alt

opinion » post-editorial

ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের বাহন স্যাটেলাইট

মোস্তাফা জব্বার

: সোমবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৩
image

ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের বাহন স্যাটেলাইট

আমরা এখন মোবাইল ইন্টারনেট ও আইএসপিদের দেয়া ইন্টারনেটের মাঝে বসবাস করি। সাম্প্রতিককালে কয়েকটি কোম্পানি আমাদের প্রচলিত এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, প্রচলিত ইন্টারনেটের দুনিয়াকে স্যাটেলাইট স্থলাভিষিক্ত করে দেবে। বিশ্ব গণমাধ্যম থেকে যেসব তথ্যাদি পাওয়া গেছে সেগুলো তেমনি পথনির্দেশ করছে।

স্পেসএক্স, ওয়ানওয়েব এবং ডিআইএসএইচ’র মতো কোম্পানিগুলো বড় বিনিয়োগ থেকে উপকৃত হয়ে স্যাটেলাইট সংযোগের বড় ধরনের সম্প্রসারণের দিকে যাচ্ছে আইইউই এবং ডিএআরপিএর মতো সরকারি সংস্থাগুলোও এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা যেখানে ইন্টারনেট নাগালের বাইরে থাকে, ধীরগতি থাকে- সেসব জায়গাগুলোতে গ্রাহকদের জন্য সংযোগ প্রদানের প্রচুর সম্ভাবনা দেখছে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি এবং এক্ষেত্রে তারা সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।

ইতোমধ্যে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানোর এ প্রতিযোগিতা দিনের পর দিন তীব্র হচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে স্পেসএক্স।

ওয়ানওয়েব যখন কভারেজ বাড়াতে ফ্রেঞ্জ স্যাটেলাইট অপারেটর ইউটেলস্যাটের সঙ্গে চুক্তি করছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক তখন মহাকাশে ৩ হাজারেরও বেশি স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে।

স্টারলিংক মনে করে, এ পরিষেবা বিশ^জুড়ে প্রত্যন্ত এবং গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। অন্যদিকে ওয়ানওয়েব দাবি করে, এটি অর্থনীতিকে পিছিয়ে রাখা সংযোগের বাধাগুলো দূর করে। এটি গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্জলে জরিপের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজনকে হাইলাইট করে।

ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের সহপ্রতিষ্ঠান স্টারলিঙ্ক পৃথিবীর দ্রুত বিকাশমান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি, যাদের লক্ষ্য পৃথিবীর লো অরবিটে থাকা স্যাটেলাইট থেকে বিশ্বব্যাপী লো লেটেন্সির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা। বিশেষ করে বিশ্বের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছাতে চান তিনি।

লো অরবিট স্যাটেলাইট হলো এমন একধরনের স্যাটেলাইট, যেগুলো জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটের মতো অত উপরে না থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের অনেকটা কাছাকাছি থাকে এবং এই স্যাটেলাইটগুলো একটা জায়গায় স্থির না থেকে অনবরত দ্রুতগতিতে স্থান পরিবর্তন করে। স্টারলিংক বা এর মতো প্রজেক্টগুলোর জন্য এই লো অরবিট স্যাটেলাইটই ব্যবহার করা হয়েছে।

এলন মাস্কের Starlink স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Satellite Broadband Internet) পরিষেবা বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাইস্পিড কানেকশন পৌঁছে দিতে কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয় এই প্রযুক্তি।

স্টারলিংক চালু হওয়ার ফলে টেলিকম কোম্পানি গুলো অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। টাওয়ার এবং ফাইবার কোম্পানী গুলোকে টিকে থাকার জন্য তাই নতুন কৌশল বেছে নিতে হবে। কেননা একটি টাওয়ারের চেয়ে একটি স্যাটেলাইট বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।

২০১৫ সালে প্রথমবার স্টারলিঙ্কের কথা জানান ইলন মাস্ক। তিনি জানান, ‘এর (স্টারলিঙ্ক) ফোকাস হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী একটি গ্লোবাল কমিউনিউকেশন সিস্টেম তৈরি করা, যা অনেকটা স্পেসে ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর মতো হতে যাচ্ছে। লক্ষ্য হলো যতদূর সম্ভব ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া।’

২০১৯ সালের জুন মাসে ইলন মাস্ক জানান যে দূরবর্তী ও কম ঘনত্বের এলাকাগুলোতে লো লেটেন্সি, হাই-ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট অ্যাকসেস সেবা প্রদান করবে স্টারলিঙ্ক। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথেষ্ট স্পিডযুক্ত ব্যবস্থা নেই, তারাই হতে যাচ্ছেন স্টারলিংকের গ্রাহক। ইতোমধ্যে স্পেসএক্স ১১,৯৪৩টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে লঞ্চ করেছে ও ৩০,০০০ এর বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চের পরিকল্পনা করছে।

মহাকাশ থেকে লো লেটেন্সির ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিঙ্ক। বিশ্বের অনেক দেশের গ্রাহক এরই মধ্যে স্টারলিঙ্কের রাউটারের ব্যবহার শুরু করেছেন। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনসহ বিশ্বের ৩২টি দেশে এর ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু রয়েছে। সম্প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও ইন্টারনেট সেবাদান শুরু করেছে স্টারলিঙ্ক। এর গ্রাহকসংখ্যা এরই মধ্যে ১ লাখ ছাড়িয়েছে।

হাজার হাজার স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের নানারকম কাজের ভেতরে আছে টিভি সংযোগ, ইন্টারনেট সেবা, জিপিএসের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো মানুষের অবস্থান নির্ণয়। গ্রাহককে দ্রুততম সময়ে ডেটা পাঠানোর নিশ্চয়তা দিয়ে ব্রডব্যান্ডের গতি নিশ্চিত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর স্টারলিঙ্ক। সেজন্য লেজারের মাধ্যমে ডেটা পাঠায় এ ব্রডব্যান্ড সিস্টেম। ফলে কোনোরকম তারের সংযোগ ছাড়াই গ্রাহক পাচ্ছেন ফাইবার অপটিকের মতো আলোর গতিতে ব্রডব্যান্ড সেবা।

বর্তমানে আমরা যে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি তাদের গতি বেশ ধীর। সিগন্যাল পৌঁছাতে দেরির কারণে এর পারফরম্যান্স হয় ধীরগতির। তবে স্টারলিঙ্ক যেহেতু ডেটা পাঠানোর জন্য লেজার ব্যবহার করে তাই প্রচলিত ডেটা পাঠানোর তুলনায় অনেক দ্রুত স্যাটেলাইট সেবা পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাজ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে অল্প সংখ্যক গ্রাহকের কাছে সাড়া ফেলে দিয়েছে স্টারলিঙ্ক। সেখানে তাদের মূল প্রতিপাদ্য মন্দের ভালো বেটা। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় তেমন ইন্টারনেট অবকাঠামো না থাকার সুযোগ নিয়ে স্টারলিঙ্ক তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকার কিছু ব্যবহারকারী তো প্রতি সেকেন্ডে ০.৫ মেগাবাইট থেকে ৮৫ মেগাবাইটে উন্নীত হতে দেখেছেন ইন্টারনেট গতি। ইতোমধ্যেই গ্রাহকদের কাছে কেবল মন্দের ভালো নয়, বরং আশীর্বাদ হিসেবে মন কাড়তে সক্ষম হয়েছে স্টারলিঙ্ক।

ইংল্যান্ডে সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইংল্যান্ডে সমস্ত নিবন্ধিত ব্যবসার প্রায় ২৩ ভাগ গ্রামীণভিক্তিক। প্রত্যন্ত অঞ্চল লন্ডন বাদে শহরাঞ্চলের তুলনায় মাথাপিছু বেশি ব্যবসার আয়োজক। ‘থ্রি’ এর সরকার বিষয়ক প্রধান সাইমন মিলার মনে করেন, সম্পূর্ণ ফাইবার রোলআউট থাকার সত্ত্বেও সরকার গ্রামীণ সংস্থাগুলোকে কম সেবা দিচ্ছে এবং বিদ্যমান সংযোগগুলো কম গতির সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রামীণ ইংল্যান্ড ২০২০-এ এর গড় গতি 51 Mbits/sec, যেখানে শহরে গড় গতি 84 Mbits/sec। এমনকি কিছু ব্যবসায় মোবাইল ফোনের সিগন্যালের মতো মৌলিক পরিষেবার অভাব রয়েছে; যা তাদের ডিজিটাল রূপান্তর বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মতো কাজগুলো করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক স্যাটেলাইট কভারেজ এ সমস্যাগুলো দূর করবে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গ্রামীণ ব্যবসার জন্য ফাইবারের চেয়ে দ্রুত কভারেজ প্রদান করবে।

স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে এখন বিশ্ব নাগরিক সবাই। ইচ্ছে করলেই ভৌগোলিক সীমানার বাইরে গিয়েও যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করা যেতে পারে। এর জন্য যা দরকার তা হলো মহাকাশে একটি উপগ্রহ এবং মাটিতে একটি রিসিভার। বর্তমানে এলন মাস্কের (Elon Musk) স্টারলিঙ্ক (StarLink) ১৫০ এমবিপিএস পর্যন্ত উচ্চগতির প্ল্যানের জন্য প্রতি মাসে ৯৯ ডলার চার্জ করছে। একটি স্যাটেলাইট ডিশ এবং একটি রাউটারসহ সরঞ্জামগুলোর জন্য মোট খরচ হবে ৫০০ ডলার। আরও উন্নত প্রযুক্তির গতিসম্পন্ন ব্যান্ডউইথের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রিমিয়াম প্ল্যান পেতে খরচ প্রতি মাসে দাঁড়াবে ৫০০ ডলার এবং এটির সরঞ্জামের জন্য লাগবে ২৫০০ ডলার।

এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩২টি দেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে বলে গত ১৩ মে এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে স্পেসএক্স। টুইটে ইন্টারনেট পরিষেবার একটি ম্যাপও সংযুক্ত করেছে তারা।

টুইটে সংযুক্ত ম্যাপে যেসব দেশে শিগগিরই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হবে সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে সেবা দেয়ার আশা প্রকাশ করেছে স্টারলিংক। এরই মধ্যে তারা বাংলাদেশ থেকে মাসিক ৯৯ ডলারে প্রিঅর্ডার আহ্বান করছে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের সেবা পাওয়া যাবে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্টারলিংকের সাবস্ক্রিপশন নিলে গ্রাহককে একটি স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটার দেয়া হবে। এরপর সেগুলো গ্রাহকের বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। বাড়ির কোন জায়গা থেকে ভালো সংকেত পাওয়া যাবে, তা বলে দেবে স্টারলিংকের অ্যাপ।

গত মে ২০২১ সালে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন যে, স্টারলিঙ্ক নেটওয়ার্ক ৪০০টি মহাকাশ যান চালুর পরে ‘মাইনর’ ইন্টারনেট কভারেজ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে এবং প্রায় ৮০০টি উপগ্রহ চালু হওয়ার পরে ‘মাঝারি’ কভারেজ সরবরাহ করবে।

২০২১ সালের মে মাসের শেষদিকে স্পেসএক্স সামগ্রিকভাবে ১,৭৩০টিরও বেশি স্টারলিঙ্ক উপগ্রহ চালু করেছিল। নক্ষত্রমন্ডলটি এখন বিটা-পরীক্ষা প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে নির্বাচিত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা সরবরাহ করছে।

স্থলভাগের ব্যবহারকারীরা স্পেসএক্সের বিক্রয়কৃত কিটটি ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড সংকেত অ্যাক্সেস করে। কিটে মাউন্টিং ট্রিপড, একটি ওয়াইফাই রাউটার, তারগুলো এবং একটি পাওয়ার সাপ্লাইসহ একটি ছোট উপগ্রহ ডিশ রয়েছে।

এটি সহজেই প্রত্যাশা করা যায় যে, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এক সময়ে সবাই প্রযুক্তির সীমানা ছাড়িয়ে যাবে এবং বিশ্ব একটি স্যাটেলাইটের ডিজিটাল সংযুক্তিতে বাস করবে।

বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করার পর্যায়ে যায়নি। ইলন মাস্ক যদি বাংলাদেশে এই সেবা দিতে চায় তবে প্রথমত ল্যান্ডিং রাইট নিতে হবে। তারপরও ইলন মাস্কের ইন্টারনেটের যে দাম সেটি বহন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ বা আমাদের মতো দেশে প্রায় অসম্ভব। দেশের কিছু ধনী মানুষ যেমন করে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে তারাই হয়তো ইলন মাস্কের গ্রাহক হতে পারে। আমাদের দেশে বরং তারের ইন্টারনেট বা মোবাইলের ইন্টারনেট অনেক বেশি জনপ্রিয় হতে থাকবে। তবে প্রযুক্তির বিকাশ বা সক্ষমতার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এমন হতে পারে যে আমরাও লো অরবিট স্যাটেলাইট নিজেরাই উৎক্ষেপণ করতে পারি। আমাদের সক্ষমতাও হয়তো উন্নত দেশের মতোই হতে পারে।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যারের প্রণেতা]

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

পাট চাষের সংকট ও সম্ভাবনা

সামাজিক-প্রযুক্তিগত কল্পনা: বাংলাদেশের উন্নয়ন চিন্তার নতুন দিগন্ত

অগ্রক্রয় মোকদ্দমায় উভয় পক্ষের আইনি ডিফেন্স

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম

এক সাংবাদিকের খোলা চিঠি

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

ক্লাউডবার্স্ট: মৃত্যুর বার্তা নিয়ে, আকাশ যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে

রম্যগদ্য:“কবি এখন জেলে...”

কারা কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা ও ‘কারেকশন সার্ভিস’-এর বাস্তবতা

ছবি

বাংলাদেশের শহর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

ছবি

‘আজ ফির তুমপে পেয়ার আয়া হ্যায়’

স্বপ্নের দক্ষিণ কোরিয়া; বাংলাদেশে আন্দোলন, ভিয়েতনামের সাফল্য

ডাকসু নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতি

ঢাকা শহরের উষ্ণতা: সবুজ হারানোর মূল্য

তিন বাহিনী প্রধানদের আশা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

গনমাধ্যম জগতও নিষ্ঠুরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে!

মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা: জাপান এক অনুসরণীয় আদর্শ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন ট্র্যাজেডি

হোক সবুজ বিপ্লব

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : একজন বিধায়কের জামিন

নিউটনের আপেল : পতনের ভেতরে জাগরণের গল্প

বায়ুদূষণ গবেষণার প্রসার ও তরুণদের ভূমিকা : প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা আহমদ

চাপে সামষ্টিক অর্থনীতি

ছবি

একাত্তরের গণহত্যা : সংখ্যার বিতর্ক নাকি দায় হালকা করার চেষ্টা?

রম্যগদ্য : ‘দালাল-ধন্বন্তরি-জীবন রক্ষাকারী...’

সাদা পাথর লুটে সর্বদলীয় ঐক্য

গণিতের বহুমুখী ব্যবহার : আধুনিক বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি

tab

opinion » post-editorial

ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের বাহন স্যাটেলাইট

মোস্তাফা জব্বার

image

ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের বাহন স্যাটেলাইট

সোমবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৩

আমরা এখন মোবাইল ইন্টারনেট ও আইএসপিদের দেয়া ইন্টারনেটের মাঝে বসবাস করি। সাম্প্রতিককালে কয়েকটি কোম্পানি আমাদের প্রচলিত এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, প্রচলিত ইন্টারনেটের দুনিয়াকে স্যাটেলাইট স্থলাভিষিক্ত করে দেবে। বিশ্ব গণমাধ্যম থেকে যেসব তথ্যাদি পাওয়া গেছে সেগুলো তেমনি পথনির্দেশ করছে।

স্পেসএক্স, ওয়ানওয়েব এবং ডিআইএসএইচ’র মতো কোম্পানিগুলো বড় বিনিয়োগ থেকে উপকৃত হয়ে স্যাটেলাইট সংযোগের বড় ধরনের সম্প্রসারণের দিকে যাচ্ছে আইইউই এবং ডিএআরপিএর মতো সরকারি সংস্থাগুলোও এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা যেখানে ইন্টারনেট নাগালের বাইরে থাকে, ধীরগতি থাকে- সেসব জায়গাগুলোতে গ্রাহকদের জন্য সংযোগ প্রদানের প্রচুর সম্ভাবনা দেখছে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি এবং এক্ষেত্রে তারা সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।

ইতোমধ্যে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানোর এ প্রতিযোগিতা দিনের পর দিন তীব্র হচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে স্পেসএক্স।

ওয়ানওয়েব যখন কভারেজ বাড়াতে ফ্রেঞ্জ স্যাটেলাইট অপারেটর ইউটেলস্যাটের সঙ্গে চুক্তি করছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক তখন মহাকাশে ৩ হাজারেরও বেশি স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে।

স্টারলিংক মনে করে, এ পরিষেবা বিশ^জুড়ে প্রত্যন্ত এবং গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। অন্যদিকে ওয়ানওয়েব দাবি করে, এটি অর্থনীতিকে পিছিয়ে রাখা সংযোগের বাধাগুলো দূর করে। এটি গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্জলে জরিপের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজনকে হাইলাইট করে।

ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের সহপ্রতিষ্ঠান স্টারলিঙ্ক পৃথিবীর দ্রুত বিকাশমান বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি, যাদের লক্ষ্য পৃথিবীর লো অরবিটে থাকা স্যাটেলাইট থেকে বিশ্বব্যাপী লো লেটেন্সির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা। বিশেষ করে বিশ্বের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছাতে চান তিনি।

লো অরবিট স্যাটেলাইট হলো এমন একধরনের স্যাটেলাইট, যেগুলো জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটের মতো অত উপরে না থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের অনেকটা কাছাকাছি থাকে এবং এই স্যাটেলাইটগুলো একটা জায়গায় স্থির না থেকে অনবরত দ্রুতগতিতে স্থান পরিবর্তন করে। স্টারলিংক বা এর মতো প্রজেক্টগুলোর জন্য এই লো অরবিট স্যাটেলাইটই ব্যবহার করা হয়েছে।

এলন মাস্কের Starlink স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (Satellite Broadband Internet) পরিষেবা বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাইস্পিড কানেকশন পৌঁছে দিতে কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয় এই প্রযুক্তি।

স্টারলিংক চালু হওয়ার ফলে টেলিকম কোম্পানি গুলো অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। টাওয়ার এবং ফাইবার কোম্পানী গুলোকে টিকে থাকার জন্য তাই নতুন কৌশল বেছে নিতে হবে। কেননা একটি টাওয়ারের চেয়ে একটি স্যাটেলাইট বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।

২০১৫ সালে প্রথমবার স্টারলিঙ্কের কথা জানান ইলন মাস্ক। তিনি জানান, ‘এর (স্টারলিঙ্ক) ফোকাস হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী একটি গ্লোবাল কমিউনিউকেশন সিস্টেম তৈরি করা, যা অনেকটা স্পেসে ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর মতো হতে যাচ্ছে। লক্ষ্য হলো যতদূর সম্ভব ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া।’

২০১৯ সালের জুন মাসে ইলন মাস্ক জানান যে দূরবর্তী ও কম ঘনত্বের এলাকাগুলোতে লো লেটেন্সি, হাই-ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট অ্যাকসেস সেবা প্রদান করবে স্টারলিঙ্ক। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথেষ্ট স্পিডযুক্ত ব্যবস্থা নেই, তারাই হতে যাচ্ছেন স্টারলিংকের গ্রাহক। ইতোমধ্যে স্পেসএক্স ১১,৯৪৩টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে লঞ্চ করেছে ও ৩০,০০০ এর বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চের পরিকল্পনা করছে।

মহাকাশ থেকে লো লেটেন্সির ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিঙ্ক। বিশ্বের অনেক দেশের গ্রাহক এরই মধ্যে স্টারলিঙ্কের রাউটারের ব্যবহার শুরু করেছেন। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনসহ বিশ্বের ৩২টি দেশে এর ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু রয়েছে। সম্প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও ইন্টারনেট সেবাদান শুরু করেছে স্টারলিঙ্ক। এর গ্রাহকসংখ্যা এরই মধ্যে ১ লাখ ছাড়িয়েছে।

হাজার হাজার স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন করা এ প্রকল্পের লক্ষ্য। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের নানারকম কাজের ভেতরে আছে টিভি সংযোগ, ইন্টারনেট সেবা, জিপিএসের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো মানুষের অবস্থান নির্ণয়। গ্রাহককে দ্রুততম সময়ে ডেটা পাঠানোর নিশ্চয়তা দিয়ে ব্রডব্যান্ডের গতি নিশ্চিত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর স্টারলিঙ্ক। সেজন্য লেজারের মাধ্যমে ডেটা পাঠায় এ ব্রডব্যান্ড সিস্টেম। ফলে কোনোরকম তারের সংযোগ ছাড়াই গ্রাহক পাচ্ছেন ফাইবার অপটিকের মতো আলোর গতিতে ব্রডব্যান্ড সেবা।

বর্তমানে আমরা যে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি তাদের গতি বেশ ধীর। সিগন্যাল পৌঁছাতে দেরির কারণে এর পারফরম্যান্স হয় ধীরগতির। তবে স্টারলিঙ্ক যেহেতু ডেটা পাঠানোর জন্য লেজার ব্যবহার করে তাই প্রচলিত ডেটা পাঠানোর তুলনায় অনেক দ্রুত স্যাটেলাইট সেবা পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাজ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে অল্প সংখ্যক গ্রাহকের কাছে সাড়া ফেলে দিয়েছে স্টারলিঙ্ক। সেখানে তাদের মূল প্রতিপাদ্য মন্দের ভালো বেটা। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় তেমন ইন্টারনেট অবকাঠামো না থাকার সুযোগ নিয়ে স্টারলিঙ্ক তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ এলাকার কিছু ব্যবহারকারী তো প্রতি সেকেন্ডে ০.৫ মেগাবাইট থেকে ৮৫ মেগাবাইটে উন্নীত হতে দেখেছেন ইন্টারনেট গতি। ইতোমধ্যেই গ্রাহকদের কাছে কেবল মন্দের ভালো নয়, বরং আশীর্বাদ হিসেবে মন কাড়তে সক্ষম হয়েছে স্টারলিঙ্ক।

ইংল্যান্ডে সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইংল্যান্ডে সমস্ত নিবন্ধিত ব্যবসার প্রায় ২৩ ভাগ গ্রামীণভিক্তিক। প্রত্যন্ত অঞ্চল লন্ডন বাদে শহরাঞ্চলের তুলনায় মাথাপিছু বেশি ব্যবসার আয়োজক। ‘থ্রি’ এর সরকার বিষয়ক প্রধান সাইমন মিলার মনে করেন, সম্পূর্ণ ফাইবার রোলআউট থাকার সত্ত্বেও সরকার গ্রামীণ সংস্থাগুলোকে কম সেবা দিচ্ছে এবং বিদ্যমান সংযোগগুলো কম গতির সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রামীণ ইংল্যান্ড ২০২০-এ এর গড় গতি 51 Mbits/sec, যেখানে শহরে গড় গতি 84 Mbits/sec। এমনকি কিছু ব্যবসায় মোবাইল ফোনের সিগন্যালের মতো মৌলিক পরিষেবার অভাব রয়েছে; যা তাদের ডিজিটাল রূপান্তর বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মতো কাজগুলো করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক স্যাটেলাইট কভারেজ এ সমস্যাগুলো দূর করবে। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট গ্রামীণ ব্যবসার জন্য ফাইবারের চেয়ে দ্রুত কভারেজ প্রদান করবে।

স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে এখন বিশ্ব নাগরিক সবাই। ইচ্ছে করলেই ভৌগোলিক সীমানার বাইরে গিয়েও যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করা যেতে পারে। এর জন্য যা দরকার তা হলো মহাকাশে একটি উপগ্রহ এবং মাটিতে একটি রিসিভার। বর্তমানে এলন মাস্কের (Elon Musk) স্টারলিঙ্ক (StarLink) ১৫০ এমবিপিএস পর্যন্ত উচ্চগতির প্ল্যানের জন্য প্রতি মাসে ৯৯ ডলার চার্জ করছে। একটি স্যাটেলাইট ডিশ এবং একটি রাউটারসহ সরঞ্জামগুলোর জন্য মোট খরচ হবে ৫০০ ডলার। আরও উন্নত প্রযুক্তির গতিসম্পন্ন ব্যান্ডউইথের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রিমিয়াম প্ল্যান পেতে খরচ প্রতি মাসে দাঁড়াবে ৫০০ ডলার এবং এটির সরঞ্জামের জন্য লাগবে ২৫০০ ডলার।

এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩২টি দেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে বলে গত ১৩ মে এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে স্পেসএক্স। টুইটে ইন্টারনেট পরিষেবার একটি ম্যাপও সংযুক্ত করেছে তারা।

টুইটে সংযুক্ত ম্যাপে যেসব দেশে শিগগিরই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হবে সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে সেবা দেয়ার আশা প্রকাশ করেছে স্টারলিংক। এরই মধ্যে তারা বাংলাদেশ থেকে মাসিক ৯৯ ডলারে প্রিঅর্ডার আহ্বান করছে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের সেবা পাওয়া যাবে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্টারলিংকের সাবস্ক্রিপশন নিলে গ্রাহককে একটি স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটার দেয়া হবে। এরপর সেগুলো গ্রাহকের বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। বাড়ির কোন জায়গা থেকে ভালো সংকেত পাওয়া যাবে, তা বলে দেবে স্টারলিংকের অ্যাপ।

গত মে ২০২১ সালে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন যে, স্টারলিঙ্ক নেটওয়ার্ক ৪০০টি মহাকাশ যান চালুর পরে ‘মাইনর’ ইন্টারনেট কভারেজ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে এবং প্রায় ৮০০টি উপগ্রহ চালু হওয়ার পরে ‘মাঝারি’ কভারেজ সরবরাহ করবে।

২০২১ সালের মে মাসের শেষদিকে স্পেসএক্স সামগ্রিকভাবে ১,৭৩০টিরও বেশি স্টারলিঙ্ক উপগ্রহ চালু করেছিল। নক্ষত্রমন্ডলটি এখন বিটা-পরীক্ষা প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে নির্বাচিত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা সরবরাহ করছে।

স্থলভাগের ব্যবহারকারীরা স্পেসএক্সের বিক্রয়কৃত কিটটি ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড সংকেত অ্যাক্সেস করে। কিটে মাউন্টিং ট্রিপড, একটি ওয়াইফাই রাউটার, তারগুলো এবং একটি পাওয়ার সাপ্লাইসহ একটি ছোট উপগ্রহ ডিশ রয়েছে।

এটি সহজেই প্রত্যাশা করা যায় যে, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এক সময়ে সবাই প্রযুক্তির সীমানা ছাড়িয়ে যাবে এবং বিশ্ব একটি স্যাটেলাইটের ডিজিটাল সংযুক্তিতে বাস করবে।

বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করার পর্যায়ে যায়নি। ইলন মাস্ক যদি বাংলাদেশে এই সেবা দিতে চায় তবে প্রথমত ল্যান্ডিং রাইট নিতে হবে। তারপরও ইলন মাস্কের ইন্টারনেটের যে দাম সেটি বহন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ বা আমাদের মতো দেশে প্রায় অসম্ভব। দেশের কিছু ধনী মানুষ যেমন করে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করে তারাই হয়তো ইলন মাস্কের গ্রাহক হতে পারে। আমাদের দেশে বরং তারের ইন্টারনেট বা মোবাইলের ইন্টারনেট অনেক বেশি জনপ্রিয় হতে থাকবে। তবে প্রযুক্তির বিকাশ বা সক্ষমতার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এমন হতে পারে যে আমরাও লো অরবিট স্যাটেলাইট নিজেরাই উৎক্ষেপণ করতে পারি। আমাদের সক্ষমতাও হয়তো উন্নত দেশের মতোই হতে পারে।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যারের প্রণেতা]

back to top