ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন। প্রসিকিউশন বিভাগের পক্ষ থেকে এসআই রুকনুজ্জামান তিনজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে র্যাব এই তিনজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালতে দেওয়া রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, রোববার রাত আড়াইটার দিকে নরসিংদীর সদর থানা এলাকা থেকে সামিয়া ও শিপুকে এবং সোমবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে মারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
গুলির ঘটনার দুই দিন পর, শুক্রবারের ঘটনার পর রোববার রাতে পরিবারের সম্মতিতে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সন্দেহভাজন ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে এই তিনজনের ঘনঘন ফোনালাপের তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এই তিনজনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদের গ্রেপ্তারের আগে হাদিকে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।
অন্যদিকে, গুলিবর্ষণকারীদের পালানো ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির মধ্যেই শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া শরীফ ওসমান বিন হাদি। তিনি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গণসংযোগের উদ্দেশ্যে বিজয়নগর এলাকায় গেলে তিনি হামলার শিকার হন।
ঘটনার সময় তিনি একটি চলন্ত রিকশায় ছিলেন। তখন একটি চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর রাতেই তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, তার অবস্থা ছিল ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’। পরবর্তীতে সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।