গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সবাই আমরা নির্বিচারে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলছি। প্লাস্টিক পলিথিনের মতো মারাত্মক বর্জ আমরা নিয়মিতই নদীতে ফেলি। শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পলি নদীতে জমে নাব্যতা কমাচ্ছে। এসব কারণে একদিকে জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে নদী দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
নদী রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়কে জলাভূমির লিজ বন্ধ করতে হবে। মৎস্য অধিদপ্তরকে জলাভূমি রক্ষায় সক্রিয় হতে হবে। আন্তঃদেশীয় নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করতে হবে।
নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারকে দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে। একই সঙ্গে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
বর্তমানে দ-বিধি, পরিবেশ আইন ও পানি আইনে নদী দখল ও দূষণের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো-এই আইনগুলোর সঠিক প্রয়োগ হয়নি। নদী দখল ও দূষণের দায়ে কাউকে কারাদ- পেতে হয়নি। শুধু কিছু জরিমানা করেই দায় শেষ করা হয়েছে।
আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য-সবকিছুর সঙ্গে নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হাজার বছর ধরে নদী আমাদের কৃষি, অর্থনীতি ও প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। একজন মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখেন, নদীও তেমনি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এই মা ভালো না থাকলে আমরা কেউই ভালো থাকতে পারি না।
তাই নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে এখনই সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নদী রক্ষা না করলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎও রক্ষা পাবে না।
তানিয়া খান