alt

উপ-সম্পাদকীয়

মডেল গ্রাম মুশুদ্দির গল্প

হাবিবুর রহমান

: সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩

একদিকে শীত। অন্যদিকে হিমেল বাতাস। দিবাকরের আলোটা আজ যেন নিভু নিভু। আবছা কুয়াশা কুয়াশা ভাব। সময় সাড়ে ১২টা। টাঙ্গাইল-জামালপুর সড়ক ধরে চলছি। গন্তব্য টাঙ্গাইলের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা ধনবাড়ী। সড়কের দুই পাশে ও মাঝ বরাবর সাদা দাগ টানা চিহ্ন দেখে যাচ্ছি। পথে দু’ধারে গ্রাম্য প্রকৃতি আর ফসলের অবারিত মাঠ যেন দিগন্তজুড়ে হাতছানি দিচ্ছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। গল্প আর ফসলের মাঠ দেখতে আমরা ধন সম্পদে ভরপুরের রাজধানী ধনবাড়ীতে পৌঁছে গেছি।

এই ধনবাড়ী কিন্তু বাংলা ভাষার প্রথম প্রস্তাবক নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়ি। ১৯১১ সালে রংপুর অধিবেশে এ দাবি করেন। ১৯২১ সালে তা লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাদের অন্যতম নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী। স্থানীয় মানুষরা এ নবাব আলী চৌধুরীর বাড়িকে নবাব বলে অভিহিত করে থাকে। নবাব আলী চৌধুরীর বাড়ির পাশেই রয়েছে নিপুণ কারুকাজের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন শাহী মসজিদ। মসজিদের পাশেই রয়েছে নবাবের কবরস্থান।

আমাদের গন্তব্য কিন্তু ধনবাড়ী। হ্যাঁ, ধনবাড়ীর একটি গ্রামের নাম মুশুদ্দি। মুলত যাব ওই গ্রামে। উদ্দেশ্য মডেল গ্রাম। বর্তমান সরকার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবেন। এমন কথা শুনেছিলাম।

আমন আর বোরো চাষের মাঝখানে যে সময়টা জমি অলস পড়ে থাকে, সে সময়ে সরিষা তোলা যায়। সহজে বোরো আবাদ করা যায়। বাড়তি ফসল পাওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছে ওই গ্রামের কৃষকরা। ফলন বিঘাপ্রতি ৫-৭ মণ পর্যন্ত হয়।

মাঠের শেষ প্রান্তে এসে গেছি। পাশেই রাস্তা। ক্ষেতের আইলে আইলে সাইন বোর্ড। বড়সড় অক্ষরে লেখা মডেল গ্রাম। দাঁড়িয়ে চোখ বুলালাম। পাশেই বড় সামিয়ান মতো দেখতে। মাঠেই দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকরা জানাল গ্রিণ হাউজের মতো। এর মানেটা এরকম কুয়াশা ও বৃষ্টিতে ফসলে পানি কুয়াশা পড়বে না। বৃষ্টি কুয়াশায় সবজি নষ্ট হবে না। সামনে কিছু নারী-পুরুষ শ্রমিক ও কৃষক আলু তুলছে। ফলন দেখতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বুলালাম। দুহাত ভরে আলু তুলছে। যেন গুপ্তধন উদ্ধার করছে। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম।

টমেটো, বেগুন, মরিচ, সব ধরেনর সবজি-শাক। রঙিন কপি, কলা, শিম, লাউ, পটল, ভুট্টা, গাজর, আলু, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা ফসলের বৈচিত্র্য। কয়েক বাড়ি পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেল সাইনবোর্ড আর সাইনবোর্ড। বাড়িগুলো ছোট ছোট খামারের মতো। গোবর জৈব সার দিয়ে তাদের ফসলের চাষ। রাসায়নিক সার একদম ব্যবহার করা হয় না বলে নারী কৃষাণীরা জানালেন। বাড়ির পাশেই গর্ত করে গোবর ফেলে সার তৈরি করে নিজেরাই। এ সার জমিতে প্রয়োগ করে সবজি চাষ করে। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেছে। শীতকালিন সবজি দুলছে। থোকায় থোকায় শিম ধরেছে। মরিচ ধরেছে। মাঠে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের পদচারণা ও কাজে সমতা দেখা গেল।

কয়েকজন নারী সঙ্গে সড়কে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ নিয়ে জানতে চেষ্টা করলাম তাদের বাড়ি কোথায়? তারা জানালেন পশ্চিম পাড়া। তারা কী কৃষি কাজ করেন? এমন প্রশ্ন শুনে এক মধ্যে বয়সি নারী বলেন, তারা বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি পালেন। মাঠেও তারা কাজ করে। তাদের গ্রামে খুব কম কৃষকই জমি পতিত রাখে। এক প্রশ্নের জবাবে, সঙ্গে থাকা এক নারী বলেন নিজের গোবর জৈব সার দিয়ে ফসল ফলান। এতে লাভ কী? এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন খরচ কম লাভ বেশি। পুষ্টি বেশি। ক্ষতি কম। রোগ বালাই কম হবে। বাজারে চাহিদাও বেশি।

তিনি এমনটাই হয়তো বোঝালেন-জৈবিক উপায়ে ফল ফসল চাষ নিরাপদ। পুষ্টি মান বেশি, খরচ কম হওয়ার লাভটা তারা বেশি পান। খেতেও স্বাদ।

কথা হয় কৃষক মিলনের (৩৫) সঙ্গে। তার বাড়ি একই গ্রামের কামারপাড়া। তার বাড়ির পালানে ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন রঙিন কপি। কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত সম্প্রসারণ, জৈব ও সুষম সার ব্যবস্থাপনায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের একজন উপকারভোগী। শখ করে রঙিন কপি চাষ করেছেন। কপি ধরতে শুরু করেছে। তার জমিতে তিন ধরনের হলুদ, বেগুনি, সাদা কপি ফুটতে শুরু করেছে। তিনি জানান, কপির বাগানে ঘুরেতে তার খুব ভালো লাগে। সকালের কচি রোদ যখন নরম পাতার ওপর সূর্যের কিরণে চিকচিক করে। সে দৃশ্য দেখতে তার খুব ভালো লাগে। সকালে বাগানে মনের আনন্দে ঘুরেন। এতে তার মন ভালো হয়ে যায়। ভালো দাম পাবে এমনটাই তার আশা। তিনি তার জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। তার কথা মতে, রাসায়নিক সারে খরচ বেশি। আর জৈব সার পরিবেশসম্মত। জৈব সারে ফসলে রঙ সজিবতা বেশি হয়। দেখতে অনেকটা টাটকা লাগে। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়।

এক তথ্যে জানা গেল, মুশুদ্দি ইউনিয়নের আয়তন ২৬.১৭ বর্গ কিলোমিটার। তিনটি মৌজায় গঠিত মুশুদ্দিতে ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি হাই স্কুল রয়েছে। লোকসংখ্যা প্রায় ২২,৩০৫ জন। ভোটার প্রায় ১২,০৫০ জন।

গ্রামটি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নিজ গ্রাম। কৃষিমন্ত্রীর নিজ গ্রামের কারণে মুশুদ্দি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। পুরো গ্রামটি ঘুরে ঘুরে কৃষি ফসলের বৈচিত্র্য দেখে মডেল গ্রাম দেখা। কৃষাণী নারী চুলায় চাল দিয়ে পালানের জমি থেকে নিমিষেই আঁচলে তুলতে পারেন বেগুন, মরিচ, লাউ, শিমসহ অন্যান্য সবজি। এর চেয়ে একটি গ্রামের মানুষের আর কী চাওয়া থাকে? জৈব সারে নারীর হাতে বেড়ে ওঠে ফুল ফসল। নিজেদের চাহিদা পূরণের পর বাজারে ফসল বিক্রির টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলে সংসার। কৃষক- কৃষাণীর মুখে হাসি ফুটে। যে হাসি গ্রামের মানুষের সুখ সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি। এমন কৃষিই আমরা চাই। চাই মুশুদ্দির মতো সারাদেশে গড়ে উঠুক কৃষি সমৃদ্ধ মডেল গ্রাম।

[লেখক: সভাপতি, মধুপুর প্রেসক্লাব, টাঙ্গাইল]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মডেল গ্রাম মুশুদ্দির গল্প

হাবিবুর রহমান

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩

একদিকে শীত। অন্যদিকে হিমেল বাতাস। দিবাকরের আলোটা আজ যেন নিভু নিভু। আবছা কুয়াশা কুয়াশা ভাব। সময় সাড়ে ১২টা। টাঙ্গাইল-জামালপুর সড়ক ধরে চলছি। গন্তব্য টাঙ্গাইলের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা ধনবাড়ী। সড়কের দুই পাশে ও মাঝ বরাবর সাদা দাগ টানা চিহ্ন দেখে যাচ্ছি। পথে দু’ধারে গ্রাম্য প্রকৃতি আর ফসলের অবারিত মাঠ যেন দিগন্তজুড়ে হাতছানি দিচ্ছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। গল্প আর ফসলের মাঠ দেখতে আমরা ধন সম্পদে ভরপুরের রাজধানী ধনবাড়ীতে পৌঁছে গেছি।

এই ধনবাড়ী কিন্তু বাংলা ভাষার প্রথম প্রস্তাবক নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়ি। ১৯১১ সালে রংপুর অধিবেশে এ দাবি করেন। ১৯২১ সালে তা লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাদের অন্যতম নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী। স্থানীয় মানুষরা এ নবাব আলী চৌধুরীর বাড়িকে নবাব বলে অভিহিত করে থাকে। নবাব আলী চৌধুরীর বাড়ির পাশেই রয়েছে নিপুণ কারুকাজের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন শাহী মসজিদ। মসজিদের পাশেই রয়েছে নবাবের কবরস্থান।

আমাদের গন্তব্য কিন্তু ধনবাড়ী। হ্যাঁ, ধনবাড়ীর একটি গ্রামের নাম মুশুদ্দি। মুলত যাব ওই গ্রামে। উদ্দেশ্য মডেল গ্রাম। বর্তমান সরকার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবেন। এমন কথা শুনেছিলাম।

আমন আর বোরো চাষের মাঝখানে যে সময়টা জমি অলস পড়ে থাকে, সে সময়ে সরিষা তোলা যায়। সহজে বোরো আবাদ করা যায়। বাড়তি ফসল পাওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছে ওই গ্রামের কৃষকরা। ফলন বিঘাপ্রতি ৫-৭ মণ পর্যন্ত হয়।

মাঠের শেষ প্রান্তে এসে গেছি। পাশেই রাস্তা। ক্ষেতের আইলে আইলে সাইন বোর্ড। বড়সড় অক্ষরে লেখা মডেল গ্রাম। দাঁড়িয়ে চোখ বুলালাম। পাশেই বড় সামিয়ান মতো দেখতে। মাঠেই দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকরা জানাল গ্রিণ হাউজের মতো। এর মানেটা এরকম কুয়াশা ও বৃষ্টিতে ফসলে পানি কুয়াশা পড়বে না। বৃষ্টি কুয়াশায় সবজি নষ্ট হবে না। সামনে কিছু নারী-পুরুষ শ্রমিক ও কৃষক আলু তুলছে। ফলন দেখতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বুলালাম। দুহাত ভরে আলু তুলছে। যেন গুপ্তধন উদ্ধার করছে। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম।

টমেটো, বেগুন, মরিচ, সব ধরেনর সবজি-শাক। রঙিন কপি, কলা, শিম, লাউ, পটল, ভুট্টা, গাজর, আলু, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা ফসলের বৈচিত্র্য। কয়েক বাড়ি পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেল সাইনবোর্ড আর সাইনবোর্ড। বাড়িগুলো ছোট ছোট খামারের মতো। গোবর জৈব সার দিয়ে তাদের ফসলের চাষ। রাসায়নিক সার একদম ব্যবহার করা হয় না বলে নারী কৃষাণীরা জানালেন। বাড়ির পাশেই গর্ত করে গোবর ফেলে সার তৈরি করে নিজেরাই। এ সার জমিতে প্রয়োগ করে সবজি চাষ করে। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেছে। শীতকালিন সবজি দুলছে। থোকায় থোকায় শিম ধরেছে। মরিচ ধরেছে। মাঠে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের পদচারণা ও কাজে সমতা দেখা গেল।

কয়েকজন নারী সঙ্গে সড়কে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ নিয়ে জানতে চেষ্টা করলাম তাদের বাড়ি কোথায়? তারা জানালেন পশ্চিম পাড়া। তারা কী কৃষি কাজ করেন? এমন প্রশ্ন শুনে এক মধ্যে বয়সি নারী বলেন, তারা বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি পালেন। মাঠেও তারা কাজ করে। তাদের গ্রামে খুব কম কৃষকই জমি পতিত রাখে। এক প্রশ্নের জবাবে, সঙ্গে থাকা এক নারী বলেন নিজের গোবর জৈব সার দিয়ে ফসল ফলান। এতে লাভ কী? এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন খরচ কম লাভ বেশি। পুষ্টি বেশি। ক্ষতি কম। রোগ বালাই কম হবে। বাজারে চাহিদাও বেশি।

তিনি এমনটাই হয়তো বোঝালেন-জৈবিক উপায়ে ফল ফসল চাষ নিরাপদ। পুষ্টি মান বেশি, খরচ কম হওয়ার লাভটা তারা বেশি পান। খেতেও স্বাদ।

কথা হয় কৃষক মিলনের (৩৫) সঙ্গে। তার বাড়ি একই গ্রামের কামারপাড়া। তার বাড়ির পালানে ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন রঙিন কপি। কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত সম্প্রসারণ, জৈব ও সুষম সার ব্যবস্থাপনায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের একজন উপকারভোগী। শখ করে রঙিন কপি চাষ করেছেন। কপি ধরতে শুরু করেছে। তার জমিতে তিন ধরনের হলুদ, বেগুনি, সাদা কপি ফুটতে শুরু করেছে। তিনি জানান, কপির বাগানে ঘুরেতে তার খুব ভালো লাগে। সকালের কচি রোদ যখন নরম পাতার ওপর সূর্যের কিরণে চিকচিক করে। সে দৃশ্য দেখতে তার খুব ভালো লাগে। সকালে বাগানে মনের আনন্দে ঘুরেন। এতে তার মন ভালো হয়ে যায়। ভালো দাম পাবে এমনটাই তার আশা। তিনি তার জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। তার কথা মতে, রাসায়নিক সারে খরচ বেশি। আর জৈব সার পরিবেশসম্মত। জৈব সারে ফসলে রঙ সজিবতা বেশি হয়। দেখতে অনেকটা টাটকা লাগে। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়।

এক তথ্যে জানা গেল, মুশুদ্দি ইউনিয়নের আয়তন ২৬.১৭ বর্গ কিলোমিটার। তিনটি মৌজায় গঠিত মুশুদ্দিতে ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি হাই স্কুল রয়েছে। লোকসংখ্যা প্রায় ২২,৩০৫ জন। ভোটার প্রায় ১২,০৫০ জন।

গ্রামটি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নিজ গ্রাম। কৃষিমন্ত্রীর নিজ গ্রামের কারণে মুশুদ্দি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। পুরো গ্রামটি ঘুরে ঘুরে কৃষি ফসলের বৈচিত্র্য দেখে মডেল গ্রাম দেখা। কৃষাণী নারী চুলায় চাল দিয়ে পালানের জমি থেকে নিমিষেই আঁচলে তুলতে পারেন বেগুন, মরিচ, লাউ, শিমসহ অন্যান্য সবজি। এর চেয়ে একটি গ্রামের মানুষের আর কী চাওয়া থাকে? জৈব সারে নারীর হাতে বেড়ে ওঠে ফুল ফসল। নিজেদের চাহিদা পূরণের পর বাজারে ফসল বিক্রির টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলে সংসার। কৃষক- কৃষাণীর মুখে হাসি ফুটে। যে হাসি গ্রামের মানুষের সুখ সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি। এমন কৃষিই আমরা চাই। চাই মুশুদ্দির মতো সারাদেশে গড়ে উঠুক কৃষি সমৃদ্ধ মডেল গ্রাম।

[লেখক: সভাপতি, মধুপুর প্রেসক্লাব, টাঙ্গাইল]

back to top