গত পাঁচ দশকে স্বাস্থ্য খাত এগিয়েছে অনেকটা। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২.৬ বছর। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। স্বাধীনতার পর শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৮৫ শতাংশ। মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুপুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি প্রভৃতি ক্ষেত্রে লক্ষ্যযোগ্য অর্জন রয়েছে। পোলিও নির্মূল হয়েছে, কমেছে কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া বা কলেরার প্রকোপ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বড় বড় হাসপাতাল, যেগুলোর অনেকটিতেই মেলে অত্যাধুনিক চিকিৎসা।
অনেক উন্নতির পরও চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে নানা মাত্রার বৈষম্য দূর করা গেছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শহর আর গ্রামে চিকিৎসা সুবিধা সমান হারে মেলে না। সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ থেকে জানা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ প্রসব হয় চিকিৎসা কেন্দ্রে, গ্রামে এই হার মাত্র ৪৫ শতাংশ। অঞ্চল, লিঙ্গ, বিত্তভেদে এমন অনেক বৈষম্যই চোখে পড়ে।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রায় বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দেয়া হলেও তার মান নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। এ কারণেই যাদের একটু সামর্থ্য রয়েছে তারা বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন, কেউবা বিদেশে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে খরচ করেন। সরকারি হাসপাতালগুলোর সিংহভাগ সেবাগ্রহীতা হচ্ছেন নিরুপায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মহামারী নভেল করোনাভাইরাস এ দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগই অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
‘সবার জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ি’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল পালন করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের অন্যতম প্রধান মৌলিক চাহিদা। মানুষের দোরগোড়ায় স্বল্প খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্য খাতের অসমতাগুলো দূর করা জরুরি। রাজধানীমুখী চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি। জেলা সদর হাসপাতালেই যেন মানুষ পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত চিকিৎসা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের ব্যয় কমাতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ যথেষ্ট কিনা সে প্রশ্নও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি দেশের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে, যেটা বাংলাদেশে পাঁচ শতাংশেরও কম। আবার বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হচ্ছে অনুন্নয়ন খাতে। অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে স্বাস্থ্য খাতে একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যার সুফল পাবে সব মানুষ।
বুধবার, ০৭ এপ্রিল ২০২১
গত পাঁচ দশকে স্বাস্থ্য খাত এগিয়েছে অনেকটা। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২.৬ বছর। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। স্বাধীনতার পর শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৮৫ শতাংশ। মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুপুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি প্রভৃতি ক্ষেত্রে লক্ষ্যযোগ্য অর্জন রয়েছে। পোলিও নির্মূল হয়েছে, কমেছে কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া বা কলেরার প্রকোপ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে বড় বড় হাসপাতাল, যেগুলোর অনেকটিতেই মেলে অত্যাধুনিক চিকিৎসা।
অনেক উন্নতির পরও চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তিতে নানা মাত্রার বৈষম্য দূর করা গেছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শহর আর গ্রামে চিকিৎসা সুবিধা সমান হারে মেলে না। সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ থেকে জানা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ প্রসব হয় চিকিৎসা কেন্দ্রে, গ্রামে এই হার মাত্র ৪৫ শতাংশ। অঞ্চল, লিঙ্গ, বিত্তভেদে এমন অনেক বৈষম্যই চোখে পড়ে।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রায় বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দেয়া হলেও তার মান নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। এ কারণেই যাদের একটু সামর্থ্য রয়েছে তারা বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন, কেউবা বিদেশে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে খরচ করেন। সরকারি হাসপাতালগুলোর সিংহভাগ সেবাগ্রহীতা হচ্ছেন নিরুপায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মহামারী নভেল করোনাভাইরাস এ দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগই অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
‘সবার জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ি’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল পালন করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের অন্যতম প্রধান মৌলিক চাহিদা। মানুষের দোরগোড়ায় স্বল্প খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্য খাতের অসমতাগুলো দূর করা জরুরি। রাজধানীমুখী চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি। জেলা সদর হাসপাতালেই যেন মানুষ পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত চিকিৎসা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের ব্যয় কমাতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ যথেষ্ট কিনা সে প্রশ্নও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি দেশের মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে, যেটা বাংলাদেশে পাঁচ শতাংশেরও কম। আবার বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হচ্ছে অনুন্নয়ন খাতে। অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে স্বাস্থ্য খাতে একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যার সুফল পাবে সব মানুষ।