রাস্তায় বের হলে একজন নারীর প্রধান দুশ্চিন্তা যানজট বা নিরাপত্তা নয়, বরং ‘টয়লেট’। শুনতে সাধারণ মনে হলেও, বিভাগীয় শহর রাজশাহী শুধু নয়; টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সমগ্র দেশজুড়ে এটি আজ এক নীরব জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়। শহরের জৌলুস বাড়ছে, কিন্তু ফুটপাত বা পাবলিক প্লেসে একজন নারী, শিশু বা প্রবীণ কিংবা প্রতিবন্ধী যখন নিরাপদ শৌচাগার খুঁজে পান না, তখন এই ব্যর্থতা আর কেবল ‘ব্যবস্থাপনার ত্রুটি’ থাকে না। এটি সংবিধান লঙ্ঘন এবং নারীর প্রতি স্পষ্ট রাষ্ট্রীয় বৈষম্য।
ওয়াটারএইড এবং অ্যাকশনএইড-এর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য। অ্যাকশনএইড-এর এক সমীক্ষা মতে, নিরাপত্তা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ নারী পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতেই চান না।
এর ফলাফল কী? চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে নারীদের মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে। যা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ই. কোলাই জনিত ইউটিআই সৃষ্টি করে। নারীদের শারীরিক গঠনের কারণে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে দশগুণ বেশি। বারবার এই সংক্রমণ কিডনি বিকল হওয়ার মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করছে। সেই সঙ্গে মাসিকের সময় নিরাপদ টয়লেটের অভাবে প্রজননতন্ত্রের জটিল সংক্রমণ বাড়ছে। অর্থাৎ, স্রেফ একটি টয়লেটের অভাবে আমরা নারীদের ঠেলে দিচ্ছি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
সুতরাং, এই সংকট নিরসনে কেবল কিছু বাজেট বরাদ্দই যথেষ্ট নয়। স্থানীয় সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ‘মর্যাদার শৌচাগার’ নিশ্চিত করা কোনো দয়া নয়, এটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এখনই সময়, স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে নারীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে গণ্য করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায়, টেকসই উন্নয়নের সব দাবি এই অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের গর্তেই হারিয়ে যাবে।
শামীউল আলীম শাওন
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
রাস্তায় বের হলে একজন নারীর প্রধান দুশ্চিন্তা যানজট বা নিরাপত্তা নয়, বরং ‘টয়লেট’। শুনতে সাধারণ মনে হলেও, বিভাগীয় শহর রাজশাহী শুধু নয়; টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সমগ্র দেশজুড়ে এটি আজ এক নীরব জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়। শহরের জৌলুস বাড়ছে, কিন্তু ফুটপাত বা পাবলিক প্লেসে একজন নারী, শিশু বা প্রবীণ কিংবা প্রতিবন্ধী যখন নিরাপদ শৌচাগার খুঁজে পান না, তখন এই ব্যর্থতা আর কেবল ‘ব্যবস্থাপনার ত্রুটি’ থাকে না। এটি সংবিধান লঙ্ঘন এবং নারীর প্রতি স্পষ্ট রাষ্ট্রীয় বৈষম্য।
ওয়াটারএইড এবং অ্যাকশনএইড-এর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য। অ্যাকশনএইড-এর এক সমীক্ষা মতে, নিরাপত্তা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ নারী পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতেই চান না।
এর ফলাফল কী? চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে নারীদের মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে। যা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ই. কোলাই জনিত ইউটিআই সৃষ্টি করে। নারীদের শারীরিক গঠনের কারণে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে দশগুণ বেশি। বারবার এই সংক্রমণ কিডনি বিকল হওয়ার মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করছে। সেই সঙ্গে মাসিকের সময় নিরাপদ টয়লেটের অভাবে প্রজননতন্ত্রের জটিল সংক্রমণ বাড়ছে। অর্থাৎ, স্রেফ একটি টয়লেটের অভাবে আমরা নারীদের ঠেলে দিচ্ছি দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
সুতরাং, এই সংকট নিরসনে কেবল কিছু বাজেট বরাদ্দই যথেষ্ট নয়। স্থানীয় সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ‘মর্যাদার শৌচাগার’ নিশ্চিত করা কোনো দয়া নয়, এটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এখনই সময়, স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে নারীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে গণ্য করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায়, টেকসই উন্নয়নের সব দাবি এই অপরিচ্ছন্ন টয়লেটের গর্তেই হারিয়ে যাবে।
শামীউল আলীম শাওন