শীতকাল বাংলার গ্রামীণ জীবনে এক বিশেষ আবহ তৈরি করে। পুকুরপাড়ে ধোঁয়া ওঠা পিঠার হাঁড়ি আর মাটির কলসিতে ঝরা খেজুর রসের সুবাস মানুষকে আনন্দ দেয়। কিন্তু এই মিষ্টি রসের সঙ্গে থাকে নিপাহ ভাইরাসের ভয়। নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ছড়ায়, মূল বাহক হলো ফলভোজী বাদুড়। রাতের বেলা বাদুড়েরা খেজুরের রস খাওয়ার সময় দূষিত মল-মূত্র ছাড়ে, যা সরাসরি পান করলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০০১ সালে মেহেরপুরে। এ পর্যন্ত ৩৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২৪০ জন মারা গেছেন। ভাইরাসটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী, উপসর্গ হিসেবে জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং কোমা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে।
খেজুর রস বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ। গাছিরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রস সংগ্রহ করেন, যা গুড় ও চিনি তৈরিতে ব্যবহার হয়। নিপাহ ভাইরাসের ভয় দেখিয়ে ঐতিহ্য বন্ধ করা সমাধান নয়। সচেতনতা ও নিরাপদ পদ্ধতি অবলম্বন করেই রসের এই ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁড়ির মুখে বাঁশপাতা বা মাটির ঢাকনা লাগালে বাদুড় প্রবেশ রোধ করা যায়। এছাড়া রস সিদ্ধ বা গুড় আকারে খেলে ঝুঁকি কমে। সরকারী পর্যায়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য তদারকি থাকলে রস নিরাপদে সংগ্রহ ও বিক্রি করা সম্ভব। নিপাহ ভাইরাসের ক্ষেত্রে সতর্কতা অপরিহার্য। আমাদের হাতে রয়েছে ঐতিহ্য ও নিরাপত্তার দুটি পথ। সচেতনভাবে ঐতিহ্য রক্ষা করাই শ্রেষ্ঠ উপায়, কারণ জীবন থাকলে তারই স্বাদ পাওয়া যায়।
সুশ্রী সরকার
আন্তর্জাতিক: পাকিস্তানকে আরও ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিল আইএমএফ
আন্তর্জাতিক: মদ বিক্রি শুরু করলো সৌদি আরব
আন্তর্জাতিক: ভারতের বৃহত্তম এয়ারলাইনে যেভাবে ধস নামলো