কানন পুরকায়স্থ
প্রতি বছর পৃথিবীর নানাদেশে বিভিন্ন ভাষায় বই প্রকাশিত হয়। এই বই মেলার মাধ্যমে প্রদর্শনী, বিক্রয় এবং কপিরাইট হস্তান্তরেরও ব্যবস্থা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থা এ ধরনের কার্যক্রমের আয়োজন করেন। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশে একুশের বইমেলা বাংলা একাডেমি আয়োজন করে থাকে। জানা যায় এই বইমেলায় এ বছর বাংলা একাডেমির নীতিমালার পরিপন্থি বিধায় বেশ কয়েকটি বই প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিষিদ্ধ বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমার বিশদ ধারণা নেই। তবে বাংলা একাডেমির মেলায় বই প্রদর্শনী করতে দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত বাংলা একাডেমিই গ্রহণ করে থাকে।
ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল তার ‘On Liberty’ বইয়ে উল্লেখ করেন ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য মুক্তচিন্তা এবং বাকস্বাধীনতা প্রয়োজন। কিন্তু মিল উল্লেখ করেন, একজনের স্বাধীনতা যেন অন্যজনের স্বাধীনতাকে হরণ না করে। মিল আরো উল্লেখ করেন যে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে যদি তা অন্যকে আঘাত করা থেকে রক্ষা করে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য আইনের প্রয়োজন এবং সে আইনতো রাষ্ট্রই করবে।
সুতরাং মিলের দর্শনে আমরা ‘Harm principle’ এর গুরুত্ব লক্ষ্য করি। তাছাড়া মিলের দর্শন অভিজ্ঞতাবাদকে সমর্থন করে। মিল সম্পূর্ণরূপে যুক্তি পরম্পরায় বিন্যস্ত বিবৃতিতে বিশ্বাসী নন। তাই আমরা তাকে empiricist বা অভিজ্ঞতাবাদী বলি। মিল-এর ভাবনাজাত বোধ থেকে বলছি কোন বই যদি কোন ব্যক্তিকে কটাক্ষ করে লেখা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, মানে যাকে নিয়ে এই বই লেখা হলো, তিনি যদি ওই বই প্রচারে অনুমতি দেন তা হলে এই বই প্রদর্শিত হতে পারে। অপরদিকে মিল-এর পরীক্ষালদ্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে কোন নিষিদ্ধ বইয়ের বিকল্প বইও মেলায় প্রদর্শিত হতে পারে। তাছাড়া লেখককে পাঠকের মুখোমুখি দাঁড় করানো যেতে পারে।
উল্লেখ্য অনেকে মনে করেন মুক্তচিন্তার স্বাধীনতার সঙ্গে আরো দুটি বিষয় সম্পর্কযুক্ত। একটি হচ্ছে সমধিকার এবং অপরটি হচ্ছে দায়বদ্ধতা। সমধিকারের ক্ষেত্রে বলা হয় যে কোন বিষয়কে অনুমোদন দেয়া না যেতে পারে কিন্তু সে বিষয়কে উত্থাপন করার অধিকারকে সমর্থন ও রক্ষা করা যেতে পারে। অপরদিকে মুক্তচিন্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। নৈতিক মূল্যবোধের বিচারে একটি বই কতখানি ক্ষতিকারক তা প্রত্যক্ষ করার জন্য বইয়ের প্রদর্শন প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে স্থান ও কালের প্রভাবে কোন বইয়ের জন্ম, বসবাস এবং পাঠকের সঙ্গে এই বইয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ রকম সমস্যার অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
এই তো সেদিন সিঁমন দ্য বোভেয়ার-এর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম তার ‘The Second Sex’ গ্রন্থটির কথা। নারীবাদকে উৎসাহিত করার কারণে স্পেনে ১৯৪৯-৭৫ সাল পর্যন্ত বইটি নিষিদ্ধ ছিল। একই সময়ে ফ্রান্সে এই বই নিষিদ্ধ ছিল না। জার্মান লেখক য়োহান উলফগংগ গ্যেটের বই ‘The Sorrows of Young Werther’ আত্মহত্যাকে উসকে দেয়ার কারণ দেখিয়ে ১৭৭৫ সালে লিপজিগ শহরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। টমাস পেইনের বই ‘The Rights of Man’ জনগণকে সরকার অমান্য করতে প্ররোচিত করার কারণ দেখিয়ে ১৭৯৫-১৮২২ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই বই এখন আর নিষিদ্ধ নয়। টমাস পেইন আর্কিমিডিস এর যান্ত্রিক শক্তির ধারণাকে যুক্তি এবং স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন। পেইন লেখেন ‘A place to stand upon, we might raise the world’। অশ্লীলতার দোষে গুস্তাফ ফ্লুবার্ট এর ‘Madame Bovary’ ১৮৫৬-৫৭ সালে ফ্রান্সে, জেমস জয়েস এর ‘Ulysses’ ১৯২২-৩৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, ডি এইচ লরেন্স এর ‘Lady Chatterley’s Lover’ ১৯২৮-১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, অলডাস হাক্সলিস ‘Brave New World’ ১৯৩২-৬৭ সালে আয়ারল্যান্ডে, জেমস হেনলির ‘Boy’ ১৯৩৪-৯২ সালে যুক্তরাজ্যে এবং হেনরি মিলারের ‘Tropic of Cancer’ ১৯৩৪-৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সোভিয়েতবিরোধী কৌতুকের কারণ দেখিয়ে জর্জ ওরওয়েল এর ‘Animal Farm’ ১৯৪৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নিষিদ্ধ ছিল। অশোভনতার দোষে দুষ্টু হয়ে মেরী শেলীর ‘Frankenstein’ বইটি ১৯৫৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারেনি। একই কারণে জেমস বল্ডউইন এর ‘Another Country’ ১৯৬৩ -১৯৬৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। হাস্যকর হলেও সত্য যে সমাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে এইচ জি ওয়েলস এর ‘A short history of the world’ বইটি ১৯৪০-১৯৬৩ পর্যন্ত স্পেনে নিষিদ্ধ ছিল। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্যের কারণে সালমান রুশদির ‘The Satanic Verses’ ১৯৮৯ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এবং ডেন ব্রাউন এর ‘The Da Vinci Code’ ২০০৪ সাল থেকে লেবাননে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এভাবে বইয়ের তালিকায় আরো অনেক বই রয়েছে যা সময়ের ব্যপ্ত পরিসরে কখনো পাঠকের কাছে ফিরে এসেছে আবার কখনো নিষিদ্ধই রয়ে গেছে। তাই বিকল্পের সন্ধান প্রয়োজন।
আমার ভাবনায় তাই এ যাবত নিষিদ্ধ সব বইসমূহের একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ। এই স্মৃতিসৌধ হবে বাকস্বাধীনতার এক মূর্ত বিগ্রহ। যে বিগ্রহের পূজায় কোন ফুলের প্রয়োজন নেই। অক্ষর আর শব্দগুলোই আমাদের চেতনার মন্দিরে নৈবেদ্য হয়ে পূজিত হবে অথবা কখনও নিগৃহীত হবে স্থান ও কালভেদে।
উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনার ভাস্কর মার্তা মিনুগিন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সালে আর্জেন্টিনায় নিষিদ্ধ বইয়ের ৩০ হাজার কপি দিয়ে বুয়েনস আয়ারসে গ্রিসের টেমপল এর আদলে একটি আর্ট ইনস্টলেশন করেছিলেন। ২০১৭ সালে মিনুগিন ১৭০টি নিষিদ্ধ বইয়ের একলাখ কপি দিয়ে গ্রিক পার্থিনন এর আদলে জার্মানির ক্যাসেল শহরে একটি আর্ট ইনস্টলেশন করেন। তাই ভাবছি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এযাবতকালে নিষিদ্ধ বইসমূহ দিয়ে একটি সৌধ নির্মাণ করা যেতে পারে, যে সৌধের নির্মাণ ও সৃষ্টির বাঙ্গময়তায় আমাদের চেতনা শাণিত হবে।
[লেখক: যুক্তরাজ্যে কর্মরত বিজ্ঞান ও পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা ও খন্ডকালীন অধ্যাপক]
কানন পুরকায়স্থ
শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রতি বছর পৃথিবীর নানাদেশে বিভিন্ন ভাষায় বই প্রকাশিত হয়। এই বই মেলার মাধ্যমে প্রদর্শনী, বিক্রয় এবং কপিরাইট হস্তান্তরেরও ব্যবস্থা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থা এ ধরনের কার্যক্রমের আয়োজন করেন। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশে একুশের বইমেলা বাংলা একাডেমি আয়োজন করে থাকে। জানা যায় এই বইমেলায় এ বছর বাংলা একাডেমির নীতিমালার পরিপন্থি বিধায় বেশ কয়েকটি বই প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিষিদ্ধ বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমার বিশদ ধারণা নেই। তবে বাংলা একাডেমির মেলায় বই প্রদর্শনী করতে দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত বাংলা একাডেমিই গ্রহণ করে থাকে।
ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল তার ‘On Liberty’ বইয়ে উল্লেখ করেন ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য মুক্তচিন্তা এবং বাকস্বাধীনতা প্রয়োজন। কিন্তু মিল উল্লেখ করেন, একজনের স্বাধীনতা যেন অন্যজনের স্বাধীনতাকে হরণ না করে। মিল আরো উল্লেখ করেন যে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে যদি তা অন্যকে আঘাত করা থেকে রক্ষা করে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য আইনের প্রয়োজন এবং সে আইনতো রাষ্ট্রই করবে।
সুতরাং মিলের দর্শনে আমরা ‘Harm principle’ এর গুরুত্ব লক্ষ্য করি। তাছাড়া মিলের দর্শন অভিজ্ঞতাবাদকে সমর্থন করে। মিল সম্পূর্ণরূপে যুক্তি পরম্পরায় বিন্যস্ত বিবৃতিতে বিশ্বাসী নন। তাই আমরা তাকে empiricist বা অভিজ্ঞতাবাদী বলি। মিল-এর ভাবনাজাত বোধ থেকে বলছি কোন বই যদি কোন ব্যক্তিকে কটাক্ষ করে লেখা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, মানে যাকে নিয়ে এই বই লেখা হলো, তিনি যদি ওই বই প্রচারে অনুমতি দেন তা হলে এই বই প্রদর্শিত হতে পারে। অপরদিকে মিল-এর পরীক্ষালদ্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে কোন নিষিদ্ধ বইয়ের বিকল্প বইও মেলায় প্রদর্শিত হতে পারে। তাছাড়া লেখককে পাঠকের মুখোমুখি দাঁড় করানো যেতে পারে।
উল্লেখ্য অনেকে মনে করেন মুক্তচিন্তার স্বাধীনতার সঙ্গে আরো দুটি বিষয় সম্পর্কযুক্ত। একটি হচ্ছে সমধিকার এবং অপরটি হচ্ছে দায়বদ্ধতা। সমধিকারের ক্ষেত্রে বলা হয় যে কোন বিষয়কে অনুমোদন দেয়া না যেতে পারে কিন্তু সে বিষয়কে উত্থাপন করার অধিকারকে সমর্থন ও রক্ষা করা যেতে পারে। অপরদিকে মুক্তচিন্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। নৈতিক মূল্যবোধের বিচারে একটি বই কতখানি ক্ষতিকারক তা প্রত্যক্ষ করার জন্য বইয়ের প্রদর্শন প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে স্থান ও কালের প্রভাবে কোন বইয়ের জন্ম, বসবাস এবং পাঠকের সঙ্গে এই বইয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ রকম সমস্যার অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
এই তো সেদিন সিঁমন দ্য বোভেয়ার-এর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম তার ‘The Second Sex’ গ্রন্থটির কথা। নারীবাদকে উৎসাহিত করার কারণে স্পেনে ১৯৪৯-৭৫ সাল পর্যন্ত বইটি নিষিদ্ধ ছিল। একই সময়ে ফ্রান্সে এই বই নিষিদ্ধ ছিল না। জার্মান লেখক য়োহান উলফগংগ গ্যেটের বই ‘The Sorrows of Young Werther’ আত্মহত্যাকে উসকে দেয়ার কারণ দেখিয়ে ১৭৭৫ সালে লিপজিগ শহরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। টমাস পেইনের বই ‘The Rights of Man’ জনগণকে সরকার অমান্য করতে প্ররোচিত করার কারণ দেখিয়ে ১৭৯৫-১৮২২ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই বই এখন আর নিষিদ্ধ নয়। টমাস পেইন আর্কিমিডিস এর যান্ত্রিক শক্তির ধারণাকে যুক্তি এবং স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন। পেইন লেখেন ‘A place to stand upon, we might raise the world’। অশ্লীলতার দোষে গুস্তাফ ফ্লুবার্ট এর ‘Madame Bovary’ ১৮৫৬-৫৭ সালে ফ্রান্সে, জেমস জয়েস এর ‘Ulysses’ ১৯২২-৩৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, ডি এইচ লরেন্স এর ‘Lady Chatterley’s Lover’ ১৯২৮-১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, অলডাস হাক্সলিস ‘Brave New World’ ১৯৩২-৬৭ সালে আয়ারল্যান্ডে, জেমস হেনলির ‘Boy’ ১৯৩৪-৯২ সালে যুক্তরাজ্যে এবং হেনরি মিলারের ‘Tropic of Cancer’ ১৯৩৪-৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সোভিয়েতবিরোধী কৌতুকের কারণ দেখিয়ে জর্জ ওরওয়েল এর ‘Animal Farm’ ১৯৪৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নিষিদ্ধ ছিল। অশোভনতার দোষে দুষ্টু হয়ে মেরী শেলীর ‘Frankenstein’ বইটি ১৯৫৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারেনি। একই কারণে জেমস বল্ডউইন এর ‘Another Country’ ১৯৬৩ -১৯৬৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। হাস্যকর হলেও সত্য যে সমাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে এইচ জি ওয়েলস এর ‘A short history of the world’ বইটি ১৯৪০-১৯৬৩ পর্যন্ত স্পেনে নিষিদ্ধ ছিল। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্যের কারণে সালমান রুশদির ‘The Satanic Verses’ ১৯৮৯ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এবং ডেন ব্রাউন এর ‘The Da Vinci Code’ ২০০৪ সাল থেকে লেবাননে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এভাবে বইয়ের তালিকায় আরো অনেক বই রয়েছে যা সময়ের ব্যপ্ত পরিসরে কখনো পাঠকের কাছে ফিরে এসেছে আবার কখনো নিষিদ্ধই রয়ে গেছে। তাই বিকল্পের সন্ধান প্রয়োজন।
আমার ভাবনায় তাই এ যাবত নিষিদ্ধ সব বইসমূহের একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ। এই স্মৃতিসৌধ হবে বাকস্বাধীনতার এক মূর্ত বিগ্রহ। যে বিগ্রহের পূজায় কোন ফুলের প্রয়োজন নেই। অক্ষর আর শব্দগুলোই আমাদের চেতনার মন্দিরে নৈবেদ্য হয়ে পূজিত হবে অথবা কখনও নিগৃহীত হবে স্থান ও কালভেদে।
উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনার ভাস্কর মার্তা মিনুগিন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সালে আর্জেন্টিনায় নিষিদ্ধ বইয়ের ৩০ হাজার কপি দিয়ে বুয়েনস আয়ারসে গ্রিসের টেমপল এর আদলে একটি আর্ট ইনস্টলেশন করেছিলেন। ২০১৭ সালে মিনুগিন ১৭০টি নিষিদ্ধ বইয়ের একলাখ কপি দিয়ে গ্রিক পার্থিনন এর আদলে জার্মানির ক্যাসেল শহরে একটি আর্ট ইনস্টলেশন করেন। তাই ভাবছি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এযাবতকালে নিষিদ্ধ বইসমূহ দিয়ে একটি সৌধ নির্মাণ করা যেতে পারে, যে সৌধের নির্মাণ ও সৃষ্টির বাঙ্গময়তায় আমাদের চেতনা শাণিত হবে।
[লেখক: যুক্তরাজ্যে কর্মরত বিজ্ঞান ও পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা ও খন্ডকালীন অধ্যাপক]