ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশকে’ মুছে দিতে ‘কল্পকাহিনী’ প্রচার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এসব ‘অপপ্রচার ও কল্পকাহিনী’ ঠেকাতে সবাইকে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি জাতীয় সমাবেশ করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ না করা হলেও সবাই একমত হয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘তারা (বিগত আওয়ামী লীগ সরকার) নতুন নতুন বেশে, নতুনভাবে আসার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এখন যে চেষ্টা চলছে সেটার বিশেষ একটা রূপ আছে। সেজন্যই বিশেষভাবে আপনাদের ডাকা। আপনারা সবাই ভালো বোঝেন। সবাই মিলে আমরা একজোট হয়ে যেন কাজটা করতে পারি, সবাই একত্র হয়ে বললে একটা সমবেত শক্তি তৈরি হয়, এই সমবেত শক্তির জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা।’
বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার ইঙ্গিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম, তারা এটাকে মুছে দিয়ে আগেরটায় ফিরে যেতে চায়। মুখে বলছে না যে আগেরটা, কিন্তু ভঙ্গি হলো আগেরটা ভালো ছিল। তাদের শক্তি এতো বেশি যে তারা মানুষকে এর ভেতরে ভেড়াতে পারছে। তাদের কল্পকাহিনীর কারণে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে যে এটা কী ধরনের সরকার হলো।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা বারেবারে তাদের (ভারত) বলছি যে আপনারা আসেন এখানে, দেখেন, এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে যে, আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি, কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি। এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’
দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে একজোট থাকার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে এটাকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ৫ আগস্টের পর থেকে নানাভাবে এটা চলছে। সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন হয়েছে। আমরাও পূজার আনন্দে শরিক হয়েছিলাম। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে।’
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের পক্ষে বৈঠকের এজেন্ডা শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান তুলে ধরেন বলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরা ব্যতীত দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল বৈঠকে উপস্থিত ছিল। ভারতের আগ্রাসন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সব দল ঐকমত্য হয়েছেন। ভারতের সঙ্গে যতো চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশ করা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখায় সব সম্প্রদায়কে সরকারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান আইন উপদেষ্টা। গোটা জাতির সবাই মিলে একটি জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করার প্রস্তাব এসেছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের ঐক্য ও সামর্থ্যরে জানান দেয়া হবে।’
সংলাপে অংশ নেয়া বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
দেশবাসী আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সুখবর পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তবে সেই খরবের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি। অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির আমির।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দিব না। কারও কাছে মাথা নত করবো না, আবার সীমালঙ্ঘনও করবো না। দুই একদিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি।’
এছাড়া নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিদের (জিওপি) নেতারাও সংলাপে যোগ দেন।
তবে বৈঠকে অংশ নিতে এসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি সাবেক সেনা কর্মকর্তা অলি আহমদ ফিরে গেছেন। তালিকায় নাম না থাকায় নির্ধারিত আসন না পেয়ে সংলাপে অংশ না নিয়েই তিনি ফিরে যান।
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশকে’ মুছে দিতে ‘কল্পকাহিনী’ প্রচার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এসব ‘অপপ্রচার ও কল্পকাহিনী’ ঠেকাতে সবাইকে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি জাতীয় সমাবেশ করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ না করা হলেও সবাই একমত হয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘তারা (বিগত আওয়ামী লীগ সরকার) নতুন নতুন বেশে, নতুনভাবে আসার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এখন যে চেষ্টা চলছে সেটার বিশেষ একটা রূপ আছে। সেজন্যই বিশেষভাবে আপনাদের ডাকা। আপনারা সবাই ভালো বোঝেন। সবাই মিলে আমরা একজোট হয়ে যেন কাজটা করতে পারি, সবাই একত্র হয়ে বললে একটা সমবেত শক্তি তৈরি হয়, এই সমবেত শক্তির জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা।’
বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার ইঙ্গিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম, তারা এটাকে মুছে দিয়ে আগেরটায় ফিরে যেতে চায়। মুখে বলছে না যে আগেরটা, কিন্তু ভঙ্গি হলো আগেরটা ভালো ছিল। তাদের শক্তি এতো বেশি যে তারা মানুষকে এর ভেতরে ভেড়াতে পারছে। তাদের কল্পকাহিনীর কারণে মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছে যে এটা কী ধরনের সরকার হলো।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা বারেবারে তাদের (ভারত) বলছি যে আপনারা আসেন এখানে, দেখেন, এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু না, তারা ওখান থেকেই কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে যে, আমরা এক, আমরা যেটা পেয়েছি সেটা একজোট হয়ে পেয়েছি, কোনো মতবাদের কারণে পাইনি, ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি, যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের উপড়ে ফেলেছি। এটাই সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’
দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে একজোট থাকার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে এটাকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ৫ আগস্টের পর থেকে নানাভাবে এটা চলছে। সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন হয়েছে। আমরাও পূজার আনন্দে শরিক হয়েছিলাম। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে।’
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের পক্ষে বৈঠকের এজেন্ডা শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান তুলে ধরেন বলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরা ব্যতীত দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল বৈঠকে উপস্থিত ছিল। ভারতের আগ্রাসন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সব দল ঐকমত্য হয়েছেন। ভারতের সঙ্গে যতো চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশ করা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখায় সব সম্প্রদায়কে সরকারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান আইন উপদেষ্টা। গোটা জাতির সবাই মিলে একটি জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করার প্রস্তাব এসেছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের ঐক্য ও সামর্থ্যরে জানান দেয়া হবে।’
সংলাপে অংশ নেয়া বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
দেশবাসী আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সুখবর পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তবে সেই খরবের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি। অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির আমির।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দিব না। কারও কাছে মাথা নত করবো না, আবার সীমালঙ্ঘনও করবো না। দুই একদিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি।’
এছাড়া নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিদের (জিওপি) নেতারাও সংলাপে যোগ দেন।
তবে বৈঠকে অংশ নিতে এসে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি সাবেক সেনা কর্মকর্তা অলি আহমদ ফিরে গেছেন। তালিকায় নাম না থাকায় নির্ধারিত আসন না পেয়ে সংলাপে অংশ না নিয়েই তিনি ফিরে যান।