image

শরীয়তপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন, পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গতকাল সোমবার রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা কবরের ওপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা আ. মান্নান খান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তিনি ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাড়ির বসতঘরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়। সোমবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা কবরের ওপর কাঠ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান খানের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী মাহফুজা বেগম এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে নিয়ামতপুর গ্রামেই বসবাস করছেন। প্রতিদিনের মতো আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি স্বামীর কবরের পাশে যান। সেখানে গিয়ে কবরের ওপর আগুন দেওয়ার চিহ্ন দেখে তিনি চিৎকার করে ওঠেন। তাঁর চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

ঘটনার পর আ. মান্নান খানের মেয়ে আফরোজা আক্তার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের মুঠোফোনে জানান। তিনি বলেন, মায়ের চিৎকার শুনে কবরের পাশে গিয়ে দেখেন, কবরের একটি অংশজুড়ে ছাই পড়ে আছে এবং সদ্য নিভে যাওয়া আগুনের চিহ্ন স্পষ্ট। তখনো ছাই থেকে অল্প ধোঁয়া বের হচ্ছিল। তিনি জানান, তাৎক্ষণিকভাবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। কারা কী উদ্দেশ্যে এ কাজ করেছে, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। এই ঘটনায় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

আজ সকালে নিয়ামতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরের পাশে স্বজনদের ভিড়। সেখানে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী মাহফুজা বেগম। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, তাঁর স্বামীকে নিয়ে পুরো পরিবার ও গ্রামের মানুষ গর্বিত। এমন একজন সম্মানিত মানুষের কবরে আগুন দেওয়ার ঘটনা তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরের সঙ্গে কার কী শত্রুতা থাকতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা বলেই কি তাঁর স্বামীর কবরে এমন অবমাননা করা হলো—এই প্রশ্ন তুলে তিনি বিচার দাবি করেন। বিজয় দিবসের আনন্দের দিনে পুরো পরিবারকে কান্নায় ভাসতে হচ্ছে বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ সিকদার বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন। এমন ঘটনা উদ্বেগজনক ও উৎকণ্ঠার বলে মন্তব্য করে তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধারা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার তথ্য তাঁর মেয়ের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে লোক পাঠাবেন এবং ঘটনার বিস্তারিত খোঁজ নেবেন বলে জানান।

এদিকে জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, তিনি এখনো এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা শোনেননি। তবে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» আগামী নির্বাচন শুধু ক্ষমতার পালা বদল নয়, বাংলাদেশের আগামী ১শ বছরের রূপরেখা -চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক

সম্প্রতি