alt

জয়ের জন্মদিনে স্মৃতিচারণ করলেন মা শেখ হাসিনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়, একতলা একটা বাড়িতে ফ্লোরিং করে কাটছিল বন্দী জীবন। খাওয়া-দাওয়া কোন কিছুরই ঠিক ছিল না। এমন এক সংকাটাপন্ন পরিস্থিতিতে গর্ভে ছেলেকে নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবন। পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫০তম জন্মদিনে ছেলেকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ বাচ্চা হয়। আমার মা সব সময় সেই দোয়াই করতেন,’ বললেন তিনি। ছেলের জন্ম, নামকরণ, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অবদানের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

২৭ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক ২০২০-২০২১ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় সন্তান জয়কে নিয়ে এরকম স্মৃতিচারণ করেন তিনি। এরপর একইদিনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জন্মমুহূর্ত ও ওই সময়ের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে স্মৃতিমুখর হয়ে উঠেন প্রধানমন্ত্রী।

ছেলের নাম কীভাবে ঠিক হয়েছিল, সেই স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, প্রথম সন্তান তার গর্ভে। ‘২৩ মার্চ আপনারা জানেন পাকিস্তান দিবস হিসেবে..., ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায়। বাংলাদেশে কিন্তু পাকিস্তানি পতাকা কেউ ওড়ায়নি। সেইদিন সমস্ত বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। ৩২ নম্বর বাড়িতেও সেদিন আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। যদিও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায় ছিল, কিন্তু তাকে সবাই অস্বীকার করেছিল।’

‘বঙ্গবন্ধুর হাত, পায়ের নখ কেটে দেয়া আমার নিয়মিত কাজ ছিল। তিনি যখন বিশ্রাম নিতে বসেছেন দুপুরে, আমি তখন একটা মগে পানি নিয়ে তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছি। তখন তিনি বললেন “হ্যাঁ ভালোভাবে কেটে দে। জানি না আর এই সুযোগ পাবি কিনা। তবে তোর ছেলে হবে এবং সেই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেবে। তার নাম জয় রাখবি”।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সেই জয়ের জন্মদিন। পঞ্চাশ বছর তার বয়স হলো। এই করোনার কারণে আমরা সবাই এক হতে পারলাম না। এটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, এটা কিন্তু জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমার সন্তান প্রসবের সময় হয়, আমাকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল, কিন্তু আমার মাকে যেতে দেয়নি।’ ওই সময় হাসপাতাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন বন্দী, সেই বন্দী অবস্থায় জয়ের জন্ম। এবং তার নাম জয়ই আমরা রেখেছিলাম।’

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বন্দীশালায় ফিরে আসার পর একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় পাকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা তার ছেলের নাম জানতে চান। শেখ হাসিনা ছেলের নাম বলতেই সেই সেনা কর্মকর্তা নামের অর্থ জানতে চান। শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন, জয় মানে ‘ভিক্টরি’। তখন সেই পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খুব ক্ষেপে যায় এবং শিশু জয়কেও গালি দেয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কাজেই এই রকম একটা পরিবেশেই কিন্তু জয়ের জন্ম। সেখানে আমরা ফ্লোরেই থাকতাম, কোন প্রাইভেসি ছিল না। একতলা একটা বাড়ি। ওই অবস্থার মধ্যে খাওয়া দাওয়ারও কোন ঠিক ছিল না।’

‘ওকে নিয়ে আমি যখন একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িতে আশ্রয় নেই, তখন জানি না কীভাবে বেঁচে ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া কোন কিছুরই ঠিক ছিল না। কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ বাচ্চা হয়। আমার মা সব সময় সেই দোয়াই করতেন।’

জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা এবং তারপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,

‘ওই গৃহবন্দী থাকা অবস্থায়ই জয়কে আমার আব্বার বন্ধু আজিজ সাত্তার কাকা, তিনি নৈনিতালে নিয়ে জয় ও পুতুলকে ভর্তি করে দেন। কাজেই সেখানে পড়াশোনা করত বলেই স্কুল থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। যখন ছুটিতে আসত, কম্পিউটার নিয়ে আসত। জয়ের কাছ থেকে আমি কম্পিউটার শিখেছি।’

১৯৯১ সালে দলের জন্য অনেক দাম দিয়ে কম্পিউটার কেনার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে কীভাবে কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলন করা যায়, সেই চিন্তা তখন থেকেই তার ছিল।’

পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে কম্পিউটারের ওপর থেকে কর তুলে নিয়ে এ প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করে তোলার কথা বলেন তার মা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জয় তখন পরামর্শ দিয়েছিলেন, মানুষকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলে মানুষ তা শিখবে। আর সেভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশের ‘যাত্রার শুরু’।’

‘আলহামদুলিল্লাহ, আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ধাপে ধাপে এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ আমরা করেছি, সবগুলোই কিন্তু তার (জয়) পরামর্শ মতো।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি এইটুকু বলব, আজকে যে আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছি, প্রযুক্তি শিক্ষাটাকে পপুলার করতে পেরেছি এবং আমাদের যুব সমাজ, তরুণ সমাজ- এই তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা, তরুণ সমাজ যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং সেইভাবে জয়, আমার বোনের ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিক থেকে শুরু করে ওরা সবাই কিন্তু ওভাবেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছে। যার শুভ ফলটা আজকে বাংলাদেশ ভোগ করছে।’

‘নইলে করোনাকালীন আমি যদি চিন্তা করি, আমাদের যদি এই সুযোগটা না থাকত, আমাদের এই ডিজিটাল ডোরটা যদি ওপেন না থাকত, উন্মুক্ত না থাকত, আমরা কী অবস্থায় যেতাম। আমাদের সরকার চালানো মুশকিল হয়ে যেত। মানুষের জীবনযাত্রায় একটা বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো। আজকে আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা আমরা নিয়েছি বলেই কিন্তু এটা সম্ভব হচ্ছে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা দম্পতির ঘরে জন্ম নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। মঙ্গলবার তার জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এদিন ছিল তার ৫১তম জন্মদিন।

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

tab

জয়ের জন্মদিনে স্মৃতিচারণ করলেন মা শেখ হাসিনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়, একতলা একটা বাড়িতে ফ্লোরিং করে কাটছিল বন্দী জীবন। খাওয়া-দাওয়া কোন কিছুরই ঠিক ছিল না। এমন এক সংকাটাপন্ন পরিস্থিতিতে গর্ভে ছেলেকে নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবন। পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫০তম জন্মদিনে ছেলেকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ বাচ্চা হয়। আমার মা সব সময় সেই দোয়াই করতেন,’ বললেন তিনি। ছেলের জন্ম, নামকরণ, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অবদানের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

২৭ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক ২০২০-২০২১ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় সন্তান জয়কে নিয়ে এরকম স্মৃতিচারণ করেন তিনি। এরপর একইদিনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জন্মমুহূর্ত ও ওই সময়ের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে স্মৃতিমুখর হয়ে উঠেন প্রধানমন্ত্রী।

ছেলের নাম কীভাবে ঠিক হয়েছিল, সেই স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, প্রথম সন্তান তার গর্ভে। ‘২৩ মার্চ আপনারা জানেন পাকিস্তান দিবস হিসেবে..., ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায়। বাংলাদেশে কিন্তু পাকিস্তানি পতাকা কেউ ওড়ায়নি। সেইদিন সমস্ত বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। ৩২ নম্বর বাড়িতেও সেদিন আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। যদিও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায় ছিল, কিন্তু তাকে সবাই অস্বীকার করেছিল।’

‘বঙ্গবন্ধুর হাত, পায়ের নখ কেটে দেয়া আমার নিয়মিত কাজ ছিল। তিনি যখন বিশ্রাম নিতে বসেছেন দুপুরে, আমি তখন একটা মগে পানি নিয়ে তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছি। তখন তিনি বললেন “হ্যাঁ ভালোভাবে কেটে দে। জানি না আর এই সুযোগ পাবি কিনা। তবে তোর ছেলে হবে এবং সেই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেবে। তার নাম জয় রাখবি”।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সেই জয়ের জন্মদিন। পঞ্চাশ বছর তার বয়স হলো। এই করোনার কারণে আমরা সবাই এক হতে পারলাম না। এটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, এটা কিন্তু জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমার সন্তান প্রসবের সময় হয়, আমাকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল, কিন্তু আমার মাকে যেতে দেয়নি।’ ওই সময় হাসপাতাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন বন্দী, সেই বন্দী অবস্থায় জয়ের জন্ম। এবং তার নাম জয়ই আমরা রেখেছিলাম।’

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বন্দীশালায় ফিরে আসার পর একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় পাকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা তার ছেলের নাম জানতে চান। শেখ হাসিনা ছেলের নাম বলতেই সেই সেনা কর্মকর্তা নামের অর্থ জানতে চান। শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন, জয় মানে ‘ভিক্টরি’। তখন সেই পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খুব ক্ষেপে যায় এবং শিশু জয়কেও গালি দেয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কাজেই এই রকম একটা পরিবেশেই কিন্তু জয়ের জন্ম। সেখানে আমরা ফ্লোরেই থাকতাম, কোন প্রাইভেসি ছিল না। একতলা একটা বাড়ি। ওই অবস্থার মধ্যে খাওয়া দাওয়ারও কোন ঠিক ছিল না।’

‘ওকে নিয়ে আমি যখন একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িতে আশ্রয় নেই, তখন জানি না কীভাবে বেঁচে ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া কোন কিছুরই ঠিক ছিল না। কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ বাচ্চা হয়। আমার মা সব সময় সেই দোয়াই করতেন।’

জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা এবং তারপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,

‘ওই গৃহবন্দী থাকা অবস্থায়ই জয়কে আমার আব্বার বন্ধু আজিজ সাত্তার কাকা, তিনি নৈনিতালে নিয়ে জয় ও পুতুলকে ভর্তি করে দেন। কাজেই সেখানে পড়াশোনা করত বলেই স্কুল থেকেই কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। যখন ছুটিতে আসত, কম্পিউটার নিয়ে আসত। জয়ের কাছ থেকে আমি কম্পিউটার শিখেছি।’

১৯৯১ সালে দলের জন্য অনেক দাম দিয়ে কম্পিউটার কেনার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে কীভাবে কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলন করা যায়, সেই চিন্তা তখন থেকেই তার ছিল।’

পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে কম্পিউটারের ওপর থেকে কর তুলে নিয়ে এ প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করে তোলার কথা বলেন তার মা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জয় তখন পরামর্শ দিয়েছিলেন, মানুষকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলে মানুষ তা শিখবে। আর সেভাবেই ডিজিটাল বাংলাদেশের ‘যাত্রার শুরু’।’

‘আলহামদুলিল্লাহ, আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ধাপে ধাপে এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ আমরা করেছি, সবগুলোই কিন্তু তার (জয়) পরামর্শ মতো।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি এইটুকু বলব, আজকে যে আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছি, প্রযুক্তি শিক্ষাটাকে পপুলার করতে পেরেছি এবং আমাদের যুব সমাজ, তরুণ সমাজ- এই তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা, তরুণ সমাজ যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং সেইভাবে জয়, আমার বোনের ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিক থেকে শুরু করে ওরা সবাই কিন্তু ওভাবেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছে। যার শুভ ফলটা আজকে বাংলাদেশ ভোগ করছে।’

‘নইলে করোনাকালীন আমি যদি চিন্তা করি, আমাদের যদি এই সুযোগটা না থাকত, আমাদের এই ডিজিটাল ডোরটা যদি ওপেন না থাকত, উন্মুক্ত না থাকত, আমরা কী অবস্থায় যেতাম। আমাদের সরকার চালানো মুশকিল হয়ে যেত। মানুষের জীবনযাত্রায় একটা বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতো। আজকে আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা আমরা নিয়েছি বলেই কিন্তু এটা সম্ভব হচ্ছে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা দম্পতির ঘরে জন্ম নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। মঙ্গলবার তার জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এদিন ছিল তার ৫১তম জন্মদিন।

back to top