alt

opinion » post-editorial

প্রাণীর জন্য ভালোবাসা

সাঈদ চৌধুরী

: শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩

প্রাণীর জন্য মায়া হয়। খুব মায়া হয়। ওরা কথা বলতে পারে না কিন্তু ওদের অনভূতি আছে। আমরা অনেকেই স্পর্শ না করলেও ওদের সুখ-দুঃখ ইচ্ছে করলেই বোঝা যায়। সাফারি পার্কের হাতিটি মারা গেছে শুনলাম। সংবাদ মাধ্যম বলছে দুই হাতি মারামারি করে মারা গেছে। তারপর আবার একটি সিংহিও মারা গেছে।

প্রাণ থাকলে সে মারা যাবে একদিন এটাই সত্য। কিন্তু কেন যেন মন খারাপ হয়। খেয়াল করেছেন নিশ্চই কদিন আগে অনেক পাখি মারা গিয়েছে, আহত হয়েছে, রাস্তায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে থেকেছে। কেমন যেন অসহ্য লেগেছে! বাজি ফুটনো আর পটকার শব্দে কী এক ভীতি নিয়ে এরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে মারা পড়েছে।

আমাদের আনন্দ করতে হয় আর সে আনন্দ সব অভিশাপ হয়ে পড়ে অসহায়ের ওপর। আমরা কোনো কিছু ভাবতে জানি না, আমরা বুঝি না আমাদের মানুষদের সঙ্গে আর কী কী উপাদান প্রকৃতিতে বাস করে!

ভাওয়াল বনের ভেতর দিয়ে প্রায়ই কিছু ছেলে মোটরসাইকেলে হর্ন চাপ দিয়ে ধরে বন অতিক্রম করে। বেশি শব্দে মোটরসাইকেল চালায়। বন্যপ্রাণীরা ভয়ে এখন আর রাস্তার পাশের কোনো গাছে থাকতে পারে না। বিদ্যুতের তার নেয়ার জন্য অনেক গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে বনের ভেতর বিভিন্ন জায়গায়! আমাদের বন সুরক্ষায় যারা দায়িত্বে আছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বিকার এবং অনেকটা অথর্ব ও দুর্নীতিবাজও! তাদের এগুলো দেখে না দেখার ভান অনেক সহজাত! তারা হয়তো প্রাণীর কোন কষ্ট ছোটবেলায় উপলব্ধি করে বনের অফিসার হয়ে উঠতে পারেননি !

যে মানুষগুলো বছরের প্রথমদিন বলে পটকা ফুটিয়ে পুরো দেশ জানান দিল তারা কোনোদিন কী একটা পাখি, একটা হাঁস, বা একটা প্রাণীর সংস্পর্শে আসেননি? যদি আসতেন তবে এমন কখনই করতে পারতেন না ! তারাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে নিজেদের আত্মাকে আবৃত করে বড় হয়েছে। কিছুদিন আগে একজন মেয়ের একটা সংবাদ টিভি চ্যানেলে দেখছিলাম। তিনি কুকুরকে আদর করেন, খাওয়ান, ভালোবাসেন। তাই কুকুরগুলো তার খুব কাছে আসে। আশ্চর্যজনক বিষয় সেই সংবাদের নিচে গিয়ে দেখলাম শত শত নেগেটিভ মন্তব্য। এমনও কেউ কেউ লিখেছেন যে কুকুরকে ভালোবেসে লাভ কী যে দেশে মানুষকে ভালোবেসে লাভ নেই। কেউ লিখেছেন মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না আসছে কুকুরকে খাওয়াতে। মন্তব্য ভালো কয়েকজনের মাত্র। যেন কুকুরকে ভালোবেসে তিনি অপরাধ করেছেন। এর চেয়ে মনে হয় ভালো ছিল কুকুরগুলোকে মেরে ফেলা। এসব দেখে লজ্জা পাই, নিজেকে পরাজিত মনে হয়। আমরা কবে সুশিক্ষিত হব এটা যেন আজন্মের প্রশ্ন আমাদের। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এখন আমরা কবে দয়াশীল হব।

যাই হোক সাফারি পার্কের কথায় ছিলাম। হাতিটি মারা গেল- সিংহীও। এর আগে জেব্রাসহ অনেক প্রাণী মারা গিয়েছে। আমাদের দেশে কারণ উদ্ঘাটনের চেয়েও কারণ ধামাচাপা দিতে একশ্রেণীর মানুষ সবচেয়ে বেশি লেগে থাকে। তাদের মধ্যে সবাই ভাবে কারণ উদ্ঘাটিত হলে আমরা যদি এখানে ফেঁসে যাই। দায়িত্বে অবহেলোর একটা ভয় থেকে কেউ আর কারণ বের করতে চান না। তারপরও জেব্রা নিয়ে তদন্ত হয়েছিল। এটা ভালো দিক হলেও প্রি-কশন বা আগে যে সাবধানতা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা আমরা কী নিতে পেরেছিলাম ?

হাতি, সিংহির বেলাও একই প্রশ্নের জন্ম দিল আবার। সাফারি পার্ক ঘুরে এসে একটা সারস পাখির কথা লিখেছিলাম। ওর কোনো সঙ্গী নেই। তাই ওর মন খারাপ থাকে। আসলে প্রাণীর ভাষা বুঝতে পারলে ওদের কাছে যারা যায়, ওদের স্পর্শ করা যায়। জীবনে চলার পথে আমাদের মায়ার অভাব হলে আমরা আর মানুষ থাকি না। এখন আমাদের মায়ার অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা নিয়ম-কানুন, পরিবেশের ওপর দায়িত্ব সব থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শিশুদের আমরা শুধু আর্টিফিশিয়াল পণ্যের সঙ্গে এত বেশি নিবীড় স¤পর্ক গড়ে দিচ্ছি যে এখন আর শিশুরা হাঁস, মুরগি, গরু দেখে আনন্দও পায় না। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসর যতটা চেনে বাচ্চারা ততটা গরু ঘোড়াও চেনে কিনা সন্দেহ।

মায়া আর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির মাধ্যমেই কেবল শিশুদের কোমল হৃদয়কে পৃথিবীর উপযোগী করে তোলা যেতে পারে। আসুন শিশুদের প্রাণীর সংস্পর্শে রাখি এবং প্রাণীর নিরাপত্তায় তাদেরও যে দায়িত্ব আছে তা শেখাই।

[লেখক: রসায়নবিদ]

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

পাট চাষের সংকট ও সম্ভাবনা

সামাজিক-প্রযুক্তিগত কল্পনা: বাংলাদেশের উন্নয়ন চিন্তার নতুন দিগন্ত

অগ্রক্রয় মোকদ্দমায় উভয় পক্ষের আইনি ডিফেন্স

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম

এক সাংবাদিকের খোলা চিঠি

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

ক্লাউডবার্স্ট: মৃত্যুর বার্তা নিয়ে, আকাশ যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে

রম্যগদ্য:“কবি এখন জেলে...”

কারা কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা ও ‘কারেকশন সার্ভিস’-এর বাস্তবতা

ছবি

বাংলাদেশের শহর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

tab

opinion » post-editorial

প্রাণীর জন্য ভালোবাসা

সাঈদ চৌধুরী

শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩

প্রাণীর জন্য মায়া হয়। খুব মায়া হয়। ওরা কথা বলতে পারে না কিন্তু ওদের অনভূতি আছে। আমরা অনেকেই স্পর্শ না করলেও ওদের সুখ-দুঃখ ইচ্ছে করলেই বোঝা যায়। সাফারি পার্কের হাতিটি মারা গেছে শুনলাম। সংবাদ মাধ্যম বলছে দুই হাতি মারামারি করে মারা গেছে। তারপর আবার একটি সিংহিও মারা গেছে।

প্রাণ থাকলে সে মারা যাবে একদিন এটাই সত্য। কিন্তু কেন যেন মন খারাপ হয়। খেয়াল করেছেন নিশ্চই কদিন আগে অনেক পাখি মারা গিয়েছে, আহত হয়েছে, রাস্তায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে থেকেছে। কেমন যেন অসহ্য লেগেছে! বাজি ফুটনো আর পটকার শব্দে কী এক ভীতি নিয়ে এরা দৌড়ে পালাতে গিয়ে মারা পড়েছে।

আমাদের আনন্দ করতে হয় আর সে আনন্দ সব অভিশাপ হয়ে পড়ে অসহায়ের ওপর। আমরা কোনো কিছু ভাবতে জানি না, আমরা বুঝি না আমাদের মানুষদের সঙ্গে আর কী কী উপাদান প্রকৃতিতে বাস করে!

ভাওয়াল বনের ভেতর দিয়ে প্রায়ই কিছু ছেলে মোটরসাইকেলে হর্ন চাপ দিয়ে ধরে বন অতিক্রম করে। বেশি শব্দে মোটরসাইকেল চালায়। বন্যপ্রাণীরা ভয়ে এখন আর রাস্তার পাশের কোনো গাছে থাকতে পারে না। বিদ্যুতের তার নেয়ার জন্য অনেক গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে বনের ভেতর বিভিন্ন জায়গায়! আমাদের বন সুরক্ষায় যারা দায়িত্বে আছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বিকার এবং অনেকটা অথর্ব ও দুর্নীতিবাজও! তাদের এগুলো দেখে না দেখার ভান অনেক সহজাত! তারা হয়তো প্রাণীর কোন কষ্ট ছোটবেলায় উপলব্ধি করে বনের অফিসার হয়ে উঠতে পারেননি !

যে মানুষগুলো বছরের প্রথমদিন বলে পটকা ফুটিয়ে পুরো দেশ জানান দিল তারা কোনোদিন কী একটা পাখি, একটা হাঁস, বা একটা প্রাণীর সংস্পর্শে আসেননি? যদি আসতেন তবে এমন কখনই করতে পারতেন না ! তারাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে নিজেদের আত্মাকে আবৃত করে বড় হয়েছে। কিছুদিন আগে একজন মেয়ের একটা সংবাদ টিভি চ্যানেলে দেখছিলাম। তিনি কুকুরকে আদর করেন, খাওয়ান, ভালোবাসেন। তাই কুকুরগুলো তার খুব কাছে আসে। আশ্চর্যজনক বিষয় সেই সংবাদের নিচে গিয়ে দেখলাম শত শত নেগেটিভ মন্তব্য। এমনও কেউ কেউ লিখেছেন যে কুকুরকে ভালোবেসে লাভ কী যে দেশে মানুষকে ভালোবেসে লাভ নেই। কেউ লিখেছেন মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না আসছে কুকুরকে খাওয়াতে। মন্তব্য ভালো কয়েকজনের মাত্র। যেন কুকুরকে ভালোবেসে তিনি অপরাধ করেছেন। এর চেয়ে মনে হয় ভালো ছিল কুকুরগুলোকে মেরে ফেলা। এসব দেখে লজ্জা পাই, নিজেকে পরাজিত মনে হয়। আমরা কবে সুশিক্ষিত হব এটা যেন আজন্মের প্রশ্ন আমাদের। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এখন আমরা কবে দয়াশীল হব।

যাই হোক সাফারি পার্কের কথায় ছিলাম। হাতিটি মারা গেল- সিংহীও। এর আগে জেব্রাসহ অনেক প্রাণী মারা গিয়েছে। আমাদের দেশে কারণ উদ্ঘাটনের চেয়েও কারণ ধামাচাপা দিতে একশ্রেণীর মানুষ সবচেয়ে বেশি লেগে থাকে। তাদের মধ্যে সবাই ভাবে কারণ উদ্ঘাটিত হলে আমরা যদি এখানে ফেঁসে যাই। দায়িত্বে অবহেলোর একটা ভয় থেকে কেউ আর কারণ বের করতে চান না। তারপরও জেব্রা নিয়ে তদন্ত হয়েছিল। এটা ভালো দিক হলেও প্রি-কশন বা আগে যে সাবধানতা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা আমরা কী নিতে পেরেছিলাম ?

হাতি, সিংহির বেলাও একই প্রশ্নের জন্ম দিল আবার। সাফারি পার্ক ঘুরে এসে একটা সারস পাখির কথা লিখেছিলাম। ওর কোনো সঙ্গী নেই। তাই ওর মন খারাপ থাকে। আসলে প্রাণীর ভাষা বুঝতে পারলে ওদের কাছে যারা যায়, ওদের স্পর্শ করা যায়। জীবনে চলার পথে আমাদের মায়ার অভাব হলে আমরা আর মানুষ থাকি না। এখন আমাদের মায়ার অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা নিয়ম-কানুন, পরিবেশের ওপর দায়িত্ব সব থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শিশুদের আমরা শুধু আর্টিফিশিয়াল পণ্যের সঙ্গে এত বেশি নিবীড় স¤পর্ক গড়ে দিচ্ছি যে এখন আর শিশুরা হাঁস, মুরগি, গরু দেখে আনন্দও পায় না। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসর যতটা চেনে বাচ্চারা ততটা গরু ঘোড়াও চেনে কিনা সন্দেহ।

মায়া আর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির মাধ্যমেই কেবল শিশুদের কোমল হৃদয়কে পৃথিবীর উপযোগী করে তোলা যেতে পারে। আসুন শিশুদের প্রাণীর সংস্পর্শে রাখি এবং প্রাণীর নিরাপত্তায় তাদেরও যে দায়িত্ব আছে তা শেখাই।

[লেখক: রসায়নবিদ]

back to top