কুইক রেন্টাল (দ্রুত ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ আবারও ২ বছর বাড়ছে। ৪৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক এসব কেন্দ্রের জন্য নতুন মেয়াদে বিদ্যুতের দাম কমাতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া, বিদ্যুৎ না কিনলেও উদ্যোক্তাদের যে চার্জ দেওয়া হতো (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) নতুন মেয়াদে সেই শর্ত থাকবে না। বিদ্যুৎ কিনলেই শুধু বিল পাবে। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা এসব শর্তে রাজি নয়। তারা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার গ্যারান্টি চায়। একই সাথে ট্যারিফ কমাতেও রাজি নয়।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানী বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় গঠিত প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সভা হয়। সভা সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদ বৃদ্ধির শর্তাবলী যাচাই ও বাড়তি মেয়াদের ট্যারিফ নির্ধারণে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
যে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে তার মধ্যে একটি সামিট গ্রুপের, দুটি ওরিয়ন গ্রুপের এবং দুটি ইউনাইটেড ও সামিট গ্রুপের যোথ মালিকানার খুলনা পাওয়ার কোম্পানির (কেপিসিএল)। এগুলোর মধ্যে সামিট গ্রুপের ১০২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে অবস্থিত । ওরিয়ন গ্রুপের কেন্দ্র দুটি হলো -নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে স্থাপিত ১০০ মেগাওয়াট (সাবেক আইইএল কনসোর্টিয়াম) ও সিদ্ধিরগঞ্জে স্থাপিত ১০০ মেগাওয়াট (ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট)। কেপিসিএলের কেন্দ্র দুটি খুলনায় অবস্থিত। এগুলো হলো- খানজাহান আলী পাওয়ারে ৪০ মেগাওয়াট (নোয়াপাড়া) ও ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এই ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রই বিশেষ বিধানের আওতায় দরপ্রক্রিয়া ছাড়া স্থাপিত হয়। উৎপাদনে আসে ২০১১ সালে। ২০১৬ সালে ৫ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করা হয়। চলতি বছর সবকটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন আরও ৫ বছর সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে খুলনা পাওয়ার এবং সামিট পাওয়ার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একটি সূত্রে জানা গেছে, কুইক রেন্টাল এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না থাকলেও চুক্তির আওতায় সরকারের কাছ থেকে ভাড়া পেয়ে থাকে যা রেন্টাল ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট হিসেবে পরিচিত। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ ধরণের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিভিন্ন সময় অলস বসে থেকে গত এক দশকে গড়ে এক হাজার দুইশ’ কোটি থেকে এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পেয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আজীবনই থেকে যাবে।’ ‘দেশে এতো বিদ্যুৎ! এখনও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ আইন কারণে বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম, দূর্নীতির সুযোগ থেকে যাচ্ছে।’ একটি বিশেষ শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের অনৈতিক অর্থিক সুবিধা দিতে সম্প্রতি এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এবার মেয়াদ বাড়ানো হলে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট থাকবে না। ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট ’ শর্তে চুক্তি সম্পাদিত হবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিক্রি করলেই শুধু বিল পাবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১
কুইক রেন্টাল (দ্রুত ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ আবারও ২ বছর বাড়ছে। ৪৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক এসব কেন্দ্রের জন্য নতুন মেয়াদে বিদ্যুতের দাম কমাতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া, বিদ্যুৎ না কিনলেও উদ্যোক্তাদের যে চার্জ দেওয়া হতো (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) নতুন মেয়াদে সেই শর্ত থাকবে না। বিদ্যুৎ কিনলেই শুধু বিল পাবে। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা এসব শর্তে রাজি নয়। তারা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার গ্যারান্টি চায়। একই সাথে ট্যারিফ কমাতেও রাজি নয়।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানী বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় গঠিত প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সভা হয়। সভা সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদ বৃদ্ধির শর্তাবলী যাচাই ও বাড়তি মেয়াদের ট্যারিফ নির্ধারণে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
যে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে তার মধ্যে একটি সামিট গ্রুপের, দুটি ওরিয়ন গ্রুপের এবং দুটি ইউনাইটেড ও সামিট গ্রুপের যোথ মালিকানার খুলনা পাওয়ার কোম্পানির (কেপিসিএল)। এগুলোর মধ্যে সামিট গ্রুপের ১০২ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে অবস্থিত । ওরিয়ন গ্রুপের কেন্দ্র দুটি হলো -নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে স্থাপিত ১০০ মেগাওয়াট (সাবেক আইইএল কনসোর্টিয়াম) ও সিদ্ধিরগঞ্জে স্থাপিত ১০০ মেগাওয়াট (ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট)। কেপিসিএলের কেন্দ্র দুটি খুলনায় অবস্থিত। এগুলো হলো- খানজাহান আলী পাওয়ারে ৪০ মেগাওয়াট (নোয়াপাড়া) ও ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এই ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রই বিশেষ বিধানের আওতায় দরপ্রক্রিয়া ছাড়া স্থাপিত হয়। উৎপাদনে আসে ২০১১ সালে। ২০১৬ সালে ৫ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করা হয়। চলতি বছর সবকটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন আরও ৫ বছর সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে খুলনা পাওয়ার এবং সামিট পাওয়ার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একটি সূত্রে জানা গেছে, কুইক রেন্টাল এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না থাকলেও চুক্তির আওতায় সরকারের কাছ থেকে ভাড়া পেয়ে থাকে যা রেন্টাল ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট হিসেবে পরিচিত। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ ধরণের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিভিন্ন সময় অলস বসে থেকে গত এক দশকে গড়ে এক হাজার দুইশ’ কোটি থেকে এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পেয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ বিষয়ে সংবাদকে বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আজীবনই থেকে যাবে।’ ‘দেশে এতো বিদ্যুৎ! এখনও রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ আইন কারণে বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম, দূর্নীতির সুযোগ থেকে যাচ্ছে।’ একটি বিশেষ শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের অনৈতিক অর্থিক সুবিধা দিতে সম্প্রতি এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এবার মেয়াদ বাড়ানো হলে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট থাকবে না। ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট ’ শর্তে চুক্তি সম্পাদিত হবে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিক্রি করলেই শুধু বিল পাবে।