alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : মাস্টার’দা সূর্যসেন

শঙ্কর প্রসাদ দে

: বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
image

২২ মার্চ ১৮৯৪ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন সূর্যকুমার সেন প্রকাশ কালু। কালক্রমে তিনি হয়ে উঠলেন মাস্টার’দা। সভ্যতার ইতিহাসে যেসব মানুষ অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী হন, তারা বংশ পরিক্রমার পরিচয়কে অতিক্রম করে নিজের নতুন এক অভিধা অর্জন করেন। কোটি কোটি মানুষ আসছে আর যাচ্ছে। এরা নিতান্তই ব্যতিক্রম। মহামতি লেনিন, কমরেড মাও, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সীমান্ত গান্ধী, পন্ডিত নেহেরু, নেতাজী সুভাষ, আলেকজান্ডার দি গ্রেট এ জাতীয় হাতে গোনা লোকদের মাত্র কয়েকজন।

পৃথিবীর দেশে দেশে কত রাজা মন্ত্রীর আসা আর যাওয়া। দু’এক প্রজন্ম পর এসব রাজ রাজারা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে থাকে। শতাব্দীর পর শতাব্দী। সহস্র সহস্র বছর পর আলেকজান্ডার যেমন আজও বেঁচে আছেন তেমনি বেঁচে থাকবেন মহাত্মা গান্ধী, মহামতি লেনিন, মাস্টার’দা সূর্যসেন। কমরেড স্ট্যালিন, বিশ্ববিপ্লবী চে-গুয়েভারা বেঁচে থাকবেন শত সহস্র বৎসর।

বিংশ শতকের ত্রিশের দশক। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে সমাজতান্ত্রিক সশস্ত্র বিপ্লবের উত্তাল ঢেউ। ততদিনে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে এম এন রায়, এস.এ ডাংগে, মুজফ্ফর আহমেদ ও পি সি যোশীদের (কল্পনা দত্তের স্বামী) হাতে।

১২ জানুয়ারি ১৯৩৪। মাস্টার’দা ও তারেকশ্বর দস্তিদারকে একসঙ্গে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ফাঁসির ওই মঞ্চটি এখন আর ব্যবহৃত হয় না। বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা মঞ্চটি দেখার আবেদন পেশ করি। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। জেল প্রশাসনিক ভবনের ঠিক পেছনে চমৎকার একটি ফুল বাগান আছে। কারা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বড় জোর ৩০০ গজ যাওয়ার পর মঞ্চের সামনে হাজির হলাম। আলাপে কর্তৃপক্ষ জানালেন, স্বাধীনতার পর ছোট এই ফাঁসির মঞ্চটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং লাগোয়া বড়সড় আকারের নতুন মঞ্চটি স্থাপিত হয়েছে। নতুন ফাঁসির মঞ্চটি দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতায় বেশ মজবুত স্থাপনা। প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যামামলার কয়েকজনের মৃত্যুদন্ড এই মঞ্চেই কার্যকর হয়েছে।

পরিত্যক্ত মঞ্চটির পেছনের দেয়ালে মাস্টারদা’র গ্রানাইট পাথরের একটি ওয়াল ম্যুরাল অঙ্কিত আছে। তারেকশ্বর দস্তিদারকে একসঙ্গে ফাঁসিতে ঝোলানোর বিষয়টি জেলার সাহেব জানেন না। মাস্টারদা’র ওয়াল ম্যুরালের পাশে তারেকশ্বরের একটি ম্যুরাল স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জেলার সাহেব বলেছেন, সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে জেলা প্রশাসন এরূপ ম্যুরাল স্থাপনের যথাযথ কর্তৃপক্ষ। দুটো মঞ্চই স্পর্শ করে অনুভব করতে চেয়েছি ইতিহাসের সেই মুহূর্তগুলো। মাত্র চল্লিশ বছরের ক্ষুদ্র জীবন পরিক্রমায় একজন স্কুল শিক্ষক এখন পূজিত হচ্ছেন ভারতবর্ষের অন্যতম জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী হিসেবে।

মাস্টার’দা কমিউনিস্ট ছিলেন এমন কোন দাবি কোন পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়নি। ভাবতে অবাক লাগে অনূর্ধ্ব শ-খানেক সশস্ত্র যুবক নিয়ে মাস্টার’দা চার দিনের জন্য স্বাধীন ভারত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লোকনাথ বলকে প্রধান সেনাপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এতদিন পর আমরা কল্পনা করতে পারি, এই স্বাধীনতা যে ক্ষণস্থায়ী হবে তা তিনি জানতেন। আসলে স্বল্পস্থায়ী ওই স্বাধীনতার স্পর্ধা দেখিয়ে ভারতবাসীর মনোজগতে স্থায়ী স্বাধীনতার বীজ বপন করতে চেয়েছিলেন। সে অর্থে মাস্টারদা’র সশস্ত্র বিপ্লব সফল হয়েছে মাত্র ১৭ বছরের ব্যবধানে।

মাস্টারদা’র রাজনৈতিক চরিত্রে দ্বিমুখী আদর্শের সম্মিলন ঘটেছিল। তিনি ছিলেন কংগ্রেসের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সম্পাদক। কংগ্রেস তখন গান্ধীপন্থী ও সুভাষপন্থী গ্রুপে আদর্শিক বিভক্ত। মাস্টার’দা সুভাষপন্থী ছিলেন। সুভাষ বসু তখন ভারতবর্ষের জাতীয় নেতা। কলকাতা থেকে ১৯১৮ সালে সূর্যসেন চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। ন্যাশনাল (বর্তমানে মিউনিসিপ্যাল) হাইস্কুলে শিক্ষকতা নিয়ে গড়ে তোলেন অনুশীলন সমিতি। অম্বিকা চক্রবর্ত্তী, চারুবিকাশ দত্ত, কল্পনা দত্ত যোশী) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন অগ্রণীদের মাত্র কয়েকজন। মাস্টারদা’র নেতৃত্বগুণ অভিভূত হওয়ার মতো। মাত্র অনূর্ধ্ব শ-খানেক যুবককে তিনি জীবন উৎসর্গে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রতিভাধর এসব যুবকও মৃত্যুকে উপক্ষো করে ১৮ এপ্রিল ১৯৩০ অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও টি এন্ড টি অফিস পুড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রামকে স্বাধীন ভারতবর্ষের রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন।

মাত্র ৪ দিন পর ব্রিটিশ সৈন্যরা বাড়তি সৈন্যসামন্ত নিয়ে চট্টগ্রাম অবরোধ করে। বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ের উপরে আশ্রয় নেয়ার পর ব্রিটিশ সৈন্যরা পাহাড় ঘেরাও করলে পালানোর পথ একপ্রকার রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে পাহাড়ের উপরে থাকায় যুদ্ধ কৌশলে বিপ্লবীদের বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি হয়। ৩ ঘণ্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে শ-খানেক ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। ১৪ জন বিপ্লবীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে বিপ্লবীরা পশ্চাদপসারণের সুযোগ পেয়ে কলকাতার পথে যাত্রা শুরু করেন। পেছনে পড়ে রইলো ১৪ জন স্বপ্নবাজ বিপ্লবীর স্মৃতি। আমরা আজও মাস্টারদা’র সহযোদ্ধা স্বপ্নবাজ এসব বিপ্লবীদের ভুলিনি, ভুলবও না।

[লেখক : আইনজীবী]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : মাস্টার’দা সূর্যসেন

শঙ্কর প্রসাদ দে

image

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

২২ মার্চ ১৮৯৪ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন সূর্যকুমার সেন প্রকাশ কালু। কালক্রমে তিনি হয়ে উঠলেন মাস্টার’দা। সভ্যতার ইতিহাসে যেসব মানুষ অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী হন, তারা বংশ পরিক্রমার পরিচয়কে অতিক্রম করে নিজের নতুন এক অভিধা অর্জন করেন। কোটি কোটি মানুষ আসছে আর যাচ্ছে। এরা নিতান্তই ব্যতিক্রম। মহামতি লেনিন, কমরেড মাও, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সীমান্ত গান্ধী, পন্ডিত নেহেরু, নেতাজী সুভাষ, আলেকজান্ডার দি গ্রেট এ জাতীয় হাতে গোনা লোকদের মাত্র কয়েকজন।

পৃথিবীর দেশে দেশে কত রাজা মন্ত্রীর আসা আর যাওয়া। দু’এক প্রজন্ম পর এসব রাজ রাজারা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে থাকে। শতাব্দীর পর শতাব্দী। সহস্র সহস্র বছর পর আলেকজান্ডার যেমন আজও বেঁচে আছেন তেমনি বেঁচে থাকবেন মহাত্মা গান্ধী, মহামতি লেনিন, মাস্টার’দা সূর্যসেন। কমরেড স্ট্যালিন, বিশ্ববিপ্লবী চে-গুয়েভারা বেঁচে থাকবেন শত সহস্র বৎসর।

বিংশ শতকের ত্রিশের দশক। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে সমাজতান্ত্রিক সশস্ত্র বিপ্লবের উত্তাল ঢেউ। ততদিনে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে এম এন রায়, এস.এ ডাংগে, মুজফ্ফর আহমেদ ও পি সি যোশীদের (কল্পনা দত্তের স্বামী) হাতে।

১২ জানুয়ারি ১৯৩৪। মাস্টার’দা ও তারেকশ্বর দস্তিদারকে একসঙ্গে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ফাঁসির ওই মঞ্চটি এখন আর ব্যবহৃত হয় না। বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা মঞ্চটি দেখার আবেদন পেশ করি। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি আমাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। জেল প্রশাসনিক ভবনের ঠিক পেছনে চমৎকার একটি ফুল বাগান আছে। কারা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বড় জোর ৩০০ গজ যাওয়ার পর মঞ্চের সামনে হাজির হলাম। আলাপে কর্তৃপক্ষ জানালেন, স্বাধীনতার পর ছোট এই ফাঁসির মঞ্চটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং লাগোয়া বড়সড় আকারের নতুন মঞ্চটি স্থাপিত হয়েছে। নতুন ফাঁসির মঞ্চটি দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতায় বেশ মজবুত স্থাপনা। প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যামামলার কয়েকজনের মৃত্যুদন্ড এই মঞ্চেই কার্যকর হয়েছে।

পরিত্যক্ত মঞ্চটির পেছনের দেয়ালে মাস্টারদা’র গ্রানাইট পাথরের একটি ওয়াল ম্যুরাল অঙ্কিত আছে। তারেকশ্বর দস্তিদারকে একসঙ্গে ফাঁসিতে ঝোলানোর বিষয়টি জেলার সাহেব জানেন না। মাস্টারদা’র ওয়াল ম্যুরালের পাশে তারেকশ্বরের একটি ম্যুরাল স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জেলার সাহেব বলেছেন, সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে জেলা প্রশাসন এরূপ ম্যুরাল স্থাপনের যথাযথ কর্তৃপক্ষ। দুটো মঞ্চই স্পর্শ করে অনুভব করতে চেয়েছি ইতিহাসের সেই মুহূর্তগুলো। মাত্র চল্লিশ বছরের ক্ষুদ্র জীবন পরিক্রমায় একজন স্কুল শিক্ষক এখন পূজিত হচ্ছেন ভারতবর্ষের অন্যতম জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী হিসেবে।

মাস্টার’দা কমিউনিস্ট ছিলেন এমন কোন দাবি কোন পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়নি। ভাবতে অবাক লাগে অনূর্ধ্ব শ-খানেক সশস্ত্র যুবক নিয়ে মাস্টার’দা চার দিনের জন্য স্বাধীন ভারত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। লোকনাথ বলকে প্রধান সেনাপতি পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এতদিন পর আমরা কল্পনা করতে পারি, এই স্বাধীনতা যে ক্ষণস্থায়ী হবে তা তিনি জানতেন। আসলে স্বল্পস্থায়ী ওই স্বাধীনতার স্পর্ধা দেখিয়ে ভারতবাসীর মনোজগতে স্থায়ী স্বাধীনতার বীজ বপন করতে চেয়েছিলেন। সে অর্থে মাস্টারদা’র সশস্ত্র বিপ্লব সফল হয়েছে মাত্র ১৭ বছরের ব্যবধানে।

মাস্টারদা’র রাজনৈতিক চরিত্রে দ্বিমুখী আদর্শের সম্মিলন ঘটেছিল। তিনি ছিলেন কংগ্রেসের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সম্পাদক। কংগ্রেস তখন গান্ধীপন্থী ও সুভাষপন্থী গ্রুপে আদর্শিক বিভক্ত। মাস্টার’দা সুভাষপন্থী ছিলেন। সুভাষ বসু তখন ভারতবর্ষের জাতীয় নেতা। কলকাতা থেকে ১৯১৮ সালে সূর্যসেন চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। ন্যাশনাল (বর্তমানে মিউনিসিপ্যাল) হাইস্কুলে শিক্ষকতা নিয়ে গড়ে তোলেন অনুশীলন সমিতি। অম্বিকা চক্রবর্ত্তী, চারুবিকাশ দত্ত, কল্পনা দত্ত যোশী) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন অগ্রণীদের মাত্র কয়েকজন। মাস্টারদা’র নেতৃত্বগুণ অভিভূত হওয়ার মতো। মাত্র অনূর্ধ্ব শ-খানেক যুবককে তিনি জীবন উৎসর্গে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রতিভাধর এসব যুবকও মৃত্যুকে উপক্ষো করে ১৮ এপ্রিল ১৯৩০ অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও টি এন্ড টি অফিস পুড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রামকে স্বাধীন ভারতবর্ষের রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন।

মাত্র ৪ দিন পর ব্রিটিশ সৈন্যরা বাড়তি সৈন্যসামন্ত নিয়ে চট্টগ্রাম অবরোধ করে। বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ের উপরে আশ্রয় নেয়ার পর ব্রিটিশ সৈন্যরা পাহাড় ঘেরাও করলে পালানোর পথ একপ্রকার রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে পাহাড়ের উপরে থাকায় যুদ্ধ কৌশলে বিপ্লবীদের বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি হয়। ৩ ঘণ্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে শ-খানেক ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয়। ১৪ জন বিপ্লবীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে বিপ্লবীরা পশ্চাদপসারণের সুযোগ পেয়ে কলকাতার পথে যাত্রা শুরু করেন। পেছনে পড়ে রইলো ১৪ জন স্বপ্নবাজ বিপ্লবীর স্মৃতি। আমরা আজও মাস্টারদা’র সহযোদ্ধা স্বপ্নবাজ এসব বিপ্লবীদের ভুলিনি, ভুলবও না।

[লেখক : আইনজীবী]

back to top