কারখানায় আগুন লাগার পর অনেকেই লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে, অনেকে ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। পরে সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস তাদের অনেককে উদ্ধার করেছে। তবে ছাদে যাওয়া বা লাফ দেয়ার সুযোগটিও পায়নি বহু শ্রমিক। তালাবদ্ধ ফ্লোরে আটকা পড়েছিল। ছাদে উঠার একটি সিঁড়ি তালাবদ্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক উঠতে পারেনি ছাদে। অসহায় শ্রমিকদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে নিয়তির কাছে, আগুনের কাছে। তাদের মধ্যে শিশু শ্রমিকও ছিল অনেক।
গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন মারা গেছে। এই ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান, সিইওসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কার গাফিলতিতে এত শ্রমিককে প্রাণ দিতে হলো সেই প্রশ্ন ওঠেছে।
সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাশেম বলেছেন, ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো আর যেয়ে আগুন লাগিয়ে দেইনি।
আগুন গিয়ে লাগাতে হয় না। কোন কারণে আগুন লাগলে সেটা নেভানোর আগাম ব্যবস্থা করা মালিকেরই দায়িত্ব। উক্ত কারখানায় অগ্নি নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব। গণমাধ্যমকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা কারখানাটিতে অগ্নি নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।
ইন্ডাস্ট্রি কেবল করলেই হয় না, সেখানে শ্রমিকের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। উক্ত কারখানায় অগ্নিকান্ডের মতো জরুরি অবস্থা সামলানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কারখানাটির যে আয়তন তাতে জাতীয় ভবন নীতিমালা অনুযায়ী সেখানে সিঁড়ি থাকা জরুরি ছিল কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি। কিন্তু সেখানে সিঁড়ি ছিল দুটি। ছাদে উঠার সিঁড়ি দুটির মধ্যে একটিতে আগুন লাগার পর তালা লাগিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেছেন, ভবনের কিছু কিছু ফ্লোরও তালাবদ্ধ ছিল। তালা মারা না থাকলে আরও অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।
কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা আগুন লাগার পর মূল ফটক বন্ধ করে দিয়েছে কেন সেটা খুঁজে দেখতে হবে। মালিকরা কারখানার মালপত্রের নিরপত্তা নিয়ে যতটা সতর্ক, শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে ততটাই উদাসীন। কারখানার মালপত্র রক্ষার স্বার্থে যে কোন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাকর্মীদের গেটে তালা লাগানোর নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়। মালিকের হুকুম মানায় ব্যস্ত নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের কথা ভাবে না। ২০১২ সালে ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময়ও কারখানার গেটে তালা লাগিয়ে দেয়া হলে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ যদি আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতো, তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কম হতে পারত। কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, কারখানার টপ টু বটম কাঁচামাল জমা ছিল। ফ্লোরগুলোর কোন অংশ ফাঁকা বা খালি স্থান রাখা হয়নি। বিবরণ শুনে মনে হয়, শ্রমিকদের কাজের জায়গাকে কার্যত গুদামে পরিণত করা হয়েছিল। জানা গেছে, লকডাউনের কারণে কারখানাটিতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল কম। স্বাভাবিক সময়ে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে। অগ্নিকান্ডের সময় সব শ্রমিক উপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারতো।
উক্ত কারখানায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হতো বলে জানা গেছে। কম মজুরি দিয়ে বেশি কাজ করানোর উদ্দেশে অনেক কারখানাই আইন লঙ্ঘন করে শিশু শ্রমিকদেরও কাজে লাগায় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে একটি কারখানা এতো অনিয়ম করে বছরের পর বছর চলেছে কীভাবে। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কিনা এসব মনিটরিং করার কথা যাদের তারা সে কাজটা ঠিক মতো করেছে কিনা। কারখানাগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়েছে কিনা, তা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে কিনা সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
অগ্নিকান্ডর ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমারা আশা করব, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের আইনি বিচার নিশ্চিত করা হবে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে।
শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১
কারখানায় আগুন লাগার পর অনেকেই লাফিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে, অনেকে ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। পরে সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস তাদের অনেককে উদ্ধার করেছে। তবে ছাদে যাওয়া বা লাফ দেয়ার সুযোগটিও পায়নি বহু শ্রমিক। তালাবদ্ধ ফ্লোরে আটকা পড়েছিল। ছাদে উঠার একটি সিঁড়ি তালাবদ্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক উঠতে পারেনি ছাদে। অসহায় শ্রমিকদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে নিয়তির কাছে, আগুনের কাছে। তাদের মধ্যে শিশু শ্রমিকও ছিল অনেক।
গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন মারা গেছে। এই ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান, সিইওসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কার গাফিলতিতে এত শ্রমিককে প্রাণ দিতে হলো সেই প্রশ্ন ওঠেছে।
সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাশেম বলেছেন, ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো আর যেয়ে আগুন লাগিয়ে দেইনি।
আগুন গিয়ে লাগাতে হয় না। কোন কারণে আগুন লাগলে সেটা নেভানোর আগাম ব্যবস্থা করা মালিকেরই দায়িত্ব। উক্ত কারখানায় অগ্নি নির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল কিনা সেটা আমরা জানতে চাইব। গণমাধ্যমকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা কারখানাটিতে অগ্নি নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।
ইন্ডাস্ট্রি কেবল করলেই হয় না, সেখানে শ্রমিকের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। উক্ত কারখানায় অগ্নিকান্ডের মতো জরুরি অবস্থা সামলানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কারখানাটির যে আয়তন তাতে জাতীয় ভবন নীতিমালা অনুযায়ী সেখানে সিঁড়ি থাকা জরুরি ছিল কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি। কিন্তু সেখানে সিঁড়ি ছিল দুটি। ছাদে উঠার সিঁড়ি দুটির মধ্যে একটিতে আগুন লাগার পর তালা লাগিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেছেন, ভবনের কিছু কিছু ফ্লোরও তালাবদ্ধ ছিল। তালা মারা না থাকলে আরও অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।
কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা আগুন লাগার পর মূল ফটক বন্ধ করে দিয়েছে কেন সেটা খুঁজে দেখতে হবে। মালিকরা কারখানার মালপত্রের নিরপত্তা নিয়ে যতটা সতর্ক, শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে ততটাই উদাসীন। কারখানার মালপত্র রক্ষার স্বার্থে যে কোন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাকর্মীদের গেটে তালা লাগানোর নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়। মালিকের হুকুম মানায় ব্যস্ত নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের কথা ভাবে না। ২০১২ সালে ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময়ও কারখানার গেটে তালা লাগিয়ে দেয়া হলে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ যদি আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতো, তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কম হতে পারত। কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, কারখানার টপ টু বটম কাঁচামাল জমা ছিল। ফ্লোরগুলোর কোন অংশ ফাঁকা বা খালি স্থান রাখা হয়নি। বিবরণ শুনে মনে হয়, শ্রমিকদের কাজের জায়গাকে কার্যত গুদামে পরিণত করা হয়েছিল। জানা গেছে, লকডাউনের কারণে কারখানাটিতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল কম। স্বাভাবিক সময়ে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে। অগ্নিকান্ডের সময় সব শ্রমিক উপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারতো।
উক্ত কারখানায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হতো বলে জানা গেছে। কম মজুরি দিয়ে বেশি কাজ করানোর উদ্দেশে অনেক কারখানাই আইন লঙ্ঘন করে শিশু শ্রমিকদেরও কাজে লাগায় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে একটি কারখানা এতো অনিয়ম করে বছরের পর বছর চলেছে কীভাবে। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কিনা এসব মনিটরিং করার কথা যাদের তারা সে কাজটা ঠিক মতো করেছে কিনা। কারখানাগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়েছে কিনা, তা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানা হচ্ছে কিনা সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
অগ্নিকান্ডর ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমারা আশা করব, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের আইনি বিচার নিশ্চিত করা হবে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে।