আন্দোলন করে দাবি আদায় করার সংস্কৃতি আমাদের দেশে অনেক পুরোনো। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে, নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছে। এটি আমাদের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের ধরন এবং তার প্রভাব নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন করছেন। এটি গণতন্ত্রের একটি অন্যতম অঙ্গ, যেখানে নাগরিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে পারে; কিন্তু তাই বলে কি যেকোনো ইস্যুতেই আন্দোলন করতে হবে?
বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন ক্ষমতায়, তখন যেকোনো ইস্যুতে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের যেন হিড়িক পড়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বন্ধ করে এ ধরনের আন্দোলন যানজট সৃষ্টি করে ব্যাপকভাবে। বারবার সচিবালয় ঘেরাও করা যেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হয়ে গিয়েছে। আন্দোলন সাধারণত তখনই কার্যকরী হয় যখন এর পেছনে যুক্তিসংগত কারণ থাকে এবং তা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে পারে; কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলন যেন শুধু আন্দোলনের জন্যই হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে যায়। এ ধরনের আন্দোলনের কারণে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়, অফিসগামী মানুষের সময় নষ্ট হয় এবং রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আন্দোলনের কৌশল হতে পারে ভিন্ন।
আন্দোলনের কৌশল যদি সঠিক না হয়, তবে তা সাধারণ মানুষের সমর্থন হারিয়ে ফেলতে পারে। রাজপথ অবরোধ করা, সচিবালয় ঘেরাও করা ইত্যাদি আন্দোলনের কৌশল যদি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে সে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। অন্যদিকে আন্দোলন যদি সুশৃৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয় এবং মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে পারে, তবে তা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
আন্দোলন অবশ্যই একটি বৈধ এবং প্রয়োজনীয় উপায় হতে পারে দাবি আদায়ের জন্য; কিন্তু শুধু আন্দোলনের ওপর নির্ভর না করে কিছু বিকল্প পথও বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন গণস্বাক্ষর অভিযান, জনমত জরিপ, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার, আলোচনা সভা ইত্যাদি। এ ধরনের বিকল্প পথগুলোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা গেলে আন্দোলনের প্রয়োজন হয় না এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাব পড়ে না। চলমান আন্দোলন সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? বর্তমান সময়ে আন্দোলনের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা যদি যুক্তিসংগত কারণে এবং সুশৃৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক হতে পারে; কিন্তু যদি আন্দোলন শুধু মাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং মানুষের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে হয়, তবে তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আন্দোলনের আগে এর যুক্তিসঙ্গততা, কৌশল এবং তার প্রভাব নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার; কিন্তু তা যেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সঠিক কৌশল ও যুক্তিসংগত কারণে আন্দোলন করলে তা শুধু দাবি আদায়ে নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে।
মোহাম্মদ আব্দুর রহমান
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪
আন্দোলন করে দাবি আদায় করার সংস্কৃতি আমাদের দেশে অনেক পুরোনো। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে, নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছে। এটি আমাদের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের ধরন এবং তার প্রভাব নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন করছেন। এটি গণতন্ত্রের একটি অন্যতম অঙ্গ, যেখানে নাগরিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে পারে; কিন্তু তাই বলে কি যেকোনো ইস্যুতেই আন্দোলন করতে হবে?
বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন ক্ষমতায়, তখন যেকোনো ইস্যুতে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের যেন হিড়িক পড়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বন্ধ করে এ ধরনের আন্দোলন যানজট সৃষ্টি করে ব্যাপকভাবে। বারবার সচিবালয় ঘেরাও করা যেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হয়ে গিয়েছে। আন্দোলন সাধারণত তখনই কার্যকরী হয় যখন এর পেছনে যুক্তিসংগত কারণ থাকে এবং তা সাধারণ মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে পারে; কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আন্দোলন যেন শুধু আন্দোলনের জন্যই হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে যায়। এ ধরনের আন্দোলনের কারণে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়, অফিসগামী মানুষের সময় নষ্ট হয় এবং রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আন্দোলনের কৌশল হতে পারে ভিন্ন।
আন্দোলনের কৌশল যদি সঠিক না হয়, তবে তা সাধারণ মানুষের সমর্থন হারিয়ে ফেলতে পারে। রাজপথ অবরোধ করা, সচিবালয় ঘেরাও করা ইত্যাদি আন্দোলনের কৌশল যদি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে সে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। অন্যদিকে আন্দোলন যদি সুশৃৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয় এবং মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে পারে, তবে তা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
আন্দোলন অবশ্যই একটি বৈধ এবং প্রয়োজনীয় উপায় হতে পারে দাবি আদায়ের জন্য; কিন্তু শুধু আন্দোলনের ওপর নির্ভর না করে কিছু বিকল্প পথও বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন গণস্বাক্ষর অভিযান, জনমত জরিপ, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার, আলোচনা সভা ইত্যাদি। এ ধরনের বিকল্প পথগুলোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা গেলে আন্দোলনের প্রয়োজন হয় না এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাব পড়ে না। চলমান আন্দোলন সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? বর্তমান সময়ে আন্দোলনের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা যদি যুক্তিসংগত কারণে এবং সুশৃৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক হতে পারে; কিন্তু যদি আন্দোলন শুধু মাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং মানুষের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে হয়, তবে তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আন্দোলনের আগে এর যুক্তিসঙ্গততা, কৌশল এবং তার প্রভাব নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার; কিন্তু তা যেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন। সঠিক কৌশল ও যুক্তিসংগত কারণে আন্দোলন করলে তা শুধু দাবি আদায়ে নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নেও সহায়ক হতে পারে।
মোহাম্মদ আব্দুর রহমান
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।