alt

উপ-সম্পাদকীয়

হজ বাণিজ্যিক পণ্য নয়

মিকাইল হোসেন

: সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

বর্তমানে আমরা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করছি। আর এই সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবকিছুকে পণ্যে পরিণত করা এবং যে কোন মূল্যে যে কোন জায়গা থেকে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। মুক্তবাজার অর্থনীতির অবাধ প্রতিযোগিতার এ যুগে ব্যবসায়ীরা মানুষ, শিক্ষা এবং ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবকে সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করতে চায়। বাজার অর্থনীতির নীতি অনুযায়ী মুনাফাই মুখ্য এবং নীতি-নৈতিকতা গৌণ। বিশেষ করে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের শোষণের নীতিতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে। ধর্মীয় বিষয়গুলোও শোষণমুক্ত নয়।

মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক ভয়ংকর সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কাছে লাখ লাখ হজযাত্রী নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত; কিন্তু তাদের প্রতিকার পাওয়ার পথ নেই। সবাই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। অধিকাংশ সময় তারা হজযাত্রীদের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে দাপটের সাথে এ ব্যবসা করে যাচ্ছে। অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যের মতো বাজারজাতকরণের জন্য রয়েছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট, হজযাত্রী পরিবহন সিন্ডিকেট এবং সৌদি আরবে বাসাভাড়াকেন্দ্রিক প্রতারণা ক্ষেত্রবিশেষ হজযাত্রীদের জমা দেয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের হজযাত্রীদের নিয়ে চলছে তুঘলকি কা-।

আকাশচুম্বী বিলাসী হজ প্যাকেজের কারণে সাধারণ হজযাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও হজযাত্রীদের কোটা পূরণ হয়নি। মানববন্ধন থেকে শুরু করে হাইকোর্টে রিট ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ পর্যন্ত করতে হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছে সবাই অসহায়। হাইকোর্টও এবছরের হজ প্যাকেজ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছে।

হাইকোর্ট বলেছেন- ‘এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কিভাবে হজে যাবেন?’ এছাড়া হজের এ প্যাকেজকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এমনকি বিচারপতি এ কথাও বলেছেন যে, হজের প্যাকেজ মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় আমরা হজে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর গরিব মানুষরা কিভাবে যাবে। হাইকোর্ট বলেছেন, হজযাত্রীদের জন্য সরকারিভাবে যে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে তা অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। কোটি কোটি টাকা লোকসানের দায় হজযাত্রীদের ওপর চাপাতে পারে না বিমান। এই প্যাকেজের সাথে যারা জড়িত তারা গুনাহর ভাগিদার হবেন বলেও আদালত মন্তব্য করেছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করেছে। হজযাত্রীরাও খরচ কমানোর জন্য মানববন্ধন করেন। সৌদি আরব সরকার ও নানান অজুহাতে বিভিন্ন খাতে হজের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি আরব সরকার চাইলে হজের খরচ আরেকটু কমাতে পারতো। তারাও হজকে বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের খরচ সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। যদিও হজের খরচ কমাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সরকারের সাথে আলোচনা করে উদ্যোগ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে হজের জন্য সরকারিভাবে হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরেও সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। গত বছরের চেয়ে এই বছরে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে হজযাত্রীদের বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি বিমানে অবশ্যই যেতে হবে। ফলে সেখানে মনোপলি বাণিজ্যের একটি সুযোগ রয়েছে।

আকাশচুম্বী বিলাসী হজ প্যাকেজের কারণে সাধারণ হজযাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও হজযাত্রীদের কোটা পূরণ হয়নি

ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের হজের খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছেÑ বিমান ভাড়া ১৯৭৭৯৭ টাকা; যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে অযোক্তিক বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে বিমানের লোকসান কাটিয়ে ওঠার একটি সুযোগ হিসেবে এটিকে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন। মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া ২০৪৪৪৪ টাকা; যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক, যার পরিমাণ ১৬০৬৩০ টাকা। ফলে হজযাত্রীদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

বিমান ভাড়া বাদে অন্য বেশিরভাগ খরচই কিন্তু সৌদি আরবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম এ বিষয়ে বলেছেন, ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়া আর সৌদি আরবে মোয়াল্লেমসহ নানা খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সরকারকেও বাধ্য হয়ে হজের খরচ বাড়াতে হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে- খরচ তো সব দেশের জন্য বেড়েছে। তাহলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য খরচ এত বেশি কেন? কেননা ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। পাকিস্তানি হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের হজযাত্রীদের খরচ হবে ৪ লাখ টাকার কম। মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ খরচ করতে হবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। তাহলে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের হজযাত্রীদের জন্য টাকা এত বেশি কেন? কারণ হজকেন্দ্রিক নানান সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যারা হজকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করতে চায়। তাই হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সবাই সিন্ডিকেট গুঁড়িয়ে দিয়ে জনস্বার্থে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সরকারকে অবশ্যই হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

[লেখক : উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার, ঢাকা]

দুর্নীতির দৌলতে বিভাজনের রাজনীতি সহজ হয়েছে

ছবি

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব

ছবি

হাতি ও মানুষের সংঘাত বাড়ল কেন?

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন : সাদামাটা কিছু কথা

ছবি

পানি সংকট মোকাবিলায় করণীয়

বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো কী

রসনাবাদ : উপকূলের একটি গ্রামের আত্মকথা

মার্কিন ভিসানীতি : লক্ষ্য কি শুধুই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন?

বাজেটে শিক্ষার প্রাপ্তি কী?

প্লাস্টিক ও পরিবেশ

ছবি

ছয় দফা : স্বাধীনতা অভিমুখে চলার মহাসড়ক

মিথ্যা মামলায় জড়ালে কী করবেন?

প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে চাই সামাজিক সচেতনতা

স্বাধীনতার প্রথম গণনাট্য ‘এক নদী রক্ত’ ও শেখ কামাল

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

ছবি

স্মরণ : বৃক্ষের মতো সবুজ এক মানুষ

ভিসানীতি, রাজনীতি

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

ভারতের নতুন সংসদ ভবন এবং হিন্দু আধিপত্যবাদ

প্রত্যাশা পূরণে চাই গতিময় প্রশাসন

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও আমি

পংকজ ভট্টাচার্যের ‘আদিবাসী জিজ্ঞাসা’

চিঠি : একটি ব্রিজ চাই

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

মার্কিন ভিসানীতি ও কিছু প্রশ্ন

ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসবে কিভাবে

জ্বালানি সংকটে আশার আলো ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র

তামাক নয়, খাদ্য ফলান

খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তি

আপনি তো আছেন নিজের সঙ্গে

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কি প্রাথমিক থাকা যৌক্তিক?

কর্নাটকের ভোট বনাম ভারতের আসন্ন লোকসভার ভোট

স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে প্রয়োজন স্মার্ট কৃষক

দূতাবাসের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার ও অবরোধের আশঙ্কা

দাদা ও নানার বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

হজ বাণিজ্যিক পণ্য নয়

মিকাইল হোসেন

সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

বর্তমানে আমরা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করছি। আর এই সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবকিছুকে পণ্যে পরিণত করা এবং যে কোন মূল্যে যে কোন জায়গা থেকে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। মুক্তবাজার অর্থনীতির অবাধ প্রতিযোগিতার এ যুগে ব্যবসায়ীরা মানুষ, শিক্ষা এবং ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবকে সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করতে চায়। বাজার অর্থনীতির নীতি অনুযায়ী মুনাফাই মুখ্য এবং নীতি-নৈতিকতা গৌণ। বিশেষ করে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের শোষণের নীতিতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে। ধর্মীয় বিষয়গুলোও শোষণমুক্ত নয়।

মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক ভয়ংকর সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কাছে লাখ লাখ হজযাত্রী নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত; কিন্তু তাদের প্রতিকার পাওয়ার পথ নেই। সবাই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। অধিকাংশ সময় তারা হজযাত্রীদের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে দাপটের সাথে এ ব্যবসা করে যাচ্ছে। অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যের মতো বাজারজাতকরণের জন্য রয়েছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট, হজযাত্রী পরিবহন সিন্ডিকেট এবং সৌদি আরবে বাসাভাড়াকেন্দ্রিক প্রতারণা ক্ষেত্রবিশেষ হজযাত্রীদের জমা দেয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের হজযাত্রীদের নিয়ে চলছে তুঘলকি কা-।

আকাশচুম্বী বিলাসী হজ প্যাকেজের কারণে সাধারণ হজযাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও হজযাত্রীদের কোটা পূরণ হয়নি। মানববন্ধন থেকে শুরু করে হাইকোর্টে রিট ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ পর্যন্ত করতে হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছে সবাই অসহায়। হাইকোর্টও এবছরের হজ প্যাকেজ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছে।

হাইকোর্ট বলেছেন- ‘এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কিভাবে হজে যাবেন?’ এছাড়া হজের এ প্যাকেজকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এমনকি বিচারপতি এ কথাও বলেছেন যে, হজের প্যাকেজ মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় আমরা হজে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর গরিব মানুষরা কিভাবে যাবে। হাইকোর্ট বলেছেন, হজযাত্রীদের জন্য সরকারিভাবে যে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে তা অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। কোটি কোটি টাকা লোকসানের দায় হজযাত্রীদের ওপর চাপাতে পারে না বিমান। এই প্যাকেজের সাথে যারা জড়িত তারা গুনাহর ভাগিদার হবেন বলেও আদালত মন্তব্য করেছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করেছে। হজযাত্রীরাও খরচ কমানোর জন্য মানববন্ধন করেন। সৌদি আরব সরকার ও নানান অজুহাতে বিভিন্ন খাতে হজের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি আরব সরকার চাইলে হজের খরচ আরেকটু কমাতে পারতো। তারাও হজকে বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের খরচ সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। যদিও হজের খরচ কমাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সরকারের সাথে আলোচনা করে উদ্যোগ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে হজের জন্য সরকারিভাবে হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরেও সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। গত বছরের চেয়ে এই বছরে হজের খরচ দেড় লাখ থেকে প্রায় ২ লাখ ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে হজযাত্রীদের বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি বিমানে অবশ্যই যেতে হবে। ফলে সেখানে মনোপলি বাণিজ্যের একটি সুযোগ রয়েছে।

আকাশচুম্বী বিলাসী হজ প্যাকেজের কারণে সাধারণ হজযাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও হজযাত্রীদের কোটা পূরণ হয়নি

ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের হজের খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছেÑ বিমান ভাড়া ১৯৭৭৯৭ টাকা; যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে অযোক্তিক বলে অভিহিত করেছেন। অনেকে বিমানের লোকসান কাটিয়ে ওঠার একটি সুযোগ হিসেবে এটিকে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন। মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া ২০৪৪৪৪ টাকা; যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক, যার পরিমাণ ১৬০৬৩০ টাকা। ফলে হজযাত্রীদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

বিমান ভাড়া বাদে অন্য বেশিরভাগ খরচই কিন্তু সৌদি আরবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম এ বিষয়ে বলেছেন, ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়া আর সৌদি আরবে মোয়াল্লেমসহ নানা খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সরকারকেও বাধ্য হয়ে হজের খরচ বাড়াতে হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে- খরচ তো সব দেশের জন্য বেড়েছে। তাহলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য খরচ এত বেশি কেন? কেননা ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। পাকিস্তানি হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের হজযাত্রীদের খরচ হবে ৪ লাখ টাকার কম। মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ খরচ করতে হবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। তাহলে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের হজযাত্রীদের জন্য টাকা এত বেশি কেন? কারণ হজকেন্দ্রিক নানান সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যারা হজকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করতে চায়। তাই হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সবাই সিন্ডিকেট গুঁড়িয়ে দিয়ে জনস্বার্থে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সরকারকে অবশ্যই হজের খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

[লেখক : উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার, ঢাকা]

back to top