image

নতুন বছর: নতুনভাবে শুরু করার সাহস

নতুন বছর এলেই চারপাশে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ক্যালেন্ডারের পাতা বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়, যেন জীবনও নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ পেল। অতীতের ব্যর্থতা, কষ্ট কিংবা অপূর্ণতা পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক নীরব আহ্বান নিয়ে আসে নতুন বছর। তবে নতুন বছর কেবল আনন্দ বা শুভেচ্ছার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর সঙ্গে যুক্ত থাকে দায়িত্ববোধ ও আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তা।

নতুন বছরে আমরা প্রায়ই বড় বড় পরিকল্পনার কথা বলি। ভালো মানুষ হওয়া, নিয়মিত কাজ করা, স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া কিংবা সমাজের জন্য কিছু করার অঙ্গীকার করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো-বছর এগোতে না এগোতেই অনেক প্রতিশ্রুতি ঝরে পড়ে। এর কারণ সময়ের অভাব নয়, বরং নিজের সঙ্গে নিজের করা অঙ্গীকারে স্থির না থাকা।

নতুন বছর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিবর্তন হঠাৎ আসে না; ধীরে ধীরে, ধারাবাহিক চেষ্টার মাধ্যমেই তা সম্ভব।ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি সামাজিক বাস্তবতাও নতুন বছরের ভাবনায় গুরুত্ব পায়। একটি বছর আমাদের শেখায় ভুল সিদ্ধান্তের মূল্য কতটা বড় হতে পারে, আর সঠিক পথে চলার সুফল কত গভীর। সমাজে সহনশীলতা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নতুন বছরে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুধু নিজের উন্নতি নয়, চারপাশের মানুষ ও সমাজের কথাও ভাবতে শেখায় এই সময়টা।

নতুন বছর আশার পাশাপাশি আত্মসংযমেরও বার্তা দেয়। ভোগের চেয়ে মূল্যবোধকে, প্রদর্শনের চেয়ে বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়ার শিক্ষা দেয় সময়ের এই পরিবর্তন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভিড়ে আমরা যদি নিজের ভেতরের মানুষটিকে বদলাতে না পারি, তবে নতুন বছরের তাৎপর্য অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-নতুন বছর আমাদের ভুলে যাওয়ার নয়, শেখার সুযোগ দেয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ। হতাশা নয়, বরং সচেতনতা; আবেগ নয়, বরং দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত এই মনোভাব নিয়েই নতুন বছরকে গ্রহণ করা উচিত। শেষ পর্যন্ত নতুন বছর কোনো জাদুকাঠি নয়, যা একদিনে সব বদলে দেবে। তবে এটি একটি সুযোগ নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার, ভুলগুলো সংশোধন করার এবং ধীরে হলেও সঠিক পথে চলার। সেই সুযোগটুকু কাজে লাগাতে পারলেই নতুন বছর সত্যিকার অর্থে নতুন হয়ে ওঠে।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সম্প্রতি