alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন

আর কে চৌধুরী

: শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশকে বলা হয় ফুটবল জাদুকর সামাদের দেশ। স্বাধীনতার পরও এ দেশের ফুটবলাররা বিদেশি লিগে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা ফুটবল-পাগল হলেও বিশ্বপরিসরে এ দেশের র‌্যাংক তলানিতে। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশের ফুটবল দল ইদানীং মালদ্বীপের মতো আড়াই লাখ জনসংখ্যার দেশের কাছে নাকানিচুবানি খায়। অথচ একসময় মালদ্বীপের সঙ্গে খেলা হলে চলত গোল উৎসব। বাংলাদেশের ফুটবল আজ যে লজ্জাজনক অবস্থানে তা থেকে উত্তরণের নানামুখী চেষ্টা চলছে। সে চেষ্টায় অনুপ্রেরণা হয়ে বিবেচিত হতে পারে নারী ফুটবল দলের দক্ষিণ এশিয়া জয়।

১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার হিমালয়কন্যা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের মেয়েরা নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে তারা পেলেন সাফের ট্রফি। ছেলেদের হাত ধরে সাফের ট্রফি এসেছিল ২০০৩ সালে। উনিশ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন আমাদের কন্যারা। নারী ফুটবল দলের এ জয় বাংলাদেশের ফুটবলের জীর্ণদশা অবসানে অবদান রাখলে তা হবে বিরাট অর্জন। সাবিনা বাহিনীকে আমাদের অভিনন্দন।

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের মেয়েদের স্বপ্নটা আরো বড় করে দিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রফি জয় আরো ভালো করার অঙ্গীকারই যেন তুলে ধরল।

আন্তর্জাতিক খেলায় এমন একটি জয়ের জন্য দেশের ফুটবল ভক্ত ও অনুরাগীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন। সোমবার আমরা মাঠে দেখেছি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও জয়ের ক্ষুধা। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তার দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা আসলে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছেন। দেশের প্রতি, মা-বাবার প্রতি তাদের যে কৃতজ্ঞতাবোধ, সেটা তারা দেখিয়েছেন।’ ফিটনেস ঠিক রাখা, স্কিলের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা-এসব এক দিনে সম্ভব হয়নি। এভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাওয়া, সুন্দর-উপভোগ্য-দাপুটে ফুটবল খেলা সম্ভব হয়েছে দলের মধ্যে বোঝাপড়ায় কোনো ঘাটতি ছিল না বলেই। এই স্বপ্নযাত্রা মাথায় রেখেই তো ২০১৬ সালে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু। সবাইকে একসঙ্গে রাখা গেছে বলেই তৈরি হয়েছে বোঝাপড়া। জন্ম নিয়েছে বড় কিছু করে দেখানোর বিশ্বাস। দৃঢ় মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আর এসব থেকেই সোমবারের ইতিহাস রচনা। শতভাগ উজাড় করে খেললে জয় সম্ভব, এই বিশ্বাস নিয়েই নেপালের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আর দেশকে সত্যিকার অর্থে কিছু দিতে চাইলে তা যে সম্ভব, সন্ধ্যার উচ্ছ্বাসই তার প্রমাণ।

গোলের খেলা ফুটবল। বাংলাদেশের মেয়েরা মাঠে সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছেন বলেই বিজয়ীর হাসি হেসে মাঠ থেকে ফিরেছেন। এই জয় দেশের ফুটবলের জয়। ফুটবল মানবিকতার জয়। প্রতিপক্ষের মাঠ। মাঠে তাদের নিজেদের দর্শক। আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই বৃষ্টিভেজা ভারী মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌরভ ছড়িয়ে জয়ের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয়েছে।

ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটা শুধু যে অনেক পুরনো তা-ই নয়। এই সম্পর্ক আবেগেরও। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি খেলার মাঠে আরেক ফ্রন্ট খুলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বে আর কোনো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেই দেশের ফুটবলারদের এমন উদ্যোগের কোনো নজির নেই।

বাঙালি ফুটবলকে কখনো বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেনি। দেখে আবেগ দিয়ে। এই জয় অনেক বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ফুটবলের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা বাড়বে এই জয়ের মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, ফুটবলে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে যে সামাজিক বাধা ছিল, সেটাও অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্টহপারের প্রাদুর্ভাব

বৈষম্য, অপচয় ও খাদ্যনিরাপত্তার সংকট

“বাঙালি আমরা, নহিতো...”

নারী নির্যাতন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সমাজের দায়

কাঁপছে ডলারের সিংহাসন

ত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন : প্রতীকী প্রদর্শনী, নাকি বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির বাঁক নেওয়ার মুহূর্ত?

অপরিণত নবজাতক : ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও যত্নের জরুরি বাস্তবতা

বাংলাদেশী উত্তরাধিকার: প্রবাস-জীবন ও আমাদের সংস্কৃতি

রাজনীতিতে ভাষার সহনীয় প্রয়োগ

ভারত : এসআইআর এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন

মনে কী দ্বিধা নিয়ে...

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন

আর কে চৌধুরী

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশকে বলা হয় ফুটবল জাদুকর সামাদের দেশ। স্বাধীনতার পরও এ দেশের ফুটবলাররা বিদেশি লিগে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা ফুটবল-পাগল হলেও বিশ্বপরিসরে এ দেশের র‌্যাংক তলানিতে। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশের ফুটবল দল ইদানীং মালদ্বীপের মতো আড়াই লাখ জনসংখ্যার দেশের কাছে নাকানিচুবানি খায়। অথচ একসময় মালদ্বীপের সঙ্গে খেলা হলে চলত গোল উৎসব। বাংলাদেশের ফুটবল আজ যে লজ্জাজনক অবস্থানে তা থেকে উত্তরণের নানামুখী চেষ্টা চলছে। সে চেষ্টায় অনুপ্রেরণা হয়ে বিবেচিত হতে পারে নারী ফুটবল দলের দক্ষিণ এশিয়া জয়।

১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার হিমালয়কন্যা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের মেয়েরা নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে তারা পেলেন সাফের ট্রফি। ছেলেদের হাত ধরে সাফের ট্রফি এসেছিল ২০০৩ সালে। উনিশ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন আমাদের কন্যারা। নারী ফুটবল দলের এ জয় বাংলাদেশের ফুটবলের জীর্ণদশা অবসানে অবদান রাখলে তা হবে বিরাট অর্জন। সাবিনা বাহিনীকে আমাদের অভিনন্দন।

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের মেয়েদের স্বপ্নটা আরো বড় করে দিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রফি জয় আরো ভালো করার অঙ্গীকারই যেন তুলে ধরল।

আন্তর্জাতিক খেলায় এমন একটি জয়ের জন্য দেশের ফুটবল ভক্ত ও অনুরাগীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন। সোমবার আমরা মাঠে দেখেছি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও জয়ের ক্ষুধা। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তার দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা আসলে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছেন। দেশের প্রতি, মা-বাবার প্রতি তাদের যে কৃতজ্ঞতাবোধ, সেটা তারা দেখিয়েছেন।’ ফিটনেস ঠিক রাখা, স্কিলের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা-এসব এক দিনে সম্ভব হয়নি। এভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাওয়া, সুন্দর-উপভোগ্য-দাপুটে ফুটবল খেলা সম্ভব হয়েছে দলের মধ্যে বোঝাপড়ায় কোনো ঘাটতি ছিল না বলেই। এই স্বপ্নযাত্রা মাথায় রেখেই তো ২০১৬ সালে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু। সবাইকে একসঙ্গে রাখা গেছে বলেই তৈরি হয়েছে বোঝাপড়া। জন্ম নিয়েছে বড় কিছু করে দেখানোর বিশ্বাস। দৃঢ় মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আর এসব থেকেই সোমবারের ইতিহাস রচনা। শতভাগ উজাড় করে খেললে জয় সম্ভব, এই বিশ্বাস নিয়েই নেপালের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। আর দেশকে সত্যিকার অর্থে কিছু দিতে চাইলে তা যে সম্ভব, সন্ধ্যার উচ্ছ্বাসই তার প্রমাণ।

গোলের খেলা ফুটবল। বাংলাদেশের মেয়েরা মাঠে সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছেন বলেই বিজয়ীর হাসি হেসে মাঠ থেকে ফিরেছেন। এই জয় দেশের ফুটবলের জয়। ফুটবল মানবিকতার জয়। প্রতিপক্ষের মাঠ। মাঠে তাদের নিজেদের দর্শক। আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই বৃষ্টিভেজা ভারী মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌরভ ছড়িয়ে জয়ের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয়েছে।

ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটা শুধু যে অনেক পুরনো তা-ই নয়। এই সম্পর্ক আবেগেরও। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি খেলার মাঠে আরেক ফ্রন্ট খুলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বে আর কোনো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেই দেশের ফুটবলারদের এমন উদ্যোগের কোনো নজির নেই।

বাঙালি ফুটবলকে কখনো বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখেনি। দেখে আবেগ দিয়ে। এই জয় অনেক বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ফুটবলের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ও ভালোবাসা বাড়বে এই জয়ের মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, ফুটবলে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে যে সামাজিক বাধা ছিল, সেটাও অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

back to top