alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ফরমে আইনগত অভিভাবকের নাম

মো. শাহিনুজ্জামান

: শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী নিগ্রহের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এসব ঘটনায় শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেইসব ঘটনার বেশির ভাগই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। কিছু ঘটনা আমরা পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। তেমনি একটি খবর প্রকাশিত হয় ২৮ মার্চ ২০০৭ সালে দৈনিক প্রথম আলোতে। শিরোনাম হয় ‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালের ২ আগস্ট যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। ৩ আগস্ট ২০০৯ প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বিচারপতি মো. মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মানবাধিকার পরিপন্থি, শিক্ষার অধিকার প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান এ বিধানকে কেন বেআইনি এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না মর্মে বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেন।

একই সাথে বর্তমানে সব শিক্ষা বোর্ডে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলক উল্লেখ করতে হয় তার একটি তালিকা, যে সকল যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ, তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখপূর্বক একটি প্রতিবেদন তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হয়।

এ মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপিত হয়। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এস.এস.সি) পর্যায়ে বাবার নাম না দিয়ে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সুযোগ দিয়ে প্রায় ১৪ বছর আগে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের দ্বৈত বেঞ্চ ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ এ যুগান্তকারী রায় দেন।

রায়ে বলা হয়েছে-শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীদের তথ্যসংক্রান্ত ফরম (Students Information Form- S. I. F) সংশোধনের মাধ্যমে বাবা অথবা মা আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে হবে। এর ফলে শুধু বাবা নয়, অভিভাবকের কলামে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক যে কোনো একটি বিকল্প উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবে।

রাজশাহী বোর্ডের অধীনে ঠাকুরগাঁও জেলার এক শিক্ষার্থীকে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণে বাবার নাম দিতে না পারায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় স্কুল কতর্ৃৃপক্ষ ও রাজশাহী বোর্ড। তখন শিক্ষার্থীর জন্য অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। এখন থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের ফরমে শুধু বাবার নাম অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করা অসংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষামন্ত্রণালয় সহ সব শিক্ষাবোর্ডের প্রতি এই নির্দেশনা দিয়েছেন। উল্লেখ্য বিদ্যমান ফরমে বাবা অথবা মায়ের নাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। উন্নত জাতি বিনির্মাণে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের ভিন্নতার জন্য কাউকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই যৌনকর্মীর সন্তান, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির ঔরসজাত সন্তান, বাবা কর্তৃক পরিত্যক্ত সন্তানরা বাবার পরিচয় দিতে না পারার কারণে অনেক সেক্টরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু এদের অধিকারগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(৪), ৩১, ৩২ ও ৪০ অনুচ্ছেদ দ্বারা স্বীকৃত।

সুনির্দিষ্ট আইনগত কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাক্ষেত্রে ফরম বা অন্যান্য সব নথিতে পিতার নাম পূরণে বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করা হতো। এখনো আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে মা শুধু সন্তানের জিম্মাদার,অভিভাবক নন। এখনো অনেক মাকেই সন্তানের হেফাজতের জন্য আইন আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। বাংলাদেশে নাবালক শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব মুসলিম শরিয়া আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এবং অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব আইনে মাকে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়নি। নাবালক সন্তানের জিম্মাদার হিসেবে মাকে এবং বাবাকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে।

বর্তমান আধুনিক যুগে নারীরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘরে বাইরে সকল পর্যায়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে জাতীয় জীবনে অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাই বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে নতুন দিক উন্মোচনের সুযোগ রয়েছে। শিশু বিকাশের স্বার্থে হেফাজত ও অভিভাবকত্ব বিষয়টি সমান দৃষ্টিতে দেখলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। মহামান্য আদালতের এই যুগান্তকারী রায়ের সঠিক বাস্তবায়ন হলে সব শিশুর সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত হবে।

এ ধরনের পরিস্থিতি নারীর জন্য ছিল অসম্মানকর আর নারীর সন্তানদের প্রতি ছিল বড় ধরনের নিপীড়ন। যুগের পর যুগ এ ধরনের ব্যবস্থা বলবৎ থাকায় ধারণা করা যায়, ইতোমধ্যে নিগৃহীত হয়েছে অনেকে। মহামান্য উচ্চ আদালতের সময়োপযোগী রায় একটি রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ^াস।

সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

[লেখক: আইনজীবী]

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ফরমে আইনগত অভিভাবকের নাম

মো. শাহিনুজ্জামান

শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী নিগ্রহের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এসব ঘটনায় শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেইসব ঘটনার বেশির ভাগই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। কিছু ঘটনা আমরা পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। তেমনি একটি খবর প্রকাশিত হয় ২৮ মার্চ ২০০৭ সালে দৈনিক প্রথম আলোতে। শিরোনাম হয় ‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ ২০০৯ সালের ২ আগস্ট যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করে। ৩ আগস্ট ২০০৯ প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বিচারপতি মো. মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মানবাধিকার পরিপন্থি, শিক্ষার অধিকার প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান এ বিধানকে কেন বেআইনি এবং অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না মর্মে বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেন।

একই সাথে বর্তমানে সব শিক্ষা বোর্ডে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলক উল্লেখ করতে হয় তার একটি তালিকা, যে সকল যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ, তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সে সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখপূর্বক একটি প্রতিবেদন তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হয়।

এ মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপিত হয়। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এস.এস.সি) পর্যায়ে বাবার নাম না দিয়ে মায়ের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সুযোগ দিয়ে প্রায় ১৪ বছর আগে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের দ্বৈত বেঞ্চ ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ এ যুগান্তকারী রায় দেন।

রায়ে বলা হয়েছে-শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীদের তথ্যসংক্রান্ত ফরম (Students Information Form- S. I. F) সংশোধনের মাধ্যমে বাবা অথবা মা আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে হবে। এর ফলে শুধু বাবা নয়, অভিভাবকের কলামে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক যে কোনো একটি বিকল্প উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবে।

রাজশাহী বোর্ডের অধীনে ঠাকুরগাঁও জেলার এক শিক্ষার্থীকে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণে বাবার নাম দিতে না পারায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় স্কুল কতর্ৃৃপক্ষ ও রাজশাহী বোর্ড। তখন শিক্ষার্থীর জন্য অভিভাবকের ঘরে তথ্য হিসেবে বাবার নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল। এরপর মায়ের নাম উল্লেখ করতে হতো। এখন থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের ফরমে শুধু বাবার নাম অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করা অসংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব ফরম পূরণে অভিভাবকের ঘরে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবক শব্দ বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষামন্ত্রণালয় সহ সব শিক্ষাবোর্ডের প্রতি এই নির্দেশনা দিয়েছেন। উল্লেখ্য বিদ্যমান ফরমে বাবা অথবা মায়ের নাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। উন্নত জাতি বিনির্মাণে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের ভিন্নতার জন্য কাউকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই যৌনকর্মীর সন্তান, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির ঔরসজাত সন্তান, বাবা কর্তৃক পরিত্যক্ত সন্তানরা বাবার পরিচয় দিতে না পারার কারণে অনেক সেক্টরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্তু এদের অধিকারগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(৪), ৩১, ৩২ ও ৪০ অনুচ্ছেদ দ্বারা স্বীকৃত।

সুনির্দিষ্ট আইনগত কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাক্ষেত্রে ফরম বা অন্যান্য সব নথিতে পিতার নাম পূরণে বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করা হতো। এখনো আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে মা শুধু সন্তানের জিম্মাদার,অভিভাবক নন। এখনো অনেক মাকেই সন্তানের হেফাজতের জন্য আইন আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। বাংলাদেশে নাবালক শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব মুসলিম শরিয়া আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এবং অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব আইনে মাকে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়নি। নাবালক সন্তানের জিম্মাদার হিসেবে মাকে এবং বাবাকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে।

বর্তমান আধুনিক যুগে নারীরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ঘরে বাইরে সকল পর্যায়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে জাতীয় জীবনে অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাই বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে নতুন দিক উন্মোচনের সুযোগ রয়েছে। শিশু বিকাশের স্বার্থে হেফাজত ও অভিভাবকত্ব বিষয়টি সমান দৃষ্টিতে দেখলে সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। মহামান্য আদালতের এই যুগান্তকারী রায়ের সঠিক বাস্তবায়ন হলে সব শিশুর সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত হবে।

এ ধরনের পরিস্থিতি নারীর জন্য ছিল অসম্মানকর আর নারীর সন্তানদের প্রতি ছিল বড় ধরনের নিপীড়ন। যুগের পর যুগ এ ধরনের ব্যবস্থা বলবৎ থাকায় ধারণা করা যায়, ইতোমধ্যে নিগৃহীত হয়েছে অনেকে। মহামান্য উচ্চ আদালতের সময়োপযোগী রায় একটি রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দিতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ^াস।

সৌজন্যে: আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)

[লেখক: আইনজীবী]

back to top