alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মেগা প্রকল্প ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা

ফজলে শাহীদ মনন

: বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এত দিন শুধুই কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। আর প্রাচীন স্থাপত্য বলতে হাতে গোনা যেসব স্থাপনা আছে যেমন ষাট গম্বুজ মসজিদ, কান্তজীর মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, মহাস্থানগড়, সোমপুর বিহার, ময়নামতি, আহসান মঞ্জিল, কার্জন হল এসব স্থাপনা বিশালসংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণে সক্ষম নয়। একে তো সরকারের কোন মহলেরই এসব প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে কোন বিষদ পরিকল্পনা নেই। আর দ্বিতীয়ত, এটা মেনে নিতে হবেই যে পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান কিংবা চীন আমাদের থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আর ঐতিহাসিক স্থাপনা ভান্ডারে অনেক বেশি সম্ভ্রান্ত। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের পর্যটন এখন আর একেবারে এরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কিংবা পুরাকীর্তিসংবলিত স্থানগুলোর ওপর নির্ভর করে নেই। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আসিয়ানের দেশগুলো যতটা না তাদের ওইসব প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলোর ওপর কেন্দ্র করে পর্যটক টানছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক তাদের দেশে যাচ্ছে আধুনিক, নান্দনিক, কারু-কার্যমন্ডিত এবং ইকো ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিতে। উদাহরণ দিতে বেশি দূরে নয়, পাশেই সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ডের দিকে তাকানো যেতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের চূড়ান্ত সাফল্য দেখা একেবারে অসম্ভব, এখনো তা বলা যাবে না।

এত দিন দেশি এবং আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্টদের জন্য যোগাযোগব্যবস্থা এক ভোগান্তির নাম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং আগত দিনগুলোতে মেগা প্রকল্প ঘিরেই নতুন আঙ্গিকে পর্যটকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ‘পদ্মা সেতু ভ্রমণ’ প্যাকেজ ট্যুর চালু হয়েছে। এ জন্য জনপ্রতি নেয়া হবে ৯৯৯ টাকা।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা যেতে কিছুদিন আগেও যেখানে ৭ থেকে ৮টি ফেরি পার হতে হতো, এখন সেটি পুরোপুরি ফেরি মুক্ত হতে চলেছে। বরিশাল, খুলনা, যশোর ভ্রমণের যাত্রা সময় নেমে এসেছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায়। চার লেনের প্রশস্ত মহাসড়ক সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু, বেকুটিয়া সেতু, পায়রা সেতু, দপদবিয়া সেতু, খান জাহান আলী সেতুসহ রাস্তার দুই ধারে চিরচেনা সবুজ বেষ্টনী আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে পর্যটকবান্ধব দক্ষিণাঞ্চলকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এ ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে থাকলেও তারা তাদের প্রস্তুতি জোরেশোরেই নিচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণের ১৭ জেলা রেল নেটওয়ার্কের ভেতরে চলে আসবে। পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে রেললাইন সংযোগে কাজ এগিয়ে চলেছে রুপসা রেল ব্রিজের। এই ব্রিজের মাধ্যমে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মোংলা সুবিধা পাবে। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। বেনাপোল দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ যাওয়া যাবে পূর্বের চেয়ে অর্ধেক কম সময়েই।

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামে নতুন বছরেই চালু হচ্ছে ৪টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড এবং বায়েজিদ বাইপাস সড়ক। প্রত্যেকটি প্রকল্পই পর্যটকদের সুযোগসুবিধা বাড়াবে এবং নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। কর্ণফুলির তলদেশে উপমহাদেশের প্রথম এই টানেল চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। ঝিনুক আকৃতির নান্দনিক রেলস্টশন নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজারে। দেশের জনগণ প্রথমবারের মতোন স্বাদ নিতে পারবে একইসঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র আর রেলের ঝিকঝিক শব্দের। এই রেললাইনটি মায়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে। অর্থাৎ সড়কপথে দেশি পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে নতুন এক আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্য।

উত্তর পূর্বাঞ্চলে মেগা প্রকল্পের তালিকা একটু কম। কিশোরগঞ্জের অল ওয়েদার সড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ আর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিস্তীর্ণ হাওরের বুক চিড়ে অল ওয়েদার সড়কটি অত্র এলাকার পর্যটকদের জন্য নতুন এক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু জাফলং, টাঙ্গুয়ার হাওর, চা-বাগান নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত। ময়মনসিংহ বিভাগের কেওয়াতখালীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম আর্চ স্টিল সেতু। সিডনি হার্বার সেতুর মতোন ধনুকের আদলে তৈরি হতে যাওয়া এই সেতু দেশের সব পর্যটকের দৃষ্টি কাড়বে নিঃসন্দেহে।

সরকার যে পর্যটনের সম্প্রসারণে একেবারেই থেমে আছে, ব্যাপারটি সে রকম নয়। দেশজুড়ে একাধিক সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা, ঢাকা চিড়িয়াখানাকে আন্তর্জাতিক ওয়াইল্ড লাইফ ফরেস্টে রূপান্তরিকরণ, সমুদ্রসৈকত ঘিরে নাফ ট্যুরিজম পার্ক, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মান মন্দির স্থাপন, উত্তরের বিস্তীর্ণ বনভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা এবং সার্কভুক্ত একাধিক দেশের পর্যটকদের অন এরাইভাল ভিসা প্রদান এগুলো সরকারের বিশদ পরিকল্পনারই অংশ। এত সব মেগা প্রকল্পগুলো শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষার্থে হচ্ছে, এমনটি ভাবা অনুচিত। সাসটেইনেবল ট্যুরিজম বলতে বহির্বিশ্বে যে ধারণাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেটি একেবারেই নতুন। তাই উচিত হবে বৃহৎ পরিসরের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পর্যটনকে গ্রহণ যোগ্যতার শীর্ষে পৌঁছে দেয়া।

হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলো শুধুই যে জনগণের নিত্যপ্রয়োজনের অংশ হয়ে রবে, সরকারের পরিকল্পনা তেমন হওয়া উচিত নয়। উন্নত বিশ্বে আধুনিক অবকাঠামো ঘিরেই পর্যটন পরিকল্পনা হচ্ছে। লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে ওঠার জন্য এর চেয়ে ভালো বিকল্প পর্যটনসংশ্লিষ্টদের কাছে নেই। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যেমন একটা প্যাকেজ করা হয়েছে, তার মাধ্যমে কিন্তু শুধু সেতুটি নয়, আশপাশের আরও বিভিন্ন স্পটগুলোর প্রতি সবার ধারণা বাড়বে। সবাই চায় নগরজীবনের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে খানিক সময় সবুজের মধ্যে অতিবাহিত করতে। যোগাযোগব্যবস্থার জোড়ালো উন্নয়ন এখন আমাদের সেই সুযোগেরই হাতছানি দিচ্ছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের এখনই সময় এসব মেগা প্রকল্পগুলো ঘিরে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে ম্যাসিভ আকারে পর্যটন পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়ন ঘটানো।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীর অধিকার: বিসিএস ও শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য

ন্যাশনাল গ্যালারি : রঙতুলির মহাসমুদ্রে একদিন

যুব শক্তি বনাম বেকারত্ব

প্রযুক্তি, আর্থিক পরিকল্পনা ও গণিতের ব্যবহার

ফরাসি বিপ্লব: বৈষম্য নিরসনে সামগ্রিক মুক্তির প্রেরণা

অন্তর্বর্তী সরকারের নিউইয়র্ক সফর

প্রবীণদের যত্ন: নৈতিক দায়িত্ব থেকে সামাজিক শক্তি নির্মাণ

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অপরিহার্যতা

জনমিতিক সুবিধা: স্বপ্নের দশক ও নীতিগত সংস্কারের অপরিহার্যতা

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

মেগা প্রকল্প ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা

ফজলে শাহীদ মনন

বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এত দিন শুধুই কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। আর প্রাচীন স্থাপত্য বলতে হাতে গোনা যেসব স্থাপনা আছে যেমন ষাট গম্বুজ মসজিদ, কান্তজীর মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, মহাস্থানগড়, সোমপুর বিহার, ময়নামতি, আহসান মঞ্জিল, কার্জন হল এসব স্থাপনা বিশালসংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণে সক্ষম নয়। একে তো সরকারের কোন মহলেরই এসব প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে কোন বিষদ পরিকল্পনা নেই। আর দ্বিতীয়ত, এটা মেনে নিতে হবেই যে পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান কিংবা চীন আমাদের থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আর ঐতিহাসিক স্থাপনা ভান্ডারে অনেক বেশি সম্ভ্রান্ত। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের পর্যটন এখন আর একেবারে এরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কিংবা পুরাকীর্তিসংবলিত স্থানগুলোর ওপর নির্ভর করে নেই। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আসিয়ানের দেশগুলো যতটা না তাদের ওইসব প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলোর ওপর কেন্দ্র করে পর্যটক টানছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক তাদের দেশে যাচ্ছে আধুনিক, নান্দনিক, কারু-কার্যমন্ডিত এবং ইকো ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিতে। উদাহরণ দিতে বেশি দূরে নয়, পাশেই সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ডের দিকে তাকানো যেতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের চূড়ান্ত সাফল্য দেখা একেবারে অসম্ভব, এখনো তা বলা যাবে না।

এত দিন দেশি এবং আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্টদের জন্য যোগাযোগব্যবস্থা এক ভোগান্তির নাম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং আগত দিনগুলোতে মেগা প্রকল্প ঘিরেই নতুন আঙ্গিকে পর্যটকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ‘পদ্মা সেতু ভ্রমণ’ প্যাকেজ ট্যুর চালু হয়েছে। এ জন্য জনপ্রতি নেয়া হবে ৯৯৯ টাকা।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা যেতে কিছুদিন আগেও যেখানে ৭ থেকে ৮টি ফেরি পার হতে হতো, এখন সেটি পুরোপুরি ফেরি মুক্ত হতে চলেছে। বরিশাল, খুলনা, যশোর ভ্রমণের যাত্রা সময় নেমে এসেছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায়। চার লেনের প্রশস্ত মহাসড়ক সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু, বেকুটিয়া সেতু, পায়রা সেতু, দপদবিয়া সেতু, খান জাহান আলী সেতুসহ রাস্তার দুই ধারে চিরচেনা সবুজ বেষ্টনী আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে পর্যটকবান্ধব দক্ষিণাঞ্চলকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এ ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে থাকলেও তারা তাদের প্রস্তুতি জোরেশোরেই নিচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণের ১৭ জেলা রেল নেটওয়ার্কের ভেতরে চলে আসবে। পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে রেললাইন সংযোগে কাজ এগিয়ে চলেছে রুপসা রেল ব্রিজের। এই ব্রিজের মাধ্যমে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মোংলা সুবিধা পাবে। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। বেনাপোল দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ যাওয়া যাবে পূর্বের চেয়ে অর্ধেক কম সময়েই।

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামে নতুন বছরেই চালু হচ্ছে ৪টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড এবং বায়েজিদ বাইপাস সড়ক। প্রত্যেকটি প্রকল্পই পর্যটকদের সুযোগসুবিধা বাড়াবে এবং নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। কর্ণফুলির তলদেশে উপমহাদেশের প্রথম এই টানেল চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। ঝিনুক আকৃতির নান্দনিক রেলস্টশন নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজারে। দেশের জনগণ প্রথমবারের মতোন স্বাদ নিতে পারবে একইসঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র আর রেলের ঝিকঝিক শব্দের। এই রেললাইনটি মায়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে। অর্থাৎ সড়কপথে দেশি পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে নতুন এক আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্য।

উত্তর পূর্বাঞ্চলে মেগা প্রকল্পের তালিকা একটু কম। কিশোরগঞ্জের অল ওয়েদার সড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ আর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিস্তীর্ণ হাওরের বুক চিড়ে অল ওয়েদার সড়কটি অত্র এলাকার পর্যটকদের জন্য নতুন এক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু জাফলং, টাঙ্গুয়ার হাওর, চা-বাগান নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত। ময়মনসিংহ বিভাগের কেওয়াতখালীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম আর্চ স্টিল সেতু। সিডনি হার্বার সেতুর মতোন ধনুকের আদলে তৈরি হতে যাওয়া এই সেতু দেশের সব পর্যটকের দৃষ্টি কাড়বে নিঃসন্দেহে।

সরকার যে পর্যটনের সম্প্রসারণে একেবারেই থেমে আছে, ব্যাপারটি সে রকম নয়। দেশজুড়ে একাধিক সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা, ঢাকা চিড়িয়াখানাকে আন্তর্জাতিক ওয়াইল্ড লাইফ ফরেস্টে রূপান্তরিকরণ, সমুদ্রসৈকত ঘিরে নাফ ট্যুরিজম পার্ক, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মান মন্দির স্থাপন, উত্তরের বিস্তীর্ণ বনভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা এবং সার্কভুক্ত একাধিক দেশের পর্যটকদের অন এরাইভাল ভিসা প্রদান এগুলো সরকারের বিশদ পরিকল্পনারই অংশ। এত সব মেগা প্রকল্পগুলো শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষার্থে হচ্ছে, এমনটি ভাবা অনুচিত। সাসটেইনেবল ট্যুরিজম বলতে বহির্বিশ্বে যে ধারণাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেটি একেবারেই নতুন। তাই উচিত হবে বৃহৎ পরিসরের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পর্যটনকে গ্রহণ যোগ্যতার শীর্ষে পৌঁছে দেয়া।

হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলো শুধুই যে জনগণের নিত্যপ্রয়োজনের অংশ হয়ে রবে, সরকারের পরিকল্পনা তেমন হওয়া উচিত নয়। উন্নত বিশ্বে আধুনিক অবকাঠামো ঘিরেই পর্যটন পরিকল্পনা হচ্ছে। লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে ওঠার জন্য এর চেয়ে ভালো বিকল্প পর্যটনসংশ্লিষ্টদের কাছে নেই। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যেমন একটা প্যাকেজ করা হয়েছে, তার মাধ্যমে কিন্তু শুধু সেতুটি নয়, আশপাশের আরও বিভিন্ন স্পটগুলোর প্রতি সবার ধারণা বাড়বে। সবাই চায় নগরজীবনের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে খানিক সময় সবুজের মধ্যে অতিবাহিত করতে। যোগাযোগব্যবস্থার জোড়ালো উন্নয়ন এখন আমাদের সেই সুযোগেরই হাতছানি দিচ্ছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের এখনই সময় এসব মেগা প্রকল্পগুলো ঘিরে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে ম্যাসিভ আকারে পর্যটন পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়ন ঘটানো।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top