জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংশোধনের ফি বাড়ানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের ওপর ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে, কারণ এনআইডিতে বিদ্যমান ভুলের সিংহভাগই নাগরিকদের দ্বারা সৃষ্ট নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নাগরিকরা সঠিক তথ্য ও দলিলাদি সরবরাহ করার পরও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে নাম, জন্মতারিখ বা ঠিকানায় মারাত্মক ভুল হচ্ছে।
রাষ্ট্রের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ভুলের খেসারত কেন সাধারণ মানুষ তাদের পকেটের টাকা দিয়ে দেবে? এটি কেবল অযৌক্তিক নয়, বরং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। প্রচলিত নিয়মে ভুক্তভোগী নাগরিককে সংশোধনের জন্য দিনের পর দিন সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়, যা চরম ভোগান্তির। এর ওপর বাড়তি ফি আরোপ করা মূলত সেই ভোগান্তিকেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার শামিল।
প্রকৃত সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে এই ‘ফি বৃদ্ধির সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি’ চালু করা জরুরি। যদি প্রমাণিত হয় যে ভুলটি দাপ্তরিক বা কর্মচারীর অবহেলায় হয়েছে, তবে সংশোধনের জন্য নাগরিকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া উচিত নয়। বরং যেই কর্মচারীর ভুলে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই জরিমানার আওতায় আনা দরকার। এতে কাজের প্রতি তাদের সতর্কতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। এনআইডি সেবাকে রাজস্ব আয়ের মাধ্যম না ভেবে জনবান্ধব অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই হোক লক্ষ্য। ভুল করবে তারা, আর জরিমানা গুনবে জনগণ-এই প্রহসন অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
ইব্রাহীম খলিল (সবুজ)
পটুয়াখালী