সভ্যতা ও জীবনধারণের ভিত্তিপ্রস্তর হলো কৃষি। আর সেই ভিত্তির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অন্নদাত্রী নারী যুগ যুগ ধরে নীরবে কাজ করে চলেছেন। তাঁরা কেবল গৃহিণী নন, তাঁরা আমাদের কৃষি-অর্থনীতির মেরুদণ্ড যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত চোখ কেবল লাঙল হাতে পুরুষের ছবি আঁকে, কিন্তু বীজ থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি সূক্ষ্ম ও শ্রমসাধ্য কাজে নারীর যে অবিচ্ছেদ্য সম্পৃক্ততা, তা থেকে যায় অন্ধকারে ঢাকা । তাঁরা কেবল শ্রম দেন না, তাঁরা ফসলকে লালন করেন মাতৃত্বের মমতায়। অথচ এই অপরিহার্য অংশগ্রহণ সত্ত্বেও, ‘কৃষক’ হিসেবে তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা আজও এক সুদূরপরাহত স্বপ্ন। খাদ্য নিরাপত্তার দূর্গে নারী কৃষকের এই উপেক্ষিত অবদান দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে এক বিশাল অন্তরায়।
নারীরা শ্রম ও উৎপাদনে অবদান রাখলেও তাদের কাজকে “গৃহস্থালির কাজ” বা “বিনামূল্যের শ্রম” হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের বিশাল অদৃশ্য অবদানকে আড়াল করে রাখে।
এত বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও নারী কৃষকের অবমূল্যায়ন বা স্বীকৃতির ঘাটতি মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দুর্বলতার ফল। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি কাজকে ‘পুরুষের কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নারীরা যে কাজটি করেন, তা ‘কৃষিকাজ’ না হয়ে ‘গৃহস্থালি কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে বসতবাড়ির কাজ বা ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজগুলো। এরপর জমি বা কৃষি উপকরণের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের হাতে থাকে (যেমন, দেশের জমির মালিকানার মাত্র ১৯% নারীর হাতে)।
নারী কৃষকের এই অবিচল সংগ্রাম ও নীরব বিপ্লব কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অক্সিজেন। তাঁদের শ্রমের সঠিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত দুর্বল হবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও পিছিয়ে পড়বে। এখন সময় এসেছে এই অসামান্য ‘কিষাণী’ শক্তিকে প্রকাশ্যে এনে তাঁদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলার। আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ গড়ি যেখানে নারী কৃষকের ঘামের ফোঁটা স্বীকৃতি পায় মর্যাদার মুকুটে, এবং তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের কৃষিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত, ন্যায়সঙ্গত ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। এই পরিবর্তনই হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নতুন বীজমন্ত্র।
সাদিয়া ইসলাম কাসফিয়া
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
সভ্যতা ও জীবনধারণের ভিত্তিপ্রস্তর হলো কৃষি। আর সেই ভিত্তির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অন্নদাত্রী নারী যুগ যুগ ধরে নীরবে কাজ করে চলেছেন। তাঁরা কেবল গৃহিণী নন, তাঁরা আমাদের কৃষি-অর্থনীতির মেরুদণ্ড যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত চোখ কেবল লাঙল হাতে পুরুষের ছবি আঁকে, কিন্তু বীজ থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি সূক্ষ্ম ও শ্রমসাধ্য কাজে নারীর যে অবিচ্ছেদ্য সম্পৃক্ততা, তা থেকে যায় অন্ধকারে ঢাকা । তাঁরা কেবল শ্রম দেন না, তাঁরা ফসলকে লালন করেন মাতৃত্বের মমতায়। অথচ এই অপরিহার্য অংশগ্রহণ সত্ত্বেও, ‘কৃষক’ হিসেবে তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা আজও এক সুদূরপরাহত স্বপ্ন। খাদ্য নিরাপত্তার দূর্গে নারী কৃষকের এই উপেক্ষিত অবদান দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে এক বিশাল অন্তরায়।
নারীরা শ্রম ও উৎপাদনে অবদান রাখলেও তাদের কাজকে “গৃহস্থালির কাজ” বা “বিনামূল্যের শ্রম” হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের বিশাল অদৃশ্য অবদানকে আড়াল করে রাখে।
এত বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও নারী কৃষকের অবমূল্যায়ন বা স্বীকৃতির ঘাটতি মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দুর্বলতার ফল। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি কাজকে ‘পুরুষের কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নারীরা যে কাজটি করেন, তা ‘কৃষিকাজ’ না হয়ে ‘গৃহস্থালি কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে বসতবাড়ির কাজ বা ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজগুলো। এরপর জমি বা কৃষি উপকরণের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের হাতে থাকে (যেমন, দেশের জমির মালিকানার মাত্র ১৯% নারীর হাতে)।
নারী কৃষকের এই অবিচল সংগ্রাম ও নীরব বিপ্লব কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অক্সিজেন। তাঁদের শ্রমের সঠিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত দুর্বল হবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও পিছিয়ে পড়বে। এখন সময় এসেছে এই অসামান্য ‘কিষাণী’ শক্তিকে প্রকাশ্যে এনে তাঁদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলার। আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ গড়ি যেখানে নারী কৃষকের ঘামের ফোঁটা স্বীকৃতি পায় মর্যাদার মুকুটে, এবং তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের কৃষিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত, ন্যায়সঙ্গত ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। এই পরিবর্তনই হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নতুন বীজমন্ত্র।
সাদিয়া ইসলাম কাসফিয়া