“চেহারা সুন্দর তো জীবন সহজ”-এই প্রচলিত কথাটি সমাজের এক অদৃশ্য বৈষম্যের প্রতিফলন। আমাদের সমাজে মানুষের মূল্যায়ন তার কাজ, মেধা বা যোগ্যতার মাধ্যমে করা হয় না; বরং সাজ-পোশাক, বাইরের আকর্ষণ এবং বাহ্যিক চকচিক্য দিয়ে তাকে বিচার করা হয়। বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতাকে বলা হয় “বাহ্যিক চেহারার ভিত্তিতে পক্ষপাত”। সহজভাবে বলতে গেলে, আমরা যাকে সুন্দর মনে করি, তার প্রতি সহজেই সহানুভূতিশীল হই, আর যাকে প্রচলিত মানদণ্ডের বাইরে মনে করি, তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ বা অযোগ্য ভাবি।
এই পক্ষপাতের প্রভাব শিক্ষালাভ, চাকরি, বন্ধুত্ব, প্রেম, চিকিৎসা এমনকি বিচারব্যবস্থায়ও প্রতীয়মান। রানী এলিজাবেথ একবার বলেছিলেন, “আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি।” বাস্তবে সুন্দর দেখার প্রভাব এতটাই প্রবল যে, মানুষ কখনও নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে অন্যের মতো হওয়ার চেষ্টা করে। ফলস্বরূপ, নিজেও নিজেকে যথেষ্ট সুন্দর মনে করতে পারে না। আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দর প্রার্থীরা চাকরির সাক্ষাৎকারে সুবিধা পায় এবং তাদের ভুলও ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা হয়। বিপরীতে, প্রচলিত ধারণার বাইরে থাকা চেহারার মানুষ প্রায়শই অবহেলার শিকার হন।
বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম এই প্রভাব আরও তীব্র করছে। সেলফি পোস্টের আগে ফিল্টার দিয়ে গায়ের রঙ ফর্সা করা, দাগ লুকানো এসব নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে উঠেছে। তাই সমাজকে এই কুপ্রবণতা থেকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন মূল্যবোধের চর্চা, সামগ্রিক চেতনার পরিবর্তন এবং শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো যে, সম্মান অর্জন করা যায় কেবল কাজ, যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে, বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে নয়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত।
শেফাতুন নেছ
খেলা: মোহামেডান-কিংস ম্যাচ ড্র