সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ।
টানা তিন মাস বেতন না পেয়েও তারা টানা ২য় বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছুই দিতে পারি না। দেশের পুরুষ ফুটবল দলের পেছনে যখন প্রতি মৌসুমে কাড়িকাড়ি টাকা ঢালছে ক্লাব, তখন নারীদের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনই হবে কিনাÑ সে নিয়ে থাকে সংশয়। সেখানেও তাদের যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় তা অনেক কম। আবার সেই পারিশ্রমিক দিতেও দেখা যায় বিড়ম্বনা। দেশের এই বাঘিনীরা তিন মাস বেতন না পেয়েও চালিয়ে গেছেন খেলা। গত সাফ জয়ের পর টাকার অভাবে বাংলাদেশ নারীদের দেশের বাহিরে আয়োজিত টুর্নামেন্ট অংশ না নেয়ার ঘটনাও দেখেছে বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তরা। দেশে অথবা দেশের বাহিরে উন্নত ট্রেনিং সেশন থেকেও দীর্ঘ সময় বঞ্চিত থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্যদের। বেশির ভাগ সময় ব্যক্তিগত অনুশীলন করতেই দেখা গেছে খেলোয়াড়দের।
নারী দলের সদস্যরা একরকম পেটেভাতে খেলে দলকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। বাফুফে নিজেই জানিয়েছে, বিনা পয়সার আবাসন ও খাবারের বিনিময়ে এই নারী দলের সদস্যরা জাতীয় দলের পক্ষে খেলেছেন। নারী ফুটবল দলের সবাই মফস্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন। তারা সবাই কঠোর লড়াই-সংগ্রাম করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন। ফুটবলার সানজিদা আক্তারের ফেইসবুক স্ট্যাটাসেই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ফুটবল মাঠে তারা শুধু খেলোয়াড়ই নন, সবাই একেকজন যোদ্ধার চরিত্রে মাঠে নেমেছিলেন। তাদের কেউ বাবাকে হারিয়েছেন। কেউ মায়ের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে মাঠে এসেছেন। কেউ বোনের গয়না বিক্রি করে মাঠের খরচ জুগিয়েছেন। এত সমস্যায় জর্জরিত এই দলটা টানা দ্বিতীয়বার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল বনে গেল।
যেখানে দেশের পুরুষ ফুটবল দল সর্বশেষ ২০০৩ সালে জিতেছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন সেমিফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আশার কথা শুনায় অধিনায়ক-কোচরা। অথচ সেখানে তাদের কোনো সুবিধা দিতে বাকি রাখেনি বাফুফে। নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ফুটবল, একি সঙ্গে আয়োজন হচ্ছে কনফেডারেশন কাপ। পাশাপাশি বিসিএল আয়োজনও মহাধুমধামে হচ্ছে। শিরোপা অর্জনকারী দল সুযোগ পাচ্ছে এশিয়ার সেরা ক্লাবের মুখোমুখি হওয়ার। জাতীয় দল পাচ্ছে নিয়মিত খেলার সুযোগ। ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিয়ার-২০২৬ ম্যাচের অংশ হিসেবে গত বছর ও এ বছর অনেক ম্যাচের সুযোগ পেয়েছে। সেখানে বলার মতো নেই কোনো অর্জন।
এতকিছুর পরেও ছেলেদের ফুটবলের যে পরিচর্যা করা হয় সেই ছোঁয়া যদি নারী ফুটবল আঙ্গিনায় পৌঁছায় তাহলে এগিয়ে যাবে দেশের ফুটবল। নারীদের মাঠের খেলায় সেই সম্ভবনা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। এতে করে বাড়বে দেশের ফুটবলের মানও একইসঙ্গে ঝুলিতে জমা হবে আরও বড় বড় অর্জন। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে নারী ফুটবল নিয়ে, তৃণমূল পর্যায়ে ছেলেদের যেমন বয়সভিত্তিক আন্তঃইউনিয়ন হয়ে আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্ট আয়োজন হয় সেভাবে আয়োজন করতে হবে মেয়েদেরও। যুগপোযোগী প্রচার করে নারীদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থেকে বের করে আনতে হবে। তবেই সর্বাঙ্গীণভাবে উন্নতি হবে দেশের ফুটবলের। তা না করা গেলে টেডমার্ক ছাদ খোলা উদযাপনের সুযোগ হয়তো তৈরি নাও হতে পারে।
ইকবাল মাহমুদ
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ।
টানা তিন মাস বেতন না পেয়েও তারা টানা ২য় বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছুই দিতে পারি না। দেশের পুরুষ ফুটবল দলের পেছনে যখন প্রতি মৌসুমে কাড়িকাড়ি টাকা ঢালছে ক্লাব, তখন নারীদের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনই হবে কিনাÑ সে নিয়ে থাকে সংশয়। সেখানেও তাদের যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় তা অনেক কম। আবার সেই পারিশ্রমিক দিতেও দেখা যায় বিড়ম্বনা। দেশের এই বাঘিনীরা তিন মাস বেতন না পেয়েও চালিয়ে গেছেন খেলা। গত সাফ জয়ের পর টাকার অভাবে বাংলাদেশ নারীদের দেশের বাহিরে আয়োজিত টুর্নামেন্ট অংশ না নেয়ার ঘটনাও দেখেছে বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তরা। দেশে অথবা দেশের বাহিরে উন্নত ট্রেনিং সেশন থেকেও দীর্ঘ সময় বঞ্চিত থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্যদের। বেশির ভাগ সময় ব্যক্তিগত অনুশীলন করতেই দেখা গেছে খেলোয়াড়দের।
নারী দলের সদস্যরা একরকম পেটেভাতে খেলে দলকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। বাফুফে নিজেই জানিয়েছে, বিনা পয়সার আবাসন ও খাবারের বিনিময়ে এই নারী দলের সদস্যরা জাতীয় দলের পক্ষে খেলেছেন। নারী ফুটবল দলের সবাই মফস্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন। তারা সবাই কঠোর লড়াই-সংগ্রাম করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন। ফুটবলার সানজিদা আক্তারের ফেইসবুক স্ট্যাটাসেই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ফুটবল মাঠে তারা শুধু খেলোয়াড়ই নন, সবাই একেকজন যোদ্ধার চরিত্রে মাঠে নেমেছিলেন। তাদের কেউ বাবাকে হারিয়েছেন। কেউ মায়ের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে মাঠে এসেছেন। কেউ বোনের গয়না বিক্রি করে মাঠের খরচ জুগিয়েছেন। এত সমস্যায় জর্জরিত এই দলটা টানা দ্বিতীয়বার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল বনে গেল।
যেখানে দেশের পুরুষ ফুটবল দল সর্বশেষ ২০০৩ সালে জিতেছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন সেমিফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আশার কথা শুনায় অধিনায়ক-কোচরা। অথচ সেখানে তাদের কোনো সুবিধা দিতে বাকি রাখেনি বাফুফে। নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ফুটবল, একি সঙ্গে আয়োজন হচ্ছে কনফেডারেশন কাপ। পাশাপাশি বিসিএল আয়োজনও মহাধুমধামে হচ্ছে। শিরোপা অর্জনকারী দল সুযোগ পাচ্ছে এশিয়ার সেরা ক্লাবের মুখোমুখি হওয়ার। জাতীয় দল পাচ্ছে নিয়মিত খেলার সুযোগ। ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিয়ার-২০২৬ ম্যাচের অংশ হিসেবে গত বছর ও এ বছর অনেক ম্যাচের সুযোগ পেয়েছে। সেখানে বলার মতো নেই কোনো অর্জন।
এতকিছুর পরেও ছেলেদের ফুটবলের যে পরিচর্যা করা হয় সেই ছোঁয়া যদি নারী ফুটবল আঙ্গিনায় পৌঁছায় তাহলে এগিয়ে যাবে দেশের ফুটবল। নারীদের মাঠের খেলায় সেই সম্ভবনা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। এতে করে বাড়বে দেশের ফুটবলের মানও একইসঙ্গে ঝুলিতে জমা হবে আরও বড় বড় অর্জন। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে নারী ফুটবল নিয়ে, তৃণমূল পর্যায়ে ছেলেদের যেমন বয়সভিত্তিক আন্তঃইউনিয়ন হয়ে আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্ট আয়োজন হয় সেভাবে আয়োজন করতে হবে মেয়েদেরও। যুগপোযোগী প্রচার করে নারীদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থেকে বের করে আনতে হবে। তবেই সর্বাঙ্গীণভাবে উন্নতি হবে দেশের ফুটবলের। তা না করা গেলে টেডমার্ক ছাদ খোলা উদযাপনের সুযোগ হয়তো তৈরি নাও হতে পারে।
ইকবাল মাহমুদ