ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ‘গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায়’ প্রকল্পের অধীনে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চরচান্দ্রা মৌজায় পদ্মার চরে হতদরিদ্রদের জন্য নির্মাণ করা হয় একটি গুচ্ছগ্রাম। এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু দুর্গত ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন, নদী ভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবারকে সরকারি খাসজমিতে পুনর্বাসনসহ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে বা বিধবার নামে জমির মালিকানা স্বত্ব প্রদান করা।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় এমপি ৯০টি পরিবারের কাছে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করেন। তবে ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় গুচ্ছগ্রামটি ছেড়ে চলে গেছে প্রায় সব পরিবার। এক বছর ধরে পদ্মার ওই বিশাল চরে বরাদ্দ পাওয়া শুধু একটি পরিবার বসবাস করছে। আর মাস চারেক হলো পাশের একটি চরের ভাঙন কবলিত তিনটি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে এ বিরাণ চরের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা এখন চারটি পরিবারের ১৪ জন! এ নিয়ে সংবাদ-এ গতকাল মঙ্গলবার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য মহৎ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সরকার চাচ্ছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের পুর্নবাসন করতে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয়া চরচান্দ্রা মৌজার দুর্গম চরটি জেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সেখানে যাতায়াত-যোগাযোগের ব্যবস্থা অপ্রতুল। বিদ্যুতের খুঁটি আছে কিন্তু যেটা থাকা জরুরি সেই বিদ্যুৎ নেই। চরে নেই হাট-বাজার। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বিদ্যালয় থাকার প্রশ্নই আসে না। সেখানকার অনেক ঘর ভেঙে গেছে। অন্তত ২০টি ঘর হারিয়ে গেছে পদ্মার ভাঙনে।
প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দুর্গম একটি জায়গায় মানুষ থাকবে কেন? প্রকল্পটি এমন জায়গায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে যেখানে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নেই বলে কেউ বসবাস করতে চায় না। শুধু কাঠ-টিন দিয়ে ঘর দাঁড় করালেই কোন স্থান বসবাসের যোগ্য হয়ে ওঠে না। শুধু ঘর থাকলে কী চলবে, যদি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা না থাকে।
উপকারভোগীদের যথাযথভাবে নির্বাচন করা হয়েছে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন। অভিযোগ আছে, যাদের সহায়-সম্বল আছে তারাও ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে সেখানেই প্রকল্পটি মাঠে মারা যাওয়ার কথা। এভাবে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে। চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্পেও দেখা গেছে অবস্থাসম্পন্ন সচ্ছল ব্যক্তিরাও টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ পেয়েছে।
আমরা চাই, গুচ্ছগ্রামের প্রকল্পটি সফল হোক। গুচ্ছগ্রামটিকে কীভাবে বসবাসযোগ্য করা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। যারা বসবাস করবেন তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
সহায়-সম্বল থাকা সত্ত্বে যারা গুচ্ছগ্রামে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। প্রকৃত অসহায় গৃহহীনদের মাঝে ঘর পুনর্বরাদ্দ দিতে হবে। যাদের ঘর-বাড়ি আছে তারা কীভাবে বরাদ্দ পেল সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার।
বুধবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ‘গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায়’ প্রকল্পের অধীনে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চরচান্দ্রা মৌজায় পদ্মার চরে হতদরিদ্রদের জন্য নির্মাণ করা হয় একটি গুচ্ছগ্রাম। এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু দুর্গত ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন, নদী ভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবারকে সরকারি খাসজমিতে পুনর্বাসনসহ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে বা বিধবার নামে জমির মালিকানা স্বত্ব প্রদান করা।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় এমপি ৯০টি পরিবারের কাছে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করেন। তবে ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় গুচ্ছগ্রামটি ছেড়ে চলে গেছে প্রায় সব পরিবার। এক বছর ধরে পদ্মার ওই বিশাল চরে বরাদ্দ পাওয়া শুধু একটি পরিবার বসবাস করছে। আর মাস চারেক হলো পাশের একটি চরের ভাঙন কবলিত তিনটি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে এ বিরাণ চরের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা এখন চারটি পরিবারের ১৪ জন! এ নিয়ে সংবাদ-এ গতকাল মঙ্গলবার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য মহৎ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সরকার চাচ্ছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের পুর্নবাসন করতে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয়া চরচান্দ্রা মৌজার দুর্গম চরটি জেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সেখানে যাতায়াত-যোগাযোগের ব্যবস্থা অপ্রতুল। বিদ্যুতের খুঁটি আছে কিন্তু যেটা থাকা জরুরি সেই বিদ্যুৎ নেই। চরে নেই হাট-বাজার। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বিদ্যালয় থাকার প্রশ্নই আসে না। সেখানকার অনেক ঘর ভেঙে গেছে। অন্তত ২০টি ঘর হারিয়ে গেছে পদ্মার ভাঙনে।
প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দুর্গম একটি জায়গায় মানুষ থাকবে কেন? প্রকল্পটি এমন জায়গায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে যেখানে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নেই বলে কেউ বসবাস করতে চায় না। শুধু কাঠ-টিন দিয়ে ঘর দাঁড় করালেই কোন স্থান বসবাসের যোগ্য হয়ে ওঠে না। শুধু ঘর থাকলে কী চলবে, যদি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা না থাকে।
উপকারভোগীদের যথাযথভাবে নির্বাচন করা হয়েছে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন। অভিযোগ আছে, যাদের সহায়-সম্বল আছে তারাও ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে সেখানেই প্রকল্পটি মাঠে মারা যাওয়ার কথা। এভাবে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে। চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্পেও দেখা গেছে অবস্থাসম্পন্ন সচ্ছল ব্যক্তিরাও টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ পেয়েছে।
আমরা চাই, গুচ্ছগ্রামের প্রকল্পটি সফল হোক। গুচ্ছগ্রামটিকে কীভাবে বসবাসযোগ্য করা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। যারা বসবাস করবেন তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
সহায়-সম্বল থাকা সত্ত্বে যারা গুচ্ছগ্রামে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। প্রকৃত অসহায় গৃহহীনদের মাঝে ঘর পুনর্বরাদ্দ দিতে হবে। যাদের ঘর-বাড়ি আছে তারা কীভাবে বরাদ্দ পেল সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার।