alt

উপ-সম্পাদকীয়

মুগডাল ভাঙানো মিনি মিল

উপকূলের কৃষকদের জন্য একটি আশীর্বাদ

এম জি নিয়োগী

: শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২

উপকূল অঞ্চলে ৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি শুষ্ক মৌসুমে পতিত থাকছে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক বছরে একটি মাত্র ফসল আমন ধান আবাদ করতে পারেন, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কৃষকরা সাধারণত কেটে থাকেন। ধান কাটার পরে শুষ্ক মৌসুমে জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে এবং এই এলাকার সেচযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কৃষক বছরের বাকি সময় আর তেমন কোন ফসল আবাদ করতে পারেন না।

বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের তিন ভাগের দুই ভাগই দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা বৃহত্তর বরিশাল থেকে আসে। বিশেষ করে পটুয়াখালী-বরগুনা অঞ্চলেই প্রতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে প্রায় ২ লাখ টন মুগডাল উৎপাদন হয়, যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের অর্ধেকেরও বেশি।

কেন এখানকার কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন

আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি ধান কাটার সময় জমিতে সাধারণত লবণাক্ততা কম থাকে (৩ ডিএস/মিটার)। ফেব্রুয়ারিতেও লবণাক্ততা সহনীয় পর্যায়ে থাকে (৩-৫ ডিএস/মিটার)। মার্চে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে (৫-৭ ডিএস/মিটার)। এপ্রিল-মে মাসে জমিতে লবণাক্ততা খুবই বেড়ে যায় (৮-১২ ডিএস/মিটার)।

ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমন ধান কাটার পর কোন প্রকার শীতকালীন বা দানা জাতীয় কোন ফসল চাষাবাদের সময় থাকে না। তখন দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে একমাত্র মুগডাল বীজ বপন করা যায়। মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। এরচেয়ে কম সময়ে আর কোন দানা জাতীয় ফসল ঘরে তোলা যায় না। অর্থাৎ, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মুগবীজ বুনলে মার্চ-এপ্রিলেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

সেজন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ধান কাটার ঠিক পরেই জমিতে চাষ দিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জমিতে জোঁ অবস্থায় কৃষক মুগডালের বীজ বপন করে। বীজ বোনার ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ এপ্রিল মাসের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই বা অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই প্রথমবারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন শীতের প্রকোপ এবং সময়কাল কমে গেছে। দক্ষিনাঞ্চলে শীতের সময়কাল আরো কম। সে কারণে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, জমিতে জোঁ অবস্থা সাপেক্ষে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বারি মুগ-৬ বা বিনামুগ-৮ বা বিইউ মুগ-৫ এর মতো স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বপন করা সম্ভব।

জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মুগ বীজ বোনার জন্য শীতের কারণে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসেই তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে আসে। লবণাক্ততার কারণেও গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তাই, লবণাক্ত জমির জন্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৫০০ গ্রাম বীজ বেশি বপন করতে হয়। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ২.৫ কেজি বীজের পরিবর্তে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে আমাদের আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। হালকা বৃষ্টি হলে মুগ ফসলের জন্য ভালো। এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টি হলে লবণাক্ততার তীব্রতা হ্রাস পায়। তখন দ্বিতীয়বার এমনকি তৃতীয়বারও মুগ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। তবে বেশি বৃষ্টি হলে অথবা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে জমিতে মুগ ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মুগ ফসল চাষাবাদে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে কোন অবস্থাতেই মুগ ফসল চাষাবাদ করা ঠিক হবে না। এছাড়াও মুগ গাছের শিকড়ে নডুউল তৈরি হয়, যা মাটিকে উর্বর করে। মুগের ছেঁই তোলার পর পুরো গাছ জমিতে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতাও বাড়ে। এতে জমির লবণাক্ততাও কিছুটা কমে যায়।

দক্ষিণাঞ্চলে মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের এত প্রয়োজন কেন

এত সীমাবদ্ধতার পরেও এই অঞ্চলের কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদ করছেন। কিন্তু তারা কাক্সিক্ষত বাজারমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে এক কেজি মুগডালের মূল্য ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, কিন্তু কৃষক তাদের উৎপাদিত মুগ কালাই (খোসাসহ) মাত্র ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

সাধারণত প্রতিটি গ্রামেই ধান, গম, মরিচ, হলুদ, সরিষা ইত্যাদি ভাঙানোর মেশিন আছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই গ্রামের এসব মেশিন থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে খেতে পারেন এবং বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু গ্রামের এসব মিলে মুগডাল ভাঙানোর কোন মেশিন না থাকার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত মুগডাল ভাঙিয়ে বিক্রি করতে পারেন না, এমনকি খেতেও পারেন না। বাধ্য হয়েই কৃষক ফড়িয়াদের কাছে বা স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত মুগডাল অত্যন্ত কম মূল্যে বিক্রি করে দেন।

যেহেতু কৃষকরা ১৪০-১৭০ টাকার মুগডাল মাত্র ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, সেজন্য তারা মুগডাল ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন! যেহেতু তারা মুগডালের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না, সেজন্য তারা মুগডালের জমিতে তেমন গুরুত্ব দিয়ে চাষাবাদ করছেন না! ঠিকমতো সার দিচ্ছেন না! লাইনে বীজ বুনছেন না! নিড়ানি দিচ্ছেন না! উপযুক্ত কীটনাশক দিচ্ছেন না! বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখছেন না! ফলে ফসল ভালো হচ্ছে না। ফলন কম হচ্ছে।

যেহেতু গ্রামে মুগডাল ভাঙানোর মেশিন নেই, সে কারণে অত্যন্ত সুস্বাদু পুষ্টি সমৃদ্ধ এই মুগডাল কৃষক পরিবারের সদস্যরা খেতেও পারেন না। বাড়িতে জাঁতা বা শিল-পাটায় মুগকালাই ভাঙিয়ে নিয়ে তা কুলায় পরিষ্কার করে তারপরে রান্না করতে হয়- যা অত্যন্ত কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কৃষকদের ঘরে মুগডাল থাকা সত্ত্বেও এবং মুগডাল তাদের পছন্দনীয় খাবার হওয়া সত্ত্বেও তারা সপ্তাহে এক দিন বা মাসে মাত্র ২-৩ দিন মুগডাল খেয়ে থাকেন।

মুগডাল চাষিদের সঙ্গে উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে গবেষণা কাজ করার সময় আমরা কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পেয়েছি। সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি মুগডাল চাষিদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে, মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় মুগডাল ভাঙানো মেশিন না থাকার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত মুগডাল অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্পে মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের গবেষণা কার্যক্রম

CIM-২০১৪-০৭৬ প্রকল্পের আওতায় গ্রামে গ্রামে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময় আমাদের ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, গ্রামে মুগডাল ভাঙানো মেশিন থাকলে, কৃষক তাদের উৎপাদিত মুগডাল সহজেই ভাঙাতে পারবে- ভালো মূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারবে এবং প্রতিদিন তারা মুগডাল খেতে পারবে, যা পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা মেটাবে।

এহেন অবস্থায় মুগডাল চাষাবাদকে কৃষকের কাছে আরও অর্থকরী, গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় করার জন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প আমার নেতৃত্বে মুগকালাই ভাঙানোর মেশিন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করেছে, যাতে করে কৃষকরা গ্রামে গ্রামে মুগডাল ভাঙানো মেশিনে মুগকালাই ভাঙিয়ে বাজারে অধিক মূল্যে মুগডাল বিক্রি করতে পারে এবং পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মুগডাল যেন নিয়মিত খেতে পারে।

গ্রামে গ্রামে ধান ভাঙানো, গম ভাঙানো, হলুদ-মরিচ ভাঙানো মেশিন আছে। এসব মেশিন স্থানীয় মিস্ত্রিরাই তৈরি করে থাকেন। ইতিপূর্বে ACIAR-Murdoch University প্রকল্প ডাল ভাঙানোর মেশিনের উন্নয়নে কাজ করেছিল। মূলত এখান থেকেই ডাল ভাঙানোর মেশিনের বিষয়ে আমার ধারণা হয়। মসুর-খেসারি ডাল উৎপাদিত এলাকায় ছোট ছোট ডাল ভাঙানো মেশিনও আছে। তবে সেটি দিয়ে মসুর-খেসারি ডাল ভালোভাবে ভাঙানো গেলেও, ওই সব মেশিনে মুগডাল ভাঙানো যায়নি।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প আমার নেতৃতে স্থানীয় মিস্ত্রিদের সঙ্গে নিয়েই মসুর-খেসারি ডাল ভাঙানো মেশিনকে দীর্ঘ ৫ বছরের গবেষণায় পরিশীলিত করে মুগডাল ভাঙাতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষণার মাধ্যমে বিশেষ ধরনের রোলার এবং পাওয়ার ট্রান্সমিশন পুলি তৈরি করে এই মিনি-মিলে বসানো হয়েছে। এই মিনি-মিল একটি ছোট আকারের মুগডাল ভাঙানোর মেশিন। এর খুচরা যন্ত্রাংশ স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য। গবেষণায় উদ্ভাবিত এই মিনি-মিল দিয়ে এখন অনায়াসে মুগডাল ভাঙানো যাচ্ছে।

যেহেতু এই মেশিন স্থানীয় কারিগরদের সঙ্গে নিয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এর খুচরা যন্ত্রাংশ স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য, সেহেতু এই উদ্ভাবিত মুগডাল ভাঙানোর মেশিন স্থানীয় মিল মালিকদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়। কারণ স্থানীয় কারিগররাই প্রয়োজনে এই মিনি-মিলগুলো মেরামত করতে পারছেন।

মুগডালের খোসা সহজে ছাড়ানোর জন্য মুগডালকে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। দেখা গেছে, ৫ কেজি মুগডালে ৩০ গ্রাম পরিমাণ সয়াবিন বা সরিষার তেল মাখিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিলে এই মেশিনে খুব সহজেই মুগডাল ভাঙানো যায়। এই মিনি-মিলে শুধু মুগডাল নয়-মসুর, খেসারিসহ অন্যান্য ডালও ভালোভাবে ভাঙানো যায়।

মিনি-মিল ১৫ হর্স পাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন বা ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা চালিত। এটি কাঠের তৈরি প্লাটফর্ম, রোলার, পাওয়ার ট্রান্সমিশন পুলি, স্টার্টার, কাটআউট, ফিডিং চেম্বার, সিভ, ট্রে, সেফটি কভার, কেসিট, বেল্ট, তার, লোহার রড এবং বল বিয়ারিং দ্বারা সংযুক্ত। এ পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার মুগডাল উৎপাদিত এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলমান ধান ভাঙানো মিলে পরীক্ষামূলকভাবে ২১টি মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল বসানো হয়েছে। ২০২১ এ ২টি, ২০২২ এর এপ্রিলে ৩টি, মে মাসে ৫টি এবং নভেম্বর মাসে ১১টি মিনি-মিল বসানো হয়েছে। এই ২১টি মিনি-মিলের অভাবনীয় ফলাফলের প্রেক্ষিতে, ২০২২ এর ডিসেম্বর মাসে আরও ১০টি মিনি-মিল বসানোর কাজ হচ্ছে।

মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল

যে ২১টি গ্রামে এসব মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল বসানো হয়েছে, সেখানকার কৃষকরা আজ ব্যাপকভাবে মুগডাল চাষাবাদে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত। তারা তাদের উৎপাদিত মুগডাল এই মিনি-মিলে মানসম্মতভাবে ভাঙাতে পারছেন। বাজারে তা দ্বিগুণের বেশি মূল্যে বিক্রি করে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছেন। এখন তাদের পরিবার প্রায় প্রতিদিনই এই পুষ্টিসমৃদ্ধ মুগডাল খেতে পারছে। আমাদের বিশ^াস, শুধু মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের কারণেই এই অঞ্চলের কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদে যতœবান হচ্ছেন। এতে প্রায় দ্বিগুণ ফলন নিশ্চিত হচ্ছে। এই মিনি-মিল উপকূল অঞ্চলে মুগডাল সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখছে।

আমাদের আশা

আমরা আশা করি সরকার মিনি-মিল প্রযুক্তির উপযোগীতা অনুধাবন করে উপকূলের গ্রামে গ্রামে মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল বসানোর উদ্যোগ নেবে এবং উপকূলের পতিত জমিতে মুগডাল উৎপাদন ও বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকব। অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের এটিই হোক উপকূলের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় টেকসই উপহার।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ প্রাপ্ত বিজ্ঞানী; ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মুগডাল ভাঙানো মিনি মিল

উপকূলের কৃষকদের জন্য একটি আশীর্বাদ

এম জি নিয়োগী

শনিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২২

উপকূল অঞ্চলে ৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি শুষ্ক মৌসুমে পতিত থাকছে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষক বছরে একটি মাত্র ফসল আমন ধান আবাদ করতে পারেন, যা ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কৃষকরা সাধারণত কেটে থাকেন। ধান কাটার পরে শুষ্ক মৌসুমে জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে এবং এই এলাকার সেচযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কৃষক বছরের বাকি সময় আর তেমন কোন ফসল আবাদ করতে পারেন না।

বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের তিন ভাগের দুই ভাগই দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা বৃহত্তর বরিশাল থেকে আসে। বিশেষ করে পটুয়াখালী-বরগুনা অঞ্চলেই প্রতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে প্রায় ২ লাখ টন মুগডাল উৎপাদন হয়, যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মুগডালের অর্ধেকেরও বেশি।

কেন এখানকার কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন

আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি ধান কাটার সময় জমিতে সাধারণত লবণাক্ততা কম থাকে (৩ ডিএস/মিটার)। ফেব্রুয়ারিতেও লবণাক্ততা সহনীয় পর্যায়ে থাকে (৩-৫ ডিএস/মিটার)। মার্চে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে (৫-৭ ডিএস/মিটার)। এপ্রিল-মে মাসে জমিতে লবণাক্ততা খুবই বেড়ে যায় (৮-১২ ডিএস/মিটার)।

ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমন ধান কাটার পর কোন প্রকার শীতকালীন বা দানা জাতীয় কোন ফসল চাষাবাদের সময় থাকে না। তখন দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে একমাত্র মুগডাল বীজ বপন করা যায়। মুগডাল অত্যন্ত কম সময়ের ফসল। মাত্র ৭০-৭৫ দিনে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। এরচেয়ে কম সময়ে আর কোন দানা জাতীয় ফসল ঘরে তোলা যায় না। অর্থাৎ, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মুগবীজ বুনলে মার্চ-এপ্রিলেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

সেজন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ধান কাটার ঠিক পরেই জমিতে চাষ দিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জমিতে জোঁ অবস্থায় কৃষক মুগডালের বীজ বপন করে। বীজ বোনার ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ এপ্রিল মাসের প্রথমেই অর্থাৎ জমিতে লবণাক্ততা বাড়ার আগেই বা অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই প্রথমবারের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন শীতের প্রকোপ এবং সময়কাল কমে গেছে। দক্ষিনাঞ্চলে শীতের সময়কাল আরো কম। সে কারণে আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, জমিতে জোঁ অবস্থা সাপেক্ষে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বারি মুগ-৬ বা বিনামুগ-৮ বা বিইউ মুগ-৫ এর মতো স্বল্পমেয়াদি জাতের বীজ বপন করা সম্ভব।

জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে মুগ বীজ বোনার জন্য শীতের কারণে গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তবে ফেব্রুয়ারি মাসেই তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে আসে। লবণাক্ততার কারণেও গাছের বাড়-বাড়তি কম হয়। তাই, লবণাক্ত জমির জন্য বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৫০০ গ্রাম বীজ বেশি বপন করতে হয়। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ২.৫ কেজি বীজের পরিবর্তে ৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে আমাদের আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। হালকা বৃষ্টি হলে মুগ ফসলের জন্য ভালো। এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টি হলে লবণাক্ততার তীব্রতা হ্রাস পায়। তখন দ্বিতীয়বার এমনকি তৃতীয়বারও মুগ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। তবে বেশি বৃষ্টি হলে অথবা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে জমিতে মুগ ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মুগ ফসল চাষাবাদে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে কোন অবস্থাতেই মুগ ফসল চাষাবাদ করা ঠিক হবে না। এছাড়াও মুগ গাছের শিকড়ে নডুউল তৈরি হয়, যা মাটিকে উর্বর করে। মুগের ছেঁই তোলার পর পুরো গাছ জমিতে মিশিয়ে দিলে জমির উর্বরতাও বাড়ে। এতে জমির লবণাক্ততাও কিছুটা কমে যায়।

দক্ষিণাঞ্চলে মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের এত প্রয়োজন কেন

এত সীমাবদ্ধতার পরেও এই অঞ্চলের কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদ করছেন। কিন্তু তারা কাক্সিক্ষত বাজারমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে এক কেজি মুগডালের মূল্য ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, কিন্তু কৃষক তাদের উৎপাদিত মুগ কালাই (খোসাসহ) মাত্র ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

সাধারণত প্রতিটি গ্রামেই ধান, গম, মরিচ, হলুদ, সরিষা ইত্যাদি ভাঙানোর মেশিন আছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই গ্রামের এসব মেশিন থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে খেতে পারেন এবং বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু গ্রামের এসব মিলে মুগডাল ভাঙানোর কোন মেশিন না থাকার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত মুগডাল ভাঙিয়ে বিক্রি করতে পারেন না, এমনকি খেতেও পারেন না। বাধ্য হয়েই কৃষক ফড়িয়াদের কাছে বা স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত মুগডাল অত্যন্ত কম মূল্যে বিক্রি করে দেন।

যেহেতু কৃষকরা ১৪০-১৭০ টাকার মুগডাল মাত্র ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, সেজন্য তারা মুগডাল ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন! যেহেতু তারা মুগডালের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না, সেজন্য তারা মুগডালের জমিতে তেমন গুরুত্ব দিয়ে চাষাবাদ করছেন না! ঠিকমতো সার দিচ্ছেন না! লাইনে বীজ বুনছেন না! নিড়ানি দিচ্ছেন না! উপযুক্ত কীটনাশক দিচ্ছেন না! বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখছেন না! ফলে ফসল ভালো হচ্ছে না। ফলন কম হচ্ছে।

যেহেতু গ্রামে মুগডাল ভাঙানোর মেশিন নেই, সে কারণে অত্যন্ত সুস্বাদু পুষ্টি সমৃদ্ধ এই মুগডাল কৃষক পরিবারের সদস্যরা খেতেও পারেন না। বাড়িতে জাঁতা বা শিল-পাটায় মুগকালাই ভাঙিয়ে নিয়ে তা কুলায় পরিষ্কার করে তারপরে রান্না করতে হয়- যা অত্যন্ত কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কৃষকদের ঘরে মুগডাল থাকা সত্ত্বেও এবং মুগডাল তাদের পছন্দনীয় খাবার হওয়া সত্ত্বেও তারা সপ্তাহে এক দিন বা মাসে মাত্র ২-৩ দিন মুগডাল খেয়ে থাকেন।

মুগডাল চাষিদের সঙ্গে উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে গবেষণা কাজ করার সময় আমরা কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পেয়েছি। সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি মুগডাল চাষিদের প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে, মুগডাল উৎপাদিত এলাকায় মুগডাল ভাঙানো মেশিন না থাকার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত মুগডাল অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্পে মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের গবেষণা কার্যক্রম

CIM-২০১৪-০৭৬ প্রকল্পের আওতায় গ্রামে গ্রামে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময় আমাদের ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, গ্রামে মুগডাল ভাঙানো মেশিন থাকলে, কৃষক তাদের উৎপাদিত মুগডাল সহজেই ভাঙাতে পারবে- ভালো মূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারবে এবং প্রতিদিন তারা মুগডাল খেতে পারবে, যা পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা মেটাবে।

এহেন অবস্থায় মুগডাল চাষাবাদকে কৃষকের কাছে আরও অর্থকরী, গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় করার জন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প আমার নেতৃত্বে মুগকালাই ভাঙানোর মেশিন উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করেছে, যাতে করে কৃষকরা গ্রামে গ্রামে মুগডাল ভাঙানো মেশিনে মুগকালাই ভাঙিয়ে বাজারে অধিক মূল্যে মুগডাল বিক্রি করতে পারে এবং পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিসমৃদ্ধ এই মুগডাল যেন নিয়মিত খেতে পারে।

গ্রামে গ্রামে ধান ভাঙানো, গম ভাঙানো, হলুদ-মরিচ ভাঙানো মেশিন আছে। এসব মেশিন স্থানীয় মিস্ত্রিরাই তৈরি করে থাকেন। ইতিপূর্বে ACIAR-Murdoch University প্রকল্প ডাল ভাঙানোর মেশিনের উন্নয়নে কাজ করেছিল। মূলত এখান থেকেই ডাল ভাঙানোর মেশিনের বিষয়ে আমার ধারণা হয়। মসুর-খেসারি ডাল উৎপাদিত এলাকায় ছোট ছোট ডাল ভাঙানো মেশিনও আছে। তবে সেটি দিয়ে মসুর-খেসারি ডাল ভালোভাবে ভাঙানো গেলেও, ওই সব মেশিনে মুগডাল ভাঙানো যায়নি।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের এই যৌথ প্রকল্প আমার নেতৃতে স্থানীয় মিস্ত্রিদের সঙ্গে নিয়েই মসুর-খেসারি ডাল ভাঙানো মেশিনকে দীর্ঘ ৫ বছরের গবেষণায় পরিশীলিত করে মুগডাল ভাঙাতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষণার মাধ্যমে বিশেষ ধরনের রোলার এবং পাওয়ার ট্রান্সমিশন পুলি তৈরি করে এই মিনি-মিলে বসানো হয়েছে। এই মিনি-মিল একটি ছোট আকারের মুগডাল ভাঙানোর মেশিন। এর খুচরা যন্ত্রাংশ স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য। গবেষণায় উদ্ভাবিত এই মিনি-মিল দিয়ে এখন অনায়াসে মুগডাল ভাঙানো যাচ্ছে।

যেহেতু এই মেশিন স্থানীয় কারিগরদের সঙ্গে নিয়ে উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এর খুচরা যন্ত্রাংশ স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য, সেহেতু এই উদ্ভাবিত মুগডাল ভাঙানোর মেশিন স্থানীয় মিল মালিকদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়। কারণ স্থানীয় কারিগররাই প্রয়োজনে এই মিনি-মিলগুলো মেরামত করতে পারছেন।

মুগডালের খোসা সহজে ছাড়ানোর জন্য মুগডালকে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। দেখা গেছে, ৫ কেজি মুগডালে ৩০ গ্রাম পরিমাণ সয়াবিন বা সরিষার তেল মাখিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিলে এই মেশিনে খুব সহজেই মুগডাল ভাঙানো যায়। এই মিনি-মিলে শুধু মুগডাল নয়-মসুর, খেসারিসহ অন্যান্য ডালও ভালোভাবে ভাঙানো যায়।

মিনি-মিল ১৫ হর্স পাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন বা ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা চালিত। এটি কাঠের তৈরি প্লাটফর্ম, রোলার, পাওয়ার ট্রান্সমিশন পুলি, স্টার্টার, কাটআউট, ফিডিং চেম্বার, সিভ, ট্রে, সেফটি কভার, কেসিট, বেল্ট, তার, লোহার রড এবং বল বিয়ারিং দ্বারা সংযুক্ত। এ পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলার মুগডাল উৎপাদিত এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলমান ধান ভাঙানো মিলে পরীক্ষামূলকভাবে ২১টি মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল বসানো হয়েছে। ২০২১ এ ২টি, ২০২২ এর এপ্রিলে ৩টি, মে মাসে ৫টি এবং নভেম্বর মাসে ১১টি মিনি-মিল বসানো হয়েছে। এই ২১টি মিনি-মিলের অভাবনীয় ফলাফলের প্রেক্ষিতে, ২০২২ এর ডিসেম্বর মাসে আরও ১০টি মিনি-মিল বসানোর কাজ হচ্ছে।

মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল

যে ২১টি গ্রামে এসব মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল বসানো হয়েছে, সেখানকার কৃষকরা আজ ব্যাপকভাবে মুগডাল চাষাবাদে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত। তারা তাদের উৎপাদিত মুগডাল এই মিনি-মিলে মানসম্মতভাবে ভাঙাতে পারছেন। বাজারে তা দ্বিগুণের বেশি মূল্যে বিক্রি করে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছেন। এখন তাদের পরিবার প্রায় প্রতিদিনই এই পুষ্টিসমৃদ্ধ মুগডাল খেতে পারছে। আমাদের বিশ^াস, শুধু মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিলের কারণেই এই অঞ্চলের কৃষকরা মুগডাল চাষাবাদে যতœবান হচ্ছেন। এতে প্রায় দ্বিগুণ ফলন নিশ্চিত হচ্ছে। এই মিনি-মিল উপকূল অঞ্চলে মুগডাল সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখছে।

আমাদের আশা

আমরা আশা করি সরকার মিনি-মিল প্রযুক্তির উপযোগীতা অনুধাবন করে উপকূলের গ্রামে গ্রামে মুগডাল ভাঙানো মিনি-মিল বসানোর উদ্যোগ নেবে এবং উপকূলের পতিত জমিতে মুগডাল উৎপাদন ও বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকব। অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের এটিই হোক উপকূলের কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় টেকসই উপহার।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ প্রাপ্ত বিজ্ঞানী; ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]

back to top