শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো-আজ সেই শিক্ষাই ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান শিক্ষা ব্যয় দেশের অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে মাঝপথেই ঝরে পড়তে বাধ্য করছে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সব স্তরেই ব্যয় বেড়েছে বহুগুণে। ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, কোচিং, গাইড বই, অনলাইন ক্লাসের খরচ, যাতায়াত ও আবাসন ব্যয় সব মিলিয়ে শিক্ষা এখন একপ্রকার বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হচ্ছে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে নামতে। কেউ গার্মেন্টসে, কেউ দোকানে, কেউ আবার অনানুষ্ঠানিক শ্রমে যুক্ত হচ্ছে-শুধু পরিবারের হাল ধরার জন্য। অথচ এসব শিক্ষার্থীর অনেকেরই ছিল বড় স্বপ্ন ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক বা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। কিন্তু দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতায় সেই স্বপ্নগুলো অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ সীমিত, আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যয় আকাশছোঁয়া। ফলে মেধা নয়, অর্থই হয়ে উঠছে শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার প্রধান শর্ত। এতে সমাজে বৈষম্য আরও গভীর হচ্ছে এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তি বা পরিবারের সমস্যা নয়; এটি জাতীয় সংকট। কারণ আজ যারা শিক্ষার অভাবে ঝরে পড়ছে, আগামী দিনে তারাই দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারত। একটি জাতি কখনোই তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবহেলা করে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে না।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, শিক্ষাবৃত্তি ও উপবৃত্তির পরিসর বিস্তৃত করতে হবে এবং শিক্ষাকে সত্যিকার অর্থে সর্বজনীন করতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান শ্রেণি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ঝরে পড়বে শুধু স্বপ্ন নয়, ঝরে পড়বে একটি জাতির ভবিষ্যৎও।
আনিকা ইসলাম