alt

গার্মেন্টস খুলছে, ঢাকায় ফেরার ভিড়

চাকরি হারানোর ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে আসছেন শ্রমিকরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

লকডাউনে পরিবহন বন্ধ, গার্মেন্টস খোলার ঘোষণায় শ্রমিকরা চাকরি বাঁচাতে ঢাকার পথে ছুটছে ফেরি, ট্রাকে, হেঁটে। শনিবার মাওয়া ঘাটে ফেরিতে ছিল উপচেপড়া ভিড়, তিল ধারণের জায়গাও ছিল না-সংবাদ

গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানা খোলার ঘোষণার পরই কারখানা থেকে ফোন গেছে শ্রমিকদের কাছে। রোববারের মধ্যে কাজে যোগ দেয়ার জন্য। চাকরি রক্ষার্থে লকডাউনের মধ্যেই সারাদেশ থেকে শ্রমিকদের ঢাকা আসার হিড়িক পড়ে গেছে।

তাই শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল রাজধানীমুখী মানুষের প্রচ- ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হতে হয়েছে। সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব মানুষ হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

পথে পথে নানা ভোগান্তি ও ছোট ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে তাদের। রিশকা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিশকা, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ১০ গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

মালিকদের চাপের মুখে গতকাল শুক্রবার রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যদিও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মালিকরা। ৫ আগস্টের পরে পর্যায়ক্রমে তাদের নিয়ে আসবে, একেবারে না। এক্ষেত্রে কিন্তু ছাঁটাইয়ের কোন আশঙ্কা নেই। কেউ চাকরি হারাবে না বলে মালিকরা কথা দিয়েছিল।’

চাকরি হারানোর ভয়ে ঢাকামুখী শ্রমিকরা

শ্রমিকরা বলেছেন, রোববারের মধ্যে কাজে যোগ না দিয়ে তাদের চাকরি থাকবে না। তাই চাকরি হারানোর ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় প্রবেশ করছেন তারা। রাজধানীর জুরাইন এলাকায় সালাহউদ্দীন নামের গাজীপুরের এক সোয়েটার ফ্যাক্টরির শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে তাদের ইনচার্জ ফোন দিয়ে রোববারের মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলেছেন। লকডাউনে কিভাবে আসব বলা হলে তিনি জানান, সবাই আসবে আর তুমি আসতে পারবে না। এটা কেমন কথা। যদি সময় মতো কাজে না আসো তাহলে চাকরি থাকবে না।’ তাই চাকরি রক্ষার্থে ঢাকায় আসতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় আলম নামের এক গার্মেন্ট কর্মী বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ থাকায় গোপালগঞ্জ থেকে ভেঙে ভেঙে পোস্তগোলা ব্রিজ ওপার পর্যন্ত এসেছি। এরপর ব্রিজ পার হয়ে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত হেঁটেই এসেছি। টঙ্গী এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। যাওয়ার কিছু পাচ্ছি না। কাল থেকে গার্মেন্টস খুলবে তাই ঢাকায় আসতে হয়েছে। হেঁটে গুলিস্তান পর্যন্ত যাব, দেখি কিছু পাই কিনা।’

এভাবে ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল মানুষের ঢল। হেঁটে, রিকশা-ভ্যান-ট্রাকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে কষ্ট ও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলীর আমিনবাজার সেতু, পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু-১ ও বাবুবাজার বুড়িগঙ্গা সেতু-২, কাঁচপুর থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়, উত্তরা আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গী ব্রিজসহ ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথে ছিল রাজধানীরমুখী মানুষের স্রোত।

এছাড়া মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাটের ছিল ঢাকামুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে ফেরি, পণ্যবাহী ট্রাক ও ভ্যানে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে তাদের।

পথে পথে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি

ঢাকামুখী মানুষে চাপে শনিবার দীর্ঘ গাড়ির জটের সৃষ্টি হয়েছিল সাভারের আমিনবাজার ব্রিজে। মানিকগঞ্জের ফেরিঘাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে আসা যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয় ব্রিজের ওপাড়ে। এসব যাত্রী হেঁটে ব্রিজ পার হওয়ার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজশাহী থেকে স্ত্রী ও তিন বছরের সন্তানসহ গাবতলী এলাকায় এসেছেন এক গার্মেন্ট কর্মী রহিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। কাজে যোগ দিতে পরিবার নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছি। প্রথমে রাজশাহী থেকে প্রাইভেটকারে চন্দ্রা পর্যন্ত আসি। গাড়িতে প্রতিজন ভাড়া নেয়া হয়েছে ২২০০ টাকা। এরপর আবারও ব্যক্তিগত গাড়ি। সেখানেও জন প্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া খরচ হয়েছে। এরপর রিকশা ও হেঁটে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত আসলাম। আমিনবাজার ব্রিজ থেকে গাবতলীতে এসেছি হেঁটে।’

গাড়ি না থাকায় ঢাকায় প্রবেশ করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। গাবতলী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রিকশা ভাড়া চাচ্ছে ৩০০ টাকা। এভাবে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যেতে তার আরও ২০০০ টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।

গাবতলী এলাকায় শফিকুল নামের অন্য এক পোশাক শ্রমিক বলেন, ‘শুক্রবার হঠাৎ অফিস থেকে ফোন। বস কইছে, কারখানায় না আসলে চাকরি যাবে। সময়মতো অফিসে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। আমার জীবনে এমন দুর্ভোগে কখনও পড়ি নাই। কারখানা চালুর আগে পরিবহন চালু করা উচিত ছিল।’

ফেরিঘাটে ছিল ঢাকামুখী মানুষের ঢল

গার্মেন্টস খোলার ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে ফেরিঘাটে ছিল ঢাকামুখী মানুষের ঢল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে ফেরিতে নদী পার হতে হয়েছে তাদের। যাত্রীদের চাপের কারণে রাত ৮টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চসহ সারাদেশের নৌযান চলাচলের নির্দেশ দেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটের ফেরিতে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে তিল ধরণের ঠাঁই ছিল না। শনিবার সকাল হতে নৌ-রুটের সচল ৯টি ফেরিতে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পারাপার হয়েছে হাজার হাজার যাত্রী, ব্যক্তিগত গাড়ি। যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। শুধুমাত্র জরুরি ও লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারে ফেরি চালু থাকলেও মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রী বোঝাই করে আসছে। ফেরিতে যাত্রীর চাপ ও গাদাগাদিতে উপেক্ষিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।

প্রতিনিধি, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) : লকডাউনের মধ্যে শনিবার সকাল থেকেই হঠাৎ করেই আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে কর্মমুখী হাজার-হাজার মানুষের ঢল নামে। প্রায় সব বয়সী মানুষের চাপে এই দুইঘাটে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। উত্তরাঞ্চলের পাবনা, বেড়া, নাকালিয়া, সাথিয়া, কাজিরহাট, ঈশ্বরদী, কাশিনাথপুর, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, দৌলতপুর, রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, কুমারখালিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে জড়ো হয়। এ সব যাত্রীদের বেশিভাগ ছিল নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট কর্মী।

ছবি

পরিবেশ ধ্বংসের বিনিময়ে উন্নয়ন ‘টেকসই হতে পারে না’: সৈয়দা রিজওয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

হালদা নদী রক্ষায় গেজেট পরিবর্তন করা হবে : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ছবি

‘সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিতে থাকা’ নিয়ে মন্তব্যের ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের

ছবি

নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা বাড়াতে ডিএমপিকে ইসির চিঠি

ছবি

সংবিধান সংস্কার ‘জুলাই সনদ অনুসারে’: ২৭০ পঞ্জিকা দিবসে না হলে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পাস’

আইনি প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বেসরকারি স্কুল ও কলেজে এমপিও নীতিমালায় বড় পরিবর্তন: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ বিলুপ্ত, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ যোগ্যতায় পরিবর্তন

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অতীত থেকে মুক্তির পথ দেখাবে: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারে সরকারের জন্য দুটি বিকল্প পথ প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

ছবি

নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বডি-ওর্ন-ক্যামেরা কেনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

শীতের কম্বল ফেব্রুয়ারিতে দিয়ে লাভ নেই বিভাগীয় কমিশনার

ছবি

দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষকরা সম্মুখসারির যোদ্ধা খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের সুপারিশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উভয়ের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক গভীর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোনথা’, ভারতের অন্ধ্র উপকূলে আঘাতের শঙ্কা

ছবি

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু: হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩ জন

ছবি

জেইসির মাধ্যমে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত, আজ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর

চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

এক লাখ কর্মী নিয়োগ, প্রধান উপদেষ্টাকে অগ্রগতি জানালো জাপানি প্রতিনিধিদল

ছবি

মঙ্গলবার সরকারের হাতে যাবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা

ছবি

নভেম্বরের পরও চলবে উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম: অন্তর্বর্তী সরকারের স্পষ্টীকরণ

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১

ছবি

অর্থ পাচারের মামলায় সম্রাট ও আরমানের জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হওয়া ও নৈতিক নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার

ডেঙ্গু: একদিনে সর্বোচ্চ ১১৪৩ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪

ছবি

শাহজালালে আগুন: অনুসন্ধানে ঢাকায় তুরস্কের বিশেষজ্ঞ দল

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউলসহ দুই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেড়েছে

ছবি

মেট্রো রেললাইনের বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যু, ৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন

সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর

ছবি

বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেয়া হবে না, হাইকোর্টের প্রশ্ন

আরপিও সংশোধন: রাষ্ট্রপতি সই করলেই জারি হবে অধ্যাদেশ

tab

গার্মেন্টস খুলছে, ঢাকায় ফেরার ভিড়

চাকরি হারানোর ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে আসছেন শ্রমিকরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

লকডাউনে পরিবহন বন্ধ, গার্মেন্টস খোলার ঘোষণায় শ্রমিকরা চাকরি বাঁচাতে ঢাকার পথে ছুটছে ফেরি, ট্রাকে, হেঁটে। শনিবার মাওয়া ঘাটে ফেরিতে ছিল উপচেপড়া ভিড়, তিল ধারণের জায়গাও ছিল না-সংবাদ

শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানা খোলার ঘোষণার পরই কারখানা থেকে ফোন গেছে শ্রমিকদের কাছে। রোববারের মধ্যে কাজে যোগ দেয়ার জন্য। চাকরি রক্ষার্থে লকডাউনের মধ্যেই সারাদেশ থেকে শ্রমিকদের ঢাকা আসার হিড়িক পড়ে গেছে।

তাই শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল রাজধানীমুখী মানুষের প্রচ- ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হতে হয়েছে। সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব মানুষ হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

পথে পথে নানা ভোগান্তি ও ছোট ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে তাদের। রিশকা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিশকা, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ১০ গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

মালিকদের চাপের মুখে গতকাল শুক্রবার রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যদিও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মালিকরা। ৫ আগস্টের পরে পর্যায়ক্রমে তাদের নিয়ে আসবে, একেবারে না। এক্ষেত্রে কিন্তু ছাঁটাইয়ের কোন আশঙ্কা নেই। কেউ চাকরি হারাবে না বলে মালিকরা কথা দিয়েছিল।’

চাকরি হারানোর ভয়ে ঢাকামুখী শ্রমিকরা

শ্রমিকরা বলেছেন, রোববারের মধ্যে কাজে যোগ না দিয়ে তাদের চাকরি থাকবে না। তাই চাকরি হারানোর ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় প্রবেশ করছেন তারা। রাজধানীর জুরাইন এলাকায় সালাহউদ্দীন নামের গাজীপুরের এক সোয়েটার ফ্যাক্টরির শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে তাদের ইনচার্জ ফোন দিয়ে রোববারের মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলেছেন। লকডাউনে কিভাবে আসব বলা হলে তিনি জানান, সবাই আসবে আর তুমি আসতে পারবে না। এটা কেমন কথা। যদি সময় মতো কাজে না আসো তাহলে চাকরি থাকবে না।’ তাই চাকরি রক্ষার্থে ঢাকায় আসতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় আলম নামের এক গার্মেন্ট কর্মী বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ থাকায় গোপালগঞ্জ থেকে ভেঙে ভেঙে পোস্তগোলা ব্রিজ ওপার পর্যন্ত এসেছি। এরপর ব্রিজ পার হয়ে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত হেঁটেই এসেছি। টঙ্গী এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। যাওয়ার কিছু পাচ্ছি না। কাল থেকে গার্মেন্টস খুলবে তাই ঢাকায় আসতে হয়েছে। হেঁটে গুলিস্তান পর্যন্ত যাব, দেখি কিছু পাই কিনা।’

এভাবে ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল মানুষের ঢল। হেঁটে, রিকশা-ভ্যান-ট্রাকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে কষ্ট ও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলীর আমিনবাজার সেতু, পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু-১ ও বাবুবাজার বুড়িগঙ্গা সেতু-২, কাঁচপুর থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়, উত্তরা আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গী ব্রিজসহ ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথে ছিল রাজধানীরমুখী মানুষের স্রোত।

এছাড়া মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাটের ছিল ঢাকামুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে ফেরি, পণ্যবাহী ট্রাক ও ভ্যানে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে তাদের।

পথে পথে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি

ঢাকামুখী মানুষে চাপে শনিবার দীর্ঘ গাড়ির জটের সৃষ্টি হয়েছিল সাভারের আমিনবাজার ব্রিজে। মানিকগঞ্জের ফেরিঘাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে আসা যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয় ব্রিজের ওপাড়ে। এসব যাত্রী হেঁটে ব্রিজ পার হওয়ার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

রাজশাহী থেকে স্ত্রী ও তিন বছরের সন্তানসহ গাবতলী এলাকায় এসেছেন এক গার্মেন্ট কর্মী রহিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। কাজে যোগ দিতে পরিবার নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছি। প্রথমে রাজশাহী থেকে প্রাইভেটকারে চন্দ্রা পর্যন্ত আসি। গাড়িতে প্রতিজন ভাড়া নেয়া হয়েছে ২২০০ টাকা। এরপর আবারও ব্যক্তিগত গাড়ি। সেখানেও জন প্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া খরচ হয়েছে। এরপর রিকশা ও হেঁটে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত আসলাম। আমিনবাজার ব্রিজ থেকে গাবতলীতে এসেছি হেঁটে।’

গাড়ি না থাকায় ঢাকায় প্রবেশ করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। গাবতলী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রিকশা ভাড়া চাচ্ছে ৩০০ টাকা। এভাবে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যেতে তার আরও ২০০০ টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।

গাবতলী এলাকায় শফিকুল নামের অন্য এক পোশাক শ্রমিক বলেন, ‘শুক্রবার হঠাৎ অফিস থেকে ফোন। বস কইছে, কারখানায় না আসলে চাকরি যাবে। সময়মতো অফিসে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। আমার জীবনে এমন দুর্ভোগে কখনও পড়ি নাই। কারখানা চালুর আগে পরিবহন চালু করা উচিত ছিল।’

ফেরিঘাটে ছিল ঢাকামুখী মানুষের ঢল

গার্মেন্টস খোলার ঘোষণায় শনিবার সকাল থেকে ফেরিঘাটে ছিল ঢাকামুখী মানুষের ঢল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে ফেরিতে নদী পার হতে হয়েছে তাদের। যাত্রীদের চাপের কারণে রাত ৮টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত লঞ্চসহ সারাদেশের নৌযান চলাচলের নির্দেশ দেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটের ফেরিতে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে তিল ধরণের ঠাঁই ছিল না। শনিবার সকাল হতে নৌ-রুটের সচল ৯টি ফেরিতে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পারাপার হয়েছে হাজার হাজার যাত্রী, ব্যক্তিগত গাড়ি। যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক। শুধুমাত্র জরুরি ও লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারে ফেরি চালু থাকলেও মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রী বোঝাই করে আসছে। ফেরিতে যাত্রীর চাপ ও গাদাগাদিতে উপেক্ষিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।

প্রতিনিধি, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) : লকডাউনের মধ্যে শনিবার সকাল থেকেই হঠাৎ করেই আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে কর্মমুখী হাজার-হাজার মানুষের ঢল নামে। প্রায় সব বয়সী মানুষের চাপে এই দুইঘাটে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। উত্তরাঞ্চলের পাবনা, বেড়া, নাকালিয়া, সাথিয়া, কাজিরহাট, ঈশ্বরদী, কাশিনাথপুর, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, দৌলতপুর, রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, কুমারখালিসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে জড়ো হয়। এ সব যাত্রীদের বেশিভাগ ছিল নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট কর্মী।

back to top