মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

এইচএসসি ফল : শিক্ষার বাস্তব চিত্র

নাহিদ হাসান নাঈম

image

এইচএসসি ফল : শিক্ষার বাস্তব চিত্র

নাহিদ হাসান নাঈম

২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৮.৮৪ শতাংশ। এই ফলাফল দেখে অনেকে আতঙ্কিত হলেও, এটি মূলত আমাদের দীর্ঘদিনের কৃত্রিম সাফল্যবাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। বিগত বছর গুলোতে আমরা “উচ্চ পাসের হার”কে শিক্ষার মানের প্রতীক ধরে নিয়েছিলাম। বাস্তবে প্রশ্নপত্র সহজ করা, খাতা মূল্যায়নে নমনীয়তা, এবং গাইডনির্ভর পড়াশোনার সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আজ যখন প্রশ্ন কঠিন হলো, মূল্যায়ন কঠোর হলো, তখনই সেই দুর্বলতার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেল।

কিন্তু এই পতন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের একার ব্যর্থতা নয়; এটি একটি বৃহত্তর কাঠামোগত সমস্যার প্রতিফলন। করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের শেখার প্রাথমিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় অনলাইন ক্লাস, অসম পাঠপরিবেশ, ও মানসম্মত পুনঃপাঠের অভাবে তারা স্বাভাবিক শেখার ধারায় ফিরে আসতে পারেনি। যখন কঠোর মূল্যায়ন ফিরল, তখন সেই শেখার ঘাটতিগুলো স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হলো। এখন প্রশ্ন-আমরা কি এই পতনকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখব, নাকি এটি শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব মুখ হিসেবে গ্রহণ করব? এটি এক ধরনের “জাগরণ।” এতদিন যে সংখ্যার খেলায় আমরা শিক্ষার মান মেপেছি, সেই মিথ আজ ভেঙে পড়ছে। কারণ শিক্ষা মানে কেবল পাসের হার নয়; বরং বিশ্লেষণ, সৃজনশীলতা ও যুক্তিবোধের বিকাশ। বড় পরিতাপের বিষয় যে,আমাদের পরীক্ষার কাঠামো এখনো সেই গুণাবলিগুলোকে পরিমাপ করতে পারে না।

২০২৩ সালে, চালু হওয়া নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম আমাদেরকে এই অচলায়তন ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মুখস্থ বিদ্যা থেকে মুক্তি, দক্ষতা ও গবেষণামুখী শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের অভাব বা অনিহা, মূল্যায়নে অস্পষ্টতা এবং বিভ্রান্তিকর প্রশ্নপত্র নতুন সংকট তৈরি করেছে। অনেক শিক্ষকই এখনো নতুন কারিকুলামের দর্শন বুঝে উঠতে পারেননি, ফলে শিক্ষার্থীরা অপ্রস্তুত অবস্থায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। “আমরা শিক্ষা সংস্কার করি, কিন্তু শিক্ষক প্রস্তুতি সংস্কার করি না।”

এটাই বাংলাদেশের শিক্ষানীতির দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা। প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় এসে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে, কিন্তু পুরনো ভুলের যথাযথ বিশ্লেষণ করে না। ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতার অভাবে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়, শিক্ষকরা অনিশ্চিত থাকেন। ২০২৫ সালের এইচএসসি ফলাফল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে-আমরা কোথায় পিছিয়ে আছি। এখন দরকার আত্মসমালোচনা, সাহসী সিদ্ধান্ত , টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। শিক্ষা কোনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, এটি জাতির আত্মমর্যাদার বিনির্মাণ। সেই আত্মমর্যাদাকে পুনর্গঠিত করার সময় এখনই।

‘পাঠকের চিঠি’ : আরও খবর

» এলপিজি ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

» কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে

» সঙ্গীত ও শরীরচর্চা: সুস্থ জীবনের দুই স্তম্ভ

» কৃষিতে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাবর্তন: আশার ইঙ্গিত

» বিশ্বায়নের গ্রাসে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি

» বর্ষায় পদ্মাতীরের মানুষদের দুর্বিষহ জীবন

» জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন চাই

» ভেঙে পড়া পুকুরপাড়ের রাস্তায় গ্রামবাসীর দুর্বিষহ জীবন

» ছয় কুড়ি বিল আর নয় কুড়ি কান্দা: প্রকৃতির সাথে গাঁথা টাঙ্গুয়ার মানুষের ভাগ্য

» ময়মনসিংহকে যানজটমুক্ত শহর গড়ে তোলার দাবি

» অপর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট

» মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা কেন বাড়ছে?

» নিরাপদ ভোজ্য তেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ

» হাওর অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজন

» কসমেটিক সংস্কৃতি : সুন্দর হওয়ার চাপ নারীর মানসিক স্বাস্থ্যে কী করছে

» মামলার রায় ও আইনের ভাষা হোক বাংলা

» বেকারত্বের অভিশাপ বাংলাদেশের মাথায়

» ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য : মানুষের আচরণ নাকি সিস্টেমের ব্যর্থতা?

» মশার কয়েলের ধোঁয়া : ঘরের বাতাসের নীরব বিপদ

» রাবির হলের খাবারে স্বাস্থবিধির সংকট