গত বছর দেশে ১৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়েছে। ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অর্জন। ফল পুষ্টির উৎস, নির্দিষ্ট মৌসুমে আম সেই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এটা একটা ভালো দিক যে, দেশে আম সহজলব্য। তবে আমের উৎপাদন অধিক হলে অবধারিতভাবে আমচাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় বা লোকসানে পতিত হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে ক্রেতা কম থাকায় হাজার হাজার আমচাষি-ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে পুঁজি হারাতে বসছেন বলেও জানা গেছে। বাগানে আম পেকে গেলেও নামনো যায়নি, সংরক্ষণের অভাবে বাগানেই পচে গেছে অনেক আম। আবার আড়তে পচে নষ্ট হচ্ছে।
রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা জানিয়েছেন, আমের ফলন খুব ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দফায় দফায় বিধিনিষেধের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা আম পাঠাতে পারেনি। বিক্রয় ব্যবস্থার অচলাবস্থার কারণে লোকসান হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না।
এটি একটি অশুভ সংকেত। আমচাষিরা যদি উৎপাদন খরচ উঠাতে না পারে, তাহলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। একসময় উৎপাদন কম হবে। অধিক উৎপাদনের সুফল যেন আমচাষিরা পায় সেজন্য নীতি-নির্ধারকদের উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে রপ্তানি একটি ভালো সমাধান হতে পারে। কিন্তু বিগত সময় আম রপ্তানির ক্ষেত্রে হতাশার চিত্রই প্রকাশ পায়। বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশ অষ্টম থেকে সপ্তম স্থানে উঠে এলেও রপ্তানি বাজারে অবস্থান একেবারে তলানিতে। ২০২০ সালে দেশে উৎপাদিত আমের মূল্য ছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সেখানে মাত্র ৪২ লাখ টাকার আম রপ্তানি করা হয়েছে।
আমের রপ্তানি বাজার বাড়াতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে। আমাদের দেশের আমের জাত উন্নত না হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাগান থেকে আম সংগ্রহের পরে শনাক্তকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং কারার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডিং ইমেজ তৈরি না হওয়াসহ রপ্তানি কার্যক্রমে দক্ষতা, সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, সমস্যা থাকলে সমাধানও বের করা যায়। বিশেষ করে, দেশের কৃষি বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। ফল-ফসলের ক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনসহ কৃষি-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। আম উৎপাদনকরী, উদ্যোক্তা এবং নীতি-নির্ধারকদের সম্মিলিত চেষ্টায় সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। আম রপ্তানির বাধা দূর করা যেতে পারে।
সম্প্রতি ‘আম রপ্তানি বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের আমকে আমরা ব্যাপকভাবে বিশ্ববাজারে নিয়ে যেতে চাই। সে জন্য রপ্তানি বাধাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দিতে তিনটি ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ভিএইচটি) স্থাপনের কাজ চলছে।’ এমন প্লান্ট স্থাপন করা হলে আম রপ্তানিতে অনেকটা বাধা কাটবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে প্যাকিং সুবিধা ও সঙ্গনিরোধ সনদের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা আশার করব, আগামী আমের মৌসুমের আগেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
দেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আম প্রক্রিয়াজাত করে জুস, আমসত্ত, আচার, চাটনি ইত্যাদি বাজারজাত করছে। রপ্তানির পাশাপাশি আমভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী ব্যাপকহারে উৎপাদন করার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এমন ব্যবস্থা নেবে যার সুফল আমচাষিদের কাছে পৌঁছে যাবে।
শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১
গত বছর দেশে ১৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়েছে। ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অর্জন। ফল পুষ্টির উৎস, নির্দিষ্ট মৌসুমে আম সেই পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এটা একটা ভালো দিক যে, দেশে আম সহজলব্য। তবে আমের উৎপাদন অধিক হলে অবধারিতভাবে আমচাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হয় বা লোকসানে পতিত হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে ক্রেতা কম থাকায় হাজার হাজার আমচাষি-ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে পুঁজি হারাতে বসছেন বলেও জানা গেছে। বাগানে আম পেকে গেলেও নামনো যায়নি, সংরক্ষণের অভাবে বাগানেই পচে গেছে অনেক আম। আবার আড়তে পচে নষ্ট হচ্ছে।
রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা জানিয়েছেন, আমের ফলন খুব ভালো হওয়ায় লাভের মুখ দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দফায় দফায় বিধিনিষেধের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা আম পাঠাতে পারেনি। বিক্রয় ব্যবস্থার অচলাবস্থার কারণে লোকসান হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না।
এটি একটি অশুভ সংকেত। আমচাষিরা যদি উৎপাদন খরচ উঠাতে না পারে, তাহলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। একসময় উৎপাদন কম হবে। অধিক উৎপাদনের সুফল যেন আমচাষিরা পায় সেজন্য নীতি-নির্ধারকদের উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে রপ্তানি একটি ভালো সমাধান হতে পারে। কিন্তু বিগত সময় আম রপ্তানির ক্ষেত্রে হতাশার চিত্রই প্রকাশ পায়। বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশ অষ্টম থেকে সপ্তম স্থানে উঠে এলেও রপ্তানি বাজারে অবস্থান একেবারে তলানিতে। ২০২০ সালে দেশে উৎপাদিত আমের মূল্য ছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সেখানে মাত্র ৪২ লাখ টাকার আম রপ্তানি করা হয়েছে।
আমের রপ্তানি বাজার বাড়াতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে। আমাদের দেশের আমের জাত উন্নত না হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাগান থেকে আম সংগ্রহের পরে শনাক্তকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং কারার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডিং ইমেজ তৈরি না হওয়াসহ রপ্তানি কার্যক্রমে দক্ষতা, সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, সমস্যা থাকলে সমাধানও বের করা যায়। বিশেষ করে, দেশের কৃষি বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। ফল-ফসলের ক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনসহ কৃষি-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। আম উৎপাদনকরী, উদ্যোক্তা এবং নীতি-নির্ধারকদের সম্মিলিত চেষ্টায় সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। আম রপ্তানির বাধা দূর করা যেতে পারে।
সম্প্রতি ‘আম রপ্তানি বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের আমকে আমরা ব্যাপকভাবে বিশ্ববাজারে নিয়ে যেতে চাই। সে জন্য রপ্তানি বাধাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দিতে তিনটি ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ভিএইচটি) স্থাপনের কাজ চলছে।’ এমন প্লান্ট স্থাপন করা হলে আম রপ্তানিতে অনেকটা বাধা কাটবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে প্যাকিং সুবিধা ও সঙ্গনিরোধ সনদের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা আশার করব, আগামী আমের মৌসুমের আগেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
দেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আম প্রক্রিয়াজাত করে জুস, আমসত্ত, আচার, চাটনি ইত্যাদি বাজারজাত করছে। রপ্তানির পাশাপাশি আমভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী ব্যাপকহারে উৎপাদন করার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এমন ব্যবস্থা নেবে যার সুফল আমচাষিদের কাছে পৌঁছে যাবে।