক উপসর্গসমূহ নিয়ে আসেন। যেখানে এন্টিভেনম দেয়ার পরে রোগীর অবস্থা এতোটা উন্নতি হয়েছিল যে রোগী যখন পরবর্তী রেফার করা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে ছিলেন, তখন উপস্থিত চিকিৎসক ভেবেছিলেন যে, এটি একটি অবিষধর সর্পদংশন কারণ স্নায়ুতন্ত্রের ওপর নিউরোটক্সিক বৈশিষ্ট্যগুলো ইতোমধ্যে পুরোটাই অদৃশ্য হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যবশত বাড়িতে আসার পর রোগী আবার ক্ষতিকারক ও আকেজো চিকিৎসা পেতে ২য় বারের মতো প্রথাগত নিরাময়কারীর কাছে ফিরে যান।

সর্প দংশনের পর কার্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কমিউনিটিকে জ্ঞানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ ও ক্ষমতায়ন করার বিকল্প নেই। কমিউনিটির মনোভাব পরিবর্তন করে সর্প দংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক মৌলিক বিষয়সমূহ সঠিক প্রয়োগ করতে সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

[লেখক : অধ্যাপক, মেডিসিন; সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ও ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন]

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সর্প দংশনের কার্যকর চিকিৎসা পেতে চ্যালেঞ্জ এবং বাধা

এম এ ফয়েজ

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে বহুদিন ধরে সর্প দংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। সর্প দংশন জরিপ তথ্য ১৫ বছরের পুরানো, নতুন জরিপ চলছে; সাপের তথ্য অপর্যাপ্ত। একটি জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা যাতে একাধিক সেক্টরের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সর্প দংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পৃথক কোন কর্মসূচি নেই। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ কার্যত অস্তিত্বহীন। অন্যান্য জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির মতো সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান নয়। বিভিন্ন মেডিকেল কোর্সে সর্পদংশন বিষয়ে শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ ন্যূনতম। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অংশগ্রহণ সীমিত।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক সর্প দংশন সচেতনতা দিবস। ৫ম বারের মতো পালিত দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সর্প দংশনের কার্যকর চিকিৎসা পেতে চ্যালেঞ্জ এবং বাধা’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালে প্রণীত কৌশলপত্রের আলোকে বাংলাদেশে সর্প দংশনের কৌশলপত্র ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) সম্প্রতি প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে ২০৩০ সাল নাগাদ সর্পদংশনে শতকরা ৫০ ভাগ মৃত্যু ও অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এতে ৪টি কর্মকৌশল আছে- ১. কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন ও নিয়োগ করা; ২. এন্টিভেনমসহ কার্যকর নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; ৩. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অধিকতর সফল করা ও ৪. অংশীদারিত্ব, সমন্বয় ও সংস্থান বৃদ্ধি।

বাংলাদেশে সর্প দংশনের কার্যকরী চিকিৎসা পাওয়ার চ্যালেঞ্জ ও বাধার মধ্যে রয়েছে উপজেলা হাসপাতালে এন্টিভেনম ও লজিস্টিকের অপ্রতিহত প্রাপ্যতা, নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত রোগী পরিবহন ও দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের উপস্থিতি। কিন্তু মনে হয় প্রথাগত নিরাময়কারীদের (ওঝা) কার্যহীন-ক্ষতিকর চিকিৎসার ওপর জনগোষ্ঠীর বড় ধরনের আস্থার মনোভাব আছে; যা পরিবর্তন করা সব চেয়ে বড় বাধা।

উদাহরণস্বরূপ- ১ সেপ্টেম্বর একজন তরুণ পুরুষ রোগী প্রথাগত নিরাময়কারীর চিকিৎসা নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে স্নায়ুতন্ত্রের ওপর বিষের মারাত্মক উপসর্গসমূহ নিয়ে আসেন। যেখানে এন্টিভেনম দেয়ার পরে রোগীর অবস্থা এতোটা উন্নতি হয়েছিল যে রোগী যখন পরবর্তী রেফার করা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে ছিলেন, তখন উপস্থিত চিকিৎসক ভেবেছিলেন যে, এটি একটি অবিষধর সর্পদংশন কারণ স্নায়ুতন্ত্রের ওপর নিউরোটক্সিক বৈশিষ্ট্যগুলো ইতোমধ্যে পুরোটাই অদৃশ্য হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যবশত বাড়িতে আসার পর রোগী আবার ক্ষতিকারক ও আকেজো চিকিৎসা পেতে ২য় বারের মতো প্রথাগত নিরাময়কারীর কাছে ফিরে যান।

সর্প দংশনের পর কার্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কমিউনিটিকে জ্ঞানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ ও ক্ষমতায়ন করার বিকল্প নেই। কমিউনিটির মনোভাব পরিবর্তন করে সর্প দংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক মৌলিক বিষয়সমূহ সঠিক প্রয়োগ করতে সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

[লেখক : অধ্যাপক, মেডিসিন; সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ও ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন]

back to top