alt

নারী কৃষকের অবদান ও স্বীকৃতি

: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

সভ্যতা ও জীবনধারণের ভিত্তিপ্রস্তর হলো কৃষি। আর সেই ভিত্তির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অন্নদাত্রী নারী যুগ যুগ ধরে নীরবে কাজ করে চলেছেন। তাঁরা কেবল গৃহিণী নন, তাঁরা আমাদের কৃষি-অর্থনীতির মেরুদণ্ড যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত চোখ কেবল লাঙল হাতে পুরুষের ছবি আঁকে, কিন্তু বীজ থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি সূক্ষ্ম ও শ্রমসাধ্য কাজে নারীর যে অবিচ্ছেদ্য সম্পৃক্ততা, তা থেকে যায় অন্ধকারে ঢাকা । তাঁরা কেবল শ্রম দেন না, তাঁরা ফসলকে লালন করেন মাতৃত্বের মমতায়। অথচ এই অপরিহার্য অংশগ্রহণ সত্ত্বেও, ‘কৃষক’ হিসেবে তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা আজও এক সুদূরপরাহত স্বপ্ন। খাদ্য নিরাপত্তার দূর্গে নারী কৃষকের এই উপেক্ষিত অবদান দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে এক বিশাল অন্তরায়।

নারীরা শ্রম ও উৎপাদনে অবদান রাখলেও তাদের কাজকে “গৃহস্থালির কাজ” বা “বিনামূল্যের শ্রম” হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের বিশাল অদৃশ্য অবদানকে আড়াল করে রাখে।

এত বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও নারী কৃষকের অবমূল্যায়ন বা স্বীকৃতির ঘাটতি মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দুর্বলতার ফল। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি কাজকে ‘পুরুষের কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নারীরা যে কাজটি করেন, তা ‘কৃষিকাজ’ না হয়ে ‘গৃহস্থালি কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে বসতবাড়ির কাজ বা ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজগুলো। এরপর জমি বা কৃষি উপকরণের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের হাতে থাকে (যেমন, দেশের জমির মালিকানার মাত্র ১৯% নারীর হাতে)।

নারী কৃষকের এই অবিচল সংগ্রাম ও নীরব বিপ্লব কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অক্সিজেন। তাঁদের শ্রমের সঠিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত দুর্বল হবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও পিছিয়ে পড়বে। এখন সময় এসেছে এই অসামান্য ‘কিষাণী’ শক্তিকে প্রকাশ্যে এনে তাঁদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলার। আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ গড়ি যেখানে নারী কৃষকের ঘামের ফোঁটা স্বীকৃতি পায় মর্যাদার মুকুটে, এবং তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের কৃষিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত, ন্যায়সঙ্গত ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। এই পরিবর্তনই হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নতুন বীজমন্ত্র।

সাদিয়া ইসলাম কাসফিয়া

ছবি

দখলমুক্ত ফুটপাত চাই

ভূমিদস্যুদের প্রকোপে অতিষ্ঠ কেরানিগঞ্জবাসী

বাকৃতিতে নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন

যৌতুক প্রথা: এক সামাজিক অভিশাপের নীরব বিস্তার

দেশের রাজনীতির তিন দিগন্ত

ছবি

দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ও পুনরুদ্ধার উদ্যোগ

ছবি

নয়া জাগরণের পথে দেশের ফুটবল

শিশুদের খেলার জায়গায় স্থায়ী মঞ্চ নয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য

অগ্নিনির্বাপণে প্রস্তুতির ঘাটতি আমাদের বড় বিপদ

সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য দূর হবে কবে?

ছবি

অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনে বাড়ছে নদীভাঙন

খেলার মাঠ নেই, হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব ও শহরের প্রাণ

নদীমাতৃক দেশ এখন নদীহীন হওয়ার পথে

বাল্যবিবাহ রোধে দরকার সচেতনতা ও সহায়তা

বৈষম্যের স্বীকার প্রাথমিক শিক্ষক

ছবি

নরোত্তমপুর কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ, ভোগান্তিতে গ্রামীণ জনগণ

ছবি

একের পর এক কারখানা বন্ধ, টালমাটাল অর্থনীতি

রেলওয়ের টিকেট বুকিং একাউন্টে নম্বর পরিবর্তন

বাইক থেকে ইজিবাইক : নগর জীবনে গতি, ঝুঁকি ও বাস্তবতা

বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা সময়ের দাবি

নদী বাঁচাতে হবে, জীবন বাঁচাতে হবে

ছবি

পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুন

পারিবারিক বন্ধনের ভাঙন

উপকূলে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

নারী শ্রমিকের সুরক্ষা

বৃষ্টিতে অদৃশ্য ড্রেনের প্রাণঘাতী ফাঁদ

শিক্ষার্থীদের হাফভাড়া ন্যায্যতার দাবি

ফেনীর দেওয়ানগঞ্জে ময়লার পাহাড়

তাদের গল্প থেমে গেছে, কারণ আমরা আর শুনি না

দুবলার চরের রাসমেলা হতে পারে পর্যটকদের জন্য এক বিস্ময়ভ্রমণ

ছবি

খাদ্য অপচয় রোধে সচেতনতা এখন জরুরি

ছবি

জিপিএ ৫: পরিশ্রমের প্রতিবিম্ব, তবে ভবিষ্যৎ গড়ার মানদণ্ড নয়

ছবি

কোথায় হারালো বাবুই পাখি ও তাদের বাসা

ছবি

সাইবার বুলিয়িং-এর বাস্তবতা

প্রাণীর প্রতি সহমর্মিতা

tab

নারী কৃষকের অবদান ও স্বীকৃতি

মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

সভ্যতা ও জীবনধারণের ভিত্তিপ্রস্তর হলো কৃষি। আর সেই ভিত্তির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অন্নদাত্রী নারী যুগ যুগ ধরে নীরবে কাজ করে চলেছেন। তাঁরা কেবল গৃহিণী নন, তাঁরা আমাদের কৃষি-অর্থনীতির মেরুদণ্ড যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত চোখ কেবল লাঙল হাতে পুরুষের ছবি আঁকে, কিন্তু বীজ থেকে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি সূক্ষ্ম ও শ্রমসাধ্য কাজে নারীর যে অবিচ্ছেদ্য সম্পৃক্ততা, তা থেকে যায় অন্ধকারে ঢাকা । তাঁরা কেবল শ্রম দেন না, তাঁরা ফসলকে লালন করেন মাতৃত্বের মমতায়। অথচ এই অপরিহার্য অংশগ্রহণ সত্ত্বেও, ‘কৃষক’ হিসেবে তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা আজও এক সুদূরপরাহত স্বপ্ন। খাদ্য নিরাপত্তার দূর্গে নারী কৃষকের এই উপেক্ষিত অবদান দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে এক বিশাল অন্তরায়।

নারীরা শ্রম ও উৎপাদনে অবদান রাখলেও তাদের কাজকে “গৃহস্থালির কাজ” বা “বিনামূল্যের শ্রম” হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের বিশাল অদৃশ্য অবদানকে আড়াল করে রাখে।

এত বিপুল অবদান থাকা সত্ত্বেও নারী কৃষকের অবমূল্যায়ন বা স্বীকৃতির ঘাটতি মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দুর্বলতার ফল। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি কাজকে ‘পুরুষের কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নারীরা যে কাজটি করেন, তা ‘কৃষিকাজ’ না হয়ে ‘গৃহস্থালি কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে বসতবাড়ির কাজ বা ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজগুলো। এরপর জমি বা কৃষি উপকরণের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের হাতে থাকে (যেমন, দেশের জমির মালিকানার মাত্র ১৯% নারীর হাতে)।

নারী কৃষকের এই অবিচল সংগ্রাম ও নীরব বিপ্লব কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অক্সিজেন। তাঁদের শ্রমের সঠিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত দুর্বল হবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও পিছিয়ে পড়বে। এখন সময় এসেছে এই অসামান্য ‘কিষাণী’ শক্তিকে প্রকাশ্যে এনে তাঁদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলার। আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ গড়ি যেখানে নারী কৃষকের ঘামের ফোঁটা স্বীকৃতি পায় মর্যাদার মুকুটে, এবং তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের কৃষিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত, ন্যায়সঙ্গত ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। এই পরিবর্তনই হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নতুন বীজমন্ত্র।

সাদিয়া ইসলাম কাসফিয়া

back to top