alt

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ নেই আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট

২০২২ সালেও শেষ হচ্ছে না দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ না থাকায় আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের রুট কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণকাজ। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে রামু দিয়ে মায়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল।

অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া ও মায়ানমারের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি না পাওয়ার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১০ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়ে একদফা ডিপিপি সংশোধন করে ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, বনের গাছ কাটা নিয়ে সমস্যা ও করোনার কারণে প্রকল্পের আরও দুই বছর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ শেষে পর্যবেক্ষণের জন্য এক বছর বেশি সময় নেয়া হয়েছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না, শুধু সময় দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।’ ২০২৩ সালের মধ্যে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ৩৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। ওই বছরই ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয় প্রকল্পটি। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ধরা হয়।

এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির প্রথম দুই প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজ (দোহাজারী-চকরিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে (চকরিয়া-রামু-কক্সবাজার) যৌথভাবে কাজ করছে চায়না সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

মায়ানমারের কারণে হচ্ছে না ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট

আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ইউরোপের জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু হওয়া এই ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে। এর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

ট্রান্স এশিয়ান রেললাইনে তিন রুটের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে টিএআর-১ ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশন হয়ে ঈশ্বরদী-জামটোইল-জয়দেবপুর-টঙ্গি-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমার সীমান্তে সংযুক্ত হওয়ার কথা।

মায়ানমার দিয়ে এ রেলপথ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। এ ছাড়া টিএআর-২ ভারতের সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের রহনপুর হয়ে ঈশ্বরদী, টিএআর-৩ ভারতের রাধিকাপুর সীমান্ত দিয়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের বিরল ও পার্বতীপুর হয়ে ঈশ্বরদী এসে শেষ হবে।

এই দুটি রুট সাব রুটের মাধ্যমে টিএআর-১ সঙ্গে যুক্ত হবে। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু, জয়দেবপুর, টঙ্গী এসে মিলিত হবে। এরপর সাব রুট-১ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এ ছাড়া সাব রুট-২ দিয়ে টঙ্গি হয়ে আখাউড়া দিয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর হয়ে ভারতের মহিশাসান সীমান্তে প্রবেশ করবে।

ট্রান্স এশিয়ান এই রেলরুটে যুক্ত হওয়ার জন্য কুলাউড়া-শাহবাজপুর ৪০ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ ছাড়া সব স্থানে রেললাইন সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলে রেলওয়ের সূত্রে জানায় গেছে।

ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের আওতায় মায়ানমারের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। এ জন্য মায়ানমারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। তবে দেশটি তাতে অনুমতি দেয়নি। এমনকি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হতে মায়ানমারেরও গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। তবে তারাও এ ধরনের কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। ফলে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে না। আদৌ তা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। এতে অসমাপ্ত অবস্থাতেই শেষ করতে হবে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, ‘ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু মায়ানমারের উদ্যোগ না থাকার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত এই অংশের কাজটি করা যাচ্ছে না।’ মায়ানমার যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে পরবর্তীতে এই অংশটুকুর কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।

ছবি

ঢাকার চেয়ে রাজশাহী ও খুলনার বায়ুদূষণ বেশি

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ফিরলে সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কিনা, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

ছবি

১২ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার মৃত্যু

ছবি

সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন লাগবে

ছবি

হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ধোঁয়াশা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আইএলওর তিনটি কনভেনশনে সই করল অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বাধ্যতামূলক ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ

ছবি

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, বললেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

এক দিনে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু, চলতি বছর প্রাণহানি ২৫৫

ছবি

কোনো চাপের কাছে ইসি নতি স্বীকার করবে না: সিইসি নাসির

ছবি

আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, অপরাধীরা ভারতে পালিয়েছেন: আইনজীবী

ছবি

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

ছবি

নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে সহযোগিতা চাইলেন সিইসি

ছবি

১০ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে জানেনা ভারতীয় হাইকমিশন

ছবি

ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ‘উদ্বেগ’: একগুচ্ছ আহ্বান আন্তর্জাতিক ৬ মানবাধিকার সংস্থার

ছবি

‘টার্গেট’ করে হত্যার অভিযোগ সঠিক নয়: যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রনিযুক্ত হাসিনার আইনজীবী

ছবি

ভারতের সঙ্গে চুক্তি ‘বাতিলের তালিকা সঠিক নয়’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

অভিযুক্ত ২৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে বুধবার হাজির না হলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি: প্রসিকিউশন

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ৮১৪ জন

ছবি

জোবায়েদ হত্যা: ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত, প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে

ছবি

জবির জোবায়েদ হত্যা: ৪১ ঘন্টা পর মামলা, ৩জন গ্রেপ্তার

ছবি

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী ও তার প্রেমিক: পুলিশ

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ‘হত্যা’ মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

ছবি

নতুন হ্যাকার গ্রুপ ‘মিস্টিরিয়াস এলিফ্যান্ট’: টার্গেটে বাংলাদেশও

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে মৃত্যু ৪, হাসপাতালে ভর্তি ৯৪২ জন

ছবি

ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার মানে ‘হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসামিকে বলা সাঁতার কাটো’: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

ছবি

নির্বাচনের ‘সহায়ক পরিবেশ আছে’, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘উদ্বেগ নেই’: ইসি সচিব

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন: ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

জুলাই যোদ্ধারা আইডি কার্ড ও আইনি সুরক্ষা চায়, বৈঠকে গুরুত্বারোপ

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে যুক্তিতর্ক শুরু করলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী

ছবি

নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমাবেশ, একশজনের অনশন চলছে

tab

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ নেই আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট

২০২২ সালেও শেষ হচ্ছে না দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ না থাকায় আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের রুট কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণকাজ। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে রামু দিয়ে মায়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল।

অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া ও মায়ানমারের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি না পাওয়ার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১০ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়ে একদফা ডিপিপি সংশোধন করে ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, বনের গাছ কাটা নিয়ে সমস্যা ও করোনার কারণে প্রকল্পের আরও দুই বছর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ শেষে পর্যবেক্ষণের জন্য এক বছর বেশি সময় নেয়া হয়েছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না, শুধু সময় দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।’ ২০২৩ সালের মধ্যে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ৩৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। ওই বছরই ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয় প্রকল্পটি। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ধরা হয়।

এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির প্রথম দুই প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজ (দোহাজারী-চকরিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে (চকরিয়া-রামু-কক্সবাজার) যৌথভাবে কাজ করছে চায়না সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

মায়ানমারের কারণে হচ্ছে না ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট

আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ইউরোপের জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু হওয়া এই ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে। এর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

ট্রান্স এশিয়ান রেললাইনে তিন রুটের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে টিএআর-১ ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশন হয়ে ঈশ্বরদী-জামটোইল-জয়দেবপুর-টঙ্গি-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমার সীমান্তে সংযুক্ত হওয়ার কথা।

মায়ানমার দিয়ে এ রেলপথ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। এ ছাড়া টিএআর-২ ভারতের সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের রহনপুর হয়ে ঈশ্বরদী, টিএআর-৩ ভারতের রাধিকাপুর সীমান্ত দিয়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের বিরল ও পার্বতীপুর হয়ে ঈশ্বরদী এসে শেষ হবে।

এই দুটি রুট সাব রুটের মাধ্যমে টিএআর-১ সঙ্গে যুক্ত হবে। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু, জয়দেবপুর, টঙ্গী এসে মিলিত হবে। এরপর সাব রুট-১ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এ ছাড়া সাব রুট-২ দিয়ে টঙ্গি হয়ে আখাউড়া দিয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর হয়ে ভারতের মহিশাসান সীমান্তে প্রবেশ করবে।

ট্রান্স এশিয়ান এই রেলরুটে যুক্ত হওয়ার জন্য কুলাউড়া-শাহবাজপুর ৪০ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ ছাড়া সব স্থানে রেললাইন সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলে রেলওয়ের সূত্রে জানায় গেছে।

ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের আওতায় মায়ানমারের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। এ জন্য মায়ানমারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। তবে দেশটি তাতে অনুমতি দেয়নি। এমনকি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হতে মায়ানমারেরও গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। তবে তারাও এ ধরনের কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। ফলে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে না। আদৌ তা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। এতে অসমাপ্ত অবস্থাতেই শেষ করতে হবে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, ‘ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু মায়ানমারের উদ্যোগ না থাকার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত এই অংশের কাজটি করা যাচ্ছে না।’ মায়ানমার যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে পরবর্তীতে এই অংশটুকুর কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।

back to top