বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্লাস্টিক দূষণ : সমাধানের পথ কী?

image

প্লাস্টিক দূষণ : সমাধানের পথ কী?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত উপাদানগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক একটি। বাজাওে পণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে বাসায় সংরক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্লাস্টিকের তৈরি পলিথিন, বোতল ব্যবহার করি। প্লাস্টিক ব্যবহার হয় না বাংলাদেশে এমন বাসা খুব কমই আছে।

বিশেষ করে ঢাকা শহরে প্লাস্টিকের ব্যাবহার হয় ব্যাপক হারে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ‘ঢাকায় বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার শহরাঞ্চলের জাতীয় গড় থেকে তিনগুণেরও বেশি, যা বর্তমানে ২২.২৫ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, যা পুরো বাংলাদেশে উৎপন্ন বর্জ্যের ১০ শতাংশ।‘ কিন্তু এই প্লাস্টিক আমাদের নিত্যপ্রয়োজনে যতটা না উপকারে আসছে পরিবেশে তার চেয়ে বেশি ক্ষতিই ডেকে আনছে। বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণ একটি বিস্তৃত পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত প্লাস্টিকের দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে আমাদের মাটি, পানি, বায়ু, মানবস্বাস্থ্য এমনকি অর্থনীতিতেও নেতিবাচক

প্রভাব পড়ছে।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। ফলে এদেশের নদ-নদী ও জলাশয়গুলো ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক দূষণের শিকার হচ্ছে। যার কারণে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীগুলো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এ দূষণ শুধু জলজ প্রাণীরই নয়, নদীকে অবলম্বন করে যারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন ৩ হাজার প্লাস্টিক বর্জ্য উতপাদন হচ্ছে যার একটি অংশ বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। আর এইসব বর্জ্য প্রবাল প্রাচীরের অবক্ষয় এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রও ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

আবার এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো যখন পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন পরিবেশে সৃষ্টি হয় বাছুদূষণ। আর পোড়ানো প্লাস্টিকের ধোয়ার সঙ্গে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগের সৃষ্টি করে। আবার প্লাস্টিকের যথেচ্ছ নিক্ষেপ আমাদের অর্থনীতিকেও ব্যহত করছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্র নদ- নদী, সাগর-সৈকত কেন্দ্রিক হওয়ায় অর্থনীতির একটা অংশ এই পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উপর নির্ভর করছে। কিন্তু জলাশয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে পর্যটনকেন্দ্রগুলোও তাদের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ফলে পর্যটকের সংখ্যাও কমছে। যা আমাদের অর্থনৈতিক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

দিনশেষে, বহুল ব্যবহৃত এই বস্তুটি আমাদের অজান্তেই আমাদের পরিবেশকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখাই যাচ্ছে না। ২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষেধ করে। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বরং ২০০৫ থেকে ২০২০ এর কোভিড মহামারি পর্যন্ত প্লাস্টিক ব্যাবহারের সংখ্যা বেড়েছে চার গুণেরও বেশি।

২০১০ সালে বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার জন্য চালু করা ন্যাশনাল থ্রী আর (রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল) কৌশলেরও কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। এদিকে জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্লাস্টিক ব্যাবহারের নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় নি। বাংলাদেশের শহরগুলোতে এমনও প্লাস্টিকের দোকান আছে যেখানে দোকানের সামনে ‘পলিথিন ব্যাবহার নিষিদ্ধ’ শিরোনামে সরকারী সাইনবোর্ড টানানো। অথচ সেই দোকানেই পলিথিনের হরদম বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? প্লাস্টিক দূষণের এ সর্বগ্রাসী যাত্রা আমাদের পরিবেশকে আর কত গ্রাস করলে আমরা সচেতন হইয়ে ওঠবো? শুধু পদক্ষেপ নিলেই সমস্যা সমাধান হয় না, বরং সেই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করাটাই জরুরী। প্লাস্টিক ব্যাবহার নিষেধাজ্ঞা এবং নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগ করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রয়োজন প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প যেমন পাটের ব্যাগ, ও সহজেই পচনশীল প্যাকেজিং এর ব্যাবহার নিশ্চিত করা। এছাড়াও বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার অবকাঠামো উন্নয়ন, জনসচেতনা বৃদ্ধি প্রভৃতির মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি, প্লাস্টিক দূষণের এ দুর্বিষহ পরিণতি থেকে বাঁচতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

মাইফুল জামান ঝুমু

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘পাঠকের চিঠি’ : আরও খবর

» এলপিজি ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

» কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে

» সঙ্গীত ও শরীরচর্চা: সুস্থ জীবনের দুই স্তম্ভ

» কৃষিতে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাবর্তন: আশার ইঙ্গিত

» বিশ্বায়নের গ্রাসে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি

» বর্ষায় পদ্মাতীরের মানুষদের দুর্বিষহ জীবন

» জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন চাই

» ভেঙে পড়া পুকুরপাড়ের রাস্তায় গ্রামবাসীর দুর্বিষহ জীবন

» ছয় কুড়ি বিল আর নয় কুড়ি কান্দা: প্রকৃতির সাথে গাঁথা টাঙ্গুয়ার মানুষের ভাগ্য

» ময়মনসিংহকে যানজটমুক্ত শহর গড়ে তোলার দাবি

» অপর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট

» মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা কেন বাড়ছে?

» নিরাপদ ভোজ্য তেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ

» হাওর অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজন

» কসমেটিক সংস্কৃতি : সুন্দর হওয়ার চাপ নারীর মানসিক স্বাস্থ্যে কী করছে

» মামলার রায় ও আইনের ভাষা হোক বাংলা

» বেকারত্বের অভিশাপ বাংলাদেশের মাথায়

» ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য : মানুষের আচরণ নাকি সিস্টেমের ব্যর্থতা?

» মশার কয়েলের ধোঁয়া : ঘরের বাতাসের নীরব বিপদ

» রাবির হলের খাবারে স্বাস্থবিধির সংকট