alt

একজন অক্সিজেন ফেরিওয়ালার গল্প

প্রতিনিধি, ঢাবি : বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১

http://sangbad.net.bd/images/2021/July/07Jul21/news/aaaaaa.jpg

করেনা মহামারী জেঁকে বসেছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর তালিকা বড় হচ্ছে। নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটছে মানুষের। এর মধ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশে সংকট রয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। করোনা সংক্রমণের ফলে অনেকেই ভুগছেন শ্বাসকষ্টে কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অপ্রতুলতা।

এমতাবস্থায় ’একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে করোনায় আক্রান্তদের দ্বারে দ্বারে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’। গত এক বছরে ৭ হাজার ৬৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর কাছে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

শুরুতে ১২টি সিলিন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ১৪০টি সিলিন্ডার রয়েছে তাদের৷ এছাড়াও এই উদ্যোগে ১৫০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এই সেবা সরাসরি সংগঠনটির সেচ্ছাসেবকরা পৌঁছে দেন। জেলা শহরের মধ্যে ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই সেবা বিদ্যমান৷

অন্যদিকে যেসব জেলা শহরে সরাসরি সেবা নেই সেখানে কুরিয়ার যোগে বা কোন এম্বুলেন্স ওই জেলা গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেন তারা।

অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানোর জন্য এমনকি কোন যাতায়াত ভাড়াও নেননা তারা। এমনকি কোন জামানতও জমা দিতে হয় না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থাকা সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবাটি মানুষের বাসায় পৌঁছে দেন।

নিজেরাই রোগীর দ্বারে গিয়ে এই সেবা পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন ‘বিনামূল্যে জয়বাংলা অক্সিজেন সেবা’র প্রধান সমন্বয়ক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

http://sangbad.net.bd/images/2021/July/07Jul21/news/up-2.jpg

করোনার এই প্রকোপে সেবা প্রদানকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে প্রায় ২০ জন এবং সাদ বিন কাদের চৌধুরীর পুরো পরিবার করোনাক্রান্ত হলেও তাদের সেবা থেমে যায়নি কখনো।

সাদ বিন কাদের বলেন, যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি আমরা সেসব জেলা অক্সিজেন সেবা চালুর চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে যেসব জেলায় সংক্রমণ কমে গেছে সেসব জেলা থেকে আমরা অধিক সংক্রমিত জেলার দিকে মুভ করি।

তিনি আরো বলেন, অনেকসময় রাতে অনেকেরই শাসকষ্ট উঠে, তখন সাথেসাথেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তখন আমরা আমাদের নিজস্ব পাল্স অক্সিমিটার দিয়ে রোগীর অবস্থা নির্ণয় করে তারপর সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ করি। এছাড়া আমাদের সাথে অভিজ্ঞ ডাক্তার প্যানেলও রয়েছেন।

আর্থিকভাবে কেউ সহযোগিতা করছে কিনা কিংবা ফান্ডের উৎস জানতে চায়লে সাদ বলেন, আমরা আর্থিক লেনদেন করিনা। কেউ কোন পণ্য দিলে আমরা শুধু সেটি গ্রহণ করি। কেউ অক্সিজেন রিফিলে সহযোগিতা করতে চাইলে আমরা রিফিল সেন্টারের সাথে কানেক্ট করিয়ে দেই। আমরা আর্থিক লেনদেন কে নিরুৎসাহিত করে থাকি। তবে আমাদের এ কর্মকান্ডে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা রয়েছে। আমরা প্রতিমাসে একবার করে অক্সিজেন সেবার সামগ্রিক বিবরণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদান করে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি কাজের স্বচ্ছতা কাজকে গতিশীল করে।

সাদ বলেন, এত দীর্ঘসময় মানুষের ভালবাসা ছাড়া এধরণের একটি কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব। ভালবাসার কোন বিনিময় হয় না। মানুষের ভালবাসায় জন্যই আমরা দীর্ঘ সময় এই কাজটি পরিচালনা করতে সম্ভব হয়েছি। মানুষ যখন বলে আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার এর উসিলায় উনি বেঁচে গেছেন, পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছেন তখন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হতে পারে না। যদিও হায়াতের মালিক সৃষ্টিকর্তা।

যতদিন সংকট থাকবে ততদিন এই সেবা চালিয়ে যাবেন বলেও জানান ছাত্রলীগের এই নেতা।

তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরণের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছে। সে ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা চালু করি বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মানুষের ভালবাসার জন্যই এই সংগ্রামের পথ আমরা পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। আনন্দ যেমন দেখেছি, ঠিক তেমনি আর্তনাদের সাক্ষী হয়েছি। অন্যের প্রিয়জন হারানোর বেদনা আমাদের ব্যথিত করেছে। অনেক সময় রোগির চাপ এতো বেশি থাকে যে সবাইকে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারিনা। এই সময় আমরা দোকান থেকে ভাড়া নিয়ে এবং ভাড়ার মূল্য পরিশোধ করে সেবা দিয়ে থাকি। কিন্তু কিছু সময় থাকে যখন তাদের কাছেও সিলিন্ডার থাকে না। তখন আমরা অতিরিক্ত এই রোগিদের আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারিনা। তখন আমরা ব্যথিত হই। এই বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।

ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, এই মহামারীতে অনেকে তার প্রিয়জন হারিয়েছেন। এই হারানোর লাইনটা আর দীর্ঘতর না হোক সেটি প্রত্যাশা। গতবছর ২৫ জুন থেকে আমরা এই সেবা চালু করি। মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে দিনে ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহে ৭ দিন সেবা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অন্তপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বন্ধুদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করে যাব। সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম জারি থাকবে ইনশাল্লাহ।

সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকে ইতোমধ্যে তাদেরকে অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা নাম দিয়েছেন।

সাদ বলেন, আমার বিশ্বাস করি করোনামুক্ত যে নতুন ভোরের স্বপ্ন আমরা দেখি সে ভোর খুব বেশি দূরে নয়। দুঃখের অমানিশা ভেদ করে সুখের সোনালী সূর্য আবার ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশয়। এই অন্ধকারে আলো হয়ে মানুষের পাশে থাকবে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হবে ২৭ অক্টোবর

ছবি

রাতে উত্তাল বুয়েট: ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যে ‘ত্রিভুজ প্রেম’

ছবি

পছন্দের কথা জানতে পেরেই জবি শিক্ষার্থীকে খুন: পুলিশ

ছবি

পুলিশের ধারণা ছাত্রীর প্রেমিকের সন্দেহে জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ খুন

ছবি

জবি শিক্ষার্থী খুন: একদিনের শোক ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস স্থগিত

ছবি

ছুরিকাঘাতে জবি ছাত্রদল নেতার খুন, আটক ছাত্রী

পুরান ঢাকায় ছুরিকাঘাতে জবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

রাকসুতেও শিবিরের জয়-জয়কার জাহিদুল ইসলাম

ছবি

রাকসুতে শিবিরের প্যানেল থেকে বিজয়ী হলেন সনাতন ধর্মালম্বী সুজন

ছবি

রাকসু: কোন পদে কে জয়ী

ছবি

একচেটিয়া জয় শিবিরের, ছাত্রদলের ভরাডুবি

ছবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: র‌্যাগিং, শৃঙ্খলাভঙ্গসহ বিভিন্ন দায়ে ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ছবি

জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ হরণের অভিযোগ হিন্দু শিক্ষার্থীদের

ভিপি-জিএস শিবিরের, এজিএস ছাত্রদলের

ছবি

আনন্দ, অভিযোগে রাকসুর ভোট শেষ, ফলের অপেক্ষা

ছবি

স্টামফোর্ডে সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কর্মশালা অনু‌ষ্ঠিত

ছবি

স্টামফোর্ডে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা অনুষ্ঠান: পিসিওএস ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার আহ্বান

ছবি

আনন্দ, অভিযোগে রাকসুর ভোট শেষ, ফলের অপেক্ষা

ছবি

রাকসু: ভোটার আসার আগেই শতাধিক ব্যালটে স্বাক্ষর, কারচুপির অভিযোগ

ছবি

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে শেষ হলো রাকসুর ভোট, ফলাফলের অপেক্ষা

ছবি

রাকসু: ৫ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ‘৬০ শতাংশ’

ছবি

রাকসুর ভোট: বাইরে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান

ছবি

রাকসু: ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের

ছবি

রাকসুতে একচেটিয়া জয় শিবিরের, ছাত্রদলের ভরাডুবি

রাকসু: ভোট দিলেন ছাত্রশিবিরের ভিপি-জিএস প্রার্থী, তারপর যা বললেন

ছবি

রাকসু: ভোট দিয়ে যা বললেন ছাত্রদলের ভিপি-জিএস প্রার্থী

ছবি

রাকসু: আড়াই ঘন্টায় ভোট পড়েছে ২৫ শতাংশ

ছবি

চাকসু নির্বাচনে একচেটিয়া জয় শিবিরের

ছবি

রাকসু: ভোট গ্রহণ শুরু

ছবি

রাকসু: ৩৫ বছর পর ভোট, ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ

ছবি

চাকসু: উৎসবমুখর ভোট, অনিয়মের অভিযোগ

ছবি

চাকসু নির্বাচনে ভোট গণনার সময় ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের মুখোমুখি উত্তেজনা

ছবি

অনিয়মের অভিযোগ তুলেও ভোট বর্জন নয়: চবি ছাত্রদলের অবস্থান

ছবি

চাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ, বিচার ও তদন্তের দাবি

চাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ, বিচার ও তদন্তের দাবি

tab

একজন অক্সিজেন ফেরিওয়ালার গল্প

প্রতিনিধি, ঢাবি

বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১

http://sangbad.net.bd/images/2021/July/07Jul21/news/aaaaaa.jpg

করেনা মহামারী জেঁকে বসেছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর তালিকা বড় হচ্ছে। নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটছে মানুষের। এর মধ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশে সংকট রয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। করোনা সংক্রমণের ফলে অনেকেই ভুগছেন শ্বাসকষ্টে কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অপ্রতুলতা।

এমতাবস্থায় ’একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে করোনায় আক্রান্তদের দ্বারে দ্বারে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’। গত এক বছরে ৭ হাজার ৬৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর কাছে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

শুরুতে ১২টি সিলিন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে প্রায় ১৪০টি সিলিন্ডার রয়েছে তাদের৷ এছাড়াও এই উদ্যোগে ১৫০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এই সেবা সরাসরি সংগঠনটির সেচ্ছাসেবকরা পৌঁছে দেন। জেলা শহরের মধ্যে ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই সেবা বিদ্যমান৷

অন্যদিকে যেসব জেলা শহরে সরাসরি সেবা নেই সেখানে কুরিয়ার যোগে বা কোন এম্বুলেন্স ওই জেলা গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেন তারা।

অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানোর জন্য এমনকি কোন যাতায়াত ভাড়াও নেননা তারা। এমনকি কোন জামানতও জমা দিতে হয় না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থাকা সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবাটি মানুষের বাসায় পৌঁছে দেন।

নিজেরাই রোগীর দ্বারে গিয়ে এই সেবা পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন ‘বিনামূল্যে জয়বাংলা অক্সিজেন সেবা’র প্রধান সমন্বয়ক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

http://sangbad.net.bd/images/2021/July/07Jul21/news/up-2.jpg

করোনার এই প্রকোপে সেবা প্রদানকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে প্রায় ২০ জন এবং সাদ বিন কাদের চৌধুরীর পুরো পরিবার করোনাক্রান্ত হলেও তাদের সেবা থেমে যায়নি কখনো।

সাদ বিন কাদের বলেন, যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি আমরা সেসব জেলা অক্সিজেন সেবা চালুর চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে যেসব জেলায় সংক্রমণ কমে গেছে সেসব জেলা থেকে আমরা অধিক সংক্রমিত জেলার দিকে মুভ করি।

তিনি আরো বলেন, অনেকসময় রাতে অনেকেরই শাসকষ্ট উঠে, তখন সাথেসাথেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তখন আমরা আমাদের নিজস্ব পাল্স অক্সিমিটার দিয়ে রোগীর অবস্থা নির্ণয় করে তারপর সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ করি। এছাড়া আমাদের সাথে অভিজ্ঞ ডাক্তার প্যানেলও রয়েছেন।

আর্থিকভাবে কেউ সহযোগিতা করছে কিনা কিংবা ফান্ডের উৎস জানতে চায়লে সাদ বলেন, আমরা আর্থিক লেনদেন করিনা। কেউ কোন পণ্য দিলে আমরা শুধু সেটি গ্রহণ করি। কেউ অক্সিজেন রিফিলে সহযোগিতা করতে চাইলে আমরা রিফিল সেন্টারের সাথে কানেক্ট করিয়ে দেই। আমরা আর্থিক লেনদেন কে নিরুৎসাহিত করে থাকি। তবে আমাদের এ কর্মকান্ডে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা রয়েছে। আমরা প্রতিমাসে একবার করে অক্সিজেন সেবার সামগ্রিক বিবরণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদান করে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি কাজের স্বচ্ছতা কাজকে গতিশীল করে।

সাদ বলেন, এত দীর্ঘসময় মানুষের ভালবাসা ছাড়া এধরণের একটি কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব। ভালবাসার কোন বিনিময় হয় না। মানুষের ভালবাসায় জন্যই আমরা দীর্ঘ সময় এই কাজটি পরিচালনা করতে সম্ভব হয়েছি। মানুষ যখন বলে আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার এর উসিলায় উনি বেঁচে গেছেন, পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছেন তখন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হতে পারে না। যদিও হায়াতের মালিক সৃষ্টিকর্তা।

যতদিন সংকট থাকবে ততদিন এই সেবা চালিয়ে যাবেন বলেও জানান ছাত্রলীগের এই নেতা।

তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরণের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছে। সে ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা চালু করি বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মানুষের ভালবাসার জন্যই এই সংগ্রামের পথ আমরা পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। আনন্দ যেমন দেখেছি, ঠিক তেমনি আর্তনাদের সাক্ষী হয়েছি। অন্যের প্রিয়জন হারানোর বেদনা আমাদের ব্যথিত করেছে। অনেক সময় রোগির চাপ এতো বেশি থাকে যে সবাইকে আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারিনা। এই সময় আমরা দোকান থেকে ভাড়া নিয়ে এবং ভাড়ার মূল্য পরিশোধ করে সেবা দিয়ে থাকি। কিন্তু কিছু সময় থাকে যখন তাদের কাছেও সিলিন্ডার থাকে না। তখন আমরা অতিরিক্ত এই রোগিদের আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারিনা। তখন আমরা ব্যথিত হই। এই বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।

ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, এই মহামারীতে অনেকে তার প্রিয়জন হারিয়েছেন। এই হারানোর লাইনটা আর দীর্ঘতর না হোক সেটি প্রত্যাশা। গতবছর ২৫ জুন থেকে আমরা এই সেবা চালু করি। মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে দিনে ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহে ৭ দিন সেবা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অন্তপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বন্ধুদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করে যাব। সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম জারি থাকবে ইনশাল্লাহ।

সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনগুলোও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকে ইতোমধ্যে তাদেরকে অক্সিজেনের ফেরিওয়ালা নাম দিয়েছেন।

সাদ বলেন, আমার বিশ্বাস করি করোনামুক্ত যে নতুন ভোরের স্বপ্ন আমরা দেখি সে ভোর খুব বেশি দূরে নয়। দুঃখের অমানিশা ভেদ করে সুখের সোনালী সূর্য আবার ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশয়। এই অন্ধকারে আলো হয়ে মানুষের পাশে থাকবে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

back to top